জনস্বাস্থ্যের দাবিতে
(এই পর্বে একটা ছোট্ট মুখবন্ধ থাকবে। আমাদের দেশে কিছু ভোটপন্থী, ধান্ধাবাজ স্বার্থপন্থী দল ওপরে বামপন্থীর ভেক ধরে’ সাধারণ মানুষকে বামপন্থা সম্বন্ধে বীতশ্রদ্ধ করে’ দিয়েছে। হয়তো নর্ম্যানের জীবন একজন খাঁটি বামপন্থীর জীবন। “কেউ জন্ম থেকে বামপন্থী হয় না, বোধ তাকে বামপন্থী করে’ তোলে”। সেই অর্থে এই লেখাটা বামপন্থা সম্বন্ধে একটা ধারণা দেবে। কোনও দলের বিচ্যুতি একটা মতবাদকে ভুল প্রমাণ করে না।)
এবার সে রওয়ানা হলো চীনের দিকে। তখন মাও সে তুংএর নেতৃত্বে সিসিপি (চীনা কমিউনিস্ট পার্টি) চীনে মুক্তির লড়াই লড়ছে-তখনও চীনে বামপন্থা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। তখন জাপান একটা ফ্যাসিস্ট শক্তি। জাপান, ইটালি আর জার্মানি। হিরোশিমা, নাগাসাকির পর জাপান নিরপেক্ষ শান্তিকামী দেশে পরিণত হলো। জাপান তখন আক্রমণ করেছে চীন, দখল করার উদ্দেশ্যে।রয়েছে হাঙ্গেরি, অস্ট্রিয়া। রাজতন্ত্রের শাসনে জনসাধারণ তিতিবিরক্ত। নেশা, দারিদ্র্য আর অনাহার নিত্যসঙ্গী।
বিংশ শতকের প্রথম দশকে সান ইয়াৎ সেন আসেন জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের প্রবক্তা হিসেবে।তৈরি হয় প্রজাতন্ত্রী চীন। কিন্তু পরিস্থিতি বদলালো না। পরিস্থিতি বদলাতে খোল নলচে বদলাতে হয়, সান ইয়াৎ সেনের আমলে শুধু ওপরটা ঝকঝকে করে তোলা হয়েছিলো। ১৯২৫ সালে সান ইয়াৎ সেন মারা গেলেন, ততদিনে ওখানে সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার অবসান ঘটানোর পরিস্থিতি তৈরি হয়ে এসেছে। মানুষ সচেতন হয়েছে। এরই মধ্যে সিসিপি লড়ছে সব মানুষের সমান অধিকার অর্জনের জন্য।
সেই লড়াইয়ের ফ্রন্টে এলো নর্ম্যান। ব্যতিক্রমী ডাক্তার নর্ম্যান বেথুন।
এই মুক্তি বাহিনী সেই মুহূর্তে ক্যান্টন থেকে সাংহাই বিদেশী বাহিনীর হাত থেকে উদ্ধার করে।কারা বিদেশী শক্তি? “গ্রেট ব্রিটেন, ফ্রান্স আর আমেরিকা।” অর্থাৎ তথাকথিত দয়ালু দেশগুলো।
হঠাৎ করে প্রজাতন্ত্রী চীন সান ইয়াৎ সেনের কর্মসূচী বন্ধ করে দিলো। গোপনে লুকিয়ে লুকিয়ে মুক্তি বাহিনীর লোকদের হত্যা করা হলো। জাপানও তখন চীন আক্রমণ করেছে।
গোটা পৃথিবীতে রটে গেছে ডাক্তার নর্ম্যান বেথুন মারা গেছে। নর্ম্যান সাংহাই দিয়ে চীনে ঢুকেছে। সেই সময়, জাপানী সৈন্যদের আক্রমণ থেকে বেঁচে,কোনোক্রমে ও পৌঁছে গেল মাও সে তুংএর কাছে। ইতিমধ্যেই স্পেনের স্বাধীনতা যুদ্ধে হাসপাতাল, ব্লাড ব্যাঙ্ক এবং যুদ্ধক্ষেত্রে সামনে দাঁড়িয়ে থেকে সেবা করার জন্য নর্ম্যান পৃথিবী বিখ্যাত হয়ে গেছে।
