২১ মে পর্যন্ত রাজ্য সাবধানে থাকতে চায়।
লকডাউন বাড়বে কিনা স্পষ্ট বার্তা না দিলেও নবান্নে একথা জানিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একইসঙ্গে তিনি বিভিন্ন ক্ষেত্রে কেন্দ্রের স্ববিরোধিতার নীতি নিয়ে সরব হয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, কোথাও এক নির্দেশিকায় রাজ্যকে বলা হচ্ছে লকডাউন কঠোর করতে, আবার পরবর্তীতে বলা হচ্ছে দোকান খুলে দিতে। কেন্দ্রের এই দ্বিচারিতার ফলে একটা ধোঁয়াশা তৈরি হচ্ছে বলে মনে করছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই এ বিষয়ে কোন হালকা মনোভাব দেখাতে চাইছে না রাজ্য সরকার। বরং সংক্রমণকে আটকে রাখতে পরিকল্পনা মাফিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, রাজ্যের সর্বত্র করোনা ভাইরাসের সংক্রমনের পরিস্থিতি এক রকম নয়। ফলে রাজ্য সরকার কিছু কিছু জায়গায় লকডাউন শিথিল করার কথা ভাবছে। কিন্তু কোথায় কিভাবে লকডাউন শিথিল করা হবে তা আগামী দু-তিন দিনের মধ্যেই রাজ্য সরকারের তরফ থেকে ঘোষণা করা হতে পারে। এদিন মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, রাজ্য সরকারও কিছু কিছু বিষয়ে ছাড় দেওয়ার কথা বিবেচনা করছে। কোথায় কোথায় ছাড় দেওয়া হবে তা আগামী পরশু দিনের বৈঠকে ঠিক হতে পারে বলে নবান্ন সূত্রে খবর।
এদিকে সোমবার রাজ্যের মুখ্যসচিব রাজীব সিনহা জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে রাজ্যে করোনা আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা ৫০৪। গতকাল পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা ছিল ৪৬১। আজ নতুন করে ৪৭ জনের দেহে সংক্রমণ ধরা পড়েছে। একইসঙ্গে এদিন ৪ জনকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। ফলে এই মুহূর্তে রাজ্যে সংক্রমণমুক্ত হয়েছেন মোট ১০৯ জন রোগী। এদিন মুখ্য সচিব আরও জানিয়েছেন, আমাদের রাজ্যে এখনও পর্যন্ত করোনা টেস্টিং হয়েছে ১২০৪৩ জনের। এর মধ্যে গত ২৪ ঘন্টায় টেস্টিং হয়েছে ১১৫০ জনের। তিনি আরও জানান, এই মুহূর্তে সরকারি কোয়ারেন্টাইন এ রয়েছেন ৫৪৪৭ জন। হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন মোট ১৮৬২৯ জন। এদিন মুখ্য সচিব বলেন রাজ্য সরকারের তরফ থেকে বিভিন্ন দিক বিশ্লেষণ করে বেশকিছু শিল্পক্ষেত্রকে ছাড় দেওয়া হয়েছে। এখনও পর্যন্ত রাজ্য সরকারের কাছে ছাড়ের জন্য আবেদন জমা পড়েছিল ৪৩৭০টি। এরমধ্যে ছাড় দেওয়া হয়েছে ২০৮৪ টি আবেদনে। তবে আবেদন বাতিল হয়েছে ১৪৬৩ টি। মুখ্য সচিব জানিয়েছেন যাতে কনটেইনমেন্ট কোনোভাবে ব্যাহত না হয় সে কথা ভেবেই এই আবেদন গুলো বাতিল করা হয়েছে।
এদিন করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে দেশের সঙ্গে রাজ্যের একটি তুলনামূলক তথ্য তুলে ধরেন মুখ্যসচিব। সেখানে তিনি বলেছেন, গত ২৫ মার্চ রাজ্যে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৯। ২৬ এপ্রিল এই সংখ্যাটা বেড়ে হয়েছে ৫০৯। অর্থাৎ গত এক মাসে এ রাজ্যে পজেটিভ পাওয়া গিয়েছে ৫.৪ শতাংশ। কিন্তু গোটা দেশে এই সংখ্যাটা ৫.২৫ শতাংশ। সুস্থ হওয়ার সংখ্যা দেখলে ২৫ মার্চ এ রাজ্যে ছিল শূন্য কিন্তু ২৬ এপ্রিল এই সংখ্যাটা ১০৯ অর্থাৎ সুস্থ হয়েছেন ১৮ শতাংশ মানুষ। যা জাতীয় গড়ের তুলনায় ভালো। একইভাবে গত একমাসে এ রাজ্যে মৃত্যুহার ২.৬ শতাংশ। এই মুহূর্তে জাতীয় গড় ৩.১ শতাংশ। এই তথ্য বিশ্লেষণ করে মুখ্য সচিব জানিয়েছেন এ কথা বলাই যায় আমাদের রাজ্যের হাসপাতালগুলিতে চিকিৎসা ভালই হচ্ছে।
করোনা পরিস্থিতি নিয়ে এদিন এক মন্ত্রিগোষ্ঠী গঠন করে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এক মাস হয়ে গেল। শুধু করোনা ছাড়া অন্য কোনও কাজকর্ম হচ্ছে না। কিন্তু সরকারকে অন্য কাজকর্মও করতে হবে। তাই আজ ক্যাবিনেট কমিটি অন কোভিড ম্যানেজমেন্ট করা হচ্ছে। এবার থেকে তারাই দেখবে এই সংক্রান্ত সব বিষয়। আমি এটার উপর নজর রাখব। আমাকে তাঁরা টাইম টু টাইম রিপোর্ট করবে।’
মুখ্যমন্ত্রী জানান, এই কমিটির দায়িত্বে থাকছেন অর্থ ও শিল্পমন্ত্রী অমিত মিত্র। এছাড়াও শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, পুরমন্ত্রী ও কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম, স্বাস্থ্যপ্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য থাকবেন এই কমিটিতে। পাশাপাশি, রাজ্যের মুখ্যসচিব, স্বাস্থ্যসচিব এবং স্বরাষ্ট্রসচিব থাকবেন এই কমিটিতে। কমিটির কো অর্ডিনেটর হিসেবে মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে থাকবেন সেলিম।
পাশাপাশি, মুখ্যমন্ত্রী জানান, এই লকডাউন আরও কিছুদিন চলবে। সেই কারণেই এই কমিটি তৈরি করা। ইতিমধ্যেই রাজ্য প্রশাসনের কর্তারা আজ বৈঠক করে গ্রিন, অরেঞ্জ, রেড জোন তৈরি করেছে। গ্রিন জোনে বেশি ছাড়, অরেঞ্জ জোনে কম ছাড় ও রেড জোনে যেরকম পরিস্থিতি সেরকমই রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে যদি কোনও এলাকায় সংক্রমণের প্রমাণ মেলে তাহলে সেই এলাকাকে রেড জোন ঘোষণা করা হবে বলেই জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।