শামশেরনগর… সীমানা হিসেবে ভারতের শেষ গ্রাম বলা যেতে পারে… এপারে আমরা ওপারে বাংলাদেশ, আজ সেই শামশেরনগর এই ছিল আমাদের ক্যাম্প. মিথ্যে বলে লাভ নেই এরকম ক্যাম্প আমি কখনও করিনি… তবুও পুণ্য স্যার, কৌশিক স্যার আর তানিয়া ম্যাম-এর সাথে কথা বলে চার জন কে সঙ্গে জুটিয়ে পাড়ি দিলাম এদেশের শেষ সীমায়. বলে রাখি আমার একটা ফুড গ্রুপ আছে,সেই ফুড গ্রুপের পক্ষ থেকে প্রায় ১৫০ জনের জন্য শুকনো খাবার বিস্কুট কেক হরলিক্স এর প্যাকেট এরাও ছিল আমাদের সঙ্গী, যখন যাত্রা শুরু তখন ভোর ৬.৪৫।
তিন জন ডাক্তার আর দু জন অডাক্তার, দেড়শো মত পেশেন্ট দেখা, ওষুধ দেওয়া আর খাদ্য সামগ্রী বিতরণ, শুনতে বা ভাবতে সহজ লাগলেও পেশেন্ট দেখে ওষুধের পাতা থেকে ওষুধ কেটে দেওয়া বেশ কঠিন কাজ. কিন্তু জানিনা কেন অদ্ভুত ভালো লাগছিল। গরমে দরদর করে ঘামছি, দশ মিনিটের বেশী ফেস শিল্ড পরে থাকতে পারছি না, মাস্ক খুলে জল খেতে পারছি না, তবুও ভালো লাগছিল… কারণ আমি জানি আমার বাড়ির পাখাটা আজ রাতেও আমার বাধ্য থাকবে, সুইচ দিলে সে কারেন্ট হোক বা ইনভার্টারে চলবে… কিন্তু এই মানুষ গুলো আম্ফানের পরে এখনো জানেই না যে কবে কারেণ্ট আসবে…
আমি, সঙ্গীতা আর দেবাঙ্কন মিলে প্রায় ১৫৭ পেশেন্ট দেখলাম…বেশিরভাগ লো ব্যাক পেইন, গ্যাসের সমস্যা, হাঁটু ব্যথা, দুর্বল হয়ে যাওয়া ইত্যদি নিয়ে এসেছিলেন, সাধ্যমত তাঁদের চিকিৎসা আর মেডিসিন দিয়ে এসেছি, মেডিসিন দিতে সাহায্য করেছে আমার ঊড বি ঐন্দ্রিলা, আর এই সুযোগে আমিও ওকে খানিকটা ডাক্তারী শিখিয়ে দিয়েছি, রান্নাবাহার গ্রুপের হয়ে খাদ্য বিতরণ করেছে পেশায় গিটারবাদক আমার দাদা শতদ্রু দাস. ক্যাম্প শেষে জানলাম লাস্ট ক্যাম্প হয়েছিল জানুয়ারি মাসে…
ফিরছি এখন….হাসনাবাদ ক্রশ করছি, সন্ধ্যা নামছে, বৃষ্টি নেমেছে, আমরা আলোর দিকে যাচ্ছি আস্তে আস্তে..
আর শামশেরনগর????
নাহ আমাদের মত অবরোধ বা মারপিট করে বিদ্যুৎ আনার চেষ্টা করছে না… অপেক্ষা করছে আলোয় ফেরার… যে আলোয় ওরা আমরা মিলে মিশে যাব সকলে …
এই রিপোর্ট ডাঃ কৌস্তভ চ্যাটার্জীর লেখা।