সুতরাং চললো নর্ম্যান যুদ্ধশিবিরে হাসপাতাল পরিদর্শনে। প্রতিটি হাসপাতালই অত্যন্ত নিম্নমানের। এভাবে চললে অসুস্থ মানুষ বাঁচবে না। কোনও প্রশিক্ষিত কর্মী নেই। ন্যূনতম পরিষ্কার রাখার ব্যবস্থা নেই। সুতরাং অস্থায়ী কিন্তু ভালো হাসপাতাল তৈরি করতে হবে। বইপত্র নেই। নর্ম্যান রাত জেগে ছবিতে বই লিখতে লাগলো। সারাদিন অপারেশন। প্রশিক্ষণ। তারপর লেখা। কিন্তু নর্ম্যান তার পুরোনো রোগ রেগে যাওয়া থেকে মুক্তি পায় নি।”এবার নিজেকে বদলাতে হবে, আর রাগবো না”
একজন সৈন্য এসেছে দূষিত ক্ষত নিয়ে। নার্স যে ব্যান্ডেজটা করেছে-সেটা জঘন্যতম। কিন্তু নর্ম্যান রাগবে না। “তুমি কি জানো? তুমি যে ব্যান্ডেজ করেছো তাতে ঐ লোকটা মারা যেতে পারে?”
নার্স বললো “ক্ষমা করুন”
“এটা ক্ষমা করতে পারে, ঐ আহত লোকটা, তুমি যার জীবন বিপন্ন করেছো। আর কেউ নয়”
সৈনিকটি, শেলের টুকরো লেগে যার হাতের কিছুটা অংশ উড়ে গেছে, সে গম্ভীর ভাবে বললে “আমি ক্ষমা করে দিলাম”
একটা মুহূর্তে স্থির দাঁড়িয়ে থেকে নার্স কেঁদে ফেললো।
এরপর রক্তদান। এই লোকগুলো আদেশ পেলে জাপানি সৈন্যদের মাঝে গিয়ে মরতে পারে।কিন্তু রক্ত দিতে ভয় পায়। একটা অজানা ভীতি কাজ করে ওদের মধ্যে। কেউ রক্ত দিতে রাজি নয়।
একজন রোগী এলো। রক্তশূন্য। রক্ত না দিলে অপারেশন হবে না। নর্ম্যান নিজে রক্ত দিলো।উদাহরণ তৈরি করতে হয়। নিজে করে দেখাতে হয়। নর্ম্যান শুয়ে পড়লো। নল দিয়ে স্বচ্ছ কাঁচের বোতলে টপ টপ করে রক্ত পড়তে লাগলো। ভরে’ উঠলো বোতল। অচেতন যোদ্ধার শরীরে এরপর রক্ত দিতে শুরু করলো আমাদের নর্ম্যান বেথুন। আস্তে আস্তে চোখ মেললো সৈনিক, গলায় শোনা গেলো গোঙানির শব্দ ,চেনা সবাইকে দেখে ঠোঁটের কোণায় জাগলো ভরসার হাসি। সমবেত জনতার মধ্যে অবিশ্বাস আর আনন্দের গুঞ্জন উঠলো।
এগিয়ে এলো এক বৃদ্ধা, মুখের চামড়া ঝুলে পড়েছে। পিঠ গিয়েছে বেঁকে। উজ্জ্বল চোখে সে বললো “আমি বুড়ো মানুষ, আমার রক্তে যদি একজন সৈনিকের প্রাণ বাঁচে…..তাহলে আমার রক্ত নাও…” আর কোনদিন স্বেচ্ছা রক্তদাতার অভাব হয়নি।
টানা দশ ঘন্টা অভুক্ত হেঁটে নর্ম্যান ‘হো চিয়েন সাং’ পৌঁছলো।
“চিকিৎসা কেন্দ্র টা কোথায়?”
