সকাল সকাল বসে আছি চায়ের দোকানে। প্রায়ই থাকি। ক’দিন ধরে খেয়াল করছি- একটি ভ্রাম্যমাণ ভ্যানের উপর আয়ুর্বেদিক দোকান এসে দাঁড়াচ্ছে সামনেই।
তারপর যা হয়- মাইকে বাজে রেকর্ড করা কিছু বক্তব্য। আজ শুনলাম ভালো করে। “আসুন, আসুন। বিছানায় পুরুষ হতে পারছেন না? লজ্জা না করে অমুক তেল মাখান এবং নিজেকে পুরুষ প্রমাণ করুন। কোন মেয়ে অথবা বউ আপনাকে পছন্দ করে না? অমুকের ভারত বাংলাদেশে বিখ্যাত তেল ব্যবহার করুন। পৌরুষ …. ” এই মোদ্দাকথা।
তো ভাবছিলাম, পুরুষও লজ্জা পায়? যা তা কাণ্ড তো!! নিজের গায়ে চিমটি কেটে দেখলাম- ঠিক শুনছি তো??
তারপরই বুঝলাম, না, পায় না! বিজ্ঞাপনের পুরুষ কন্ঠ লজ্জা পায় না। শ্রোতা পুরুষ লজ্জা পায় না। যার পৌরুষ নেই, সেই পুরুষও লজ্জা পায় না!
ঘোষক সগর্বে বলছেন- পৌরুষ রক্ষা করা চুটকির কাজ!
শ্রোতা ভাবছেন- কখনো যদি মনে হয় পৌরুষে থাবা বসিয়েছে কেউ, একদিন গোপনে তমুক ঘোষের তেল মেখে নিলেই নারীকে …
যার পৌরুষ নেই- সে ভাবছে আশেপাশে কেউ না দেখলেই এক শিশি …!
ব্যাপারটা কিন্ত খুব সহজ বিজ্ঞাপনী ট্যাকটিক্স নয় শুধু! এর সাথে আছে পৌরুষ এবং অবশ্যই পুরুষ!
আপনি বলবেন- নারীর ও তো …
ঠিক বলেছেন, নারীরও হয় এরকম সমস্যা!
কিন্ত তার সমাধান কে দেবে? কখনো শুনেছেন- রাস্তায় রাস্তায় মাইকে ঘোষণা করা হচ্ছে- আসুন আপনার নারীত্বকে রক্ষা করুন? হয় না প্রায়ই!
হয় না কারণ, ধরে নেয়া হয় নারীত্ব রক্ষা করবে পুরুষ!! আর যেখানে আজকাল খোলাখুলি এটা হয়, সেখানেও নারীত্ব রক্ষার এক এবং একমাত্র কারণ পুরুষ!!
ডাক্তারি করি বলেই জানি, এই নিয়ে কি কি চলে!!সে যাক, একে অন্যকে, একে অন্যের জন্য রক্ষা করুক, তাতে বোধহয় সমস্যা আসে না।
সমস্যা কোথায়??
‘এই মেয়ে/মহিলা তুই …. ‘ এর পর অজস্র বিশেষণ সহযোগে, আড়ালে আবডালে কিংবা লোকালয়ে, সগর্বে এখনো ঠিক এই বাক্যটি দিয়ে শুরু হয় আমাদের দেশে মেয়েদের তথা নারীদের প্রতি বেশিরভাগ পুরুষের প্রথম পৌরুষের প্রকাশ!
মনে হয় , No country for old men এর মতোই no country for women!
খানিকটা ভুল বললাম হয়তো, শুধু আমাদের দেশ নয়, পৃথিবীর বহু দেশে এরকমই ঘটে এখনো! হ্যাঁ এই একবিংশ শতাব্দীতেও!
