An Initiative of Swasthyer Britto society

  • Home
  • About Us
  • Contact Us
Menu
  • Home
  • About Us
  • Contact Us
Swasthyer Britte Archive
Facebook Twitter Google-plus Youtube Microphone
  • আরোগ্যের সন্ধানে
  • ডক্টর অন কল
  • ছবিতে চিকিৎসা
  • মা ও শিশু
  • মন নিয়ে
  • ডক্টরস’ ডায়ালগ
  • ঘরোয়া চিকিৎসা
  • শরীর যখন সম্পদ
  • ডক্টর’স ডায়েরি
  • স্বাস্থ্য আন্দোলন
  • সরকারি কড়চা
  • বাংলার মুখ
  • বহির্বিশ্ব
  • তাহাদের কথা
  • অন্ধকারের উৎস হতে
  • সম্পাদকীয়
  • ইতিহাসের সরণি
Menu
  • আরোগ্যের সন্ধানে
  • ডক্টর অন কল
  • ছবিতে চিকিৎসা
  • মা ও শিশু
  • মন নিয়ে
  • ডক্টরস’ ডায়ালগ
  • ঘরোয়া চিকিৎসা
  • শরীর যখন সম্পদ
  • ডক্টর’স ডায়েরি
  • স্বাস্থ্য আন্দোলন
  • সরকারি কড়চা
  • বাংলার মুখ
  • বহির্বিশ্ব
  • তাহাদের কথা
  • অন্ধকারের উৎস হতে
  • সম্পাদকীয়
  • ইতিহাসের সরণি
Search
Close
  • আরোগ্যের সন্ধানে
  • ডক্টর অন কল
  • ছবিতে চিকিৎসা
  • মা ও শিশু
  • মন নিয়ে
  • ডক্টরস’ ডায়ালগ
  • ঘরোয়া চিকিৎসা
  • শরীর যখন সম্পদ
  • ডক্টর’স ডায়েরি
  • স্বাস্থ্য আন্দোলন
  • সরকারি কড়চা
  • বাংলার মুখ
  • বহির্বিশ্ব
  • তাহাদের কথা
  • অন্ধকারের উৎস হতে
  • সম্পাদকীয়
  • ইতিহাসের সরণি
Menu
  • আরোগ্যের সন্ধানে
  • ডক্টর অন কল
  • ছবিতে চিকিৎসা
  • মা ও শিশু
  • মন নিয়ে
  • ডক্টরস’ ডায়ালগ
  • ঘরোয়া চিকিৎসা
  • শরীর যখন সম্পদ
  • ডক্টর’স ডায়েরি
  • স্বাস্থ্য আন্দোলন
  • সরকারি কড়চা
  • বাংলার মুখ
  • বহির্বিশ্ব
  • তাহাদের কথা
  • অন্ধকারের উৎস হতে
  • সম্পাদকীয়
  • ইতিহাসের সরণি
Search
Close

প্রক্সি রহস্য

IMG_20200227_002808
Dr. Swapan Kumar Biswas

Dr. Swapan Kumar Biswas

Paediatrician, pathologist, poet, writer
My Other Posts
  • February 27, 2020
  • 8:01 am
  • 11 Comments

পূজো আসবো আসবো করছে। মনটা কেমন হু হু করতে শুরু করেছে। এই ভরা যৌবনে শরতের নীলাকাশে সাদা মেঘ উড়লেও আমার আকাশে কোন প্রজাপতি ওড়েনি। শুধু আমার কেন, আমাদের অনেকেরই। এই লাইনে এসে নিজেকে … লা বলে গালাগালি দিয়েও গেয়ে উঠছি লা লা লা লা আ…আ…। এ সব হতাশা কাটাবার কৌশল। হতাশ না তো কি? এই শরতের আগমনে কোথায় বান্ধবীর নীল আঁচল ধরে গড়ের মাঠে ঘুরবো, তা না রাত জেগে ক্যা ক্যা ফ্যা ফ্যা শুনতে শুনতে হাপিয়ে গেলুম রে! তা লা লা লা আ… করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। কেন যে ছাই মরতে এই লাইনে এলাম? কে এমন মাথার দিব্যি দিয়েছিল? তখন তো বোঝোনি বাছাআ, কতো ধানে কতো চাউল? মনে এক রাশ স্বপনে ছিনু কি মোহে- যে গলায় স্টেথোর মালা ঝুলিয়ে গট গট করে হাসপাতালের করিডরে হাটবো, আর লোকে গদ গদ ভাবে হাত কচলাবে! লা লা লা আ…। এখন দেখো, কিতনা ধানমে কিতনা চাঊল হ্যায়! তাও কয়েকজন অল্প বয়সী ট্রেনি সিস্টার আছে, তাই গাল গল্প করতে মন্দ লাগে না। না হলে জীবনতো মরুভুমির মতো শুকনো। কে তোমাকে ভেজাতে আসবে বাবা! পাঁচটায় টাইম দেবে গড়ের মাঠে বসে বাদাম ছাড়াবে বলে, সে এসে দাঁড়িয়ে থাকবে গাছ তলায়, আর তুমি আধঘন্টা পরে তাকে বলবে- “শোনো, একটা খারাপ পেসেন্ট এসেছে, জানো আর যেতে পারবো না, লক্ষীটি!” তখন লক্ষীটি তোমাকে শুনু-মুনু করবে? না চোখে আগুন জ্বালাবে? একদিন এক্সদিও মাফ করে দিন দিন কে সইবে? তুমি হাড়কাঠে গলা দিয়েছ বলে অন্যকেও দিতে হবে, এমন তো কথা নেই।

“বড়ি শুনি শুনি হ্যায়, জিন্দেগি…” গুন গুন করে রাত দশটায় টেবিল থেকে উঠতে যাবো, এমন সময় নীচে গেটের কাছে এম্বুলেন্স থামার শব্দ, কান্নাকাটি আর গেট ম্যানের গেট খোলার শব্দ। বুঝলাম আসছে আরো এক ‘সিরিয়স’ শিশু। শিশু বিশেষজ্ঞ হতে গিয়ে এ আর এক ঝামেলা হয়ে গেছে। অসহায়, অবুঝ কথা বলতে না পারা অসুস্থ বাচ্চাগুলোকে দেখলে আর ঠিক থাকতে পারি না। যতোক্ষণ তারা একটু স্বস্তি না পায়, ততক্ষণ খাওয়ার কথা মনে আসে না। ইচ্ছাও করে না। এ আরেক যন্ত্রণা! তখন রাত-দিনও মনে থাকে না।

