Skip to content
Facebook Twitter Google-plus Youtube Microphone
  • Home
  • About Us
  • Contact Us
Menu
  • Home
  • About Us
  • Contact Us
Swasthyer Britte Archive
Search
Generic filters
  • আরোগ্যের সন্ধানে
  • ডক্টর অন কল
  • ছবিতে চিকিৎসা
  • মা ও শিশু
  • মন নিয়ে
  • ডক্টরস’ ডায়ালগ
  • ঘরোয়া চিকিৎসা
  • শরীর যখন সম্পদ
  • ডক্টর’স ডায়েরি
  • স্বাস্থ্য আন্দোলন
  • সরকারি কড়চা
  • বাংলার মুখ
  • বহির্বিশ্ব
  • তাহাদের কথা
  • অন্ধকারের উৎস হতে
  • সম্পাদকীয়
  • ইতিহাসের সরণি
Menu
  • আরোগ্যের সন্ধানে
  • ডক্টর অন কল
  • ছবিতে চিকিৎসা
  • মা ও শিশু
  • মন নিয়ে
  • ডক্টরস’ ডায়ালগ
  • ঘরোয়া চিকিৎসা
  • শরীর যখন সম্পদ
  • ডক্টর’স ডায়েরি
  • স্বাস্থ্য আন্দোলন
  • সরকারি কড়চা
  • বাংলার মুখ
  • বহির্বিশ্ব
  • তাহাদের কথা
  • অন্ধকারের উৎস হতে
  • সম্পাদকীয়
  • ইতিহাসের সরণি
  • আরোগ্যের সন্ধানে
  • ডক্টর অন কল
  • ছবিতে চিকিৎসা
  • মা ও শিশু
  • মন নিয়ে
  • ডক্টরস’ ডায়ালগ
  • ঘরোয়া চিকিৎসা
  • শরীর যখন সম্পদ
  • ডক্টর’স ডায়েরি
  • স্বাস্থ্য আন্দোলন
  • সরকারি কড়চা
  • বাংলার মুখ
  • বহির্বিশ্ব
  • তাহাদের কথা
  • অন্ধকারের উৎস হতে
  • সম্পাদকীয়
  • ইতিহাসের সরণি
Menu
  • আরোগ্যের সন্ধানে
  • ডক্টর অন কল
  • ছবিতে চিকিৎসা
  • মা ও শিশু
  • মন নিয়ে
  • ডক্টরস’ ডায়ালগ
  • ঘরোয়া চিকিৎসা
  • শরীর যখন সম্পদ
  • ডক্টর’স ডায়েরি
  • স্বাস্থ্য আন্দোলন
  • সরকারি কড়চা
  • বাংলার মুখ
  • বহির্বিশ্ব
  • তাহাদের কথা
  • অন্ধকারের উৎস হতে
  • সম্পাদকীয়
  • ইতিহাসের সরণি
Search
Generic filters

নিখোঁজ

Screenshot_2023-11-11-09-25-38-93_680d03679600f7af0b4c700c6b270fe7
Dr. Arunachal Datta Choudhury