আমরা পুরুষরা কম বেশি সবাই এই দোষে দোষী।
এতে কি আমরা লজ্জিত হই কখনো?? নৈব নৈব চ!পুরুষের লজ্জা থাকে না। থাকতে নেই।
পাপ বোধে ভুগি? কদাচিৎ। অবশ্যই উল্টো দিক থেকে বেশ জোরালো প্রতিবাদ এসে পৌরুষে ছোট্ট একটু টোল খাইয়ে দিলে, তবেই! উল্টো দিক বললাম এই কারণেই যে, পুরুষরা তাঁদের এই কৃতকর্মের সাফাই দেয়ার জন্য, প্রথম যে কাজটি করে সেটি হলো ব্লেম গেম! ব্লেম গেমের ঘুঁটি হতে পারে- সুন্দর বা কুৎসিত চেহারা, হতে পারে পেশা, হতে পারে জাত পাত ধর্ম বর্ণ, হতে পারে পুরুষ সঙ্গীর সংখ্যা (হ্যাঁ, পুরুষ সঙ্গী!), হতে নারী শরীরের প্রতিটি অঙ্গ প্রত্যঙ্গ!! এবং অবশ্যই পরিধেয় বস্ত্র!!
সাম্প্রদায়িক রাজনীতির সাথে মিল পাচ্ছেন??
পুরুষ হলো সবচেয়ে বড় সাম্প্রদায়িক শক্তি!!
ঠগের ছলের অভাব হয় না কখনো। আর মাতালের সাক্ষী মাতালের অভাব হয় না! এই করে করে রাজনীতিতে পুরুষ জিতে আসছে বহুকাল। এখনো জিতছে। জিতে চলেছে।
আমাদের সমাজ সংস্কৃতি ইতিহাস সংবিধান এ বিষয়ে কোন দ্বন্দ্ব রাখেনি। নারীর পক্ষে অবকাশ তৈরি হতে দেয়নি।
পুরুষ মাতব্বর। অতএব, সগর্বে সে বলে বেড়ায়- দোষ ছিল ওই … ফের অসহ্য সব বিশেষণ! আর এই নিয়ে ঘটনার ঘনঘটা এতো ঘটেছে যে, বলতে গেলে এনসাইক্লোপিডিয়া হয়ে যাবে। তাও কয়েকশো খণ্ডের!!
কি না কি ঘটে- ছোট খাটো হাতসাফাই এর মতো শরীর ছোঁয়া থেকে শুরু করে নৃশংস ধর্ষণ। প্রতিটি ক্ষেত্রে সাফাই আছে! অবশ্যই পুরুষের পক্ষে! নারীর বিপক্ষে!!
যাকগে, যে ঘটনা বলতে এলাম সেদিকে যাই। ভোট বাজারেও দেখলাম- মহিলা প্রার্থীদের নিয়ে কুৎসিত মিম।
আপাতদৃষ্টিতে এ শিল্প অবশ্য নতুন মনে হলেও, এর ইতিহাস বহু প্রাচীন। প্রাচীন সব গ্রন্থ পড়লে সে বিষয়ে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়। আর রাজনীতিতেও এসব মোটেই নতুন নয়। নাম বলতে শুরু করলে এখুনি অষ্টোত্তর সহস্রনামের নামাবলী হয়ে যাবে। এবং তাতে অনেক চেনা জানা রোগী, ভোগী, যোগীদের নাম চলে আসবে। দল মত নির্বিশেষে পুরুষের নাম চলে আসবে!
একজনকে দেখলাম- মহিলা ভোট প্রার্থীকে বিয়ের প্রস্তাব অব্দি দিয়ে ফেলেছে সুযোগ বুঝে!! কি সহজ, তাই না??
তার উপর আজকাল নানা খবরের লিংক এ গিয়ে কমেন্ট পড়লেই বোঝা যায়, সত্যিই কত পুরুষ আছে এ সমাজে! অনেক নারী পুরুষও আছেন- যাঁদের দেখলাম- কার তিন বিয়ে, কে কোথায় নেচেছেন, সেই নিয়ে পুরুষের চেয়েও তীব্র আক্রমণ করছেন!!!
