দাঁতের পরিচর্যায় দিনে দুবেলা ঠিকমতো নিয়মে ব্রাশ এবং টুথপেস্ট দিয়ে দাঁত মাজার কথা আমরা প্রায় সকলেই জানি। এই দিনে দুবার ব্রাশ করার অভ্যেস যেমন বাড়ীর বড়দের মেনে চলা উচিৎ তেমনি বাড়ীর ছোটদেরও উৎসাহ প্রদান করা উচিত এই অভ্যেস মেনে চলতে। আজকে একটু অন্যধরনের আলোচনা করবো দাঁতের দৈনন্দিন পরিচর্যায় বিষয়ে, ব্রাশ দিয়ে দাঁত পরিষ্কার রাখতে গিয়ে সাধারণত একটা সমস্যার শিকার হই আমরা যে ব্রাশের দারাগুলি অনেক সময় ইন্টার ডেন্টাল এরিয়া বা দুটি দাতের সংযোগস্থলের এলাকায় জমে থাকা ফুড পার্টিকেল বা খাদ্যকণাগুলো পর্যন্ত পৌঁছতে পারেনা ফলত সেখানে এই ফুড পার্টিকেলগুলো জমে জমে দাতের মাঝে ডেন্টাল ক্যারিস বা দাঁতে পোকা লাগা যাকে বলে থাকি আমরা সাধারণত এবং অন্যান্য মাড়ির রোগকে ডেকে আনে।
এই সমস্যার থেকে দূরে থাকতে এবং নিজের এবং বাড়ীর সকলের মৌখিক স্বাস্থ্যের সঠিকভাবে খেয়াল রাখতে মেডিকেটেড ডেন্টাল ফ্লস (Floss) ব্যবহার করা অবশ্যই প্রয়োজন দাঁত মাজার পাশাপাশি।
আসুন সংক্ষেপে জেনে নেওয়া যাক ডেন্টাল ফ্লস সম্পর্কে:
I. ডেন্টাল ফ্লস কি এবং কেন ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়?
ডেন্টাল ফ্লস হলো পাতলা সুতো বা তন্তুর একটি সমষ্টি যা নাইলন বা সিল্ক উভয় দিয়েই তৈরী হতে পারে, এই সুতো দুটো দাঁতের সংযোগস্থলে রেখে পর্যায়ক্রমে ভিতরে এবং বাইরের দিকে টানার মাধ্যমে দাঁতের মাঝে জমে থাকা খাদ্যকণা বাইরে বার করে দেয়, দাঁতের এবং মাড়ির সুস্থতা সুনিশ্চিত করে।বিভিন্ন ধরনের ডেন্টাল ফ্লস বর্তমানে পাওয়া যায়, সেগুলিকে মোটামুটিভাবে নিম্নবর্ণিত ক’টাভাগে ভাগ করা যায়:
i. ওয়াক্স যুক্ত/ওয়াক্স বিহীন
ii. ফ্লেভার যুক্ত/ফ্লেভার বিহীন
iii. ফ্লুরাইড যুক্ত/ফ্লুরাইড বিহীন
iv. মোটা/সরু
এছাড়া ফ্লসের ধরন হিসেবে একে রেগুলার ফ্লস, স্পেশালাইসড প্লাস্টিক ওয়ান্ডস বা ফ্লস পিক এবং আর্গণমিক ফ্লস হিসেবে ভাগ করা যায়।
১. রেগুলার ফ্লস:
সর্বাধিক প্রচলিত এবং ব্যবহৃত এই ধরনের ফ্লস প্লাস্টিক ডিসপেনসারে করে আসে এবং এতে প্রায় ১০ থেকে ১০০ মিটারের মতো তন্তু কুণ্ডলী পাকানো অবস্থায় থাকে এবং তন্তুর বেধ বিভিন্ন ধরনের হয়। দুআঙ্গুল দিয়ে ধরে দুই দাঁতের মাঝের রেখে জমে থাকা ময়লা বার করে দিতে হয়।
২. স্পেশালাইসড প্লাস্টিক ওয়ান্ডস বা ফ্লস পিক:
এধরনের ফ্লসের সাথে ছোট প্লাস্টিকের হাতল লাগানো থাকে, যার জন্যে পেছনের সারিতে থাকা দাঁতগুলোর সংযোগস্থল পরিষ্কার করা অনেক সুবিধেজনক এই ধরনের ফ্লস ব্যবহারে। তবে দাঁতের সমস্ত অ্যাঙ্গেলে ফ্লসিং করতে সামান্য সমস্যা হয় রেগুলার ফ্লসের তুলনায়।
৩.আর্গণমিক ফ্লস:
এটিও একটি বিশেষ ধরনের ফ্লস যার হাতল অনেক বেশি মডিফায়েড এবং এটির বিশেষত্ব ফ্লস হেড বা ফ্লসের মাথা বাধাহীনভাবে সবদিকে ঘুরতে পারে যাতে দাঁতের যেকোন স্থানে সুগমে পৌঁছতে পারে।
বর্তমানে এছাড়াও ডেন্টাল টেপ, Polytetrafluorethylene ফ্লস (PTFE), সুপার ফ্লস এবং ইলেকট্রিক ফ্লসার পাওয়া যায়।
2. ডেন্টাল ফ্লস (রেগুলার) ব্যবহার কিভাবে করবেন?
