দেশজুড়ে যেভাবে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়াচ্ছে তাতে উদ্বিগ্ন মেডিকেল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া। সংস্থার তরফ থেকে ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীদের রোগী দেখা ও ওষুধ দেওয়ার ক্ষেত্রে টেলিমেডিসিন ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। মেডিকেল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া মনে করছে এর ফলে রোগের সংক্রমণ স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে ছড়ানো যেমন কমবে, একইভাবে এই পদ্ধতি রোগীদের চিকিৎসা পাওয়াও সুবিধাজনক হবে। রোগী ও চিকিৎসকের সুরক্ষার কথা ভেবেই এই পরামর্শ দিচ্ছে মেডিকেল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া।
এমসিআই-এর বোর্ড অফ গবর্নর্স-এর তরফে একটি গাইড লাইন জারি করে বলা হয়েছে যে টেলিমেডিসিন রোগীদের যেমন সুরক্ষা প্রদান করে, পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা দেয়। বিশেষত এমন পরিস্থিতিতে যেখানে সংক্রামক সংক্রমণের ঝুঁকি রয়েছে প্রতিপদেই । ডাক্তার ও স্বাস্থ্য কর্মীদের অজান্তেই এই ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে দেহে। তাই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে এই পদক্ষেপগুলি কথা ভাবছে মেডিকেল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া।
বিপর্যয় বা মহামারীর সময় ন্যূনতম স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানও কঠিন হয়ে পড়ে। যদিও টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান হবে না। কিন্তু মহামারী পরিস্থিতিতে রোগীর খবর রাখা ও তার মূল্যায়ন করার জন্য টেলিমেডিসিন পদ্ধতি আদর্শ।
টেলিমেডিসিন ব্যবহার করা হলে সংক্রামক রোগগুলির সংক্রমণ থেকে স্বাস্থ্য কর্মী এবং রোগীদের উভয়ই ঝুঁকি হ্রাস হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সময় অপ্রয়োজনে বাইরে আসা যথেষ্ট ঝুঁকির কারণ হতে পারে। মানুষ যদি সংক্রমিত রোগীদের সংস্পর্শে না আসে তাহলে এই রোগ ছড়ানোর অনেকটাই রুখে দেওয়া যেতে পারে। সে দিক থেকে বিশ্লেষণ করলে টেলিমেডিসিন মানুষের জন্য আশীর্বাদ হতে পারে। এর ফলে সেই ঝুঁকি থেকে সাধারণ মানুষ রক্ষা পেতে পারে। আর চিকিৎসকেরা সময় সময়ে রোগীর অবস্থা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকতে পারেন।
এই সময় একটা বড় সমস্যা হল চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মী পাওয়া যায় না। এই অবস্থায় নয়া ব্যবস্থা যাঁরা চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত আছেন, তাদের সহায়ক হতে পারে। এভাবেই চিকিৎসা ক্ষেত্রে টেলিমেডিসিনের ব্যবহার করোনা আক্রান্ত রোগীদের জন্য বাড়তি সাহায্যের হতে পারে।
টেলিমেডিসিন অনুশীলন গাইডলাইনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ভারতে ব্যক্তিগতভাবে স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদান যথেষ্টই চ্যালেঞ্জিং। আমাদের বিশাল ভৌগোলিক দূরত্ব এবং সীমিত পরিকাঠামো এই কাজকে আরও কঠিন করে তোলে। এই প্রযুক্তির সুবিধা সবচেয়ে বেশি গ্রামের মানুষের জন্য হতে পারে। কারণ তাদের চিকিৎসার জন্য লম্বা দূরত্ব অতিক্রম করতে হয়। করোনার মত মারণরোগের প্রাদুর্ভাবে সময় এটা যথেষ্ট ঝুঁকির। তাই তারা যদি টেলিমেডিসিন-এর মত প্রযুক্তি ব্যবহার করে তা তাদের জীবনযাত্রায় যথেষ্ট প্রভাব ফেলতে পারে।
এই পরিস্থিতিতে, টেলিমেডিসিন কেবল সময়োপযোগী এবং দ্রুত মানুষের কাছে পৌঁছে যাওয়া মেডিকেল সহায়তা নয়, এই ব্যবস্থা ভ্রমণের সাথে যুক্ত আর্থিক ব্যয়ও হ্রাস করে। নির্দেশিকাতে বলা হয়েছে যে, পরিবার ও সমাজের জন্য ঝুঁকির পরিমাণ কমায় এই ব্যবস্থা।
যেহেতু টেলিমেডিসিনের সাহায্য নিলে ছোটখাটো রোগের জন্য সশরীরে রোগীকে ডাক্তারের কাছে আসার প্রয়োজন পড়ে না। ফলে হাসপাতাল গুলিতেও রোগীর চাপ অনেক কমে। রুটিন চেকআপ বা দীর্ঘকালীন পর্যবেক্ষণ ডাক্তার-খানা বা হাসপাতালে না এসেই শুধুমাত্র এই মেডিসিনের মাধ্যমে চালিয়ে যাওয়া সম্ভব।
টেলিমেডিসিনের ব্যবহারের ফলে রোগীর কাগজপত্র হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। কারণ এক্ষেত্রে সমস্ত কথোপকথনই রেকর্ড করা থাকে। ফলে এই রেকর্ড গুলি আলাদা করে সামলে রাখার প্রয়োজন পড়ে না।