সবাইকে ধর্ষক বলবো না, কিন্ত এর একটি বিশাল অংশ যে ধর্ষণ করতে দু’বার ভাববে না, সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়। এইসব নারীরা যে কোন প্রকারে ধর্ষিত হলে যে নিজের দোষই মেনে নেবেন- সেটাও হলফ করে বলা যায়!!
বলা যায়, শুধু পুরুষই আছে। ধর্ষকই আছে (ধর্ষণ শুধু মাত্র শারীরিক হয়, এমন ন্যাকা ন্যাকা পুরুষালি যুক্তিও আছে বটে!)।
তাই, নো কান্ট্রি ফর উইমেন!
কতগুলো পুরুষ আবার ভোল পাল্টে খবর বানায়।কতগুলো পত্রিকা আছে, যারা নাকি পেজ থ্রি-র জন্য রিপোর্ট বানায়- তারাও নিশ্চিত পুরুষ! বেশ কিছুদিন খেয়াল করছিলাম, একটি মাত্র খবর, অন্ততঃ সাত আটটা নিউজ পোর্টালের পেজ এ!একদম মনের মাধুরী মিশিয়ে লিখেছেন কোন এক নারীর শরীরের ঠিক কতটুকু দেখা গেছে এবং তাতে কত কত পুরুষ ঘায়েল হয়েছে (বাঘ ঘায়েল হলে হিংস্র হয়ে আরো, এটি বলাই বাহুল্য!) , সে খবর কিভাবে পুরুষের হাত ধরে ভাইরাল হয়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি!
এবার ধরা যাক, একজন সাংবাদিক সেই ছবিটি তুলেছেন। বা সব ক’জন সাংবাদিকই একই ছবি তুলেছেন ! সম্ভব!!
নারী মি টু বলতে লজ্জা পেতে পারে, এইসব পুরুষরা একসাথে ছবি তুলেছেন বা শেয়ার করেছেন, সেটা বলতে লজ্জা পায় না!
এবার কেউ কেউ যুক্তি নিয়ে হাজির হয়েছেন তো?
আসুন, মহামান্য পুরুষ।
মেয়েটি নিজের ছবি বিক্রি করতেই ওটি করেছে!
মেয়েটি ওরকম লাইফ স্টাইলই বয়ে বেড়ায়! মেয়েটি নিজের ছবি হয়তো নিজেই পাঠিয়েছে!
আপনার সবকটি সাফাইই ঠিক! বলছি, উত্তেজিত হচ্ছেন তো? আপনি তো অবশ্যই পুরুষ! না হলেও আপনি পুরুষ! খবরটি পড়েছেন আপনিও! আমিও! নিশ্চিন্তে ঘুমিয়েছি তারপর!! ব্যবধান নিয়ে মাথা ঘামানোর প্রয়োজন নেই।
এবার এই কুৎসিত মিম বানানো শিল্পীরা কিন্ত বহু মহামানবদের ঔরসজাত। সত্যি সত্যি না হলেও ভাবধারায়! এই দেশ তাদের, এই সমাজ তাদের, এই সমাজের মাথাগুলো তারা বা তাদের! আইন কানুন বিচার প্রশাসন নেতা মন্ত্রী- সব তারা বা তাদের!!
আর আছে মহামান্য ধর্ম! তিনি তো পৃথিবীর সব মতে ঢুকিয়ে দিয়েছেন পুরুষের অধিকার। দিয়েছেন পৌরুষের অলঙ্কারের মতো ব্যবহার্য নারী সামগ্রী।
তাই, নো কান্ট্রি ফর উইমেন!
