শোনা যাচ্ছে মেডিক্যাল কলেজের প্রায় ৩৮ জন ডাক্তার কোভিড পজিটিভ। তাদের কোয়ার্যান্টাইন বা আইসোলেশনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বেসরকারি ডাক্তারদের কাছে আবেদন করেছেন সংক্রামিত চিকিৎসকদের পরিবর্ত হিসাবে কাজ করার জন্য।
একদমই কোন আশ্চর্যজনক ঘটনা নয় চলতে থাকা মহামারীতে। কিন্তু এখানে একটা প্রশ্ন এসে পরে খুব স্বাভাবিকভাবেই। এখনো পর্যন্ত আমরা লক্ষ্য করছিলাম তুলনামূলক ভাবে ঘোষিত কোভিড হাসপাতাল-গুলিতে চিকিৎসক তথা স্বাস্থ্যকর্মীদের সংক্রামিত হবার সংখ্যা কম, নন কোভিড হাসপাতাল গুলির তুলনায়।
কিন্তু মেডিক্যাল কলেজের ঘটনা একদমই অন্য কথা বলছে।
তাহলে কি সুরক্ষার কোন ত্রুটি রয়ে যাচ্ছে ফ্রন্টলাইন কোভিড ওয়ার্কারদের? নাকি অতিরিক্ত কাজের চাপে বাড়ছে সংক্রমণ? উত্তরটা হয়তো কিছুদিনের মধ্যেই জানা যাবে। কিন্তু চিকিৎসাকর্মীদের এই রোগাক্রান্ত হয়ে চলে যাওয়ার জায়গাটা ভরাট করবে কে?
বেসরকারি ডাক্তারেরা সবাই নিজ নিজ ক্ষেত্রে তাঁদের মত করে কোভিডের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। তাঁদের পক্ষে নিজেদের কাজ ফেলে মেডিক্যাল কলেজে যোগদান করা মুশকিল। দেখা যাক।সরকার হয়তো কিছু বন্দোবস্ত করার চেষ্টা করবেন। কিন্তু ডাক্তারদের এই স্বল্পতা ভোগাবে ভবিষ্যতেও।
এই প্রসঙ্গে কয়েক বছর আগে হয়ে যাওয়া এক দুর্গাপুজোর কথা মনে পড়ে গেল। ঠিক এইরকমই একটা সময়ে প্যান্ডেলগুলিতে ঠাকুরের আগমন ঘটছে। আচমকাই খবর এলো কোন এক প্যান্ডেলে মহিষাসুরের পরিবর্তে দাঁড়িয়ে রয়েছেন একজন স্টেথোস্কোপ ঝোলানো চিকিৎসক,মায়ের ত্রিশূল বিদ্ধ হয়ে। এই নিয়ে অনেক বিতর্ক শুরু হয়ে যায়। সোশ্যাল মিডিয়াতে এর পক্ষে এবং বিপক্ষে মতামত রাখতে শুরু করেন বহু মানুষ।
ডাক্তার নিগ্রহ তখন সূর্য ওঠার মতোই একটি স্বাভাবিক ঘটনা। গ্রাম শহর নির্বিশেষে শারীরিক অত্যাচার জুটছে ডাক্তারদের, গায়ে মাখিয়ে দেওয়া হচ্ছে কাঁচা পায়খানা। মানুষজন মেনেও নিয়েছেন তা অম্লানবদনে। তাই মহিষাসুরের জায়গায় ডাক্তারকে বসিয়ে দেওয়াতে আপত্তি করেননি বেশিরভাগ জনগণ। শেষ অবধি একমাত্র ডাক্তারদের আন্দোলনের ফলেই মহিষাসুর আবার নিজ স্থলাভিষিক্ত হন, দুর্ভাগা চিকিৎসক কে সরিয়ে দিয়ে।
দুর্গাপুজো হৈ হৈ করে শুরু হয়ে যায়।
ডাক্তার নিগ্রহ এই মহামারীর চাপেও ঘটে চলেছে এদিক ওদিক। মাঝেমধ্যে সংবাদ মাধ্যমে ভেসে উঠছে সে খবরও। কোভিডও বাঁচাতে পারেনি ডাক্তারদের মার খাওয়া। মা দুর্গা বোধহয় সেইসময় অলক্ষ্যে হেসেছিলেন।
এবারো দুর্গাপুজো এসে পড়েছে। কয়েকদিনের মধ্যেই প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে ঘটবে মায়ের আবাহন। আর হাসপাতালে হাসপাতালে উপচে পড়বে কোভিড।
কিন্তু মহিষাসুর ডাক্তারকে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না।
উপযুক্ত লেখা।