Dr. Arunachal Datta Choudhury

Medicine specialist
My Other Posts
  • November 11, 2023
  • 3:53 am
  • No Comments
আমাকে খুঁজে পাচ্ছে না কেউ। পাবে কী করে? স্বয়ং আমিই তো নিজেকে খুঁজে পাচ্ছি না। সোজা কথায় বললে আমি হারিয়ে গেছি। না না, অন্য রকম ভাবার দরকার নেই। ভারতীয় দর্শনেও একটি কথা আছে। ‘আত্মানং বিদ্ধি’। অর্থাৎ, নিজেকে জানো। অনাদিকালের সেই ঔপনিষদিক জিজ্ঞাসা আত্মানং বিদ্ধির সঙ্গে আমার কোনও সম্পর্ক নেই।
আমি নিজেকে জানি। যথেষ্টই জানি। আমি জানি যে আমি কোনওক্রমে গ্র্যাজুয়েট হয়েছি নেহাতই পারিবারিক উদ্যোগে। পাঁচ বছর আগে যেদিন রেজাল্ট বেরোলো বাবা গম্ভীর হয়ে বললেন, ‘বঙ্কিম চাটুজ্যের সমান হয়েছ অ্যদ্দিনে। এবার নিজের চেষ্টা নিজে করো’। মানে সোজা ভাষায় জানালেন এবার নিজের পথ নিজে দ্যাখো বাপু।
আমিও মনে মনে এই কথাটাই ভাবছিলাম। অন্য কেউ হলে ভাবত হয় তো… রাস্তা কোথায়। আমি কিন্তু সেই সব নিষ্কর্মাদের মত রাস্তা কোথায় খুঁজে মরিনি।
আমি রাস্তা খোঁজার চেষ্টাই করিনি গত পাঁচ বছর। বদলে ফেসবুক করেছি। লিটল ম্যাগাজিন করেছি। সারা জীবনে সাড়ে ছয়খানা ব্যর্থ প্রেম করেছি। আর কোন না পাঁচ হাজার কবিতা লিখেছি। আমার স্বভাবে বলতে নেই, একটু প্রেমে পড়ার প্রবণতা রয়েছে। গত পাঁচ বছরে টোটাল প্রেম সাড়ে ছয় খানা। সাড়ে বলছি কারণ শেষের প্রেমটা মরেও মরেনি।
আসলে মনে হয় কবিতাই আমার প্রথম ভালোবাসা। ছজনের সঙ্গে প্রেমই ভেস্তে গেছে তাদের জোর করে কবিতা পড়াতে গিয়ে। আধখানা প্রেম এখনও পড়ে আছে।
তাকে আমার লেখা কবিতা জোর করে পড়াইনি বলেই। পড়ালে পাছে পুরোটা মরে যায় এই ভেবেই পড়ানো হয়নি বল্লরী মানে বুঁচিকে।
অজস্র রাস্তা খোলা। কিন্তু কোন রাস্তায় যাব? নিরাপদ, পরিশ্রম কম, সত্যি সত্যি পরিচ্ছন্ন রাস্তার বড়ই অভাব চারপাশে। মুশকিলের ব্যাপার হল, বাবা এই বছর রিটায়ার করবে।
এই ব্যাপারে একমাত্র পথ দেখাতে পারে আমার ছোটোমামা।
মানুষটা মামা হলেও পরোপকারী। যম জামাই ভাগনা টাইপের আপ্তবাক্য না মেনে ভাগ্নেকে আপনই ভাবে। অবশ্য সঙ্গত কারণেই ভাগ্নের চাইতেও বেশি আপন ভাবে দিদি জামাইবাবু মানে আমার মা আর বাবাকে। মাসে দুমাসে হানা দেয়। মায়ের রান্নার লোভে। আন্দাজ করি বাবার মানিব্যাগের টানেও। বাবার থেকে আমি হাতখরচ নিই। মাসে দুমাসে মামার খাতেও কিছু ড্রেনেজ হয় মানিব্যাগ থেকে।
মামা কিন্তু আমার ধারণামতে অথচ ভালো কাজ করে। কোন একটা খবরের কাগজে নাকি সাংবাদিক। সেই কাজটাকে চাকরি বলে না ছোটোমামা। চাকরি কথাটায় নাকি বড্ডই চাকর চাকর গন্ধ। মামা কাউকে বলতে হলে নিজেকে বলে ইনভেস্টিগেটিভ ফ্রিল্যান্সার জার্নালিস্ট। কোনও খবরেই নাম থাকে না কেন তার জিজ্ঞেস করলে বলে, ‘ওরে, তদন্তমূলক কাজে অত নামের লোভ থাকলে চলে না। লোকে চিনে ফেললেই তদন্ত শেষ! অকুস্থলে যেতে হবে এমন ভাবে যেন ঘুণাক্ষরেও কেউ না বোঝে তুমি কে, কী এবং কেন?’