কাজের লোক বললে, পুরুষের ছাপ্পান্ন ইঞ্চি ছাতি ফুলে ওঠে। কিন্ত একই ভাবে কাজের মেয়ে বললে ঘরের বউ থেকে শুরু করে অন্য ঘরের মেয়ে বোঝানো হয়! কাজের মেসো যতই নিকম্মা, ঢ্যামনা, অকেজো হোক, যে নারী ঘরের কাজ করেন, তিনি অবশ্যই কাজের মাসি! যে ছেলে বুক ফুলিয়ে কনডম, জাঙ্গিয়া আর গেঞ্জির বিজ্ঞাপন দেয়, গোপনাঙ্গ অব্দি প্রায় দৃশ্যমান হয়ে ওঠে, সে অবশ্যই হিরো। যে নারী স্যানিটারি ন্যাপকিনের বিজ্ঞাপন দেয় কিংবা ভোটে দাঁড়ায়, সে অবশ্যই স্টাইলিশ, সেক্সি, হট এটসেটরা এটসেটরা! তো এহেন পুরুষের কথা যত কম বলা যায় ততই মঙ্গল!
(নারীবাদী রা দয়া করে হইচই করবেন না। ওটি আপনাদের দুর্বলতা!)
যে সব নারীদের নিয়ে এইসব কুৎসিত মিম বানানো হয়েছে, তাঁরা আশা করি এসবে থু থুই ফেলবেন শুধু। হ্যাঁ, দলমত নির্বিশেষে!
তাই ফেলুন। পুরুষ, এমনিতেই নিজের থুতু নিজে চেটে খায়, আপনাদেরটা ও দিন!! তবে কারো কোন রাজনৈতিক মতাদর্শ এর সাথে মেলাবেন না। কারণ, ওটি করতে গিয়ে আপনি নারী হয়েও হেরে যান, আদর্শ থেকে বিচ্যুত হন, তাহলে সমান ভাবে দোষ মেনে নেয়ার সাহস দেখান। সমালোচনাকে যুক্তিতর্ক দিয়ে বিরোধিতা করুন। যদি জিতে যান, তাহলেও আলাদা করে ‘নারী’, এই ভেবে ঢলোঢলো উদযাপন বন্ধ রাখুন!
দয়া করে ভাববেন না, ভিকটিম বলছি! বলছি, অন্ততঃ নারী, সে আর কি করতে পারে- এই সহজ ব্যাখ্যায় যাবেন না! দুটোই করুন, এবং পুরুষের সঙ্গে সমানে সমানে!
একটু সহানুভূতির জন্য আগুনে ঘি ঢালবেন না! পুরুষ সর্বগ্রাসী আগুন!! সে সব গুলিয়ে দিয়ে আপনাকে নারী বানিয়ে ছাড়বে!! তারপর নিজে ঘায়েল হওয়া বাঘ হয়ে যাবে!!
এ আপনাদের দুর্বলতা! রাজনীতি করার জন্য ভোট চাইতে এসে যদি আপনি বলেন- আমি অমুকের সাথে সম্পর্কে সুখ পাইনি, কিংবা শরীর দেখিয়ে নাচ দেখান, বিশ্বাস করুন, পুরুষকে দোষ দেবেন না!!
যদি বলেন, অমুকে নিজের মেয়েকে চায়, যদি বলেন, আমার দলে এতো পার্সেন্ট মহিলা প্রার্থী,
যদি বলেন আমরা মহিলাদের এতো পার্সেন্ট সংরক্ষণ দেবো, তাহলে বলবো – দয়া করে নারীবাদের নারী আর বাদ এর মাঝখানে একটি ড্যাশ দিন!! এবং বসে বসে মিম উপভোগ করতে থাকুন!
(কিছু ব্যতিক্রমী পুরুষ নিয়ে মাথা ঘামানোর দরকার নেই, প্লিজ!)
