কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভার ক্যাবিনেট বৈঠকে গর্ভপাতের আইনি সীমা ২৪ সপ্তাহ পর্যন্ত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কেন্দ্রীয় সরকার। লোকসভার আগামী বৈঠকে The Medical Termination of Pregnancy (Amendment) ( 2020) পাশ করা হবে।
The Medical Termination of Pregnancy Act (1971) বা সংক্ষেপে M.T.P Act (1971) আমাদের দেশে চালু হয়েছিলো দীর্ঘ প্রায় ৫০ বছর আগে ১লা এপ্রিল। এক যুগান্তকারী ঘটনা। ভারতের মতো অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে পড়া দেশে এ ছিল এক ঐতিহাসিক বিল। নারী প্রগতিশীলতার মাপকাঠিতে নারীর নিজের দেহের ওপর অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে যুগান্তকারী এক সিদ্ধান্ত, হাতে গোনা উন্নত দেশেই এই রকম আইন ছিল যাতে নারীর গর্ভপাতের অধিকার তার নিজের হাতে দেওয়া হয়।
এই আইনের মূল উদ্দেশ্য ছিল বেআইনি ভাবে গর্ভপাত ঘটাতে গিয়ে হওয়া ব্যাপক মাতৃ- মৃত্যুহার ঠেকানো।
এই আইনের সবচেয়ে বড় ইতিবাচক দিক ছিল পূর্ণবয়ষ্ক মহিলারা নিজেরাই নিজেদের গর্ভপাতে সম্মতি দিতে পারবেন। অবিবাহিত বা বিবাহিত যাই হোন না কেন, বাবা–মা–স্বামী কারও সম্মতির প্রয়োজন নেই।
কিন্তু নিরাপদ গর্ভপাতের প্রয়োজনে ভাবা হয়েছিলো—গর্ভের প্রথম ১২ সপ্তাহ পর্যন্ত গর্ভপাত পদ্ধতি গত ভাবে মোটামুটি নিরাপদ, তাই প্রথম ১২ সপ্তাহে একজন পারদর্শী একজন ডাক্তারের সম্মতিই প্রয়োজন ছিলো। কিন্তু তারপর অর্থাৎ বেশী সপ্তাহে গর্ভপাতের ঝুঁকি বেশী থাকায় গর্ভপাতের আইনি সীমা ২০ সপ্তাহ রাখা হয় ও ২ জন চিকিৎসকের সম্মতি আবশ্যিক ছিলো।
গত প্রায় ৩০ বছর মূলত আল্ট্রাসোনোগ্রাফিতে গর্ভস্থ শিশুর বিভিন্ন অস্বাভাবিকতা ও রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে বিভিন্ন জিনগত ও অন্যান্য অসুখ ধরা পড়তে লাগল—গর্ভস্থ সন্তানের শারীরিক বিকলঙ্গতার আশঙ্কায় গর্ভপাতের প্রয়োজন বাড়তে থাকে।
অনেক সময়ই এই সব শারীরিক প্রতিবন্ধকতা বা রোগ নির্ণয়ে একটু দেরী হয়ে যাওয়ায় – গর্ভপাতের আইনি সীমা পেরিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটতে থাকে। তখন আদালতে গিয়ে আইনি অনুমতি নেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না।
এছাড়া অনেক সময় মানসিক ভারসাম্যহীন মহিলাদের ক্ষেত্রে গর্ভধারণ সঠিক ভাবে নির্ণয় করতেই অনেক সময় লেগে যেতে পারে।
এই সব ক্ষেত্রে গর্ভপাতের মেয়াদ ২৪ সপ্তাহ পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব একটি উত্তম পদক্ষেপ।
কিন্তু যতক্ষণ না এই প্রস্তাব বিল হিসেবে আসছে – এর অনুচ্ছেদ গুলি না দেখে –কারা এর সুযোগ পাবে না, কী উপায়ে পাবে সেগুলি সম্বন্ধে বিশদ না জেনে এর সম্বন্ধে বাড়তি কিছু মন্তব্য করা মুশকিল।