সিঁড়ি দিয়ে তর তর করে একটি কচি বাচ্চাকে তোয়ালে জড়িয়ে নিয়ে প্রায় কাঁদতে কাঁদতে উঠে এলো বছর তিরিশের এক মহিলা। তার পিছনে পিছনে প্রায় বুক চাপড়ে চীৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে এলেন এক প্রৌঢ়া । পিছনে আর দুজন ভদ্রলোক। বুঝলাম মারাত্মক কিছু হয়েছে। অনেক সময় এভাবে সব বাচ্চা নিয়ে আসে, যে অনেক আগেই মারা গেছে। স্বভাবত প্রতিবর্ত ক্রিয়ায় উঠে দাঁড়ালাম সম্ভাব্য জরুরী মোকাবিলার জন্য।

সাথে সাথে সিস্টাররা বেড দিয়ে দিল। দু’জন এক সাথে এগিয়ে গেল, চলে এলো অক্সিজেন। করা হলো স্যালাইনের লাইন। জানা গেল, বাচ্চা দুধ বমি করেছিল, সেই বমিতে মুখ পুড়ে গেছে- যেমন এসিডে পোড়ে।

প্রৌঢ়া শিশুর ঠাকুমা। এসেছে মা, ঠাকুরমা, বাবা ও জ্যাঠামশায়। সবাইয়ের পোষাক-আশাক বলে দেয়, বেশ শিক্ষিত ও সম্ভ্রান্ত বাড়ীর লোক। কিন্তু শিশুর এই ঘটনায় সবাই একেবারে মুষড়ে পড়েছে। মা আছে বেডের কাছে, আর ঠাকুরমা ক্রমাগত কেঁদে চলেছে, মাঝে মাঝে বিলাপ করছে- কেন এমন হলো এই বলে। অন্যরাও উৎকন্ঠিত। তাইতো, কি করে বমিতে মুখ পুড়বে? নেহাৎ ঠাকুরমা ঠিক সময়ে গিয়ে দেখতে পেয়ে বমিটা মুছে দিয়েছিল, তাই। না হলে যে কি হতো। আরো বেশী পুড়ত হয়তো!

পরীক্ষা করে দেখলাম, সত্যিই তেমন কিছু হয়নি। অল্পের উপর দিয়েই গেছে। মুখের ডান দিক দিয়ে বমি গড়িয়ে পড়ার দাগ ধরে একটা লিকুইড বার্ন হয়েছে। এসিড খেয়ে গড়িয়ে পড়লে যেমন হয়। তবে মুখের মধ্যে অল্প পরিমাণেই গেছে। এক দিকটায় একটু পুড়েছে। অন্যদিক ভালো আছে। কয়েকদিন ওষুধ পড়লে ভালো হয়ে যাবে।

কিন্তু মেলাতে পারছিনা। আমিও না, তপনও না। নিজেরাই ঘেঁটে যাচ্ছি। এটুকু জানি, পেটের মধ্যে থাকে হাইড্রোক্লোরিক এসিড। তার তীব্রতাও অনেক। তা হজমে সাহায্য করে। কিন্তু বমি যখন হয়, তখন তার তীব্রতা অনেক কমে যায়। কোন দিনতো শুনিনি, দেখিওনি যে বমিতে মানুষের মুখ পোড়ে! কোন শিশুরও নয়। তা হলে?

টেবিলে বসে ‘ডিরেকশান’ লিখতে লিখতে এ কথাই ভাবছিলাম। আলোচনাও করছিলাম তপনের সাথে। কিন্তু কোন ক্লু পাচ্ছিলাম না।

এগিয়ে এলেন শিশুটির বাবা, “ডাক্তারবাবু, কি ভাবে হলো বলুন তো? আমরা তো কিছুই বুঝতে পারছি না!”

আমি কি ছাই বুঝতে পারছি, যে বোঝাবো? কিন্তু সে রহস্য তো এখানে ফাঁস করা চলবে না। লজিক্যালি কিছু একটা গোজাঁমিল তো দিতে হবে! বললাম, দেখুন, আমাদের পেটে তো এসিড থাকে, আর শিশুর স্কিন খুব, খুবই নরম আর টেন্ডার। খুব সেনসিটিভ। তাই কখনো কখনো এমন হতেই পারে। আমরা আরো পরীক্ষা করবো আগামী কাল তারপরে আপনাকে ঠিক জানাতে পারবো’।
দেখেছি, দু’একটা ইংরেজি টার্ম ব্যবহার করলে পার্টি বেশ কনভিন্সড হয়। আর বেশ বিজ্ঞ মনে করে। তাই এখন পার্টি মিট করার সময় এই পদ্ধতি ফলো করি, এতে বেশ কাজও হয়।

এ ক্ষেত্রেও তার অন্যথা হলো না। তবুও কেমন যেন একটু আমতা করে আগামী কালের বিশদ পরীক্ষার উপর ভরসা করে তারা নীচে ওয়েটিং রুমে চলে গেলেন। অন্যের কাছে জবাবদিহির হাত থেকে তো বাঁচলাম, কিন্তু নিজের কাছে?