এই সব বললেও কিন্তু মামা নিজে আদৌ স্বস্তিতে নেই বুঝতে পারলাম, মামাকে আমার ব্যাপারটা বলতেই। মামা বলল, – ‘ওরে ভুটু, আমি যা পেরে উঠছি না তা তুই কি পারবি? তোর যে শিক্ষা নেই দীক্ষা নেই।’
একটু ঘাবড়ে অভিমানভরে বললাম, – ‘আমার যে জার্নালিজমে ডিগ্রি নেই সেটা মিন করছ নাকি? সে তো তুমি জানোই যে নেই। জানো না?’
মামার কান উৎকর্ণ হয়ে আছে রান্নাঘরের ছ্যাঁকছোঁক আওয়াজের দিকে। পরম বিরক্তিতে সেই দিকে তাকিয়ে বলল,
– ‘দিদিটা বড্ড স্লো হয়ে গেছে দেখছি। কটা ডিমের বড়া ভাজতে এত সময় লাগে? হ্যাঁ, তোর যে জার্নালিজমে ডিগ্রি নেই সে তো জানিই। কিন্তু সেই না থাকাটাই তো দরকার! আমার এডিটর তো সেটাই চাইছে।’
এবার চমকাবার পালা আমার। ডিগ্রি না থাকাও কোয়ালিফিকেশন?
প্রশ্নের চোখে তাকাতে বলল, – ‘শোন এখনকার যত দুষ্কৃতকারীরা সব ইউনিভার্সিটিতে ইউনিভার্সিটিতে লোক পাঠিয়ে কারা কারা জার্নালিজম পড়ছে সবার লিস্ট জোগাড় করে। সবাইকে চোখে চোখে রাখে। কেউ যাতে তদন্ত মূলক কাজে জড়িয়ে না পড়ে। জড়ালেই ঘ্যাঁচ।’
আঁতকে উঠে জিজ্ঞেস করলাম, – ‘ সে কী, একেবারে ঘ্যাঁচ? মেরে ফেলে?’
– ‘দূর বোকা, এই ঘ্যাঁচ মানে জার্নালিস্টের কেরিয়ার খতম। দুষ্কৃতিরা নিজেদের টিমে ঢুকিয়ে নেয় তাকে। অনেক বেশি পয়সা দিয়ে। নতুন একটা নামও খাড়া করেছে তার। নিউ এজ ইনোভেটিভ জার্নালিজম। ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজমের বদলে ইনোভেটিভ! বুঝলি কিছু?’
তা সেই সাংবাদিকের কাজেই লাগিয়ে দিল ছোটোমামা। পুরো সাংবাদিক না। মামারই নিজের অ্যসিস্ট্যান্ট টাইপের। নিজের কাজটা আউটসোর্সিং করল।– ‘কী জানিস, বয়েস হচ্ছে তো! আর ছুটোছুটি করতে পারি না তেমন। এই তো দ্যাখ, বাইকের সার্ভিসিং করিয়ে দিতে বললাম চিফ এডিটরকে। আজ দিচ্ছি কাল দিচ্ছি বলে সেই বাইক এখন একশ লাথিতেও স্টার্ট নেয় না। তুই একটু বাস অটো টোটো তে কাজটা সামলে দে। মালমশলা জোগাড় করে আমায় এনে দিবি। আমি ছুঁচ সুতো নিয়ে বসে আছি। মালাটা ঠিকমত গেঁথে দেব এখন।’
শুনে মনে হল মামাও বোধ হয় ওই কী বলে ইনোভেটিভ জার্নালিজমের দিকেই ঝুঁকছে। আমার জোগাড় করা খবরের ওপর রঙ চাপিয়ে চালাবে হয় তো। কী আর করা! অন্য উপায় তো নেই।
মামার যিনি সাক্ষাৎ বস সেই মেজ এডিটরের কাছে নতুন কাজ বুঝে নিয়ে মামা সেই তদন্তের কাজটা আমাকে চালান করল। বলেছিল বাস টোটো অটো কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা গেল ট্রেন তারপরে বিস্তর পায়ে হাঁটা। জায়গাটার নামও ঠিকঠাক বলা যাবে না এমনই নাকি গোপনীয়তা। শুধু ট্রেনের নামটা। তাও বলতে চায় না। তবু নাকি খবর এনে দিতে হবে তাকে। এমনই নাকি দস্তুর এই সব কাজের।