“এক্ষুণি খাবার তৈরি হয়ে যাবে। আপনি বহু দূর থেকে আসছেন…”
“হ্যাঁ অনেকদূর পথ আমাকে হেঁটে আসতে হয়েছে….কিন্তু আহত সৈন্যরাও বহুদূর থেকে এসেছে”
এরপর আর কোনো কথা হয়নি।
সুতরাং আবার হাঁটা। সেখানে একজন সৈনিকের পায়ে পচন ধরেছে। কেবলমাত্র ভাঙা বেরিয়ে থাকা হাড়ে স্প্লিন্ট দেওয়া হয় নি বলে’। তখনই সেই সৈনিকের পা কেটে বাদ দিতে হলো। একটা কাঠ কাটার করাত দিয়ে। আগে রোগীর দায়িত্বে ছিলো ডাক্তার ফং।নর্ম্যান তার স্বভাবসিদ্ধ কটু কথায় তাকে অভিষিক্ত করলো।
“এই ফং ছেলেটা একটা চাষীর ছেলে। ছোটোবেলা থেকে একদিন ও পড়াশোনার সুযোগ পায় নি। কেবলমাত্র, কেবলমাত্র আহত মানুষের সেবা করার জন্য, এই দুর্গম পাহাড়ের প্রচণ্ড ঠান্ডায় এখানে এসেছে….এখানেই যতটুকু হোক শিখেছে। কমিউনিস্ট হতে গেলে আত্মসমালোচনা করতে হয়, কিন্তু চীন দেশের মানুষ বড্ড আত্মসচেতন…” রাস্তায় যেতে যেতে দোভাষী তুং নর্ম্যানকে বলে।
নর্ম্যান স্থির হয়ে দাঁড়ায়। নর্ম্যান ভাবতে থাকে “যে দরিদ্র অশিক্ষিত ছেলেটা কনকনে ঠান্ডায় মানুষের মুক্তির জন্য দাঁড়িয়ে আছে, তাকে কটু কথা বলা উচিত নয়….কিন্তু” নর্ম্যান তো রোগীর অবহেলা সহ্য করতে পারে না।
দুর্গমতর আরেক জায়গায় অপারেশন করে ফেরার সময়, ফংকে ডেকে নিয়ে একটা পাথরের চাঁইয়ের ওপর বসে’ নর্ম্যান একটা সিগারেট ধরায়।
“ফং, আমি সবই শুনেছি। তোমার ছোটবেলার কথা-কষ্টের কথা-গ্রামের কথা। আসলে আমার দুটো রোগ আছে। একটা সারিয়ে ফেলেছি অপারেশন করে। যক্ষ্মা। অন্যটা রাগ। আমি এটার কাছে হেরে গেছি কমরেড। ….সার্জন হওয়া খুব কঠিন, খুব কষ্টের। অনেক কিছু শিখতে হয়।তোমাকেও শিখতে হবে। আমি জেনারেল নিয়ে’কে বলে তোমাকে আমাদের কেন্দ্রে নিয়ে যাবো। নিজের হাতে শেখাবো। রাজি তো কমরেড?”
ফং বলে “পাই এন চু (তখন সবাই এই নামেই নর্ম্যানকে ডাকে),আমার ছেলে যখন বড়ো হবে, তখন… তখন আমাদের গ্রামে ইশকুল হবে, ওকে আমি আমার মতো হতে দেবো না”
“কমরেড, তুমি সার্জারিটা ভালো করে শেখো, তোমার ছেলে সত্যিকারের সার্জন হবে”
ফং এতক্ষণে চোখ তুলে তাকায় “না। আমার ছেলে পাই এন চু’র মতো হবে”
নর্ম্যান ওর হাতটা নিজের হাতে তুলে নেয়।
ষষ্ঠ পর্ব শেষ।
Dear Dr Dipankar— I had the chance privilege to go through your serial on ” Dr Norman Bethune”– courtesy Dr Jayanta Bhattacharya of Raigunj WB. Yes — he was our inspiration too in our formative days of ’50s in last century. As a matter of fact — the idea of building — “Students Health Home” & running of Peoples Relief Committee –had their roots on trickling news of health care volunteers of CPCs -8th. route army’s exploits in flaming days of war torn china during ’40s.” SCALPEL the SWORD ” was a must read book for us — as was Fuchic’s on European front. I congratulate you for the well knitted series — presented in a style with may create ripple in today’s young minds. Keep it up. Regards — nirmalyakumar majumder .
Wonderful!