আমি এই ফাঁকে একটু ডাক্তারির গল্প বলি।
মেয়েটির বয়স তেরো। অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে এলো ইউএসজি করাতে। সংক্ষেপে বলি, মেয়েটির সতীচ্ছদে কোন ছিদ্র ছিল না। জন্মগত। প্রথম রজঃস্রাবের রক্ত জমেছে জরায়ুতে, যোনিতে। দেখে রিপোর্ট লিখলাম।
মেয়ে কেঁদেই চলেছে মা এর কাছে দাঁড়িয়ে। ভয়ে , লজ্জায় কোন প্রশ্নের উত্তরই দিল না!!
বললাম, এটা কি কান্নাকাটি করার বিষয়?
মেয়েটি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো।
গাইনির ডাক্তারকে ফোন করে বললাম।
মেয়েটিকে আশ্বস্ত করলাম- গল্পের মতো বললাম কিভাবে এটা তৈরি হয়, কিভাবে মায়ের পেটে থাকাকালীন মেয়েটির সমস্যাটি তৈরি হয়েছে, আর কি কি সমস্যা হয়।
মেয়েটি হঠাৎ জিজ্ঞেস করলো- এটা কি সবারই হয়?
বললাম- হ্যাঁ। তোমার একটু জমে আছে এই যা। সামান্য একটা ছিদ্র করে দিলেই ব্যথা কমে যাবে।
মেয়েটি হাসিমুখে রাজি হলো।
কিন্ত আমার শুরু হলো টেনশন! এই মেয়ের বিয়ের পর যদি পুরুষ দেখতে চায়, সতীচ্ছদ ছিন্ন কিনা, কি হবে?? এদেশে এ কালচার যে বড় গভীরে ঢুকে গেছে!! তারপর যদি পুরুষ না মেনে নেয়?? যদি তার পৌরুষ কুমারীত্ব খুঁজে ফেরে অন্য কারো যোনিতে??
মেয়েটিকে বলার জন্য ডেকে পাঠালাম যে- এই অপারেশনের কাগজটা যত্ন করে রেখে দিও!! অন্ততঃ ফুলশয্যার রাত অব্দি!!
মনে মনে বললাম- এই কাগজ দেখে, একজন পুরুষও অন্ততঃ মানুষ হয়ে উঠলে চেষ্টা সার্থক হবে!!
হ্যাঁ, আমি পুরুষ। আমিও ভয় পেয়েছিলাম!!
ভয় পাই এখনো- যখন দেখি, একটি বিখ্যাত মার্কেটিং সাইটে খোলাখুলি বিক্রি হচ্ছে – আই ভার্জিন ক্যাপসুল!! ভয় পাই, যখন সেখানে লেখা দেখি, এই ক্যাপসুল খেলে প্রথম যৌনসম্পর্কের সময় এমন রক্তপাত হবে যে, পুরুষ বুঝতে পারবে না, সতীচ্ছদ ছিন্ন ছিল!
আশা করি, রমরমিয়ে চলছে ক্যাপসুলের ব্যবসা!!
নারী ব্যবসায়ী পুরুষ আছে যে!! পুরুষের নারী আছে যে!!
আরো আছে, সতীচ্ছদ ছিন্ন হলে অপারেশন করানোর চল!! Hymenorrhraphy বলে তাকে!কৃত্রিম সতীচ্ছদ বানিয়ে যে সব নারী ভাবছেন, কি ফাঁকি না দিলেন, তাঁদের বলবো- ফাঁকি দিতে পারেননি!!
আপনি বা আপনারা বরং সযত্নে বাঁচিয়ে রাখতে চাইছেন একজন বা অসংখ্য পুরুষকে, যে পুরুষ আপনার সঙ্গী না হয়ে ধর্ষক হয়ে উঠবে / উঠতে পারবে অচিরেই!!
কি অসহ্য এই পুরুষ!!
কি অসহ্য এই ব্যবসার টেকনিক!!
কি অসম্ভব মধ্যযুগীয় বর্বরতার শিকার হয় এক একজন নারী!