আমি বললাম, ‘আরে স্টেশনের নাম বলছ না। কীসের তদন্ত… কী ব্যাপার সেইটা তো বলো?’
‘আরে সেটা বলতে পারলে তো ব্যাপার মিটেই যেত। কী ব্যাপার জানতেই তো তোর অদ্দুর যাওয়া! কী জানিস, একখানা জঙ্গুলে গ্রাম। লোকেরা বাংলাতেই কথা বলে। মানে বলত শেষ খবর পাওয়া অবধি।’
—- ‘শেষ খবর মানে? গ্রামটা নেই নাকি? কী হল? বন্যা, দাবানল, মহামারী, ভূমিকম্প?’
—- ‘আরে, সেটাই তো। ব্রিটিশ আমলের শেষ দিকেও গ্রামটা ছিল ম্যাপে আর কাগজপত্রে। তারপরে অবাক কাণ্ড, বুঝলি তো, গ্রামটা নিখোঁজ। রাস্তা অবধি বলতে পারে না কেউ।
সেখানের লোকেরা কী করে, কী খায়দায় কেউ জানে না। নো সেন্সাস রিপোর্ট। অথচ গ্রামটা ছিল নয় শুধু,আছে। টের পাওয়া যায়। দু একটা লোক ওই গ্রাম থেকে কখনও কখনও বাইরে আসে, ঘোরাঘুরি করে। তাদের ধরে কিছু শুধোলে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। অপরাধ টপরাধ করে না। তবু থানায় নিয়ে যেতে হয়। সেখানে গিয়েও মুখ খোলে না ব্যাটারা। অবাক কাণ্ড!
তোকে এই গ্রামটার ব্যাপারে খোঁজ নিতে হবে। পারলে গ্রামটায় সেঁধোতে হবে।’
প্রায় অজ্ঞান হয়ে যাবার মত প্রস্তাব।
মামা সেই প্রায় অজ্ঞান আমার কানে আবার মধুবর্ষী গলায় বলল, —- ‘আর শোন কেউ যেন তোর কাছ থেকে জানতে না পারে তুই কে কী এবং কেন। আর ইয়ে, কী জানিস, কেউ কেউ তোকে ফুঁসলাতেও চেষ্টা করবে হয় তো। মোটেই ঘাবড়াবি না। প্রলোভনে পা দিবি না।’
– ‘আমি কি বাচ্চা ছেলে নাকি যে ছেলেধরা ফুঁসলে নেবে আমাকে?’
– ‘ঠিক ছেলে ধরা না। ওই গৌতম বুদ্ধকে যেমন ফুঁসলেছিল না মার এসে! প্রায় ওইরকমই। বুদ্ধেরই মত টাইট হয়ে বসে থাকবি। ঢিলে দিবি না সাধনায়, বুঝলি তো?’
– ‘ধাড়ি ছেলেকে ফুঁসলাবে? সে আবার কী?’
–‘সে আছে অনেক রকম। এই যে শুনছিস না, চারপাশে যা হচ্ছে। রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিস সরল সিধে মানুষ। পাশে হয়তো হেঁটে যাচ্ছে গরুর পাল। হঠাৎ করে রাখাল ছেলে তার হাতের লাঠিটি তোর হাতে ধরিয়ে দিয়ে দৌড়ে পালিয়ে গেল। এই রকমের সব কাণ্ড। আর অমনি লাঠিসোঁটা নিয়ে কটা লোক হাজির হয়ে তোকে গোরুচোর সাজিয়ে দিল। আসলে সেই গ্রামের অনেকেই খোঁজ করছে কিনা! নানান এজেন্সি আর মিডিয়া। ওঁত পেতে আছে রে ভুটু, চতুর্দিকে বিপদ’।
একটা ঝরঝরে মার্কা প্যাসেঞ্জার ট্রেনে চাপিয়ে দিয়ে গেল ছোটোমামাই। বড়মাপের দ্রুতগামী ট্রেন নাকি সেই হল্ট স্টেশনে দাঁড়ায় না।
কাণ্ড দেখো। প্রথমে স্টেশনের নামও বলতে চায়নি। অথচ টিকিট কেটে দিল দৌড় ঝাঁপ করে। মস্ত ভিড় সেই ট্রেনে গাদাগাদি করে উঠলাম বটে। কিন্তু ভেতরে বসা তো দূরের কথা ঠিকমত দাঁড়াবার জায়গাটি অবধি নেই।
