বিপ্লবদা এর সাথে আমার তিনটে মিল। আমার মতই চাকরি জীবনের গোড়াতে বিপ্লবদা কুষ্ঠ প্রকল্পে মেডিক্যাল অফিসার হিসেবে কাজ করেছেন। আমি আর বিপ্লবদা একই সাথে অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ হাইজিন এন্ড পাবলিক হেলথ থেকে জনস্বাস্থ্য বিজ্ঞান নিয়ে পিজি করেছি। আমাদের সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থার তিনটে ক্যাডার এর একটা ডাবলুবিপিএইচএএস এর সদস্য আমরা দুজনেই অর্থাৎ স্বাস্থ্য প্রশাসক।
বিপ্লবদা কলকাতার সেন্ট্রাল মেডিক্যাল স্টোরে এসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর অফ হেলথ সার্ভিস (ইকুইপমেন্ট এন্ড স্টোর) পদে কাজ করছিলেন যে কাজের অন্যতম ছিল বিভিন্ন জেলায় স্বাস্থ্যকর্মীদের পিপিই গ্লাভস মাস্ক ইত্যাদি সরবরাহ যাতে সুষ্ঠুভাবে হয় তার তদারকি করা। কি ভাবে বিপ্লবদা করোনা সংক্রমিত হয়েছিলেন জানি না। আন্দাজ করতে পারি। অসংখ্য ট্রাক ড্রাইভার, লোডার, এদের সাথে আক্ষরিক অর্থে কাঁধে কাঁধ আর হাতে হাত মিলিয়ে রাত দিন এক করে কাজ করার জন্যই বোধহয় এই সংক্রমণ। তার পরে হাসপাতালে ভর্তি। অবস্থার অবনতি হওয়াতে ভেন্টিলেটর। আজ চলে গেল বিপ্লবদা।
আমাদের স্বাস্থ্য প্রশাসক ক্যাডারের প্রথম মৃত্যু। ফ্রন্টলাইনে যে ডাক্তার বন্ধুরা কাজ করছেন তাঁরা যাতে ঠিকমতো সুরক্ষা কবচ পান তার জন্য বিপ্লবদা শেষ দিন অবধি কাজ করে গেলেন একজন নেহাৎ মাঝারি স্তরের আমলা হিসেবে যার কোনো বড় মাপের নীতি ঠিক করার ক্ষমতা ছিল না কেবল নিজের আন্তরিকতা দিয়ে কাজ করার অভ্যেস ছিল, অভ্যেস ছিল ন্যস্ত দায়িত্ব হাসিমুখে নিঁখুত ভাবে পালন করার। সেই বিপ্লবদা আজ চলেই গেল বরাবরের মতো।
দূরের জেলা থেকে জুনিয়ার হিসেবে যখন স্বাস্থ্যভবনে যেতাম তখন যে গুটিকয় ঘরে সিনিয়রদের থেকে উষ্ণ আন্তরিকতা ভরা অভ্যর্থনা পেতাম তার মধ্যে একটা ঘর ছিল প্ল্যানিং এন্ড ডেভেলপমেন্ট এর ঘর আর সেই ঘরে ডেস্কের পেছনে বসা বিপ্লবদা। মারা যাওয়ার আগে বড় কষ্ট পেয়ে মারা গেল বিপ্লবদা। আজ যেখানেই থাকো ভালো থেকো বিপ্লবদা।
ডাঃ বিপ্লব দাশগুপ্ত অমর রহে।