RG Kar মেডিক্যাল কলেজে যে নৃশংসভাবে ২য় বর্ষের পোস্টগ্র্যাজুয়েট তরুণীকে হাসপাতালের মধ্যে শেষ রাতে গণধর্ষণ করে চরমতম বীভৎসতার সাথে হত্যা করা হয়েছে সে ঘটনা সম্ভবত এক অর্থে “নির্ভয়া” বা “হাথরাস”-এর ঘটনাকেও ছাপিয়ে গেছে। কলকাতা শহরের বুকে একটি প্রথমসারির হাসপাতালের মধ্যে যে এ ঘটনা যে ঘটতে পারে, সম্ভবত ভারতের ইতিহাসেও বিরল – অন্তত আমার জানা নেই।
বিভিন্ন সূত্র থেকে যতটুকু জানা যাচ্ছে, হাসপাতালের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে মৌরসিপাট্টা গেড়ে বসা ওষুধ-মাদক-সেক্স র্যাকেট-পয়সার বিনিময়ে পাস করানো বা ইন্টার্নশিপ শেষের সার্টিফিকেট দেওয়ার যে মধুচক্র গড়ে উঠেছিল (যাতে আশঙ্কা করা যায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং ছাত্রছাত্রীদের একটি অতি ক্ষুদ্রাংশ যুক্ত ছিল) এই তরুণী চিকিৎসক সেটা জানতে পারে এবং হয়তো বা প্রতিবাদও করেছিল। এর পুরষ্কার হিসেবে সে পেয়েছে ভাঙচুর করা নিজের গাড়ি, গণধর্ষণ এবং মানুষের জীবনের সর্বাধিক-কাঙ্খিত বেঁচে থাকার অধিকার হারানো।
ঘটনা এখানে শেষ হয়নি। এর প্রতিবাদে “ইতরের দেশে” বাস করা RG Kar-এর জুনিয়র ডাক্তারেরা পবিত্র ক্রোধ থেকে তীব্র আন্দোলন শুরু করে পরদিন সকাল থেকেই। এতে যুক্ত হয়েছে ডাক্তারদের সংগঠন ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরাম, ডাক্তারদের জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম, কলকাতা শহরের প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজ, পশ্চিমবঙ্গের প্রায় সব জেলার মেডিক্যাল কলেজ, ভারতের নামী ডাক্তারি প্রতিষ্ঠানগুলো – দিল্লীর এইমস, চণ্ডীগরের পিজিআই, বিএইচইউ, তামিলনাড়ুর একাধিক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান, গুজরাত রাজস্থান মহারাষ্ট্র দিল্লী সহ ভারতের প্রায় সব প্রান্তের ডাক্তারদের সংগঠন। এমনকি সর্বভারতীয় সংগঠন ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনও অংশগ্রহণ করেছে।
এ তো গেল আন্দোলনের ব্যাপ্তি ও তীব্রতার এক দিক। অন্যদিকে রয়েছে আইনি অংশ যেখানে কলকাতা হাইকোর্টের নজরদারিতে তদন্ত চলার নির্দেশে মৃত্যুরহস্য সমাধানের দায়িত্বভার চলে গেছে কলকাতা পুলিশ থেকে সিবিআই-এর হাতে। এসব কথা এখন সবাই জানে – এমনকি গার্ডিয়ান বা বিবিসি-র মতো আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমও এসমস্ত খবর প্রকাশ করেছে। ফলে আমি নতুন কথা এখনো অব্দি কিছু বলিনি – শুধু ইতিহাসকে আরেকবার স্মরণ করানো ছাড়া।