এই পুরুষ প্রতারিত হবে, হতে পারে জেনেও সতীচ্ছদ ছিন্ন ছিল না- এই গর্বে গর্বিত হয়, হবে!!
এই পুরুষ যদিও জানে / জানে না যে সতীচ্ছদ শুধু মাত্র যৌনসম্পর্ক ছাড়াও ছিন্ন হতে পারে, এমনকি তৈরিও না হতে পারে, তবু যৌনাঙ্গের গর্বে গর্বিত পুরুষ তাঁকে হতেই হবে!!
পুরুষ, তোমার লজ্জা করে না- যৌনাঙ্গের গর্বে গর্বিত হতে? লজ্জা হয় না- হরমোনের গর্বে গর্বিত হতে??
নারীরা, এই পুরুষ মিম বানালে রেগে যাবেন? কেন??
থুতু ফেলুন!!
জেনে রাখুন, নো কান্ট্রি ফর উইমেন!!
একটু সামান্য জ্ঞান অর্জন করলেই, সব পুরুষের মুখের উপর প্রশ্ন করতে পারতেন- ওই পুরুষ, তোর সঙ্গী চাই না সতীচ্ছদ? বলে দিতে পারতেন, ওই পুরুষ- সতীচ্ছদ নানান অসুখেও নষ্ট হয়! বলতে পারতেন- বেশি কাজ করলে, ঘোড়ায় চড়লে, খেলাধুলা করতে গেলেও নষ্ট হয়!
বলতে পারতেন- ওই পুরুষ, তুই যে ব্যবসা শুরু করেছিস, ওটা কাপুরুষের লক্ষণ!! ধর্ষকের জন্মদাতা ক্যাপসুল ওটা!
বলতে পারতেন- পুরুষ! পুরুষ! ইন্দ্র, তোমার যৌনাঙ্গ ছাড়া আর কিছু নাই?? আর কিছু চাই না??
কিন্ত বেশিরভাগ নারী সে জ্ঞান অর্জন করবেন না। বড্ড অনীহা এ বিষয়ে। বড্ড পুরুষের ভয়!!
ইন্দ্রের ছলের ভয়! অহল্যা হবার ভয়!
তাই, মিম বানালে রেগে যাবেন কেন?? পারলে থুতু ফেলুন !
এখনো এই রজঃস্রাব আর স্যানিটারি ন্যাপকিন নিয়ে সমাজে যে পরিমাণ ট্যাবু আছে, ভোটপ্রার্থী হয়ে সে সব দূর করার চেষ্টা না করলে, মিম বানালে রেগে যাবেন কেন??
অভিনেত্রী হয়ে হাজার হাজার পুরুষের সামনে বিনা প্রয়োজনে উপভোগ্য ডান্স দেখাতে পারেন, খোলাখুলি বলতে পারেন- আমাকে কেমন লাগছে গো? বলতে পারেন অমুক পুরুষ আমাকে সুখ দেয়নি, তাহলে মিম বানালে রেগে যাবেন কেন??
যে সব দলের হয়ে আপনারা এখন প্রার্থী হয়েছেন, সে সব দলের বীরপুঙ্গব পুরুষরা যখন জনসভায় ভাষণ দেন- মহিলাদের তুচ্ছাতিতুচ্ছ জীবাণুও ভাবেন না, শুধুমাত্র মহিলা বলে বিরোধীকে কুৎসিততম ইঙ্গিত করেন, সামান্য অধিকার অব্দি দেয়া উচিত নয় বলে ঘোষণা করেন। যখন বলেন, সব নারীদের প্রথমে কার সাথে শোয়া উচিত বা অনুচিত, তখন নানান মতের নানান রকম বোধ বুদ্ধির পুরুষ ফলোয়াররা আপনাদের সেক্সি, স্টাইলিশ, কাজের মাসি ইত্যাদি ইত্যাদি বলে মিম বানালে রেগে যাবেন কেন?? রেগে যান কেন??
