আমি যদি বলি গতকালই আমি এই শহরে, জলপাইগুড়িতে ভাইরাস সংক্রমনের প্রথম কেসটি দেখে ফেলেছি, সবাই লাফিয়ে উঠবেন। কে কে, কোথায় কোথায়, এখন কোথায় আছেন, কেমন আছেন ইত্যাদি প্রশ্নের ঝড় ধেয়ে আসবে আমার দিকে।
না, এই সংক্রমণ শরীরের নয়, মনের। কাল হাসপাতালে আউটডোরে এমন একজন এসেছিলেন যিনি গত তিনদিন ধরে প্রায় ১৫-২০টি সেট্রিজিন ট্যাবলেট (এলার্জির ওষুধ) খেয়েছেন। ওনার ধারণা সর্দি মানেই “করোনা” সংক্রমণ, আর তার জন্য ঘনঘন ওষুধ খেলে আর সংক্রমণ হবে না।
এর আগে নিউজ মিডিয়াতে দেখছিলাম, কর্ণাটকের একজন আত্মহত্যা করেছেন। তার জ্বর, সর্দিকাশি হয়েছিল। “করোনা” সংক্রমণ সন্দেহে তাকে সবাই দুই সপ্তাহ আলাদা, একা থাকতে বলেছিল। সেই যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে…
আবার খবরে দেখলাম, এই রাজ্যের কৃষ্ণনগরে একজন আত্মহত্যা করেছেন। তার কারণও নাকি ভাইরাস সংক্রমণের ভয়। অবশ্য দ্বিমতও আছে।
সে যাইহোক, এই ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই যে রাজ্যের, দেশের, বলা যায় গোটা পৃথিবীর মানুষই এখন একটি ভাইরাসের ভয়ে কাঁপছে যে কম্পন থার্মাল গান দিয়ে আদৌ ধরা যায় না।
এটা একটা প্রবল অনিশ্চয়তার কম্পন। শুধু সংক্রমনের ভয় নয়, “লকড ডাউন” অবস্থা, সেই পরিপ্রেক্ষিতে সমস্ত নিয়মিত কাজকর্ম ছেড়ে ঘরে বসে থাকা, খাওয়া দাওয়া, ওষুধ ইত্যাদি সব কিছু নিয়ে চিন্তা, জীবিকার সমস্যা, বাড়ী ফেরার সমস্যা, কতরকম কিছু!! সামাজিক জীবন স্থগিত। অর্থনীতির মন্দাগতি, প্রায় অচলাবস্থা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
সবকিছু মিলিয়ে একটা চূড়ান্ত মানসিক চাপের মধ্যে সকলেই। এটা হচ্ছে “অজানার ভয়” বা ইংরেজী করে বললে “anxiety of uncertainty”… তবু আমরা সবাই কেন বলছি, “এত চিন্তিত হবেন না, এত প্যানিক (“প্যানিক” প্রায় বাংলা শব্দই বলা যায়!) করবেন না!
এর একটা বড় কারণ মৃত্যুহার। এই সংক্রমণে সারা পৃথিবী জুড়ে অনেক লোক মারা গেলেও বেশীরভাগ মানুষ কিন্তু সেরে ওঠেন। অপেক্ষাকৃত বয়স্কদের মধ্যে মৃত্যুহার বেশী, বিভিন্ন ক্রনিক অসুখে যারা ভুগছেন তাদের মধ্যেও বেশী। সুতরাং তাদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন আছে।
বাকীরাও সতর্ক থাকবেন, কারণ সংক্রমিত হলে আরো অনেককে সংক্রমিত করতে পারেন, মৃত্যুর সম্ভাবনা অনেকটা কম, সেরে ওঠার সম্ভাবনা বেশী।
আমি জানি এইসব কথায় চিড়ে ভিজবে না, আশঙ্কাও কমবে না একফোঁটা।
ঠিক আছে, পড়তে থাকুন, যদি আরো কিছু আশার কথা, মন খারাপ কাটানোর কথা শোনাতে পারি, চেষ্টা করবো। ….
অনেক ধন্যবাদ ডাক্তার বাবুকে আর ‘ডক্টরস ডায়লগ’কে। এইরকম লেখা আরো দরকার।