দিনমাহাত্ম্যে বিশ্বাস নেই। তবু আজকের দিনটা সবদিক থেকে উজ্জ্বল দিন।
সকালের রাউন্ডের সময় কেন জানিনা মনে হ’ল চিৎকার চেঁচামেচি তুলনায় অনেক কম। বেশ একটা শান্ত শান্ত পরিবেশ। শুধু প্রথম বেডের শ্বাসকষ্টের বাচ্চাটা চেঁচিয়ে ওয়ার্ড মাত করে দিচ্ছে। সবাই আজ ভালোর দিকে। দুটো কম ওজনের বাচ্চার রক্তে ইনফেকশন ছিল। কিছুতেই ওজন বাড়ছিল না। আজ দুজনেই অনেকটা চনমনে। একদিনে কুড়ি-পঁচিশ গ্রাম করে ওজন বেড়েছে। জন্মগত অঙ্গবিকৃতিসহ ভর্তি হওয়া বাচ্চার সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা আজ শেষ হ’ল। বোঝা গেল, শুধু হাড়েই সমস্যা। বাকি হার্ট, ব্রেন বা অন্যান্য অভ্যন্তরীণ অঙ্গ মোটামুটি স্বাভাবিক। আজ ছুটি হবে। এগারোশো গ্রামের যমজ দুটো বাচ্চারও আজ ছুটি। একজনের চোখে সামান্য সমস্যা ছাড়া আর কোনও অসুবিধে নেই। বুকের দুধ খাচ্ছে। যাবতীয় প্রতিকূলতা তুড়ি মেরে উড়িয়ে তারা বেড়ে উঠছে।
গ্রাউন্ড ফ্লোরে কোভিড টিকাকরণের তোড়জোড়। ব্যানার, পোস্টারে সেজে উঠেছে চারদিক। সবার মধ্যেই উদ্দীপনার ঢেউ। দুশ্চিন্তাও যে একদম ছিল না, বলবো না। যতই হোক, নতুন টিকা নিয়ে খানিকটা ‘কী হয়, কী হয়’ ভাব তো ছিলই। যদিও সেসব সামাল দেওয়ার প্রস্তুতিও ছিল পুরোমাত্রায়। যাইহোক, এবার ভালো কথাটা শুনিয়ে দিই- এই লেখা শুরু হওয়ার সময় অব্দি ৪০ জনেরও বেশি টিকা নিয়েছেন এবং তাঁদের কারোরই তাৎক্ষণিক পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া কিছু হয়নি। সবাই সুস্থ আছেন। আশা রাখি, টিকাকরণ ব্যর্থ হবে না। ধীরে ধীরে সারা দেশ তার সুফল পাবে। সেক্ষেত্রে ১৬ ই জানুয়ারী, ২০২১ দেশের ইতিহাসে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিন হিসেবে থেকে যাবে।
এই মহামারী শিখিয়ে গেল এখনো আমরা রোগের কাছে কত অসহায়! শিখিয়ে গেল- বোমা-বন্দুক, আকাশচুম্বী মূর্তির চেয়ে ওষুধ, খাবার, বই কিংবা মাথার ওপরে ছাদ অনেক বেশি করে প্রয়োজন। শিখিয়ে গেল, একটা দরিদ্র দেশে জিডিপির এক শতাংশ স্বাস্থ্যখাতে ব্যয় লজ্জার। শিখিয়ে গেল- বিকল্প ধারার অপবিজ্ঞান বা ছদ্ম-বিজ্ঞান নয়, সবার জন্য সরকারি খরচে আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসা প্রয়োজন। শিখিয়ে গেল- ঝাঁ চকচকে কর্পোরেট হাসপাতালের চেয়ে জনস্বাস্থ্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
মারণ ভাইরাসের বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ যুদ্ধজয় কবে হবে কেউ জানে না। তবে মারীর দেশ যে জয়ের পথে আরও একধাপ এগিয়ে গেল, এ বিশ্বাস রাখাই যায়।