আমরা অনেকসময় আমাদের আসে পাশে এইরকম অনেক লোকজনকে দেখতে পাই যারা অহেতুক বার বার হাত ধোন,স্নান করেন,জামাকাপড় পরিষ্কার করেন বা ঘর মোছেন এবং বাড়ির লোকজনকেও এই জাতীয় কাজ করতে বাধ্য করেন।আমরা অনেক সময় এই সমস্যাকে বাংলায় “শুচিবাই” বলে থাকি। এই “শুচিবাই” আসলে “অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিসঅর্ডার “নামক রোগের একটি প্রকারভেদ।
“অবসেশন” কথাটির অর্থ হল মাথার মধ্যে কোন একই চিন্তা,ছবি বা ইচ্ছা বারবার ঘুরপাক খাওয়া। রোগী বুঝতে পারেন যে তাঁর এই চিন্তাগুলি অমূলক, অর্থহীন, প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত। তবুও এই চিন্তা বা ইচ্ছাগুলিকে তিনি আটকাতে পারেন না বা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। স্বাভাবিক ভাবেই এর ফলে রোগীর মনে অস্বস্তি দেখা দেয়। যেমন- কোন ব্যক্তি দরজায় তালা দিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে অফিসে পৌঁছে হঠাৎ করে খেয়াল করলেন যে দরজায় তালা দিয়েছেন কিনা তা তাঁর মনে পড়ছে না এবং এই চিন্তাটা তাঁর মাথায় বার বার আসতে থাকায় মনে অস্বস্তি সৃষ্টি হল।
অন্যদিকে “কম্পালশন” হল ওই অবসেসিভ চিন্তা বা ইচ্ছা গুলিকে কমানোর জন্য ওই ব্যক্তি যে কাজগুলি করেন। যেমন ওপরের উদাহরণে বর্ণিত ব্যক্তি তাঁর ওই অহেতুক চিন্তা কমানোর জন্য আবার অফিস থেকে বাড়ি ফিরে এসে দরজার তালা ঠিকমত দেওয়া হয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখলেন।
অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে হয় খালি “অবসেশন” বা খালি “কম্পালশন” বা দুটিই একসাথে থাকে।
অবসেশন ও কম্পালশন অনেক ধরনের হতে পারে।যেমন-অনেকের সবসময় মনে হয় তাঁর হাতে বা শরীরে নোংরা বা জীবাণু লেগে আছে।এই জাতীয় অবসেশন সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।
অনেকের আবার কোন কাজ ঠিকমত করা হয়েছে কিনা সেই ব্যাপারে সন্দেহ অবসেশন হিসাবে দেখা যায়।যেমন-দরজায় তালা দেওয়া হয়েছে কি না, গ্যাস সিলিন্ডারের নব ঠিকমত বন্ধ করা হয়েছে কি না ইত্যাদি। অনেকের আবার নিজের পছন্দ মত করে জিনিস গুছিয়ে না রাখা অব্দি অস্বস্তি হতে থাকে। কারও আবার কোন কাজ জোড় সংখ্যক বার না করলে অস্বস্তি হয় (যেমন -স্নান করার সময় জোড় সংখ্যক বার শরীরে জল ঢালতে হয়)। অনেকের আবার ঠাকুর-দেবতার ছবি দেখলেই কিছু খারাপ চিন্তা বা ছবি(যেমন -ওই ব্যক্তি যেন কোন ঠাকুরের ছবি পা দিয়ে মাড়িয়ে যাচ্ছেন ) মাথায় চলে আসে যেটা তিনি শতচেষ্টা করেও আটকাতে পারেন না।
আমাদের মস্তিষ্কের মধ্যে স্নায়ু কোষ দিয়ে তৈরি অনেকগুলি সার্কিট আছে।এই রকম একটি সার্কিট হল “করটিকো -স্ট্রায়াটো- থালামো -কর্টিক্যাল “(সি -এস -টি- সি) সার্কিট। কোন কাজ বা চিন্তা করতে গিয়ে কোথায় থামা উচিত তা এই সার্কিট নিয়ন্ত্রণ করে। এই রোগে এই “সি -এস -টি- সি” সার্কিট ঠিকমত কাজ করে না এবং তাই রোগী বুঝে উঠতে পারেন না যে কোথায় থামা উচিত। আর তাই একই চিন্তা মাথায় বারবার আসতে থাকে এবং একই কাজ বারবার করার প্রবণতা দেখা যায়।
গবেষণায় দেখা গেছে বিশ্বের প্রতি একশ জনের মধ্যে গড়ে প্রায় দুই জনের এই রোগ আছে।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই রোগে আক্রান্তদের মধ্যে অন্য কিছু মানসিক সমস্যাও দেখা যায় যেমন-ডিপ্রেসিভ ডিসঅর্ডার, উদ্বিগ্নতার সমস্যা, ফোবিয়া, প্যানিক ডিসঅর্ডার, টিক ডিসঅর্ডার ইত্যাদি ।
এই রোগের চিকিৎসায় বেশ কিছু কার্যকরী ওষুধ আবিষ্কৃত হয়েছে। “সেরোটোনিন রিআপটেক ইনহিবিটার ” গোত্রের ঔষধ (যেমন ফ্লুঅক্সটিন,ফ্লুভক্সামিন,ক্লোমিপ্রামিন ইত্যাদি ) বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।এছাড়া কগনিটিভ বিহেবিয়ার থেরাপি, এক্সপোজার ও রেসপন্স প্রিভেনশন থেরাপি দ্বারাও এই রোগীকে সাহায্য করা সম্ভব। ও ষুধ ও থেরাপি একসাথে ব্যবহার করলে ফলাফল ভালো হয়।