এবার এই গরমে অনেকেই উত্তরবঙ্গের পাহাড়ে গেছেন। তাঁরা একটিবার কার্সিয়াং-এর এই অসাধারণ চা লাউঞ্জটিতে ঢুঁ মেরে দেখুন। চা- বাগানের মধ্যিখানে ঝুলন্ত এক ডেক, সেরা স্বাদের কন্টিনেন্টাল খাবারের পশরা সাজিয়ে।
হ্যাঁ! একদম ঠিক ধরেছেন, আমি মার্গারেটেস্ ডেকের কথাই বলছি।
পাকদণ্ডী পথে কার্শিয়াং থেকে দার্জিলিং-এর দিকে যেতে পথে পড়ে টুং। অঞ্জন দত্তের সেই নস্টালজিক ‘দার্জিলিং’ গানের ‘টুং, সোনাদা, ঘুম পেরিয়ে, একা একা রাস্তা ধরে’ র সেই বিখ্যাত টুং। দার্জিলিং হিমালয় রেলওয়ে রুটের টুং স্টেশন থেকে কয়েকশ গজ দূরেই মার্গারেটস ডেক। জাহাজের ডেকের মতো আকৃতির একটা টি-লাউঞ্জ, সামনে আদিগন্ত খোলা পাহাড়। হাতে গোনা অবসরের একটি বিকেল অন্তত এখানে কাটিয়ে যান। পাহাড় এবং চারপাশের চোখজুড়ানো প্রকৃতি উপভোগ করতে পারবেন।
অথবা, এক কাপ ফার্স্ট বা সেকেন্ড ফ্লাশ চায়ের সাথে একটি নিখুঁত কন্টিনেন্টাল ব্রেকফাস্ট উপভোগ করুন। এখানকার চায়ের মকটেলগুলোও স্বর্গীয়। সাথে যোগ্য সংগত হিসাবে, কুকিজ, কেক, ক্রোয়েস্যান্ট, কুইচ, গ্রিলড ফিশ, স্কোনস, ব্রাউনি এবং চিজকেক তো রয়েইছে।
লাঞ্চ এবং ডিনারের জন্যেও পাবেন বিভিন্ন ধরণের স্যুপ এবং চিকেনের জিভে জল আনা রকমারি পদ। শেষপাতে থাকুক সুফলে এবং ক্যারামেল কাস্টার্ডের মতো মুখরোচক ডেজার্ট।
মার্গারেটের হোপ টি গার্ডেনের এক অদ্ভুত ইতিহাস রয়েছে, যা হয়তো অনেকেই জানেন।
১৮৬৪ সালে কার্শিয়াং লাগোয়া টুং এর রিংটং নামের এক চা বাগানের ম্যানেজার হয়ে আসেন ক্রুকশ্যাঙ্ক নামে এক ইংরেজ ভদ্রলোক। সাহেব সারাদিন চা বাগান নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। ওদিকে তার কিশোরী কন্যা মার্গারেট চা বাগান, তাকে ঘিরে সবুজ পাহাড় এবং আলতো ভেসে চলা মেঘের প্রেমে পড়ে। ছোট থেকেই মার্গারেটের শরীর ভাল থাকতো না, প্রায় প্রায়ই ভুগতে হত তাকে৷ চিকিৎসার জন্য তাই তাকে ইংল্যান্ডে ফিরে যেতে হয়েছিল।
কিন্তু, মার্গারেটের বড় আশা ছিল যে, সে একদিন না একদিন আবার ফিরে আসবে এই পাহাড়, পাইনবন, ঢেউ খেলানো সবুজ চা বাগানের কোলে। কিন্তু তার সেই আশা পূর্ণ হয়নি, জাহাজে যাত্রাকালীনই তার মৃত্যু হয়।
মেয়ের স্মৃতিতে এক শোকার্ত পিতা বাগানটির নাম বদলে রাখলেন ‘মার্গারেটস হোপ’।
মার্গারেটেস ডেকটি কার্সিয়ং-এর সবুজ পাহাড়-উপত্যকার প্রতি মেয়েটির চিরন্তন ভালবাসার এক নীরব সাক্ষী হিসাবে যেন আজও দাঁড়িয়ে আছে।
এই গ্রীষ্মেও যেখানকার ঝুলবারান্দায় একবার দাঁড়ালে হু হু হিমেল হাওয়া ঠিক মনে করিয়ে দেবে মার্গারেটের কথা, প্রেমিক পাহাড়কে কথা দিয়েও যার আর ফিরে আসা হয়নি।