কিন্তু এরপরে আরেকটি ঘটনা ১৮ আগস্ট মধ্যরাত্রে ঘটেছে – কলকাতা সহ ভারতের সবজেলায় এবং অঞ্চলে নারীরা, হ্যাঁ কেবলমাত্র নারীরা, রাজপথের দখল নিয়েছে। Reclaim the Night! আমি অন্ত্যেবাসি, প্রান্তিক অঞ্চলের একজন ডাক্তার। কিন্তু এই রায়গঞ্জেও এ মহাযজ্ঞ হয়েছে। কয়েক হাজার নারী দখল নিয়েছেন রাজপথের। তবে পুরুষেরাও পাশে বা পেছনে ছিল। তারা ছিল নিজেদের তাগিদে। এ নারীদের স্পষ্ট বক্তব্য ছিল – দয়া করে কোন রাজনৈতিক দল এসে আমাদের এ প্রয়াসকে কলুষিত করবেন না, কোন রাজনৈতিক ব্যানার বা শ্লোগানও থাকবেনা। এ আন্দোলন আমাদের নিজের – আমাদেরকে করতে দিন। প্রসঙ্গত বলা দরকার রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজের জুনিয়র ডাক্তারেরাও নিজেদের অবস্থানে অনড় থেকে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।
১৪ আগস্ট মধ্যরাতে নারীরা কোনরকম রাজনৈতিক পরিচয় ছাড়া যেভাবে রাজপথ অধিকার করার আন্দোলনে হাজারে হাজারে সামিল হলেন, এ ঘটনা অভূতপূর্ব এবং ঐতিহাসিক। হারিয়ে যাওয়া একটি পরিসর উন্মোচিত হল ঐতিহাসিকভাবে – রাজনৈতিক দল, প্রশাসন এবং পুরুষ-নিয়ন্ত্রিত আন্দোলনকে অতিক্রম করে “তৃতীয় পরিসর”। এ সম্ভাবনাকে পরম যত্নে, মমতায়, পুষ্টি দিয়ে বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব নাগরিক সমাজের। একে যেন আমরা ধ্বস্ত না করি।
“অগ্নিবর্ণ সংগ্রামের পথে প্রতীক্ষায়
এক দ্বিতীয় বসন্ত। আর
গলিতনখ পৃথিবীতে আমরা রেখে যাব সংক্রামক স্বাস্থ্যের উল্লাস।
ততদিন আত্মরক্ষার প্রাচীর হোক
প্রত্যেক শরীরের ভগাংশ।” (নির্বাচনিক”, সুভাষ মুখোপাধ্যায়)
Very nice 👍
আসাধারণ লেখা
গোটা রাজ্য তথা দেশের নারীরা আজ আমাদের R.G.Kar এর ডাক্তার দের পাশে দাড়িয়ে লরছেন তাদের কুর্নিশ॥ কিন্তু এটা এক রাতের প্রতিবাদ নয়। এই ভাবে সবসময় সংঘবদ্ধ ভাবে প্রতিবাদ ততক্ষন যেন চলে যতক্ষন আমরা নারীরা সুরক্ষা না পাই। যতক্ষন আসল দোষীরা শাস্তি না পাচ্ছে।
লড়াই একই ভাবে চলবে আর আপনারা আমাদের পাশে এই ভাবেই থাকুন।
এমন অদলীয় স্বতঃস্ফূর্ত নেতৃত্বহীন প্রতিবাদ এ রাজ্যে শেষ কবে মানুষ দেখেছে, বলা কঠিন। আমাদের রাজ্যে চিকিৎসা পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত সকলে মিলে লাগাতার কর্মবিরতি চালিয়ে পারেন না কি অপরাধী শাসককে ক্ষমতাচ্যুত করতে?
