মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু মহাশয় বছর কয়েক আগে ঘোষণা করেছিলেন, ‘তৃণমূলের ছেলেরাই চাকরি পাবে… কীভাবে পাবে বলব না।’ তা সে কীভাবে সাদা খাতা জমা দিয়ে চাকরি পেয়েছে আমরা দেখেছি। এখন তিনি অধ্যাপকদের আহ্বান করেছেন মমতাবাদী হতে। এই মমতাবাদী বস্তুটা কী?
বছরের পর বছর SSC বন্ধ করে রাখা হয়েছিল। মাঝে যে দু-একবার হয়েছে সেখানে দুর্নীতি তার শেষ সীমা অতিক্রম করেছে। প্রাথমিকে নিয়োগের টেট পরীক্ষার ক্ষেত্রেও তাই। কীভাবে চাকরি বিক্রী হয়েছে সে সব আপনারা জানেন। অন্যদিকে বঞ্চিত ছেলেমেয়েগুলো বছরের পর বছর রাস্তায় মাথা খুঁড়ে মরেছে। মমতাময়ী মুখ্যমন্ত্রী কর্ণপাত করেননি। ২০১৯-এ লোকসভা নির্বাচনের আগে ধর্মতলায় আমরণ অনশন করছিল ওরা। ২৬ দিন অতিক্রম করার পর প্যাঁচে পড়ে মুখ্যমন্ত্রী অনশন মঞ্চে এসে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় যার বিরুদ্ধে মূল অভিযোগের তীর তাঁকেই দায়িত্ব দেন কমিটি গড়ে বিষয়টাকে দেখতে অর্থাৎ বিষয়টাকে ধামা চাপা দিতে। তিনিও সুনিনুণভাবে তাই করেছেন। বছরের পর বছর এই ছেলেমেয়েগুলো মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আর্জি জানিয়েছে মেধা তালিকা প্রকাশ হোক, দুর্নীতির তদন্ত হোক। উনি নীরব থেকেছেন। অবশেষে হাইকোর্টের হুড়ো খেয়ে সিবিআই যখন পার্থবাবুকে ধরল, কোটি কোটি টাকা পাওয়া গেল, আরো নেতা মন্ত্রী জেলে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী বেমালুম বলে দিলেন উনি কিচ্ছুটি জানতেন না। যোগ্য চাকরী প্রার্থীরা যখন দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর ‘দুর্নীতি দুর্নীতি’ বলে চিৎকার করেছে, ২০১৯ সালেই মন্ত্রী পরেশ অধিকারীর মেয়ের দুনম্বরী করে চাকরি পাওয়ার কথা বলেছে, অনশন করেছে, বস্তা বস্তা স্মারকলিপি জমা দিয়েছে, রাস্তায় মাথা খুঁড়েছে তদন্ত তো দূরের কথা, মুখ্যমন্ত্রী ফিরেও তাকাননি। অথচ এরা যখন নিরুপায় হয়ে মামলা করল এবং হাইকোর্টের হুড়কোয় যখন অযোগ্য প্রার্থীদের চাকরী যেতে বসল তখন তাদের বাঁচানোর জন্য আলাদা পদ (সুপার নিউমেরারি) তৈরী করতে গোটা মন্ত্রীসভাকে দিয়ে সিদ্ধান্ত করালেন। মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী আপনাদের দলবলের চুরিকে বৈধতা দিতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী একবারও ভেবে দেখলেন না যারা টাকা দিয়ে চাকরি কিনেছেন সেই অযোগ্য, অশিক্ষিত শিক্ষকের হাতে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে তুলে দেওয়াটা কতবড় অপরাধ! এই অধিকার আপনাদের আমরা দিইনি। যেমন শুধু আপনাদের দলের ছেলেরাই চাকরি পাবে একথা বলার স্পর্ধাও আপনাকে জনগণ দেয়নি।
আজ সুপ্রিম কোর্টে হাজার হাজার যোগ্য প্রার্থীর ভাগ্য সরু সূতোর ওপর ঝুলছে। কীভাবে আপনাদের মন্ত্রীর নেতৃত্বে এই চাকরী চুরির ষড়যন্ত্র হয়েছিল, সমস্ত OMR sheet ইত্যাদি ধ্বংস করে ফেলা হয়েছিল যাতে কিছুতেই যোগ্য অযোগ্য পার্থক্য করা না যায় সেকথা এখন সবাই জানে। আর এই পৃথকীকরণ না করা গেলে সুপ্রিম কোর্টে সকলের চাকরি যাবে।
একটা প্রজন্মকে ধ্বংস করেছেন, SSC, TET বন্ধ, হাজার হাজার শিক্ষক পদ শূণ্য, শয়ে শয়ে সরকারী সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। গোটা শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়ে এখন নিষ্পাপ মুখে বলে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী এবং আর সকল আমচা চামচা এক রা শেয়ালেরা, ‘আমাদের তো চাকরি দেবার ভারি ইচ্ছে, রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রকারীরা মামলা করে করে কিছুই করতে দিচ্ছে না। তারা চায় না কেউ চাকরি পাক।’
ধ্যাষ্টামোর একটা সীমা থাকা উচিৎ, অনর্গল মিথ্যে কথা বলারও।
অধ্যাপকদের মমতাবাদী হতে বলা মানে কি তাহলে এই ধ্যাষ্টামোবাদী জোচ্চুরিপন্থী হতে বলা?