একদলা থুতু ছুঁড়ে দিন!! অবশ্যই মিমার এবং এইসব বীরপুরুষদের মুখে!!
আপনারা আজ সেইসব পুরুষদের দলের প্রার্থী হয়েছেন। খুব ভালো কথা। কিন্ত, আপনাদের প্রতিবাদ কোথায়?? আপনার নারীত্ব কোথায়??নিজের বা অন্যের দলের পুরুষের বিরুদ্ধে, পৌরুষের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ কোথায়??
জানি আপনারা বলবেন, সব পুরুষ তো …
হ্যাঁ জানি তো!! সব পুরুষ আপনার নারীত্বকে যৌনাঙ্গ দিয়ে মাপে না! কিন্ত যে বা যারা মাপে, তাঁদের মুখে তো থুতু দিন!!
যে বলতে এসেছে- আপনি কাজের মাসি, তাকে বলতে পারলেন না যে, তুই আর তোর ভাই এবং গুরু অব্দি এক একটা ধর্মের ষাঁড়?
বলতে পারলেন না যে- বীরপুঙ্গব দলীয়/বিরোধী নেতারা, তোমরা এক একটি ধর্ষক পুষে রাখছো অন্তর্বাসের ভেতরে, যৌনাঙ্গে!!
অন্ততঃ একজন নারী বা একটি মেয়ে, আজো সাহস করে বলতে পারলো না- তোমাদের দল নেই, দেশ নেই, ভোট নেই, জোট নেই, ধর্ম নেই – তোমরা সবাই এক একটি খিস্তি-পুরুষ!!
বলে ফেলুন, WHO, UN HUMAN RIGHTSএর সঙ্গে গলা মিলিয়ে – virginity test is a painful, humiliating and traumatic practice, constituting violence against women !!
তাই, দেয়ার ইজ নো কান্ট্রি ফর উইমেন!!
আমি খুঁজছিলাম- নারীর কথার আক্ষরিক অর্থ কি কি? অভিধানে উইমেন এর যা যা অর্থ হয়, সেটা খেয়াল করুন!! সাথে পুরুষেরটাও!!
কিছু বোঝা গেল??
না বুঝলে, নাকে কথা জড়িয়ে মিম পড়ুন! বলুন, আমি তো অমুকের দলের …
দেয়ার ইজ নো কান্ট্রি ফর উইমেন!!
অপেক্ষায় আছি সেই মেয়েটির, অপেক্ষায় আছি সেই অলীক দেশের এক নারীর, যাঁর নারীত্ব রক্ষা করার জন্য কোন পুরুষের প্রয়োজন নেই!!
যে একাধারে সেক্সি, স্টাইলিশ, কাজের জন্য মেয়ে বা মাসী হয়ে বা না হয়েও, সুন্দরী বা অসুন্দর হয়েও, ডান বা বাম হয়ে বা না হয়েও, সতীচ্ছদ শুদ্ধ বা ছিন্ন অবস্থায়ও, ক্যাপসুল খেয়ে বা না খেয়েও যে বলতে পারবে- এই আমি ভোটপ্রার্থী!!ভোট দিন!
পুরুষকে যেদিন এই বলে বাধ্য করতে পারবেন নারীকে ভোট দিতে, নারীকে ভোট দিতে দাঁড় করাতে পারবেন, সেদিন আসবেন!!
আশা করি, অনেকেই আমাকে ইতিমধ্যে নারীবাদী বলে ভাবতে শুরু করেছেন এতোক্ষণে।
হয়তো আপনারা কেউ নারী, কেউ পুরুষ- তাই তো?
মিম পড়ুন, খিল্লি করুন।
আপনি অবশ্যই পুরুষ। নারী হলেও পুরুষ!!
অলীক দেশ হয় না। অলীক দেশে মেয়ে /নারীও হয় না!
অলীক দেশ হলেও – তা পুরুষেরই হবে!
No country for women!!