আজ দেরি হলে চলবে না। অথচ আজ প্রতি পদক্ষেপে তাই হচ্ছে।
বাজারে গেছি। যুথী বলেছে খুব অল্প করে মাছ নিতে। ও আবার জ্যান্ত বড় কাটা কাতলা ছাড়া অন্য মাছ খেতে চায় না। তো বড় কাতলা কাটা নিতে গেলে ভাগীদার না আসা অবধি অপেক্ষা করতেই হয়। হল।
মাছ অল্প কেন? অন্যদিনের মত এক্সট্রাটা ফ্রিজে রাখা যাবে না। আমি মানি না বটে, যুথীর কিন্তু আচার বিচার খুব। এমনিতে চূড়ান্ত স্মার্ট সে। পার্টিতে, বন্ধুদের জমায়েতে আমাকে হাবি বলে উল্লেখ করে। একান্ত ভালোবাসাবাসির প্রকরণের আশ্লেষে আমার পিঠ খামচাতে খামচাতে তুই তোকারি খিস্তি সবই করে নিয়ম মত।
কিন্তু ওই যে, আচার বিচার! মেলামেশা পর্বের শেষে আমার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে। রেগুলার। বাধা দিলে বলে, বাঃ, তুমি গুরুজন না! পা মানে আমার গোড়ালিজোড়া তোমার খোলা পিঠে লাগছিল তো একটু আগে। টের পাওনি?
আমি লজ্জা পেয়ে যাই। বাৎস্যায়ন ভঙ্গী মনে করে আর একবার উত্তেজিত হই।
হ্যাঁ, যা বলছিলাম, আচার বিচার। বাবা হাসপাতালে ভর্তি। এখন তখন অবস্থা।
যুথী বলেছে, ভালোমন্দ কিছু হয়ে গেলে বাড়িতে থাকা সব আমিষ খাবার ফেলে দিতে হবে। চালডালের বেলা এই নিয়ম নাকি নেই। কিন্তু মাছ মাংস নট অ্যালাউড। এমনকি ফ্রিজে রাখলেও। তাই মাছ কিনতে হবে অল্প করে, যাতে ফেলা না যায়।
ডাক্তার ফোনে বলেছিল, দেরি না করতে। ওরা কী সব ইনভেস্টিগেশন করাতে চায়। পেট স্ক্যান। মুম্বাইতে ব্লাড পাঠাতে হবে। তার পারমিশন।
অফিসে ছুটি নিয়েছি। হাসপাতালে যাবার জন্য ক্যাব বুক করলাম। তাতেও দেরি। পরপর তিনজন বুকিং ক্যানসেল করল। অগত্যা বাস। অন্যদিন হেঁটে স্ট্যান্ডে যাই। আজ তাড়াতাড়িতে আবাসনের সামনের টোটো স্ট্যান্ড। বাসরাস্তার আধ কিলোমিটার দূরে টোটো থামিয়ে বলল আর যাবে না। রাস্তা নাকি খোঁড়া।
অগত্যা বাকিটুকু হেঁটে। সেই দেরিই হল। ভিড় বাসে কোনওক্রমে হাসপাতালে। রিসেপশনে দাঁড়িয়ে পকেট থেকে মোবাইল বার করে দেখি গোটা পাঁচেক মিসড কল। হাসপাতালেরই।
রিসেপশনিস্ট বলল, অ্যাডমিশনের বড্ড চাপ। দেখুন গিয়ে, এখনও হয় তো বডি বেডে আছে। নইলে মর্গে। আমরা বিলটা ক্লিয়ার করে রাখছি।
মর্গেই থাক।
দেরি হলে চলবে না। আমার তো আচার মানামানি নেই, মানে এককথায় মুক্তমনা। বাড়িতে ফিরে, যুথীকে নিয়ে খেতে বসতে হবে। ওগে আগে বলার প্রশ্নই নেই। নইলে কাতলার কালিয়া ফেলা যাবে।
খাওয়া খাবার তো উগড়ে ফেলবে না নিশ্চয়ই।
তারপর যুথীকে নিয়ে ফের হাসপাতালে ফিরে বাবার বডি নিয়ে শ্মশান। তাড়াতাড়ি সেরে ফেলতে হবে। গতকালই যুথীর প্রেগন্যান্সি টেস্ট পজিটিভ এসেছে। বেশি অনিয়ম চলবে না। আমার আর ওর যত্ন নেবার জন্য নতুন কেউ আসছে।
আমার এতসব দেরি দেখেই বোধহয় বিবেচক বাবা বেশি দেরি করেনি। মায়ের কাছে চলে গেছে তড়িঘড়ি।
★