Need corporal punishment, Government must be hanged
বিক্ষোভ … প্রতিবাদ …ধর্না … বিপ্লব, মোটামুটি এখন পর্যন্ত এই চার পর্যায়ে RG KAR কাণ্ডে আম জনতার উপস্থিতি পেলাম এবং সেটা অভুতপুর্ব । কিন্তু অভূতপূর্বর আগে নিসন্দেহে কথাটি এড়িয়ে যেতেই হলো ।
শেষ ধাপ মানে বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে যেতে যেটা দরকার সেটা হলো যোগ্য নেতৃত্ব । বিশেষ করে ১৪ই অগাস্ট রাত্রে সেটা টের পাওয়া গিয়েছে । রাজ্য জুড়ে বিক্ষিপ্ত ভাবে যেখানে সেখানে রাত দখলের জন্য মানুষ পথে নেমেছে । এটা প্রথম ধাপ । দ্বিতীয় ধাপে যেটা চোখে পরার মত ঘটনা হলো কারা এই জমায়েতে উপস্থিত ছিলেন । তারা কি বুকে হাত রেখে নিজের বিবেকের কাছে প্রশ্ন করতে পারবে তারা শত প্রতিসদ ভালো মানুষ ? এমন এক ঘটনা চোখে পরল এক প্রফেসর যিনি শ্লীলতাহানির দায়ে SUSPENDED হয়ে বসে আছেন তিনিও দেখলাম সদর্পে মিছিলের অগ্রভাগে । এবার আসি তৃতীয় ভাগে, যেটাকে আমি বলি রাত চুরি মানে মোদ্দা কথায় বিপ্লবের রঙকে লাল করতে নেমেছিলেন যারা তারা তো জনগণ দ্বারা অপাংক্তেয় । কেন তারা বোঝে না যে ভাই তোদের আমরা চাই না তোরা ফিরে আয় । আজ ১৬ তারিখ আবার কারা যেন রাজ্য জুড়ে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে, এটাও বিপ্লব চুরির দায়েই পরে । ওদিকে শুনলাম ১৭ই অগাস্ট থেকে রাজ্য জুড়ে স্বাস্থমন্ত্রীর বিরুদ্ধে পুলিশমন্ত্রীর কাছে মুখ্যমন্ত্রী জবাব চাইতে রাস্তায় নামবেন । এক অঙ্গে তিন রূপ তিনি ত্রিভুবনী । বঙ্কিমের কথায় সত্য সেলুকাশ বড়ই বিচিত্র এই দেশ । আর নবারুণের কথায় আমরা ইতরের দেশে বাস করি । আর শেষ ধাপে বলছি, দয়া করে বিপ্লবের রঙকে সদাই সাদা মানে সত্যই থাকতে দিন । মনের মাঝে আগুন ধরুন, ওটাকে লালিত করুন আর ধিরে ধিরে দানা বাঁধতে থাকুক এই ক্ষোভ । একদিন সময়ের চাকা ঘুরবেই এই বিশ্বাস সকলের।
দলীয় রাজনীতির প্রভাবমুক্ত এ এক অভাবনীয় সমাবেশ। এই বোধহয় প্রথম, মধ্যবিত্ত মনন ও ভাবনা প্রবেশ করল সর্বস্তরে। প্রান্তিক মানুষও প্রতিবাদে সামিল হল। এই পরিসর কেউ তৈরী করেনি। স্বতঃস্ফূর্ত জাগরণ। ভাল লাগল। তবে লেখাটা যেন খুব দ্রুত শেষ হয়ে গেল।
এরকম চোখে দেখতে পারলে, বিশ্লেষণ করতে পারলে আন্দোলনের সামনের সারিতে একটা অভূতপূর্ব সকাল আনতে এগোতে পারত। এরকম আন্দোলন, বিশেষত মেডিকোস দের এতটা অংশগ্রহণ এ দেশেই অভূতপূর্ব। আন্দোলনকারীদের কুর্ণিশ। পাশে থাকতে পেরে কিছুটা তৃপ্তি পাচ্ছি।
ঠিক। আমার স্মরণাতীত কালে বাংলা এই প্রতবাদী মিলিত কন্ঠস্বর শোনেনি। মনে হয় আমাদের হিসেবের বাইরে নতুন কোন দিশা ফুঁসছে।