Aedes Aegyptie হল সেই মশা যারা ডেঙ্গু ছড়ায়। হাজার দুয়েক বছর আগে এডিস ইজিপ্টি মিশরের সংলগ্ন বনভূমির মশা ছিল (সিলভ্যাটিক)। স্বভাবে জুফিলিক মানে পশুর রক্তখেকো। এর পর দাবানলে জঙ্গল পুড়ে যায়। মরুভূমি হয়। তাই তখন মানুষের রক্ত খাওয়া শুরু করে ও অতি অল্প জলে ডিম পাড়ার অভ্যেস হয় (ম্যান মেড কন্টেনার)। ওই একই কারণে বাঙালির মত ঘরকুনো (বাংলাপক্ষের লোকরা রেগে যাবেন না প্লিজ)। বেশি দূরে উড়ে যায় না। এই মশার ফ্লাইট রেঞ্জ ৩০০ থেকে ৫০০ মিটার। কারণ দু একবার উড়ে দেখেছে যে মরুভূমিতে অতদুরে গিয়ে কামড়ানোর মতো মানুষ পায়নি। তাই ও বেটি পেরিডোমেস্টিক। তাই সাগর বা নদীর জল নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে বাড়ির ভেতরে বা আশেপাশে জমা পরিষ্কার জলের আধার বা পাত্র নিয়ে মাথা ঘামান।
জলাধার পাত্র কি কি ভাবে “ধ্বংস” করা হবে?
(১) পরিত্যক্ত মাটির পাত্র, ডাবের খোল – ভেঙ্গে ফেলুন/ টুকরো করে দিন;
(২) ব্যবহার না করে ফেলে রাখা পাত্র – উল্টে দিন যাতে জল জমতে না পারে;
(৩) ফেলে দেওয়া খালি থার্মোকল/প্লাস্টিকের পাত্র – সরিয়ে ফেলে পুঁতে ফেলুন;
(৪) ব্যবহার না করে ফেলে রাখা টায়ার – ঢেকে রাখুন, ফুটো করে দিন যাতে জমা জল বেরিয়ে যায়;
(৫) জল জমিয়ে রাখার চৌবাচ্চা, ড্রাম, ফ্রিজ, AC, কুলারের তলা, ফুলদানি, টব – জল ফেলে দিন, পরিস্কার করুন;
(৬) Overhead Tank – ঢেকে রাখুন;
(৭) বন্ধ নর্দমা – পরিস্কার করুন/ তেল ছড়িয়ে দিন;
(৮) সেচখাল – আগাছা পরিস্কার করুন;
(৯) ব্যবহার না করে ফেলে রাখা পাতকুয়া – সাতদিন অন্তর তেল ছড়িয়ে দিন।
রোজ জল পরিষ্কার করতে হবে না। ডিম ফুটে পুরো মশা হয়ে উড়ে যাওয়ার জন্য দিন দশেক সময় লাগে। তাই সপ্তাহে এক দিন অন্ততঃ জল পরিষ্কার অভিযান চালালেই হবে। ড্রাই ডে। তবে অন্য রকমের। এটা পালন করতে আমারও আপত্তি নেই। আশাকরি আপনারও থাকবে না।
যাঁরা ভাবছেন এত্তো সব ঝক্কি না পুঁইয়ে মশার ক্রিম মেখে বসে থাকবো সারাগায়ে তাঁদের জন্য এট্টু বলি। এই ইজিপ্টি ফ্রন্টাল এট্যাক পছন্দ করে না। এবং অতি নার্ভাস প্রকৃতির। মানুষকে মশা কামড়ালে স্বাভাবিক প্রতিবর্ত ক্রিয়াতে আমাদের হাত চলে। দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় তো বটেই, এমন কি বসে থাকা অবস্থায়ও বেশিরভাগ মানুষেরই হাত এত লম্বা হয় না যে গোড়ালির কাছাকাছি পায়ের অংশে হাত যাবে। তাই ওই তলার দিকের অংশে এরা বেশি কামড়াতে পছন্দ করে। তাই পুরো হাতা জামা প্যান্ট পরে শরীর ঢাকলে গরমে মারা গেলেও মশার কামড় থেকে কিছুটা বাঁচা যাবে।