প্রায় বারোটা বেজে গেছে। আমরা রুমে চললাম খাবার খেতে। কি আর খাবো? ঠান্ডা হয়ে যাওয়া ভাত, ডাল, এক টুকরো  ছোট মাছ বা ডিম, একটা পাঁচমিশেলি ঘ্যাট ব্যাস। তাই খেতে খেতে দুজনে আলোচনা করেও কোন পথ পেলাম না। পুরো ব্যাপারটাই ভৌতিক বলে মনে হলো।

খাওয়ার পরে ভাবলাম, একটু রানাদাকে ডাকা যাক। রানাদা আমাদের সিনিয়র। অসময়ে ডাকলে মনে মনে বিরক্ত হবে জানি, কিন্তু এও জানি রানাদা খারাপ বাচ্চার কথা শুনলে রাত দুটোর সময়ও ঘুম জড়ানো চোখে আসবে। তার দায়িত্বের মধ্যেও এগুলো পড়ে ঠিকই কিন্তু রানাদা বাচ্চাদের ব্যাপারে অসম্ভব আন্তরিক।

মোবাইলে কল করার দশ মিনিটের মধ্যেই রানাদা চলে এলো। আমরা তিনজনে গিয়ে দেখলাম। এখন শিশুটি ঘুমাচ্ছে। তাঁর মা তার পাশে জেগে আছেন। কেবিনের মধ্যে সোফায় বসে আছেন ঠাকুরমা। তাঁর বিলাপের মাত্রা কমে গেলেও বন্ধ হয়নি। মাঝে মাঝে জোড়হাত করে ঠাকুরকে ডাকছেন। রানাদাও গম্ভীর মুখে মার কাছ থেকে হিস্ট্রি নিয়ে বাচ্চাটাকে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে দেখে নিল। পরীক্ষা করলো বেশ খানিকক্ষণ। তারপর থমথম মুখে বেরিয়ে এলো। আমরা পিছনে পিছনে এলাম।
-কিছু বুঝলে রানাদা?

-দেখ, সাজেস্টিভ হিস্ট্রি কিছু নেই। আর বার্নটা তো লিকুইড অ্যাসিড বার্ন বলেই মনে হয়। বমি ছাড়া আর কোনো ঘটনা নেই। ঘটনা ঘটবেই বা কি করে? পাঁচ মাসের বাচ্চা অ্যাসিড পাবে কোথায়? খাবেই বা কি করে? আর অন্য কেউ এই দুধের শিশুকে অ্যাসিড খাওয়াবে ভাবা যায়? মা, ঠাকুরমা, বাবা, কাকা… না! তাহলে দাঁড়ালো বমিতেই এটা হয়েছে। কিন্তু বমিতে এত অ্যাসিড থাকে কি?

-আমরা তো ওখানেই ঘেঁটে আছি।

-আমাকে আর একটু পড়তে হবে বুঝলি। আর একটা ক্ষীণ সম্ভাবনা…’ ভাবতে হবে। বাড়ির লোক ছাড়া ওই সময় অন্য কেউ ওই বাড়িতে ঢুকেছিল কি না,যে শিশুর বা ওই পরিবারের ক্ষতি চায়। সেও তদন্ত সাপেক্ষ।

-গোয়েন্দা লাগাতে হবে নাকি?

-হলেও হতে পারে…। কেমন একটা গোয়েন্দা চোখ নিয়ে তাকিয়ে বললো রানাদা।

রানাদা এরকমই। কোন জট একবার মাথার ভিতরে ঢুকলে তার জট না ছাড়ানো পর্যন্ত এরকম চলতে থাকবে। আমরা অনেক সময় ইচ্ছে করেই রানাদার মাথায় এটা সেটা ঢুকিয়ে দিই আর মজা দেখি। জানি আজ রানাদা সারারাত এটা নিয়ে চিন্তা করবে- কাল সকালে আমরা একটা ফল পাবো।

আমরা এবার উঠবো। রাত প্রায় একটা। রানাদাও উঠলো – তারপর চশমার ফাঁক দিয়ে অগ্নীশ্বরের মতো সিস্টারদের দিকে তাকিয়ে পাকা গোয়েন্দার মতো বললো, সিস্টার আপনারা রাতে বিশেষ নজর রাখবেন এই কেবিনের দিকে। বাইরের কেউ যেন না ঢুকতে পারে। আর কোন গোলমাল দেখলেই সোজা আমাকে ফোন করবেন।

সিস্টার সম্মতি সূচক ঘাড় নাড়লো। আমি আর তপন ভাবলাম। কিন্তু রানাদাকে ডেকে লাভ হলো না, বরং কেসটা আরো ঘেটে গেল। ছিল ডাক্তারী সমস্যা, এখন হলো গোয়েন্দাগিরি। খুন করার চেষ্টা? কে জানে! যা হবার হোক। সারাদিনে খুব ধকল গেছে এখন একটু রেস্ট পেলে বাঁচি। এর মধ্যে আরেকজন এরকম এসে পড়লেই রাত কাবার। সকালে স্যার এলে দেখা যাবে।

ডাঃ রায় রাউন্ডে আসার আধঘন্টা আগে রানাদা চলে আসে। তার একঘন্টা আগে আমরা যাই। গিয়ে প্রতিটি বাচ্চাকে দেখে তাদের বর্তমান হাল-হকিকত জেনে নিই। গতকালের থেকে আজ অবস্থা ভালো না খারাপ সে তুলনা করি। বিভিন্ন রিপোর্ট দেখি। দরকারে নতুন রিপোর্ট করতে দিই। প্রাথমিক ভাবে সব দায়িত্ব সামলাই। স্যার এলে প্রতিটি পেসেন্টের খুঁটিনাটি বলতে হবে। স্যার শিশু বিশেষজ্ঞ হিসাবে খুব নামী। নাম যে এমনি এমনি হয়নি, সে বুঝি। যেমন জ্ঞান, তেমন দায়িত্ব বোধ।

স্যারের আসতে এখনো আধঘন্টা। রানাদাকে বললাম, কিছু পেলে সুলুক সন্ধান।

‘চল তো আরেকবার দেখে আসি’ – কোন জবাব না দিয়ে রানাদা চললো কেবিনের দিকে। যেন ফেলুদা বা ব্যোমকেশের মতো কোন ক্লু পেয়েছে, এখন ঘটনাস্থলে গিয়ে তা মিলিয়ে নিতে চায়।

শিশুটি আজ অপেক্ষাকৃত ভালো আছে। শুধু পোড়া অংশটা একটু বেশী লাল হয়ে রয়েছে। সেখানে যাতে ঘা না হয় সেই মলম দেওয়া হয়েছে। মুখের ডান কোন থেকে লালা গড়িয়ে পড়ার মতো দাগ। রানাদা টর্চ নিয়ে মুখ নীচে নামিয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বেশ কিছুক্ষণ দেখলো। তারপর গম্ভীর মুখে দু’একবার মুখ নেড়ে পাকা গোয়েন্দার মতো বলল – চল।

