মৃত্যু মানেই গোলমেলে ডাক্তারি
মৃত্যু মানেই প্রমাণ গাফিলতি
অমর ছিলো মানুষ নাকি আগে
চিকিৎসকই মেরেছে সম্প্রতি ”
-আর্যতীর্থ
২৪ এপ্রিল
আজ ব্যথাটা একটু কম, হাসপাতালে যাবো, যেতেই হবে। উপায় নেই, আমি ছাড়া তো আর ডাক্তার নেই এ তল্লাটে।…চোখের তলাটা একটু ফুলে আছে,হেমাটোমা। থাকবে কদিন।
বাবার জন্যই খারাপ লাগছে, সেদিনের ঘটনাটার পর থেকে কেমন গুম মেরে গেছেন। মায়ের কোন স্মৃতি নেই আমার। বাবাই সব। তিল তিল করে বড় করে তুলেছেন আমাকে। ডাক্তার করেছেন। এখন আমাদের সঙ্গেই থাকেন।
আমাদের মানে, আমি আর আমার স্ত্রী। ওর শরীর ভালো নেই। তাই ঘরের ভেতরে ছিল। ভাগ্যিস ছিল। না হলে ওর গায়েও হাত পড়তো।
বাচ্চাটাকে যখন ওরা নিয়ে এসেছিলো, তখনই যা হবার হয়ে গিয়েছে, ব্রট ডেড। যাই হোক তাও চেষ্টা করেছিলাম আপ্রাণ, হাতের কাছে যা ছিল তাই দিয়েই, কার্ডিও পালমোনারি রেসাসিটেশন করার জন্য যা যা করার দরকার সব করলাম। তার পর, এক সময়, ওদের বুঝিয়ে বললাম, সব শেষ। আর সত্যি কিছু করার নেই। ওরা চলে গেল নিঃশব্দে।
মনটা খারাপ লাগছিলো, মাত্র দুমাসের শিশু, সামান্য কদিনের জ্বরে নিভে গেলো। সব কিছু ঠিক থাকলে, আমাদের সংসারেও নতুন অতিথি আসতে চলেছে সামনের সেপ্টেম্বরে।
ওরা আবার ফিরে এলো, এবার আর হাসপাতালে নয়, আমার কোয়ার্টারে, আমি তখন ডিউটি থেকে ফিরে সবে মাত্র হাতে মুখে জল দিয়েছি, অবসন্ন শরীর, সকাল থেকে অন্তত শ’পাঁচেক রোগী দেখতে হয়েছে এক হাতে। তার মধ্যে জ্বরের রোগী অনেক, তার বেশিরভাগই আবার শিশু। এসেই প্রথমে টেবিলটা উল্টে দিলো, তারপর চেয়ারটা ছুঁড়ে মারলো, বইয়ের আলমারির ওপর, ঝনঝন করে ভেঙে পড়লো কাঁচ।
-শালা ডাক্তার হয়েছে! ডাক্তার! শালা দুধের বাচ্চাটাকে মেরে দিলো। বুক চেপে মেরে দিলো!
বুক চেপে? কার্ডিয়াক ম্যাসাজ দেবার একটা শেষ চেষ্টা করেছিলাম, সেটার কথাই বলছে বোধ হয়।
তার পর আরো অশ্রাব্য সব কথা, আর কিল চড়।
আমি এদের চিনি না।
বাচ্চার বাবা মা কে দেখলাম না, এরা কারা ?
বাবা শব্দ শুনে পাশের ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন, বাবাকেও রেয়াত করলো না ওরা , চড় থাপ্পড়
পড়
তে থাকলো, আর সঙ্গে গালি গালাজ । আমার বাবা ছিলেন প্রাইমারি স্কুলের মাস্টারমশাই, এই রকম লাঞ্ছনা কোনোদিন সহ্য করতে হয় নি I
আমার ভয় লাগছিলো, আমার স্ত্রীর জন্য, ও ভেতরের ঘরে, গোলমাল শুনে যদি বেরিয়ে আসে, তাহলেই সর্বনাশ!
আমি কোনো রকমে খোলা দরজা দিয়ে ছুটে বেরিয়ে গেলাম, আমার পেছনে পেছনে এলো ওরা
-মন্ডল ডাক্তার বললো, ওর কাছে নিয়ে গেলেই বেঁচে যেত, তুই শালা মেরে দিলি !
মন্ডল কোনো ডাক্তার নয়, হাতুড়েও ঠিক নয়, নকল ডাক্তার, ডাক্তার পরিচয় দিয়ে, ভুয়ো রেজিস্ট্রেশন নাম্বার দিয়ে প্র্যাকটিস করে, এখানে এই হেলথ সেন্টারটা হবার আগে, বা হবার পরেও, কোনো ডাক্তারের পোস্টিং হবার আগে, ওরই ছিল মৌরুসি পাট্টা। সেটা এখন, কিছুটা হলেও ধাক্কা খেয়েছে। মন্ডলের তাই আমার ওপর, আর হাসপাতালের ওপর বেশ রাগ।
বাড়ির বাইরে ভিড়ের মধ্যে দেখলাম, মন্ডলের চেম্বারের এসিস্ট্যান্ট ছেলেটা একটা স্মার্ট ফোনে আমার ওপর আক্রমণের ভিডিও করছে, সোস্যাল মিডিয়ার খোরাক।
মার খেতে খেতে বোধ হয় মরেই যেতাম, যদি না খবর পেয়ে হাসপাতাল থেকে আমার কিছু কর্মী আর বেশ কিছু পেশেন্ট এগিয়ে আসতেন।