মরুভূমিতে সেই সময়ে মানুষ বেশি চলাচল করতো নিশ্চয়ই আমার আপনার মতো দশটা/পাঁচটা নয়। রোদের তেজ যখন কম থাকতো। কারণ তখন রে-ব্যান এর রোদ-চশমা বের হয় নি। মানুষ বেরোত সকাল আর সন্ধ্যে। তাই বেটি এডিসও ভোরে সূর্যোদয়ের আধ ঘণ্টার মধ্যে এবং সন্ধ্যায় সূর্যাস্তের আধঘণ্টা আগে কামড়ায় সবচেয়ে বেশি। মোটামুটি দিনের বেলায়। দিনের বেলায় যারা ঘুমোয় যেমন শিশু, বৃদ্ধ, গর্ভবতী মা, এদের সব্বাইকে তাই দিনের বেলাতেও মশারি খাটিয়ে ঘুমোতে হবে। আমার মতো লোক যারা সব সময়েই ঘুমোতে ভালোবাসে তাদেরও ওই মশারি চাই।
এরা নার্ভাস বাইটার। এজন্য সামান্য নাড়াচাড়া হলেই রক্ত খাওয়া অর্ধ সমাপ্ত রেখে চাচা আপন প্রাণ বাঁচা নীতিতে উড়ে গিয়ে অন্য মানুষের গায়ে বসে। ওর পেট ভরার জন্য তাই একাধিক মানুষকে এক সিটিং এ কামড়ায়। এবং সব্বার শরীরে ডেঙ্গু ভাইরাস দান করে। তাই একজন ডেঙ্গুরুগীর বাড়িতে বা আশেপাশের বাড়ি গুলোতেই একাধিক ডেঙ্গু রুগী পাওয়া যায়। এদের তুলনায় এনফিলিস অনেক এফিসিয়েন্ট বাইটার। একজনের শরীর থেকেই পেট ভরে রক্ত খায়। এইজন্য জ্বরের রুগীকে সবসময় মশারির তলায় শোয়াবেন। এতে ওর আর কিছু উপকার হবে না। উপকারটা হবে আমার, আপনার। ওই রুগীর শরীর থেকে মশার মাধ্যমে আর ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া ছড়াবে না।
এই মশা দেখতে গাঢ় নীলাভ কালো রঙের মশার সমস্ত শরীরে আছে সাদাসাদা ডোরাকাটা দাগ। আদরের ডাকনাম টাইগার মশা। হ্যাঁ টাইগারই বটে। ঘরের অন্ধকারময় কোনা গুলোতে, আসবাবপত্র এর তলায়, পর্দার পেছনে এই টাইগার বাবু লুকিয়ে থাকতে ভালোবাসেন।
এইবার একটু নারীবাদী আলোচনা হয়ে যাক। মশা কিন্তু এমনিতে ভেজিটারিয়ান। গাছপালা, ফলের রস এসব খেয়ে বেঁচে থাকে। কিন্তু গর্ভবতী স্ত্রী মশা তার ডিমগুলোকে বড় করার জন্য রক্ত খেতে বাধ্য হয়, পশু অথবা মানুষের রক্ত। এক্ষেত্রে স্ত্রী মশা ডেঙ্গু আক্রান্তর রক্তপান করে নিজে সংক্রমিত হয় ও পেটে ভাইরাস বহন করে। প্রায় ৮-১০ দিন পর ভাইরাস মশার দেহের অন্যান্য কোষে ছড়িয়ে পড়ে যার মধ্যে আছে মশার লালাগ্রন্থি এবং শেষে এর লালায় চলে আসে। ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত এডিস মশা যখন আরেকজন সু্স্থ্ মানুষকে কামড় দেয় তখন সে ডেঙ্গুরোগে আক্রান্ত হয়। মজাটা এখানেই যে ভাইরাস শরীরে ঢুকলেও মশার কিন্তু ডেঙ্গু হয় না।
এই ভাইরাস ডিমের মধ্যে চলে যেতে পারে। ওই ডিম ফুটে তৈরি হওয়া সব এডিসের শরীরেই ভাইরাস পাওয়া যাবে। ডিমগুলো চটচটে আঠালো হয়। জল ছাড়া বছর খানেক বেঁচে থাকতে পারে। তাই জলভরা বড়সড় পাত্র, যেমন চৌবাচ্চার শুধু জল খালি করলেই হবে না, গা গুলো ঘষে ঘষে পরিষ্কার করে দিতে হবে।