আমরা টেবিলে বসলাম।

কাল অনেকক্ষণ ইন্টারনেট বই ঘেঁটে পেটের অ্যাসিড তন্ন তন্ন করে ফেলেছি। কিন্তু কোথাও পাইনি বাচ্চার বমিতে মুখের চামড়া পোড়ে। বুঝলি ব্যাপারটা ব্ল্যাক হোলের মতোই ব্ল্যাক এবং ব্ল্যাঙ্ক। বুঝলি না যে তোপসে…, কিছুই বুঝছি না…। রানাদা বসে আছে আমাদের দিকে মুখ করে, পেছনে স্যার এসে দাঁড়িয়েছেন বেড়ালের মতো পায়ে। আমরা উঠতে যাবো স্যার হাতের ইশারায় বারণ করলেন। তারপর রানাদার পিছনে দাঁড়ালেন চুপটি করে। কেবিনের সিস্টারও মুখ নীচু করে হেসে কাজের ভান করে যেতে লাগলো।

রানাদা ফেলুদার মতো বলতে শুরু করলো…। একটা শিশু … বমি করলো… মুখ পুড়ে গেল…। পেটে অ্যাসিড থাকে কিন্তু মুখ পোড়ে না…। সবই ধাঁধা … তোপসে… ধাঁধা…, মস্ত ধাঁধা…।

কিসের ধাঁধা, রানা? এবার পিছন থেকে স্যার বলে উঠলেন।

রানাদা তড়াক করে উঠে দাঁড়ালো। স্যার মুচকি হাসছেন। শব্দ করে হেসে উঠলাম। রানাদা মাথা চুলকে বলল, একটা বাচ্চা স্যার। কাল রাতে ভর্তি হয়েছে- বমিতে তার মুখ পুড়ে গেছে। আমি সারারাত নেট ঘেটে দেখেছি বমিতে কোন মুখ পোড়ার হিস্ট্রি নেই।

বমিতে মুখ পুড়ে গেছে? স্যার একটু ভ্রূ কোঁচকালেন। তারপর বললেন- চলো তো দেখে আসি।

আমরা সবাই স্যারকে নিয়ে কেবিনের দিকে গেলাম। সিস্টার ফাইল নিয়ে সাথে এলেন।
স্যার আগে হিস্ট্রি নিলেন। স্যার ডাক্তারী কপিবুক ফলো করেন। আগে হিস্ট্রি।

বাচ্চার মা বললেন আমরা স্যার ফ্লাটে থাকি। একই হাউসিংএর দুদিকে দুটো ফ্লাট। একদিকে আমরা অন্যদিকে আমার ভাশুর। আমাদের সাথে এই আমার শাশুড়ি মা থাকেন। আমরা দুজনেই চাকরি করি। আমার ম্যাটারনিটি লিভ শেষ তাই অফিসে যাই। চলে আসি ৬ টা নাগাদ। বাড়ীতে দিনের বেলা আয়া আসে। সে শুধু বাচ্চাটাকে দেখে। রাত ৮ টা নাগাদ খাইয়ে সে চলে যায়। পরদিন আসে। অন্য সময় আমরাই ছেলেকে দেখি। আমার হাজবেন্ডও ৮ টা নাগাদ বাড়ী চলে আসে।

কাল কখন কি হয়েছিল? স্যার জিজ্ঞাসা করলেন।

রাত ৯ টা নাগাদ আমি রান্না করছিলাম। রান্নাঘরটা এককোনে। সেখান থেকে হঠাৎ ছেলের কান্নার আওয়াজ শুনি, কান্না শুনে আমরা দু’জনেই ছুটে যাই। আমার শাশুড়ি মা আগে পৌছে ওকে কোলে তুলে নেন। মুখ মুছিয়ে দেন। তারপর সারা মুখ লাল দেখে আমরা সবাই তাড়াতাড়ি করে তুলে এখানে নিয়ে আসি।

হুম… বলে স্যার চুপ করলেন। তারপর একটু চিন্তা করে বললেন, ভালো করে মনে করে বলুন তো আপনার কাজের মেয়ে বা আয়া কখন যায়।

আয়া স্যার রাত ৮ টায় ছেলেকে খাইয়ে সাড়ে ৮টায় বেরিয়ে যায়। কালও তাই হয়েছিল।

তখন আপনি কি করছিলেন?

আমি স্যার রান্না ঘরে ছিলাম। আমার শ্বাশুড়িমাই ও চলে যাবার পর দরজা বন্ধ করেন। কালও তাই হয়েছিল।

স্যারও দেখছি গোয়েন্দাদের মতো প্রশ্ন করছেন। শালক হোমস না ঈরকুল পোয়েরো? দেখা যাক কি হয়। আমরা এখন নীরব শ্রোতা।

ঠিক আছে। এবার বলুন আপনি ছেলেকে দেখলেন কখন কি ভাবে?

আমি স্যার রান্নায় ব্যস্ত থাকায় হয়তো প্রথম দিকে শুনতে পাইনি। তারপর গিয়ে দেখি আমার শ্বাশুড়িমা ওকে কোলে তুলে নিয়ে টাওয়েল দিয়ে বমি মুছিয়ে দিয়েছেন। আর ছেলে খুব কাঁদছে। শ্বাশুড়ি মাও কাঁদছে্নঁ।

ছেলে কি মাঝে মাঝেই বমি করে?

হ্যাঁ, সার। বমি করে। দুধ তোলে প্রায়ই।

আগে কখনো এমন হয়েছে?