অবশ্য ওই ভিড়ের জন্যেই সুসার হল কিছুটা। একটা দেহাতি লোক কেমন দয়া পরবশ হয়েই বলল এই ট্রেনের টয়লেটে অনেক সময় নাকি জায়গা থাকে। কমোডে বসেই অনেকে পুরো রাস্তা যায়। তার বুদ্ধিমত একটা টয়লেটে বসে রাত কাটাবার মানসে ঢুকব ভাবতেই কেমন গা গুলিয়ে উঠল। তবে ভাবলাম একবার গিয়ে দেখিই না ব্যাপারখানা কী!
গিয়ে দেখি টয়লেটের দরজা আটকে বসে রয়েছে আমার বয়সী এক শ্রীমান। গম্ভীর মুখে বলল, – এইটের ভেতরে আমার দাদু আর দাদুর দাদু রয়েছে। ভেতরে ঢোকা যাবে না। আমার বয়েসী ছেলে, তার দাদু অবধি মানা যায় কিন্তু দাদুর দাদু? অসম্ভব! এমন ভাবে টয়লেটের দরজা আগলে আছে ঢোকাই যাচ্ছে না। আলাপের ছলে জানলাম, ছোকরার নাম কানাইচন্দ্র।
আলাপ জমতে বলল, বাড়ি নাকি সেই হল্ট স্টেশনেরই ধারে কাছে এক গ্রামে। সেই গ্রামের নাম ম্যাপে নেই। নেই নাকি সরকারি খাতাতেও।
শুনে আমি তো ভেতরে ভেতরে লাফিয়ে উঠেছি। এই তবে সেই জায়গা যার খোঁজে আমার অ্যাতো দূরে আসা। এর সঙ্গে ভাব জমাতেই হবে।
ওকে ধরলাম, – ভাই, আমাকে তোমাদের গ্রামে নিয়ে যাবে? আমাকে যেতেই হবে, মানে ইয়ে নতুন চাকরি কিনা! কিছু খবর আনতেই হবে।
– ‘অসম্ভব।’ এককথায় নাকচ করে দিল সে।
তাদের সেই ঠিকানাহীন গ্রামে বাইরের কাউকেই ঢোকানো নিষেধ। এমনকি থানা পুলিশও নাকি সেই গ্রামে ঢুকবার রাস্তা খুঁজে পায় না এমনই গোপন ব্যবস্থা।
এই সব প্রায় অসম্ভব গল্প খানিকক্ষণ শুনিয়ে ছেলেটা মেঝেতে বসে ঝিমোতে লাগল।
কানাইচন্দ্র এই মুহূর্তে ঘুমে এলিয়ে পড়েছে দেখে ওর সেই দাদু আর দাদুর দাদু, তাদের সঙ্গে আলাপ করার ভারি কৌতূহল হল। কানাইকে টপকে টয়লেটের দরজা খুব সাবধানে খুললাম। কোথায় সেই বুড়ো মানুষেরা? দেখি দুটো বিরাট বিগ শপার ব্যাগে একগাদা হাড়। সাদা পরিষ্কার দু ব্যাগ হাড়। মেজাজ গরম হয়ে গেল। আমাকে ঠকাল? আমাকে? যে আমি নাকি বিখ্যাত ছোটোমামার বড় ভাগনে।
টয়লেট থেকে বেরিয়ে আসবার সময়, আসলে উত্তেজনায় ছিলাম তো, কানাইয়ের গায়ে খোঁচা লাগতেই ধরফর করে উঠল সে। টয়লেটের দরজা যদিও বন্ধ করেছি, সেই দিকে খুব সন্ত্রস্ত ভাবে পিটপিট করে তাকিয়ে, শুধোলো,
– ‘ভেতরে ঢোকোনি তো?’
এই সামান্য ব্যাপারে মিছে কথা বলার কোনও মানেই হয় না। আসলেই তো সেও আমাকে মিছেই বলেছে। বললাম,
– ‘হ্যাঁ, ঢুকেছি তো। দাদুরা কই? দু ব্যাগ হাড় শুধু!’
– ‘এই যাঃ, জেনে ফেললে? জেনেই যখন ফেলেছ, তোমাকে গ্রামে নিয়ে যেতে এখন আর কোনও আপত্তি নেই। তবে তোমার ফেরার ব্যাপারে কিন্তু কোনও ইয়ে মানে কবে ফিরবে কীভাবে ফিরবে সে ব্যাপারে আমি কিন্তু…’
এই অবধি বলতেই আমি বললাম, ‘– ‘আহা, বেশ বেশ! একবার ঢুকতে পারলে আমি ঠিক বেরিয়ে আসব, দেখো। রাস্তাটা চিনিয়ে তো দাও।’