ভাবছেন সবই যদি আমি করবো তাহলে ব্যাটাচ্ছেলে সরকারটা কি করবে। মশার বাচ্চা (লার্ভা) যেগুলি জলে থাকে, সেগুলি মারতে মশা মারার তেল স্প্রে করবে সরকার। ওই লার্ভা গুলো জলের মধ্যে থাকে খায়। আর নিঃশ্বাস নেবার নল টা কে জলতলের ওপরে বের করে দেয়। জলে তেলে মিশ খায় না। ভারী কোনো তেল যেমন ডিজেল ইত্যাদি যদি জলের ওপর ঢেলে দেওয়া যায়, তাহলে ঐ লার্ভাগুলো দম আটকিয়ে মারা যাবে।
ডানাওয়ালা মশা মানে এডাল্ট মশা মারা মুস্কিল। চাঁদনীর ফুটপাত থেকে সবাই একটা করে মশা মারার ব্যাট কিনবো আর সকাল সন্ধে মশার পিছনে ছোটাছুটি করবো এটা ভালো দেখাবে না। তাই আপনাদের দেখানোর জন্য মাঝে মধ্যে মশা মারতে কামান দাগা হয়। মশা মারার তেল দিয়ে ঘন কুয়াশার মত ধোঁয়াতে চারদিক ঢেকে যায়। দারুন দেখতে লাগে। কিন্তু কাজের কাজ? কয়েকটা মশা মারা যায়, কিছু পাইলে যায় বেপাড়ায়। মানে এ পাড়ার মস্তান ও পাড়ায় গিয়ে মস্তানী করে। তাই ওর চেয়ে ঢের ভালো হল মশা মারার তেল স্প্রে করা। আর তার চেয়েও ভালো জমা জল নষ্ট করা।
এতটা যাঁরা পড়ে ফেলেছেন তাঁদের নিশ্চয়ই মনে মনে নেতা হাতাদের ওপর খুব রাগ হচ্ছে। দিলো তো এতগুলো কাজ আমাদের ওপর চাপিয়ে। ও ব্যাটাদের ডেঙ্গু হয় না? আজ্ঞে সে গুড়ে বালি মশাই। সব কটা নেতা থাকে বহুতলে, বাংলায় যাকে বলে হাই-রাইজার। এই ইজিপ্টি মশা আবার উদিকেও খুব একটা এডভেঞ্চারস নয়। আলোর উৎস এর দিকে উপরে উড়ে যেতে ভালোবাসে। বেশি উঁচুতে হাওয়ার (উইন্ড) টানেল থাকে যার ধাক্কায় ছিটকে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ফলে বহুতল বাড়ির যত ওপরের তলায় থাকবেন সেখানে গিয়ে ওর ডিম পারার প্রবৃত্তি তত কম। অতএব নেতাবাবুরা বেঁচে গেলেন। একতলা ঘরে আর আজকাল ক’জন নেতা থাকে বলুন।
এতটা বকবক করার পরে ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও উপসর্গ নিয়ে দু চার কথা না বললে অন্যায় হবে। গুগুল করে ডাক্তারি শেখার চেয়েও সহজ ভাষায় শিখিয়ে দিচ্ছি। সাধারণভাবে, ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্তরা হয় উপসর্গবিহীন (৮০%) অথবা সাধারণ জ্বরের মত সামান্য উপসর্গ। বাকিদের রোগ হয় আরো জটিল(৫%), এবং স্বল্প অনুপাতে এটি প্রাণঘাতী হয়। ইনকিউবিশন পিরিয়ড (উপসর্গসমূহের সূত্রপাত থেকে রোগের প্রাথমিক পর্যায়ের মধ্যবর্তী সময়) স্থায়ী হয় ৩-১৪ দিন, কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তা হয় ৪-৭ দিন।
ডেঙ্গু সাধারণত তিন ধরনের হতে পারে: (ক) ক্লাসিক্যাল জ্বর; (খ) হেমোরেজিক জ্বর -এ ক্ষেত্রে রোগীর ত্বকের নিচে রক্ত জমাট বাধে এবং দেহের বিভিন্ন অঙ্গ যেমন পাকস্থলী ও অন্ত্রে রক্তক্ষরণ ঘটে; এবং (গ) ডেঙ্গু শক সিনড্রোম – এটি ডেঙ্গুর মারাত্মক অবস্থা। এ অবস্থায় রোগীর মৃত্যু ঘটতে পারে৷
