১. রুট ক্যানাল ট্রিটমেন্ট বা RCT কী ও কেন করতে হয়?
উঃ এই প্রশ্নের আগে আমাদের বুঝতে হবে, দাঁতের বেসিক গঠন সম্পর্কে। দাঁতের ভিতরে একটি প্রকোষ্ঠ থাকে, যাকে পাল্প চেম্বার বলা হয়। যেখানে আদতে প্রচুর নার্ভ এবং রক্তনালী থাকে। দাঁতে ক্যাভিটি বা গর্ত হলে তা সঠিক সময়ে ফিলিং না করালে ক্যাভিটির গভীরতা বাড়তে থাকে। এমতাবস্থায় ক্যাভিটি পাল্প চেম্বার পর্যন্ত প্রসারিত হয়ে গেলে শুরু হয় ব্যথা। এই ব্যথা উপশমের পদ্ধতি একটাই, পাল্প চেম্বারের নার্ভকে বাদ দেওয়া। এটা দুভাবে করা যায়, ক) দাঁত রেখে শুধু পাল্প চেম্বারের নার্ভ এবং রক্তনালীকে বাদ দিয়ে, খ) গোটা দাঁতটাকেই উপড়ে ফেলে। প্রথম পদ্ধতিটিই RCT এর মূল লক্ষ্য।
২. রুট ক্যানাল ট্রিটমেন্ট কি যেকোন অবস্থাতেই করা যায়?
উঃ না, RCT করতে গেলে কয়েকটি দিকে নজর দিতে হয়। যেমন – RCT-র পর দাঁতটার অবশিষ্ট কতটা স্ট্রাকচার পড়ে থাকবে, দাঁতটার মাড়ির অবস্থান, দাঁতটা আদৌ আলগা হয়ে গেছে কিনা ইত্যাদি। একজন ডেন্টাল সার্জন মূলত ক্লিনিকালি এবং রেডিওগ্রাফ দেখে সিদ্ধান্ত নেন, দাঁতটা আদৌ RCT করা যাবে কিনা। তিনি যদি বোঝেন, RCT করে থাকবে না, সেক্ষেত্রে তিনি নিজে থেকেই দাঁত তুলতে বলে দেবেন।
৩. RCT করলে কি দাঁত আলগা হয়ে যায়?
উঃ অনেকেই এমন কথা বলেন, কিন্তু এর কোন ক্লিনিকাল ভিত্তি নেই। বরং বলা যায়, যে দাঁত ইতিমধ্যেই আলগা হয়ে গেছে, তাকে RCT করার বদলে তুলে ফেলার পরামর্শই দেন ডেন্টাল সার্জেন।
৪. তাহলে কি নড়ে যাওয়া দাঁতে RCT করা সম্ভব নয়?
উঃ নড়ে যাওয়া দাঁতের ক্ষেত্রে দেখতে হয় সেই দাঁতের কতটা হাড়ের সাপোর্ট আছে। যদি মাড়ির অবস্থা ঠিক থাকে এবং মাড়ি খুব বেশী না ক্ষয়ে গিয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে বোন গ্রাফটের মাধ্যমে দাঁতের ভিত মজবুত করে RCT করা যেতে পারে। কিংবা কিছু ওষুধের মাধ্যমে প্রয়াস করা হয়, যাতে নতুন করে হাড়ের গ্রোথ হয়। তবে এই প্রক্রিয়া সাধারণ RCT-র থেকে অধিক সময়সাপেক্ষ এবং ব্যয়সাপেক্ষ।
৫. RCT করলে কি ক্রাউন করতেই হবে?
উঃ সাধারণত, RCT এর পর ক্রাউন করার পরামর্শই দেওয়া হয়ে থাকে। RCT-র পর ক্রাউন না করার অর্থ হল, আপনার অ্যাপেন্ডিক্স অপারেশন করে পেটে সেলাই না দেওয়ার মতো। তবে এখানে বলে রাখা দরকার, বর্তমানে ক্রাউনলেস RCT নিয়ে গবেষণা চলছে। হয়তো অদূর ভবিষ্যতে এমন দিন আসবে যেদিন RCT করে ক্রাউন দিতে হবে না।
৬. ক্রাউন না করলে কী ক্ষতি হতে পারে?
উঃ ক্রাউন না করলে RCT করা দাঁত ভেঙে যাওয়ার একটা সম্ভাবনা থেকেই যায়। আসলে RCT করার ক্ষেত্রে দাঁতে গর্ত করে ট্রিটমেন্ট করতে হয়, তার ফলে দাঁত তার কিছুটা শক্তি হারায়। ক্রাউন দাঁতটিকে ঢেকে রেখে তাকে সুরক্ষা প্রদান করে। এক্ষেত্রে তাই ক্রাউন করাটা বাধ্যতামূলক।
৭. RCT এবং ক্রাউন করানোর পর কী কী সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে?
উঃ মূলত শক্ত খাবার যেমন – মাংসের হাড়, মাছের মোটা কাঁটা, আখ, গোটা আপেল বা পেয়ারা (সামনের দাঁতের ক্ষেত্রে) চিবোনো থেকে বিরত থাকতে হবে। চুইংগাম জাতীয় চটচটে খাবার, যা নেগেটিভ প্রেসার তৈরী করতে পারে, পরিহার করতে হবে। অনেকের অভ্যাস থাকে, দাঁত দিয়ে কোল্ড ড্রিঙ্কস বা বিয়ারের বোতলের ছিপি খোলার। এই অভ্যাসও ছাড়তে হবে। মানুষের দাঁত বোতলের ছিপি খোলার মতো শক্তপোক্ত নয়। এছাড়াও ভাত মুড়ি খাওয়ার সময় লক্ষ্য রাখতে হবে, যাতে কাঁকড় ওই দাঁতে না পড়ে। এসব নিয়ম মোটামুটি মেনে চললেই RCT করা দাঁত ঠিকঠাক ভাবে থাকবে।