তখনও আসল রহস্য কিছুই বুঝিনি। ট্রেন থেকে নামার পর যে রাস্তায় গেলাম তার বিশদ বিবরণ দিচ্ছি না কানাইকে কথা দেওয়া আছে বলে।
মাঠ নদী সুঁড়ি আর জঙ্গলের পথে প্রায় আধবেলা হাঁটার পর বিকেলের মুখে পৌঁছলাম। ওর দুটো ব্যাগের একটা ওর হাতে। অন্যটা ভদ্রতার খাতিরে আমি বইছি।
গ্রামে ঢোকার মুখে শশব্যস্ত হয়ে আমার কাছে থাকা ব্যাগটা চেয়ে নিল। তার পর গ্রামে ঢোকার মুখে একটা ফাঁকা ঘরে ব্যাগদুটো নিয়ে ঢুকে গেল। বেরিয়ে আসতে একটু দেরি হল। বেরিয়ে এল অন্য দুজন আমাদেরই বয়সী মানুষের সঙ্গে। হাড় ভর্তি ব্যাগদুটো ঘরটার মধ্যেই রেখে এল।
আলাপ হল যদিও, আমাকে আর কানাইকে রাস্তায় রেখে তারা ব্যস্ত সমস্ত হয়ে কোথায় যেন চলে গেল।
দুজনের সঙ্গে আলাপ হবার একটু বাদেই বুঝলাম, হাড় ঘরে পড়ে নেই। ওই দুজনই নাকি কানাইয়ের সেই দাদু আর দাদুর দাদু। কী ব্যাপার?
কানাই বলল, এই গ্রামের কোনও কোনও মানুষ নাকি সহজে মরে না। মরে তো না বটেই তাদের বয়সও বাড়ে না। বাড়ে না মানে চেহারায় বাড়ে না। আটকে থাকে ওই পঁচিশ ছাব্বিশেই। কী ভাবে কে জানে তারা বেঁচে থাকে আড়াইশ তিনশ কী তারও বেশি বছর। কিন্তু গ্রামের সবাই না। ওই মাত্র কয়েকজনই।
কী ভাবে হয় এটা? গ্রামের লোকেরা জানে না। গ্রামে কী এক দেওতা আছেন। কেউ কেউ নাকি তাঁর আশীর্বাদ পায়। গ্রামের লোকেরা শুধু জানে সেই অতিরিক্ত বেঁচে থাকা মানুষেরা হল দেওতার আশীর্বাদ পাওয়া।
তবে তারা কিন্তু এই গ্রামের চৌহদ্দি পেরোলেই, মাংস চামড়া খুলে ফেলে স্রেফ হাড় হয়ে যায়। আবার গ্রামে ফিরে এলেই মাংস চামড়া ফের লেগে মানুষ হয়ে যায় অবশ্যি। এই দুজনেরই যেমন।
কদিন ধরেই খুব আবদার ধরেছিল বাইরের দুনিয়াটা কদ্দুর কীরকম দাঁড়িয়েছে দেখে আসবে। একে বেজায় বুড়ো গুরুজন মানুষ! তায় একটু অবুঝও। বাধ্য হয়ে কানাই ওদের বাইরের দুনিয়া দেখাতে নিয়ে গেছিল। চৌহদ্দি পেরোতেই স্রেফ হাড় হয়ে যাবে জেনেও বুড়োরা গেছিল বাইরের দুনিয়া দেখতে।
কানাইচন্দ্রের গ্রামে এরপরে মাস তিনেক ওখানে কাটালাম ভালোই। কিন্তু খবর বিশেষ উদ্ধার করা গেল না। ওই গ্রামের মানুষদের জীবন জীবিকা কিছুই বুঝে উঠতে পারলাম না। যদিও দিব্যি ভাব হল ওই দাদু আর দাদুর দাদুর সঙ্গে তো বটেই তাদের চেয়েও প্রাচীন কিছু মানুষের সঙ্গে। তাদের মধ্যে একজন এমন কি সিপাহি বিদ্রোহের সাক্ষীও। সত্যি বলতে কী যেন জ্যান্ত ইতিহাস বইয়ের কটা উড়ে আসা পাতার সঙ্গে আলাপ হল এই কদিনে।
কানাইদের বাড়িতেই থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা।
কিন্তু ইতিমধ্যে একটা কেলেঙ্কারিতেও জড়িয়ে পড়ছিলাম। প্রায় একতরফাই।
প্রেমে পড়ার বাতিক আছে আমার আগেই বলেছি। টের পাচ্ছিলাম আরও একটা প্রায় হাফ প্রেমে জড়িয়ে পড়তে চলেছি এই তিনমাসে। এই গ্রামে এসে। সেই যুবতীর নাম ব্রজবালা। কানাইয়ের দূর সম্পর্কের কোনও আত্মীয়া হবে। এই বাড়িতেই আশ্রিতা। ব্যাপার তেমন বিরাট কিছু না।