• ক্লাসিক্যাল জ্বর: তীব্র জ্বরের সঙ্গে কাপুনি, জ্বর ১০৩ থেকে ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট উঠতে পারে৷ মাথাব্যথা (সাধারণতঃ দু’চোখের মাঝে); মাংসপেশি এবং গিঁটে প্রচণ্ড ব্যথা; গলা ব্যথা; খাওয়ায় অরুচি; বমিবমি ভাব বা বমি হওয়া; জ্বর শুরু হওয়ার তিন চার দিন পর ত্বকে র্যাশ (লাললাল ফুসকুড়ি) বের হয়৷
• হেমোরেজিক জ্বর: উপরিউক্ত মৃদু ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও উপসর্গের সাথে আরো কিছু সমস্যা হয় ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বরের ক্ষেত্রে – খাওয়ায় অরুচি, তীব্র পেটে ব্যথা হয়; রক্ত বমি; ত্বকে র্যাশ (লাললাল ফুসকুড়ি) বের হয়; নাক দিয়ে রক্ত পড়া; মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়া; পায়খানার সঙ্গে রক্ত পড়া; প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত পড়া; লসিকা গ্রন্থি ফুলে যায়; চোখ লাল হয়ে যায়।
• ডেঙ্গু শক সিনড্রোম: ঘন ঘন বমি হওয়া; নাড়ীর গতি বেড়ে যায়; রোগীর হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে যায়; জ্ঞান হারানো; রক্তচাপ হঠাৎ কমে যাওয়া; এতে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
ডেঙ্গু থেকে যা জটিলতা হতে পারে: নিউমোনিয়া; অস্থিমজ্জার স্বাভাবিক ক্রিয়া ব্যাহত হওয়া; চোখের প্রদাহ; অণ্ডকোষের প্রদাহ; ডিম্বাশয়ের প্রদাহ; শক; রক্তপাত; রক্তশূন্যতা।
এবার প্রশ্ন হচ্ছে ডেঙ্গু হয়েছে যে নিশ্চিত বুঝবেন কি করে। এডিস তো আর কানের কাছে গুনগুনিয়ে গান শুনিয়ে বলে যাবে না, নিশ্চিত ডেঙ্গুরোগী হিসেবে গণনা করার জন্য ল্যাবরেটরী পরীক্ষা দরকার।
• সম্ভাব্য ডেঙ্গুরোগী: ২-৭ দিনের জ্বরের সাথে সাথে নীচের যে কোন দু’টি বা ততোধিক লক্ষণ: (১) মাথাব্যথা(সাধারণতঃ দু’চোখের মাঝে); (২) মাংসপেশিতে ব্যথা; (৩) গিঁটে ব্যথা; (৪) ত্বকে র্যাশ (লাললাল ফুসকুড়ি); (৫) রক্তক্ষরণের লক্ষণ।
• নিশ্চিত ডেঙ্গুরোগী: নিশ্চিত ডেঙ্গুরোগীর নীচের যে কোন ল্যাবরেটরী পরীক্ষা: (১) রক্তরস বা স্বেত্কনিকায় ভাইরাস সনাক্তকরণ; (২) ভাইরাস বিচ্ছিন্নকরণ এবং নিউক্লিক অ্যাসিড সনাক্তকরণ; (৩) এলিজা পদ্ধতিতে এনএস-১ অ্যান্টিজেন বা আইজিএম অ্যান্টিবডি সেরোলজি। প্রথম দুটি পদ্ধতি অতি খরচসাপেক্ষ। পরের দুটি পদ্ধতি বিনামূল্যে জেলা হাসপাতালে উপলভ্য।
টুর্নিকেট টেস্ট: টুর্নিকেট টেস্ট সেইসব জায়গায় বিশেষভাবে উপযোগী যেখানে ল্যাবোরেটরি পরীক্ষা চট করে উপলভ্য নয়। এতে আছে পাঁচ মিনিট ব্লাড প্রেশার মাপার যন্ত্র-এর প্রয়োগ, এরপর যে কোন লাল ফুস্কুড়ি petechial থেকে হেমারেজের সংখ্যাগণনা।