কেঁদেছে, তবে এরকম দাগ হয়নি, আর এত কাঁদেনি।

স্যার একটু ভ্রূ কোঁচকালেন। কিছুক্ষণ ভাবলেন, গোয়েন্দারা যেমন ভাবেন। স্যারের এই ভঙ্গি আমি চিনি, যখন কোন কঠিন রোগের বিষয়ে চিন্তা করেন, দুই আর দুই মেলাতে চেষ্টা করেন, মেলে না তখন এরকম ভঙ্গি করেন। স্যার বলেন, ডাক্তারীটা একটা অঙ্ক। ঠিকমতো হিস্ট্রি নিলে পরীক্ষা ঠিক মতো করলে দু’একটা সাস্পেক্টিভ ইনভেস্টিগেশন করলে রোগ ধরা পড়বেই। তবে অঙ্কের যেমন variable থাকে এখানেও তাই। এক একটি মানুষ এক এক ধরনের। একই পরিমাণ আঘাত তিনজনকে তিনরকম ব্যাথার অনুভূতি দেয় এটাই variable, এটাও মাথায় রাখতে হবে। তবেই দুই আর দুই চার হবেই। বুঝতে পারছি স্যার আপাতত সেই অঙ্ক মেলানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু এখানে তো কোন ইনভেস্টিগেশন আপাতত দরকার নেই। স্যার হিস্ট্রি ঠিকমতো নিতে চাইছেন। যেন এক রহস্যের সমাধান করছেন।

ঠাকুরমার দিকে তাকিয়ে বললেন – আপনি বাচ্চাটিকে প্রথম দেখেছিলেন?

হ্যাঁ, ডাক্তারবাবু! বলে কেদে উঠলেন, আমার নাতি ভালো হয়ে যাবে তো?

নিশ্চয়ই। তেমন কিছু হবে না। আচ্ছা আপনি কি দেখলেন গিয়ে?

আমি কান্না শুনে ছুটে গিয়ে দেখি খোকন বমি করছে আর খুব কাঁদছে, হাত পা ছুড়ে। আমি তাড়াতাড়ি কোলে নিয়ে আমার আঁচল দিয়ে মুখ মুছিয়ে দিই। তারপর বৌমা আসে।

স্যার এবার ছেলের মায়ের দিকে তাকিয়ে বললেন – আপনাদের বাড়ীতে বাথরুম পরিষ্কার করার বা অন্য কোন অ্যাসিড থাকে?

ভদ্রমহিলার মুখটা অন্য রকম হয়ে গেল। বললেন, হ্যাঁ, বাথরুমে একটা বোতলে থাকে। কেন স্যার?

না,এমনিই জিজ্ঞাসা করছি।

এমনি নয়। আমি জানি স্যার দুই আর দুই মেলানোর চেষ্টা করছেন। কোন ক্লু খুঁজছেন।
এরপর আরেকবার ঝুঁকে পড়ে বাচ্চাটাকে নিজের কোলে তুলে নিলেন, তারপর ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে মুখ, গলা ভালো করে পরীক্ষা করে দেখলেন। তারপর আমাদের দিকে তাকিয়ে বললেন, চলো। এরপর বাকী বাচ্চাগুলোকে রাউন্ড দিলেন। এই বাচ্চার বিষয়ে কিছু বললেন না। আমরা তো উসখুস করছি।

রানাদা জিজ্ঞাসা করল, স্যার কি বুঝলেন?

স্যার একটু রহস্য করে বললেন, ধীরে বৎস। তোমরাও খোঁজো। আর কিছু বললেন না। পিকচার আভি বাকী হ্যায়। তারপর স্যারের ঘরে গিয়ে বসলেন। আমরাও গিয়ে বসলাম। এবার পার্টি মিটের পালা।

প্রথমে এলো এই বাচ্চার বাড়ীর লোক। স্যার বললেন আপনাদের সাথে শেষে কথা বলবো। বলে অন্যদের সাথে কথা সারলেন। তারপর তাঁদের ডাকলেন। লোকদুটি শিশুর বাবা ও জ্যাঠামশায়। স্যারের টেবিলের সামনের চেয়ারে তাঁরা বসলেন। আমরা পাশের চেয়ারগুলোতে বসে। স্যার শুরু করলেন-ঘটনার সময় আপনাদের বাড়িতে কে কে ছিল?

বাচ্চার বাবা বললেন, আমাদের একই ফ্লোরে পাশাপাশি ফ্ল্যাট। আমার পরিবারেই এখন মা বেশীর ভাগ সময়ে থাকেন। ওই সময় বাড়ীতে ছিলেন আমার মা আর স্ত্রী। আয়া মেয়েটি চলে গেছে রাত সাড়ে ৮ টায়। আর ঘরমোছা বাসন মাজার লোক সকালে বিকালে আসে আর চলে যায়।

আপনার বাবা?

বাবা আড়াই বছর আগে মারা গেছেন।

এবার বড় ভাইয়ের দিকে স্যার তাকিয়ে বললেন –আপনার পরিবারে কে আছে?

আমার স্ত্রী, আমি আর আমার মেয়ে, তার এখন তিন বছর বয়স।

আপনার মা কার কাছে বেশী থাকেন?

বড়ভাই বললেন – তেমন কিছু ঠিক নেই। বাবা মারা যাবার পর থেকে কখনো আমার কাছে, কখনো ভাইয়ের কাছে। তবে আমার মেয়ে ছোট থাকতে আমার কাছে থাকতো।

স্যার একটু চুপ করলেন। রহস্যের সমাধান করতে চাইছেন বুঝলাম। লোক দুজনও চুপচাপ বসে। স্যার আবার মুখ খুললেন, এই ঘটনার ডাক্তারী ব্যাখ্যা খুব মুশকিল। আচ্ছা এর আগে এরকম কোন ঘটনা আপনাদের পরিবারে ঘটেছে – একটু মনে করে বলুন তো?

কেমন ঘটনা, স্যার?

যে ঘটনার তেমন ব্যাখ্যা হয়না। অনেকটা ভৌতিক ঘটনা বলে মনে হয়।

দুজনেই চুপ করে ভাবতে বসলেন। একটু ভেবে বড়ভাই বললেন – তেমন কিছু নয় স্যার, তবে আমার মেয়ের একবছর বয়সের সময় একদিন সন্ধ্যেবেলায় ওর পায়ে বেশ গভীর কয়েকটা আঁচড় দেখেছিলাম। মনে হয় কুকুর বা বেড়ালের আঁচড়ের মতো কিন্তু বেশ গভীর। বেশ রক্তও বেরিয়েছিল। ও খুব কাঁদছিল। ডাক্তারও দেখাতে হয়েছিল। অথচ বাড়িতে কোন কুকুর বা বেড়াল ছিল না।

বাইরের বেড়ালও তো আসতে পারে?