যে জন্য আসা সে ব্যাপারে এগোতে না পেরে, এখানে এসে অবধি খান কয়েক কবিতা অ্যাদ্দিনে লিখে ফেলেছি। কানাইদের বাড়ির এই মেয়েটিকে বলতে সে এককথায় শুনতে রাজি হয়েছে আমার সেই ছাইপাঁশ।
এই রকম দয়াবতীর প্রেমে পড়াই যেতে পারে। অল্পবয়সের বিধবা মেয়ে। সে যাই হোক, আমার বিধবা বিবাহে আপত্তি নেই। শুধু এখানের খবর কিছু বার করতে পারলে চাকরিটা পার্মানেন্ট হয় ফিরে গিয়ে। ওকে নিয়েই ফিরব না হয়। ব্রজবালাকে সেই কথা জানাতে, চোখ কপালে তুলে বলল, – ‘নুড়ো জ্বেলে দিই অমন চাকরির মুখে। বলি একেনে তো জামাই না হয়েও দিব্যি জামাই আদরে আচো। পোশাচ্চে না, নাকি! কি দরকার খপর জোগাড়ের? অ্যাঁ!’
আঁতকে উঠে সেই কুঁদুলে মেয়েকে বলি, – ‘বলো কী! সেখানে যে আমার সর্বস্ব। মা বাবা, ছোটোমামা। আরও কত কি! তোমাকে নিয়ে গিয়ে যে সব দেখাব ভেবেছি। আমার লিটল ম্যাগাজিন, রেলস্টেশনের চার নম্বর প্লাটফর্মের আড্ডা, হাহা হিহি হাসি, হুঁ হঁ উঁহু কান্না, লম্বা লম্বা দীর্ঘশ্বাস, চওড়া চওড়া দিবাস্বপ্ন, সে যে আমার যৌবনের উপবন বার্ধক্যের বারানসী…’
আবেগে আরও কত কিছু বলতে যাচ্ছিলাম। দাবড়ে দিয়ে ব্রজবালা বলল, – ‘ আমাকে নিয়ে গিয়ে দেখাবে মানেটা কী? না বাপু, আমি তোমার সঙ্গে কোথাও যেতেটেতে রাজি নই। আমি কানাইয়ের কে হই জানো? দাদুর দাদু বলে ওই যে বিধুমোহন ছেলেটাকে খুব খাতির কচ্চো ও হল গে আমার সেজো দেওর পো। ওর কাচে শুনিচি। এ গেরাম ছেড়ে বেরুলেই আমি আর আমি থাকব না, হয়ে যাব এক বাণ্ডিল হাড়! না বাবা, দেওতার আশীব্বাদে দিব্যি আচি একেনে।’
এই রে এটা তো ভাবিনি! আমার সদ্যলব্ধ প্রেমিকাটি এত প্রাচীনা! পৃথিবীর বয়সিনী তুমি এক নারীর মতন, সেকি এরই মত কাউকে নিয়ে লেখা?
সেই থেকে বাড়িতে ফেরার চেষ্টায় আছি।
কী জানেন, ওপাশ থেকে এখানে আসা যেমন কঠিন, এ পাশ থেকেও বাইরে যাবার রাস্তা খুঁজে পাওয়া কঠিন।
আর সাহায্যও পাওয়া যাবে না। টাওয়ার নেই তাই টাওয়ার লোকেশন নেই। কী বলে,এমনি ম্যাপে তো নেইই এমনকি ওই গুগল ম্যাপেও নেই এই নিষিদ্ধ হতচ্ছাড়া গ্রাম।
আপাতত তাই আমি নিখোঁজ। ফিরতে যদি পারি ওই বল্লরীকেই এই কবিতাকটা শোনাবার চেষ্টা করব।
যদিও জেনে গেছি, ও যদি শুনতে রাজি হয়ও, মানে প্রেমটা যদি টিকেও যায়… ওর সব রক্ত মাংস কটাক্ষ সবই মিছে কথা।
বল্লরী মানে বুঁচিও আসলে তেমন কিছু না। এক বাণ্ডিল হাড়ই।
★
এই গল্পটি মৌলিক কিন্তু প্রকাশিত।
PrevPreviousআ লং পেটাল অফ দ্য সি
Nextক্লেপ্টোম্যানিয়া, সিস্টার দিদি ও দীপাবলির আলোকসজ্জাNext
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত পোস্ট

