মধ্যপ্রদেশে হিন্দিতে ডাক্তারি পড়াশোনা চালু করা নিয়ে যা বলার আছে
এমন কোনো প্রমাণ নেই যে যাঁদের মাতৃভাষা ইংরেজি নয়, যাঁরা মাতৃভাষায় ডাক্তারি পড়েছেন, তাঁরা খারাপ ডাক্তার তৈরি হয়েছেন। জাপানি, রাশিয়ান, স্প্যানিশ, ম্যান্ডারিন ভাষায় যদি ডাক্তারি পড়া যায়, পড়ে পাশ করে বিশ্ব মানের ডাক্তার হওয়া যায়, তাহলে হিন্দি, বাংলা, উর্দু, তামিল ভাষায় নয় কেন?
আমি মাতৃভাষায় বিজ্ঞান চর্চার স্বপক্ষে। জনস্বাস্থ্যের নিচুতলার কর্মীদের জন্য আমি বহু বই, প্রশিক্ষণ পুস্তিকা, ম্যানুয়াল ইত্যাদি বাংলায় অনুবাদ করেছি ও করছি। সামাজিক মাধ্যমে নানান রোগ নিয়ে বাংলায় নিয়মিত লিখে থাকি। সেই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বলতে পারি যে ডাক্তারি বই নানান ভাষায় অনুবাদ করার কাজটা কিঞ্চিত কঠিন হলেও অসম্ভব কিছু নয়। তাই প্রশ্নটা যদি এটা হয় যে আমি মাতৃভাষায় বিজ্ঞান চর্চার স্বপক্ষে কি না তাহলে আমার উত্তর হ্যাঁ।
প্রশ্নটা যদি এটা হয় যে উচ্চ শিক্ষার সেই সব ক্ষেত্র যেখানে সর্ব ভারতীয় প্রবেশিকা পরীক্ষা চালু আছে সেই ক্ষেত্রগুলিতে পড়াশোনার মিডিয়াম কি হবে, অর্থাৎ লিঙ্গুয়া ফ্রাংকা? সে ক্ষেত্রে আমি হিন্দির (বা অন্য ভারতীয় ভাষার) পরিবর্তে ইংরেজির পক্ষপাতী। হিন্দি সকল ভারতীয়ের মাতৃভাষা নয়। মাতৃভাষার বাইরে যদি অসুবিধে করে দ্বিতীয় আরেকটি ভাষা শিখতেই হয় তাহলে আমার ভোট ইংরেজির স্বপক্ষে। কারণ তাহলে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও অতিরিক্ত সুবিধা পাওয়া যাবে, যেটা হিন্দির ক্ষেত্রে পাওয়া যাবে না।
আসল প্রশ্ন এগুলো নয়। আসল প্রশ্ন হল সংঘ পরিবারের এই প্রকল্পের প্রকৃত উদ্দেশ্য কি? এটা আলোচনায় না আসায় জন্য আমরা কিছু অপ্রয়োজনীয় প্রশ্ন ও তাদের ততোধিক অপ্রয়োজনীয় উত্তরের গোলকধাঁধায় ঘুরপাক খাচ্ছি। মাতৃভাষায় বিজ্ঞান চর্চা কতটা আবশ্যকীয়, ডাক্তারি বই মাতৃভাষায় অনুবাদ করা কতটা কঠিন, – এসব প্রপঞ্চ আসলে মায়াময়।
এজেন্ডাটা আসলে কি? হিন্দি ভাষা সাম্রাজ্যবাদীরা বহুদিন আগেই বলিউডি সিনেমা, দূরদর্শন ইত্যাদির মাধ্যমে আপামর জনসাধারণের “পামর” অংশের মুখের ভাষায় থাবা বসিয়েছে। বাকি ছিল সেই অংশ, যারা “পামর” নয়, উচ্চশিক্ষায় যায়, সমাজের কেষ্ট বিষ্টু হয়, ডাক্তার হয়, ইঞ্জিনিয়ার হয়, IAS হয় ইত্যাদি। সেখানে এখনো হিন্দির উপস্থিতি নগণ্য। এসব লোকজনদের মুখের ভাষা, পড়ার ভাষা এবং অবশ্যই চিন্তার ভাষায় জগতে দাপটের সাথে হিন্দিকে ঢোকাতে হবে এই হচ্ছে আসল প্রকল্প। ভাষা সাম্রাজ্যবাদীদের এই প্রবল সুচতুর আক্রমণের মুখে দাঁড়িয়ে আমরা যদি মাতৃভাষায় বিজ্ঞান চর্চার সুফল নিয়ে বা গ্রে এনাটমির বাংলা অনুবাদের গুণমান নিয়ে বৈশ্বিক ও বৌদ্ধিক আলোচনায় মেতে থাকি তাহলে সাম্রাজ্যবাদীদের পাতা ফাঁদেই পা দেব।
যেটা দরকার সেটা হল প্রতিবাদ। স্পষ্ট কথায় এই এজেন্ডার স্বরূপ উন্মোচিত করতে হবে। স্পষ্ট কথায় আশা করি কষ্ট নেই।