কোন বাইরের বেড়াল তো আসেনা। দোতলার ফ্ল্যাট। অবশ্য কার্নিশ বেয়ে বা জানলা দিয়ে আসতেই পারে… কিন্তু তার আগে বা পরে কোনদিন আসতে দেখিনি। উপরের তলায় মুখার্জী বাবুদের একটি পোষা বেড়াল আছে অবশ্য। মুখার্জীবাবুর মেয়ের সাথে আসে মাঝে মাঝে। কিন্তু সেদিন তেমন কিছু ঘটেনি।

মানে সেটাও এরকম ভৌতিক ব্যাপার? স্যার বললেন।

সেরকমই বলতে পারেন। তারপর এই ঘটনা ছাড়া অবশ্য আর কিছু ঘটেনি। একটু চুপ করে থেকে ছেলেটির বাবা বললেন- আমরা কিন্তু স্যার খুব টেনশনে আছি। কি করে হলো বা কি হয়েছে যদি বলেন…।

স্যার কিছু সময় নিলেন তারপর বললেন, আগে শিশুর বিষয়ে বলি। শিশুটির বিপদ বেশী কিছু নেই। যেটুকু লাল হয়েছে – ওটা সেরে যাবে ওষুধ দিলে। কাজেই আপনার বাচ্চা নিয়ে চিন্তা করবেন না। আর ওটা বমির সময়ে হয়েছে ঠিকই, কিন্তু শুধু বমির জন্যে নয়।

আমরাও উদগ্রীব! বমির জন্য নয় তাহলে! রানাদার মুখের দিকে তাকালাম, এমন একটা ভাব যে তাহলে সারা রাতের নেট ঘাঁটা বিফলে যায়নি।

তবে? আগ্রহ নিয়ে তাকালেন বড়োভাই।

আচ্ছা আরেকটা কথা বলুন তো? আপনার বাবা মারা যাওয়ার পর আপনার মা কি খুব একা হয়ে গেছেন… মানে অনেকেই অসহায় ভাবে এবং সকলের কাছ থেকে তেমন গুরুত্ব পান না। এমন কিছু ব্যাপার আছে – খোলামেলা বলবেন। এমনকি আপনাদের স্ত্রীদের সাথে আপনাদের মায়ের কেমন সম্পর্ক তাও। স্যার আবার গোয়েন্দার ভূমিকায়।

দেখুন স্যার, আমরা বাইরে বেশীরভাগ সময় থাকি। ঘরে বিশেষ থাকি না। আমার ভাইও প্রায় তাই। তবে হ্যাঁ বাবা মারা যাবার পর মা কিছুটা একাকী তো হয়েছেনই। সারাজীবন দাপটে আমাদের মানুষ করেছেন, সংসার সামলেছেন। এখনতো আর সেরকম নেই। তবে উনাকে, আমরা কেউ অবহেলা করি না। কিন্তু তবুও উনি অনেকটাই চুপ হয়ে গেছেন। মাঝে মাঝে চুপচাপ বসে থাকেন। বাবার কথা ভাবেন হয়তো।

এবার ছোট ভাই মুখ খুললেন। স্যার কি ঘটেছে বলে আপনার মনে হয়?

স্যার এবার তার জাল গুটিয়ে মনে হয় শেষ পর্যায়ে এনে ফেলেছেন। নিশ্চিত কোন একটা সিদ্ধান্তে পৌছে গেছেন। মুখে বললেন –আমি মোটামুটি নিশ্চিত এই ঘটনা অ্যাসিড বার্ন। পাকস্থলির অ্যাসিড নয়। বাইরের অ্যাসিড। শিশুর মুখে দেওয়া হয়েছে। আর ঠিক সেই সময় বমি হয়েছিল বলে অ্যাসিড-বমিতে মাখামাখি হয়ে বমির জন্য এই বার্ন বলে মনে হচ্ছে। অবশ্য তাতে একটা উপকার হয়েছে অ্যাসিড ডাইলুট হয়ে বেরিয়ে গেছে শিশুর মুখে পুরোটা যায়নি, তার যেটুকু গেছে তাতে বার্নও কম হয়েছে।

দুজনের চোখেমুখে বিষ্ময়, প্রায় একসাথেই বলে উঠলেন, কিন্তু কে এই কাজ করবে…

স্যার চেয়ারে হেলান দিয়ে নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বললেন, দেখুন সে আমি বলতে পারবোনা। তবে একটা রোগও আছে। এতে পরিবারের আপনজনরাও এই ঘটনা ঘটাতে পারে। আপনাদের কাজের লোক, আপনার মা… এমনকি আপনার স্ত্রী অর্থাৎ শিশুর মা-ও। তবে এই ক্ষেত্রে আপনার মায়ের উপর সন্দেহটা বেশী।

মা…। প্রায় প্রচন্ড বিষ্মিত হয়ে দুজনের মুখে আকুল আওয়াজ বেরোলো। কিন্তু মাই তো আগে গিয়ে বাচ্চাকে কোলে নিয়ে মুছিয়ে দেয়। আর এখনো কাঁদছে।

ঠিকই, তবুও বলছি। তবে আপনাদের আরেকটা কথা বলি, এটা ডাক্তার হিসাবে একটা সাজেশন। আপনারা আপনার মাকে একা একা কখনো শিশুর কাছে না রাখলেই ভালো। অন্তত আর দু’এক বছর পর। সম্ভব হলে সবসময় আয়া রাখুন। তাকেও নজরে রাখবেন।

আরেকটা কথা, মা আপনাদের – তিনিই এই সংসারকে তৈরি করেছেন। আজ হয়তো তিনি অন্যরকম মানসিক টানাপোড়েনে ভুগছেন – তাই তাকে কিছুই বলবেন না, বা অন্যভাবে দেখবেন না। পরে একবার কোন মানসিক রোগের চিকিৎসকের কাছে গিয়ে কাউন্সেলিং করাবেন। আর আপনাদের স্ত্রীদের কাছে বা অন্যদের কাছে এই ঘটনা না বলাই ভালো। বলবেন বমির জন্য হয়েছে। আমরা ডাক্তাররা শুধু শরীর মেরামতিই করি না সংসার যাতে না ভাঙ্গে এবং সুস্থ থাকে সেটা দেখাও আমাদের দায়িত্ব বলে মনে করি।

দুইভাই যেন বিষ্ময়ে হতবাক। তাঁদের মুখে কোন কথা নেই। একটা অবিশ্বাস্য বিষয়ে তাঁদের বলা হয়েছে। স্যারও অনেকটা রেখে ঢেকে বলেছেন। তবু ও যেন এ সব তাঁদের বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে। দুভাই এবার উঠে দাঁড়িয়ে স্যারকে নমস্কার করে বললেন, স্যার আমরা আসি… বলে বেরিয়ে গেলেন।

বিষ্ময় আমাদেরও কম হয়নি। বললাম, স্যার এরকম হয় নাকি?