শঙ্কর গুহ নিয়োগী (ফেব্রুয়ারী ১৪, ১৯৪৩- সেপ্টেম্বর ২৮, ১৯৯১)

September 30, 2025 No Comments

আমরা যারা বামপন্থায় বিশ্বাসী, রাজনীতিই তাদের কাছে প্রথম, প্রধান, কখনো কখনো দ্বন্দ্বের একমাত্র পরিমণ্ডল ছিল। ধারণা ছিল, রাজনৈতিক লড়াইটা জেতা হয়ে গেলেই সব সমস্যার সমাধান

করোনা টেস্ট

September 30, 2025 No Comments

– বুঝলে ডাক্তার, হপ্তায় হপ্তায় করোনা টেস্ট করাতে জলের মত টাকা খরচ হচ্ছে। – সে কী? প্রতি সপ্তাহে টেস্ট! আমি তো বলিনি করাতে! কার অ্যাডভাইসে

বিদ্যাসাগরের নাস্তিকতা: আক্ষেপ, প্রক্ষেপ ও নিক্ষেপ

September 30, 2025 No Comments

ঈশ্বর, ধর্ম, লোকায়ত সংস্কার, ধর্মাচরণ ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে বিদ্যাসাগরের আচরণ ও মতামত আমাদের বুঝতে সাহায্য করতে পারে যে বিদ্যাসাগর সত্যিই নাস্তিক ছিলেন কিনা, বা নাস্তিক

পুলিশি হেনস্থা বিরোধী গণ কনভেনশনে সুজাত ভদ্র

September 29, 2025 No Comments

হুতোমপেঁচির ‘পূজা ডিউটি’

September 29, 2025 No Comments

২৭শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ পুজোর নির্ঘন্ট অনুযায়ী আজ ষষ্ঠী। হুতোমপেঁচি বিরসবদনে নতুন কাপড়টি পরে, অনেক হিসেব করে আব্রু বাঁচিয়ে হাঁটু অবধি সেই শাড়ির পাড় উত্তোলিত করে

সাম্প্রতিক পোস্ট

শঙ্কর গুহ নিয়োগী (ফেব্রুয়ারী ১৪, ১৯৪৩- সেপ্টেম্বর ২৮, ১৯৯১)

Kanchan Sarker September 30, 2025

করোনা টেস্ট

Dr. Arunachal Datta Choudhury September 30, 2025

বিদ্যাসাগরের নাস্তিকতা: আক্ষেপ, প্রক্ষেপ ও নিক্ষেপ

Dr. Samudra Sengupta September 30, 2025

পুলিশি হেনস্থা বিরোধী গণ কনভেনশনে সুজাত ভদ্র

The Joint Platform of Doctors West Bengal September 29, 2025

হুতোমপেঁচির ‘পূজা ডিউটি’

Dr. Sukanya Bandopadhyay September 29, 2025

An Initiative of Swasthyer Britto society

আমাদের লক্ষ্য সবার জন্য স্বাস্থ্য আর সবার জন্য চিকিৎসা পরিষেবা। আমাদের আশা, এই লক্ষ্যে ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী, রোগী ও আপামর মানুষ, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সমস্ত স্টেক হোল্ডারদের আলোচনা ও কর্মকাণ্ডের একটি মঞ্চ হয়ে উঠবে ডক্টরস ডায়ালগ।

Contact Us

Editorial Committee:
Dr. Punyabrata Gun
Dr. Jayanta Das
Dr. Chinmay Nath
Dr. Indranil Saha
Dr. Aindril Bhowmik
Executive Editor: Piyali Dey Biswas

Address: 

Shramajibi Swasthya Udyog
HA 44, Salt Lake, Sector-3, Kolkata-700097

Leave an audio message

নীচে Justori র মাধ্যমে আমাদের সদস্য হন  – নিজে বলুন আপনার প্রশ্ন, মতামত – সরাসরি উত্তর পান ডাক্তারের কাছ থেকে

Total Visitor

580544
Share on facebook
Share on google
Share on twitter
Share on linkedin

Copyright © 2019 by Doctors’ Dialogue

wpDiscuz

আমাদের লক্ষ্য সবার জন্য স্বাস্থ্য আর সবার জন্য চিকিৎসা পরিষেবা। আমাদের আশা, এই লক্ষ্যে ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী, রোগী ও আপামর মানুষ, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সমস্ত স্টেক হোল্ডারদের আলোচনা ও কর্মকাণ্ডের একটি মঞ্চ হয়ে উঠবে ডক্টরস ডায়ালগ।

[wppb-register]