“মধু মধু”. আমাদের আধাপাগল ডাক্তার খেজুর গুড়ে গরম রুটি ডুবিয়ে স্বগতোক্তি করলেন। “শিউলি”-দের কাছ থেকে চিনি ছাড়া খাঁটি খেজুরের গুড়– এ স্বাদের ভাগ হবে না। সকালে ডাক্তারের বিশেষ রোগী পত্তর হয় না। বিশেষ এই পড়ন্ত শীতের সকালে। উনি রাস্তা থেকে একজন সুন্দরী অনাথা ভদ্রমহিলাকে নিয়ে এসেছেন। তিনি থাবা গেড়ে জুলজুল করে দেখতে দেখতে ন্যাজ নাড়াচ্ছেন। এমন সময় একতলা বাড়ির বারান্দায় এক মাঝবয়সী বাবা এবং সদ্য কৈশোর অতিক্রান্ত ছেলের মুন্ডু দেখা গেল (এখানে ইচ্ছাকৃত ছেলের কথা বলা হচ্ছে – কেননা মেয়েদের ব্যাপারে খোলামেলা আলোচনায় ডাক্তারের পাঠিকা সুন্দরীরা রুষ্ট হবেন)।
ল্যাজওয়ালা সুন্দরী অত্যন্ত অনিচ্ছায় বারান্দায় গিয়ে আগন্তুকদের শুঁকে টুঁকে আবার রুটি পর্যবেক্ষণে মন দিলেন। দুজনেই এসে বসলেন। বয়স্কজন মধ্যবিত্ত এবং মধ্যচিত্ত। কম বয়সীটির কপাল ঘর্মাক্ত, হাতের নখ বড় বড় – অস্থির – চোখের তলায় এক পোঁচ কালি। দুজনেই পাড়ার বাসিন্দা – যাকে বলে পঢ়োশন।
ডাক্তার এসে চেয়ারে বসলেন। পকেট থেকে ফ্লেকের প্যাকেট বার করে দুজনকেই অফার করলেন। তারপর নিজে একটা ধরিয়ে বললেন “কি কেস ভাই ?”
বয়স্কজন আঙুল দিয়ে কমবয়সীকে দেখিয়ে বললেন “সন্তান”।
ডাক্তার ভুরু নাচালেন।
বাবা বললেন “ও বিশেষ মেলামেশা করছে না – সারাদিন দরজা বন্ধ করে থাকে অথচ রেজাল্ট খুব ইয়ে নয় মানে স্যাটিসফ্যাক্টরি নয় অথচ দরজা বন্ধ করে পড়ছে … আবার বাথরুমে গেলে একঘন্টা – একবার সাইকিয়াট্রিস্ট দেখিয়েছি – বলেছে ঐ কি যেন? .”
ডাক্তার ধৈর্য ধরেন।
“হ্যাঁ হ্যাঁ ঐ যে ইসে… বাই পোলার ডিসঅর্ডার”
ডাক্তার সিগারেট রেখে বাধা দেন “ও কি গুঙ্গা? মানে কথা বলতে পারে না?”
ছেলেটা একটু থতমত খায়।
“কি হে মশয় আপনার কিছু বলার নেই? বেরোতে লজ্জা করে? বন্ধুনী নেই?”
ছেলেটা অন্য দিকে তাকিয়ে থাকে ।
“কি গো আমার দিকে তাকাচ্ছো না কেন? হোমো নাকি?”
ছেলেটি চমকে ওঠে “না না … মানে ওরকম কিছু নয়”
“মিশতে ভালো লাগে না?”
সলজ্জ স্বীকারোক্তি ভালো লাগে।
ডাক্তার ফ্লেকটা চায়ের কাপে অবশিষ্ট তে ডুবিয়ে বলেন “কি ব্যাপার বলো তো? নেশা ভাং করো না কি? উইড গ্যাঁজা কোকেন মাল এসব চলে টলে?”
ছেলেটি ঘাড় নাড়ে “ না না তবে …. ”
“তবে কি হে?”
ছেলেটা ভীষণ অস্বস্তি নিয়ে বলে “আমি সিগারেট খাই”
ডাক্তার দুলে দুলে হাসেন । “বা বা বেশ কথা – আমিও খাই”
বাবা মাঝখান থেকে বলেন “ওর দশদিন পরে উচ্চ মাধ্যমিক – ও বলছে পরীক্ষা দেবে না”
টেকো এখনও হাসছেন “দেবে না – তাতে কি?” তারপর বলেন “উফফফফফফফ আপনি মশয় বড্ড কথা বলেন। আমি একটু বাচ্চার সঙ্গে কথা বলি?” বলে একটা আড়মোড়া ভাঙেন “বড্ড অলস লাগে – ঘুম পায়”
ছেলেটা বলে “আমারও খুব ঘুম পায় আর নাক বন্ধ আছে শ্বাসকষ্ট হয় ”
“দেবে না পরীক্ষা। পরের বার ভালো করে দেবে – কেমন?”
ছেলেটা সম্মতি জানায়।
“পরের বছর কতো পাবে হে? নব্বই পার্সেন্ট পাবে তো?”