স্যার বললেন, হয় হয় জান্তি পারোনি। বলে বললেন, কি রানা এরকম হয়?

রানাদার মুখ দেখে বুঝলাম রানাদাও জানে না। মুখে বলল, স্যার আপনি যখন বলছেন তখন নিশ্চয়ই হয়।

আমি বলছি না। বই বলছে। টেক্সট বুক বলছে। একটু পড়াশুনা করো। ‘মঞ্চাউসেন সিন্ড্রোম’ নাম শুনেছ?

না, স্যার।

শোন তাহলে। এই কেসটা নিয়ে আমাদের একটা বিরল অভিজ্ঞতা হল। বলতে বলতে ক্যান্টিনের তারাপদদা চা নিয়ে স্যারের ঘরে ঢুকলো। স্যারকে চা দিল, সাথে আমাদের। তারপদদা চলে যাবার পর আমরা দরজা ভেজিয়ে দিলাম। তারপর স্যার আবার শুরু করলেন, আমার জীবনে এই নিয়ে দ্বিতীয়বার এরকম কেস দেখলাম। এই রোগের নাম ‘মঞ্চাউসেন সিনড্রোম বাই প্রক্সি’। এটা আসলে মঞ্চাউসেন সিনড্রোমের রকমফের।

সেটা কি রকম স্যার?

অষ্টাদশ শতকে এক জার্মানি অফিসারের নাম অনুযায়ী এই রোগের নাম। তার নাম ছিল ব্যারন ভন মঞ্চাউসেন। (Baron von Munchausen)। তার কোন বিশেষ রোগ ছিল না, কিন্তু বানিয়ে বানিয়ে নানা রোগের কথা বলতেন। কখনো পেটে ব্যথা, কখনো বুকে ব্যথা এই সব। আর এমন বাড়িয়ে বাড়িয়ে বলতেন যেন সত্যিই তিনি অসুস্থ। কিন্তু সব পরীক্ষা করেও তাঁর কোন শারীরিক অসুখ পাওয়া যেত না। তার থেকেই এই নামকরণ হয়।

শুধু তিনি নন, আমাদের অনেকেই এরকম করে। কিন্তু তিনি ছিলেন এ ব্যপারে চ্যাম্পিয়ন। আর তখন থেকেই এটা একটা রোগ হিসাবে চিহ্নিত হয়। আসলে এটা এক ধরনের মানসিক রোগ, যাতে মানুষ তার রোগের কথা শুনিয়ে অন্যদের সহানুভূতি আদায় করতে চায়। বা রোগ হয়েছে এটা ভাবতে তার ভালো লাগে।

অদ্ভুত…। রানাদা বিষ্ময় প্রকাশ করে!

রানা, আমাদের আবার মনটাই তো কিম্ভুত কিমাকার – অদ্ভুত। আমাদের ভাবনা চিন্তার লাগাম আছে? সেটা যখন কন্ট্রোলের বাইরে চলে যায়, তখন তৈরি হয় রোগ –মানসিক রোগ।

আমি বললাম, কিন্তু স্যার আপনি বললেন মঞ্চাউসেন সিনড্রোম বাই প্রক্সি? তাও কি এক মানসিক রোগ?

না, একটা তফাৎ আছে। আর সেটা আরো মারাত্মক। এখানে রোগি বলে না তার কোন রোগ হয়েছে। সে অন্যদের রোগ তৈরি করে এবং সহানুভূতি দেখিয়ে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চায়। তাদের কাছেই থাকে অবলা শিশুরা। অন্যের অলক্ষ্যে তারা নানা ভাবে শিশুদের কষ্ট দেয়। শিশুরা রোগে ভোগে। এতে তাদের এক ধরনের আনন্দ হয়। এমনকি শিশুর মৃত্যুও হতে পারে। তাতে তারা বাইরে কেঁদে ভাসায় কিন্তু মনে মনে আনন্দ পায়। তারা হাসপাতালে থাকতে পছন্দ করে। দেখো এই ঠাকুরমাও যেতে চাইবে না। যদি থাকতে চায়, তোমরা বলে যে কোন ভাবে ওকে বাড়ি পাঠাবে। শিশুটির কাছে তিনি যেন না থাকেন।

কিন্তু যা হবার তাতো হয়ে গেছে। ধরে নিলাম উনি শিশুকে অ্যাসিড বাথরুম থেকে এনে খাইয়েছেন আবার কি করবেন? রানাদা বলল।

হাসতে হাসতে স্যার বললেন। ধরে নিলাম না, রানা। এটা একশো ভাগ সত্যি, আর এই রোগীরা চায় না শিশু সুস্থ হয়ে উঠুক। তারা যে কোন ভাবে শিশুর হাসপাতালে থাকার দিন বাড়াতে চায়। না, আর না – বাকীটা বইয়ে আছে – পড়ে নিও। তবে আমাদের কাছে যতোদিন থাকে তোমরা নজর রেখো। সিস্টারদেরও বলে রেখো। আয়ামাসিদের বোলো যেন চোখের আড়াল না করে। বলে স্যার উঠলেন।

আমরাও স্যারের পিছনে পিছনে নীচে স্যারের গাড়ির কাছে এসে দাড়ালাম। ড্রাইভার দরজা খুলে দিল। গাড়ীতে ওঠার মুখে ঘুরে দাঁড়িয়ে স্যার রানাদার দিকে তাকিয়ে বললেন – তা হলে রানা রোগের নাম কি বললাম?