এন এস ওয়ান পজিটিভ মানেই ডেঙ্গু কিনা এ নিয়ে সকলের মনে একটু দ্বিধা দ্বন্দ থাকে। তাই খোলসা করে বলা ভালো যে র্যাপিড পদ্ধতিতে (ছোটখাটো ল্যাব এ ক্যাসেট ব্যবহার) এন এস ওয়ান পজিটিভ মানেই ডেঙ্গু নয়। অন্য ভাইরাল জ্বর এও এন এস ওয়ান (নন স্ট্রাকচার প্রোটিন one) পজিটিভ হতে পারে। আবার র্যাপিড পদ্ধতিতে এন এস ওয়ান নেগেটিভ মানেই ডেঙ্গু হয়নি টা বলা যায় না। তাই জ্বরের এক থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে নিশ্চিতরূপে ডেঙ্গু ধরার জন্য এলাইজ পদ্ধতিতে (একটু ব্যয়বহুল যন্ত্রপাতিযুক্ত ল্যাব লাগে) এন এস ওয়ান হল আদর্শ।
এত কিছু জেনে ফেললাম আর চিকিৎসা সম্পর্কে কিছু জানবো না, সেটা তো হয় না। প্রথমে ভালো কথা দিয়ে শুরু করা যাক। বেশির ভাগ রুগীই কোন স্থায়ী সমস্যা ছাড়াই ডেঙ্গু থেকে আরোগ্যলাভ করে। মৃত্যুহার চিকিৎসা ছাড়া ১-৫%, এবং পর্যাপ্ত চিকিৎসায় ১%-এরও কম। ডেঙ্গু জ্বরের কোন নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। রোগীর লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসা করতে হবে। বাড়িতে নিয়মিত দেখাশোনার সঙ্গেরোগীকে বিশ্রামে থাকতে হবে৷ প্রচুর তরল খাবার খেতে দিতে হবে৷ ক্ল্যাসিক্যাল ডেঙ্গু সাধারণত ৭ থেকে ১০ দিনে ভালো হয়ে যায়। ডেঙ্গুজ্বর আক্রান্ত রোগী কে মশারীর মধ্যে রাখতে হবে। “বিপদসূচক চিহ্ন”-এর উপর, বিশেষ করে যাদের স্বাস্থ্যের সমস্যা আগে থেকেই আছে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে৷
ডেঙ্গুর কথা আসলেই অবধারিত ভাবে প্লেটলেট বা অনুচক্রীকা এর কথা আসবেই। জেনে নেয়া যাক যে প্লেটলেট দেওয়া কতটা জরুরি। ডেঙ্গুতে মৃত্যু ৯৯% ক্ষেত্রে প্লেটলেট কম হওয়ার জন্য বা রক্তক্ষরণ থেকে হয় না। DSS বা ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোম থেকে। এতে ব্লিডিং হয় না। রক্তধমনীর দেওয়াল থেকে জল বেরিয়ে যাওয়া মৃত্যুর মুখ্য কারণ। অর্থাৎ লাখে একজনের রক্তক্ষরণে মৃত্যু হয়। প্লেটলেট এর সংখ্যা হ্রাসই ডেঙ্গুতে রক্ত ক্ষরণ এর একমাত্র কারণ নয়। প্লেটলেট দিয়ে যে রক্তক্ষরণ আটকানো যায় না। প্লেটলেট ২০০০০ এর নিচে নেমে গেলে ও রক্তক্ষরণের লক্ষণ দেখা দিলে প্লেটলেট দেওয়া হয়। পেঁপের রস ইত্যাদি খেলে প্লেটলেট বেড়ে যায় একরম কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই এখনো।
এত কিছু জানা বা জানানোর দরকার হত না যদি হাতে একটা যুতসই ভ্যাকসিন থাকতো। সেটা যতদিন না বেরোচ্ছে ততদিন আমাকে কষ্ট করে লিখতে হবে, আপনাকে কষ্ট করে পড়তে হবে। শুধু পড়া নয়, জমা জল সরানোর কাজে হাত লাগাতে হবে কারণ আপনিও বুঝতে পেরেছেন যে মশার বংশ ধ্বংস না করে নিস্তার নেই।
অথ সমাপ্ত এডিস ইজিপ্টি কথা। বাবা ইজিপ্ট তথা মিশর। ধন্য তুমি এমন মশার জন্ম দিয়েছে বলে।
১৬ই মে ছিল জাতীয় ডেঙ্গু দিবস।