ডেন্টাল ফ্লস (রেগুলার) ব্যবহার করার জন্যে প্লাস্টিক ডিসপেনসার থেকে ১৮ ইঞ্চির মতো তন্তু বার করে দুহাতের মধ্যমায় তিন পাক পেঁচিয়ে নিতে হবে, এবারে বুড়ো আঙুল এবং তর্জনী বা ইনডেক্স ফিঙ্গার দিয়ে তন্তুর ২-৩ সেমি. ভালোভাবে ধরতে হবে। এবারে জেন্টল রাবিং মোশনে বা মৃদুভাবে ঘষে দুটি দাঁতের সংযোগস্থল পর্যন্ত তন্তু পৌঁছে দিতে হবে, তবে অতিরিক্ত সতর্কতা রাখতে হবে এই সময় যাতে ফ্লস/তন্তু ছিড়ে না যায় অথবা মাড়িতে আঘাত না করে। যখনই ফ্লস দুটি দাঁতের সংযোগস্থলে মাড়ির লাইন পর্যন্ত পৌঁছে যাবে তখন একটি দাঁতের বিরুদ্ধে তার কার্ভ বরাবর ফ্লসটিকে উপর নীচ করে ও ভেতরে বাইরে মৃদুভাবে C-Shaped করে রাব করতে হবে যাতে মাঝে জমা খাদ্যকণা বেরিয়ে আসে। এবারে ফ্লসটিকে অপরপাশে অন্য দাঁতের দিকে মুখ করে সেই দাঁতের বিরুদ্ধে C-Shaped করে একইভাবে নিয়ম মেনে ফ্লসিং করতে হবে।
# ফ্লসিং করার কিছু নিয়ম নীতি:
১. যখনি ফ্লস করবেন খেয়াল রাখতে হবে ফ্লসের চাপটা যাতে দাঁতের বিরুদ্ধে পড়ে।
২. কখনোই ফ্লসের মাধ্যমে দাঁতের মাড়ির ওপরে চাপ দেওয়া যাবেনা, এতে মাড়ির ক্ষতি হবে।
৩. আপনি ফ্লসিং করার সময় যেই ফ্লসের অংশ ব্যবহার করছেন সেটি সময়ে সময়ে বদলে পরিষ্কার অংশ ব্যাবহার করুন এবং শেষে মুখ ধুয়ে নিন এবং ব্যাবহৃত নোংরা ফ্লস ফেলে দিন।
3. ডেন্টাল ফ্লস ব্যবহার করার উপকারিতা কি কি?
ডেন্টাল ফ্লস ব্যবহার করলে দাঁতের মাঝে জমা খাদ্যকণা বেরিয়ে যায় যা জমার ফলে ডেন্টাল ক্যারিসের উৎপত্তি হয়, সুতরাং দাঁতে পোকা লাগার থেকে দাঁতকে রক্ষা করা সম্ভব।
এই খাবারের কণা জমে জমে প্লাক তৈরী হয় পড়ে যা কঠিন রূপ ধারণ করে ও ক্যালকুলাস বা দাঁতে পাথর জমার ফলে দাঁতের মাড়ি ফুলে ওঠে এবং রক্তপাত শুরু হয় যা ডাক্তারী পরিভাষায় Gingivitis নামে পরিচিত, তার থেকে মাড়ি রক্ষা পায়। তাছাড়া এই খাবার জমে প্লাক ও ক্যালকুলাস তৈরী হবার দরুন মাড়িতে প্রদাহ, রক্তপাতের সাথে সাথে পকেট তৈরী করে যার জন্যে পরবর্তীতে দাঁতের চারপাশের সফট টিস্যুর প্রভূত ক্ষতি হয় এবং ধীরে ধীরে দাঁতের চারপাশের সাপোর্টিং হাড়ের উচ্চতা হ্রাস পায়; ফলে দাঁত নড়বড়ে হয়ে যায় একে ডাক্তারী পরিভাষায় Periodontitis বলে। প্রতিদিন ফ্লস ব্যবহার করলে এই ধরনের সমস্যাগুলো এড়ানো যায়। যাদের মুখে দুর্গন্ধ হয় যাকে Halitosis বলা হয় ইন্টার ডেন্টাল এরিয়া ক্লিনিংয়ের মাধ্যমে সেটি দূর করা সম্ভব এবং ফ্লসিং করলে দাঁতের সারফেস পালিশও হয়।
পরিশেষে, প্রতিদিন দাঁতের ফ্লসিং করলে নানা রকমের মৌখিক রোগকে আটকানো যায়, এইকারনে বাচ্চাদেরও দাঁতের ফ্লসিং করা উচিত একজন অভিভাবকের পর্যবেক্ষণে।
The American Dental Association recommends cleaning between your teeth daily with an interdental cleaner (like floss). Cleaning between your teeth may help prevent cavities and gum disease.
সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন।
ছবি এবং ভিডিও: The American Dental Association (ADA)
ভিডিও লিংক: https://youtu.be/HhdoPXNKNm4