মেয়েদের মানসিক স্বাস্থ্য আলাদা করে উল্লেখ করছি কেন?? করছি কারণ মহিলাদের reproductive cycle-এর সাথে মানসিক স্বাস্থ্য জড়িয়ে থাকে নিবিড় ভাবে…. হরমোন আর মন মিলে মিশে একাকার আর কি!!
যাই হোক দেখা যাচ্ছে যে মেয়েদের ক্ষেত্রে ডিপ্রেশনে আক্রান্ত হবার হার, পুরুষদের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ… এই হার কিন্তু বয়ঃসন্ধির আগের ছেলেমেয়েদের ক্ষেত্রে সমান সমান বা ছেলেদেরই খানিকটা বেশি, কিন্তু বয়ঃসন্ধির পরেই ব্যাপারটা পুরো উল্টে যায়, কি করে?? আর কেনই বা সারাজীবনে ডিপ্রেশনে আক্রান্ত হবার হার মেয়েদের ক্ষেত্রে ছেলেদের দ্বিগুণ??
এর কারণ হয়তো menstrual cycle-এর সাথে সাথে হরমোনের তারতম্য, বাচ্চার জন্ম দেয়ার stress এবং তার সঙ্গে অবশ্যই social expectation এবং তার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা “learned helplessness”… এতকিছু আছে বলেই মহিলাদের মানসিক স্বাস্থ্য আলাদা করে আলোচনা করতে হয়…!
মেয়েদের ক্ষেত্রে একটা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ life event হলো মাতৃত্ব… মাতৃত্ব নিয়ে অনেক ভালো লাগা ও স্বপ্ন যেমন জড়িয়ে থাকে তেমনই কিন্তু জড়িয়ে থাকে ভীতি…. আমাদের সমাজে আজও মাতৃত্ব-কে একটা choice বলে মনে করা হয় না, মনে করা হয় একটা মেয়ের জীবনের একমাত্র সাফল্য বা পূর্ণতা হিসেবে… আজও biologically মা হতে না পারায় মেয়েদের অসম্ভব মানসিক নির্যাতন সহ্য করতে হয়, সেই সঙ্গে আসে অপরাধবোধ, নিজেকে অসম্পূর্ণ বা অক্ষম ভাবা ইত্যাদি ইত্যাদি….
আর মা হবার পরে?? মা হবার পরে বাচ্চার সব গুণের বাহবা মা না পেলেও সব দোষ, সব অসুখ, সব কিছুর দায় কিন্তু মা-এর…. “বাচ্চা-কে ভালো করে দুধ দিতে পারে না “… এই মন্তব্য বাড়ির লোকজন অবলীলায় করে যান কিন্তু এই মন্তব্য নতুন মা-এর উপর কি প্রভাব ফেলে তা কেউ ভাবেন না, অথবা ভাবেন, ভেবেই করেন…. মাতৃত্বের পরে অনেক “বেয়াড়া” মেয়েকে খানিকটা tight দিতেও এসব নিষ্ঠুর মন্তব্য করেন অনেকেই… কারণ ওই যে, তুমি যত সফল-ই হও না কেন, তুমি আদৰ্শ মা না হতে পারলে যে তুমি অসম্পূর্ণ…. তো মাতৃত্ব নিয়ে এতসব জটিল বিষয় জড়িয়ে রয়েছে আর সেই জন্যেই একটু আলোকপাত করবো Postpartum Depression ও Postpartum Psychosis নিয়ে…!!
মা হওয়ার পরে পরেই কিছু emotional সমস্যা অনেকেরই হয়… এই যেমন mood swing, মনখারাপ, একটু কান্নাকাটি… hormonal কিছু কারণ, সদ্য মা হওয়ার ধকল এবং মাতৃত্বের দায়িত্ব ইত্যাদি নিয়ে দিশেহারা হয়ে এই “baby blues ” হয় 30-75% মায়েদের… এই অবস্থা নিজের থেকেই ঠিক হয়, বাড়ির লোকের support এ ক্ষেত্রে ভীষণ জরুরী!!
কিন্তু 10-15% মা-দের ক্ষেত্রে postpartum depression হতে পারে… শুরু হয় delivery র 12 সপ্তাহের মধ্যে… এবং চিকিৎসা না করালে সেটা কয়েক মাস থেকে বছর পর্যন্তও স্থায়ী হতে পারে, অনেকক্ষেত্রেই এঁদের পারিবারিক mood disorder-এর ইতিহাস থাকতে পারে…. এক্ষেত্রে মন খারাপ, অবসাদ, ঘুমের সমস্য, বাচ্চার ক্ষতি করার ভয় বা ভাবনা, আত্মহত্যার ইচ্ছা ইত্যাদি দেখা যায়, যেগুলো সাধারণ “baby blues”-এর ক্ষেত্রে দেখা যায় না!
এই postpartum depression থেকে আমরা যদি আরেক ধাপ এগিয়ে যাই তাহলে আরেকটা অসুখ সম্পর্কে জানতে পারি, postpartum psychosis…. বাচ্চার জন্মের কয়েক সপ্তাহের মধ্যে দেখা যেতে পারে… depression, ভয়, বাচ্চার ক্ষতি করার প্রবণতা বা আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা যেতে পারে, অনেকসময় মা মনে করে বসেন যে বাচ্চাটির কোনো ত্রুটি আছে বা বাচ্চা মৃত, অনেকসময় তিনি মাতৃত্বকেই অস্বীকার করতে পারেন…. এই অবস্থায় বাচ্চার বা নিজের ক্ষতি করার প্রবণতা থাকতে পারে বলেই বাচ্চা এবং মা, উভয়কেই দেখে রাখা জরুরী এবং চিকিৎসা শুরু করার প্রয়োজন বলাই বাহুল্য….!
Pregnancy, delivery এবং মাতৃত্ব এই সময়ের জীবনের পরিবর্তন, শারীরিক ধকল, মানসিক চাপ এবং হরমোনের ওঠাপড়া সব মিলিয়ে আবেগের একটা নাগরদোলা যেন… কি করতে পারেন? পর্যাপ্ত support… বাচ্চার জন্মের পরে সমস্ত attention বাচ্চার দিকেই চলে যায় অথচ পর্যাপ্ত দেখাশোনার প্রয়োজন আছে সদ্য মা-এর ও, মা হওয়া মেয়েটির ক্লান্ত লাগা, ভয় লাগা, মনখারাপ, frustrated লাগা স্বাভাবিক…. “মা হওয়া নয় মুখের কথা ” বলে তার সমস্যাগুলো উড়িয়ে দেবেন না, তার সমস্যাগুলোও ventilate করতে দিন…!! আর depression বা psychosis এর পর্যায়ে গেলে অবশ্যই চিকিৎসা করান…!!
আর মাতৃত্ব ছাড়াও menstrual cycle-এর সাথে জড়িয়ে থাকা মানসিক সমস্যা নিয়ে না হয় অন্য একদিন কথা বলবো, কেমন??