ছেলেটা পাংশু মুখে জিভ দিয়ে ঠোঁট ভেজায়। “মানে … চেষ্টা করবো … তবে……”
“এবার পরীক্ষাটা না দিলে পাস করবে?”
ছেলে হতাশ হয়ে বলে “না তা না”
“আর যদি পরীক্ষার হলে গিয়ে প্রশ্নটা দেখে ফেরত আসো? তাহলেও তো ফেল করবে – তাই না? তাহলে যাও হলে গিয়ে সই করে প্রশ্নটা দেখে ইচ্ছে হলে সব চে’ সহজটার উত্তর লিখে চলে এসো। প্রতি বার ভালো রেজাল্ট করার জন্যে পরীক্ষা দিতে যাও? এবারে যাও ফেল করে এসো। পারবে না?” ডাক্তার সুন্দরী ভদ্রমহিলার পিঠ চুলকে দ্যান। তিনি কান নিচু করে ল্যাজ নেড়ে আহ্লাদ জানান।
“কি হে খোকা কারুর সঙ্গে মেশো না কেন? কিছু পাপটাপ করেছো নাকি? মিশতে লজ্জা করে?”
ছেলে মাথা নিচু করে বসে রইলো।
“কি হে পর্নোগ্রাফি টর্নোগ্রাফি দ্যাখো?”
ছেলেটি ভয়ানক অপ্রস্তুত হয়ে মেঝের সিমেন্ট ওঠা জায়গাটা পায়ের নখ দিয়ে খুঁটতে থাকে।
ল্যাজওয়ালা সুন্দরী এসে তুড়ুক লাফ দিয়ে ডাক্তারের কোলে উঠে বসে। ডাক্তার ওর মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বলেন “আমাদের সময় তো এসব ছিলো না – আমরা কোকশাস্ত্র অথবা সহেলীর সোহাগ রাত এই সব পড়তাম – ইংরেজি ম্যাগাজিন দেখতাম কি যেন ডেবোনিয়ার না – কী যেন নাম ছিলো? আপনি দ্যাখেন নি?” প্রশ্নটা বাবামশাইকে।
বাবা অনেক দ্বিধায় বলেন “হ্যাঁ …… দেখতাম”
ডাক্তার হাসেন “ হ্যাঁ আমরা সবাই ঐ বয়সে দেখেছি লুকিয়ে লুকিয়ে – এখন তো ওসব উঠে গেছে – এখন পর্নোগ্রাফির যুগ ছেলেও লুকিয়ে দ্যাখে – এতো স্বাভাবিক কথা। ”
ছেলেটি এতক্ষণ চেপে রাখা নিঃশ্বাস ফোঁস করে ছাড়ে।
“দাঁড়াও একটু চা করে আনি – আপনাদের চা চলে তো?” একলা ডাক্তার চা বানাতে চলে যান। সুন্দরী ভদ্রমহিলা কান ঝুলিয়ে ওনার পেছনে পেছনে গিয়ে রান্না ঘরে ঢুকে ডাক্তারের চমৎকার একটা হুহুংকার শুনে পাপোশে থাবা গেড়ে বসে -অর্থাৎ তারও চা চাই। ডাক্তার সুন্দরীর প্রতি গজর গজর করতে করতে চা বানিয়ে ট্রেতে করে নিয়ে আসেন। একটা গুড্ডে বিস্কুটের প্যাকেট সহ।
চায়ে চুমুক এবং পরবর্তী প্রশ্ন। বাবামশাইকে। “মশয় আপনি ঐ সব বই নিয়ে মাস্টারবেট বা স্বমেহন বা হস্তমৈথুন করেন নি?”
বাবামশাই অধোবদন ।
“দেখুন স্বপ্নদোষ বা মাস্টারবেশন এগুলো সবই ভীষণ স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়া। আপনি বাচ্চাকে আকাশ চিনিয়েছেন, অআকখ শিখিয়েছেন তো শরীর মন এবং সংস্কারজড়িত আসল শিক্ষাটা দেন নি কেন? এই বয়ঃসন্ধির এই অস্থির সময়ে ওকে দিশা দেখান নি কেন? ওকে যৌবরাজ্যে (adulthood) অভিষিক্ত করেন নি কেন? আসুন একদিন আমরা বসে যৌবনের গুপ্তজ্ঞান ঋতুচক্র নিয়ে আলোচনা করি। ও হ্যাঁ আপনি সিগারেট খান? ”
বাবামশাই স্বীকৃতি জানান ।
“তাহলে আসুন আমরা সকলে মিলে সিগারেট ধরাই”
প্রবল অস্বস্তি নিয়ে ছেলেটা সিগারেট ধরালো। “বাবা, আমি পরীক্ষা দেবো”
ডাক্তার মৃদু হাসলেন। ওনার চশমা জানালা দিয়ে আসা রৌদ্রে চিকচিক করে উঠলো।
(পরবর্তী পর্বে নারী পুরুষের প্রজনন তন্ত্র নিয়ে আলোচনা হবে )