মঞ্চাউসেন সিনড্রোম বলে রানাদা থামলো।

উহু! মঞ্চাউসেন  সিনড্রোম বাই প্রক্সি বলে স্যার গাড়িতে উঠে গেলেন।

PrevPreviousহলদে ব‌ই-এর তৃতীয় কিস্তি।
Nextপিক আপ আবারNext

11 Responses

  1. arnab chaudhuri says:
    February 27, 2020 at 4:07 pm

    DOCTOR khub sundor bhabe likhechen.pranzol.nomoskar o dhonnobad janben. ro lekha chaoa thaklo.

    Reply
  2. দীপঙ্কর ঘোষ says:
    February 28, 2020 at 2:38 pm

    চমৎকার । তবে অনবদ্য । এবং অবিস্মরণীয় । এক কথায় ভাষাহীন ।

    Reply
  3. Supriya Sengupta says:
    March 1, 2020 at 7:51 am

    Ki sanghatik rog!

    Reply
  4. ipsita pal Bhowmick says:
    March 1, 2020 at 12:08 pm

    এরকম গোয়েন্দাগিরি আর তার বর্ণনা, দুটোর জন্যই কুর্নিশ!

    Reply
  5. ipsita pal Bhowmick says:
    March 1, 2020 at 12:09 pm

    এরকম আরো লেখা চাই!

    Reply
  6. Aparajita Mitra says:
    March 2, 2020 at 11:11 am

    দারুন।

    Reply
  7. সায়ন্তনী নাগ says:
    March 3, 2020 at 6:29 am

    মন বড়ই জটিল বস্তু।

    Reply
  8. Biswanath Mitra says:
    March 3, 2020 at 10:01 am

    In a word Excellent. No word to express thanks

    Reply
  9. Dr Subrata Sensarma says:
    March 3, 2020 at 10:54 am

    ডাক্তারের গোয়েন্দাগিরি।অসাধারণ বর্ণনা।

    Reply
  10. অনুরূপ মান্না says:
    March 3, 2020 at 3:51 pm

    রুদ্ধশ্বাস গল্প না থুড়ি…”সত্যি ঘটনা অবলম্বনেে’

    Reply
  11. Archan Goswami says:
    May 2, 2020 at 9:43 pm

    অসাধারণ লাগল

    Reply

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সম্পর্কিত পোস্ট

করোনা ক্লিনিকে ডা সায়ন্তন ব্যানার্জী ১

January 17, 2021 No Comments

দিনলিপিঃ খেলা শেষ?

January 17, 2021 No Comments

১৫ই জানুয়ারী, ২০২১ কাল ১৬ ই জানুয়ারী, শনিবার। সাড়ম্বরে ঠান্ডা ঘর থেকে বেরিয়ে আসতে চলেছে বহুচর্চিত ভ্যাক্সিনের দল। দেশ জুড়ে ড্রাই রান সম্পন্ন হয়ে এখন

মারীর দেশের শেষ যুদ্ধের দামামা

January 17, 2021 No Comments

১৫ই জানুয়ারী, ২০২১ দেশজুড়েই করোনা সংক্রমণের হার কমছে। নিউজ চ্যানেলগুলোতে ঘন্টায় ঘন্টায় কোভিড রোগীর সংখ্যার আপডেট দেওয়া বন্ধ হয়েছে। কিছুদিন আগেও চ্যানেলগুলো দেখলে মনে হ’ত

শীতকালে চামড়ার সমস্যার সমাধান

January 16, 2021 No Comments

ডা কৌশিক লাহিড়ীর ইউটিউব চ্যানেল থেকে তার অনুমতিক্রমে নেওয়া।

ভ্যাক্সিন, আতঙ্ক-মুক্তি(?) এবং ওষুধের রাজনীতি

January 16, 2021 3 Comments

১ জানুয়ারি, ২০২১, মানিকন্ট্রোল পত্রিকার একটি “সুসংবাদ” – “Drugmakers to hike prices for 2021 as pandemic, political pressure put revenues at risk”। অর্থ হল অতিমারির

সাম্প্রতিক পোস্ট

করোনা ক্লিনিকে ডা সায়ন্তন ব্যানার্জী ১

Dr. Sayantan Banerjee January 17, 2021

দিনলিপিঃ খেলা শেষ?

Dr. Parthapratim Gupta January 17, 2021

মারীর দেশের শেষ যুদ্ধের দামামা

Dr. Soumyakanti Panda January 17, 2021

শীতকালে চামড়ার সমস্যার সমাধান

Dr. Koushik Lahiri January 16, 2021

ভ্যাক্সিন, আতঙ্ক-মুক্তি(?) এবং ওষুধের রাজনীতি

Dr. Jayanta Bhattacharya January 16, 2021

An Initiative of Swasthyer Britto society

আমাদের লক্ষ্য সবার জন্য স্বাস্থ্য আর সবার জন্য চিকিৎসা পরিষেবা। আমাদের আশা, এই লক্ষ্যে ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী, রোগী ও আপামর মানুষ, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সমস্ত স্টেক হোল্ডারদের আলোচনা ও কর্মকাণ্ডের একটি মঞ্চ হয়ে উঠবে ডক্টরস ডায়ালগ।

Contact Us

Editorial Committee:
Dr. Punyabrata Gun
Dr. Jayanta Das
Dr. Chinmay Nath
Dr. Indranil Saha
Dr. Aindril Bhowmik
Executive Editor: Piyali Dey Biswas

Address: 

Shramajibi Swasthya Udyog
HA 44, Salt Lake, Sector-3, Kolkata-700097

Leave an audio message

নীচে Justori র মাধ্যমে আমাদের সদস্য হন  – নিজে বলুন আপনার প্রশ্ন, মতামত – সরাসরি উত্তর পান ডাক্তারের কাছ থেকে

Total Visitor

290145
Share on facebook
Share on google
Share on twitter
Share on linkedin

Copyright © 2019 by Doctors’ Dialogue

আমাদের লক্ষ্য সবার জন্য স্বাস্থ্য আর সবার জন্য চিকিৎসা পরিষেবা। আমাদের আশা, এই লক্ষ্যে ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী, রোগী ও আপামর মানুষ, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সমস্ত স্টেক হোল্ডারদের আলোচনা ও কর্মকাণ্ডের একটি মঞ্চ হয়ে উঠবে ডক্টরস ডায়ালগ।