আপনি বলেন হোমিওপ্যাথি প্লাসিবো (মিছিমিছি ওষুধ)। ৮০% রোগ এমনিই সেরে যায়। সেটা নিশ্চয়ই মডার্ন মেডিসিনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। তাহলে সেসব রোগে ডাক্তারের কাছে যাবো কেন? রোগগুলোর নাম বলে দিলে আর্থিক অপচয় কমে।
আমার উত্তরঃ
আলোচনার সুবিধার্থে এমনিই সারে এমন রোগগুলিকে ‘ভালো রোগ’ এবং ক্রমশ অবস্থার অবনতি হয় কিংবা মৃত্যু হতে পারে এমন রোগগুলিকে ‘খারাপ রোগ’ বলবো। এটা ঠিকই বেশিরভাগ রোগ এমনিই সারে। তাও ডাক্তারের কাছে যাবেন কেন? কারণ ‘ভালো রোগ’ বলে মনে হওয়া রোগটি সত্যিই ভালো কিনা সেটা ডায়াগনোসিস হওয়া দরকার। রোগ উপসর্গের মধ্যে এত মিল (ওভারল্যাপিং) থাকে যে কোনটা ভালো আর কোনটা খারাপ সেটা বোঝা অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পক্ষেও অনেক সময় মুশকিল হয়। তাছাড়া তথাকথিত ‘ভালো রোগ’ অল্প কিছু শতাংশ ক্ষেত্রে খারাপ হতে পারে। সেই মনিটরিং (রোগ বাড়ছে কিনা দেখভাল) টুকুর জন্যই বারবার চেক-আপ করানো দরকার।
যেমন ধরুন- ডেঙ্গি, চিকেন পক্স, ভাইরাল ডায়েরিয়া (কয়েক কোটি উদাহরণ দিয়ে লেখাটিকে ভারাক্রান্ত করতে চাই না) ইত্যাদি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এমনিই সারবে। শুধু খারাপ ক্ষেত্রগুলো খুঁজে নেওয়ার জন্যই ডাক্তারের কাছে যাওয়া। তিনি সেরকম বুঝলে প্রয়োজনীয় উপায় বলে দেবেন। আবার ধরুন, দেড় মাসের বাচ্চাকে বাবা-মা ডাক্তারের কাছে নিয়ে এলেন। সমস্যা- ‘বাচ্চা খুব কাঁদছে’। এবার এই কান্নাটা বেশিরভাগ সময়েই খিদে পাওয়া, হাগু-হিসি করে ফেলা, পেটে ব্যথা (একটা বয়সের পর চলে যায়। সামান্য চিকিৎসা লাগতে পারে) ইত্যাদি সাধারণ কারণে হয়। আবার মাথা, বুক বা পেচ্ছাবে ইনফেকশন, হৃৎপিণ্ডের স্পন্দন-তারতম্য (অ্যারিদমিয়া) ইত্যাদি খারাপ রোগেও হয়। যদিও সেসবের সংখ্যা অনেক কম। তবুও আগে খারাপ রোগগুলো খুঁজে নেওয়া জরুরি।
দীর্ঘদিনের উপসর্গের বেশিরভাগ (বহমান নদীর জঞ্জাল পরিষ্কারের মতো) শরীর নিজেই সারায়। এখানেই হোমিওপ্যাথি জাতীয় প্লাসিবোর কারসাজি। ওঝার ফুঁকে বেশিরভাগ সময়েই কাজ হয় বলে মনে হয় কারণ বেশিরভাগ সাপের বিষ নেই। তাও ওঝার কাছে না গিয়ে প্রত্যেকবার ডাক্তারের কাছে যাবেন কারণ ওই অল্প পরিমাণ বিষধর কামড় খুঁজে নিয়ে তার সময়মতো চিকিৎসা করতে হবে। স্বভাবতই, রোগ খারাপ হ’লে বা আপৎকালীন অবস্থায় পৌঁছোলে ওঝার ফুঁক বা হোমিওপ্যাথি কোনোটাই কাজ করে না।
এবারে বিজ্ঞান ছেড়ে বাস্তবের সমস্যায় আসি। আপনি ডাক্তারের কাছে গেলেন। ডাক্তার দেখে বলে দিলেন, “নাঃ! আপাতত কোনও ওষুধ দরকার নেই। আবার তিনদিন বাদে আসুন। দেখি রোগটা কোনদিকে যাচ্ছে।” আপনি বাইরে বেরিয়ে বলবেন, “হারামজাদার কান্ড দেখলি? শালা কোনও ওষুধ না লিখেই ভিজিট নিয়ে নিলো। এমনি কী আর ওদের ইয়ে বলি?” আর তিনদিন বাদে (হয়তো সেটা পাঁচ শতাংশের হয়। আপনি তার মধ্যেই পড়লেন) রোগ খারাপের দিকে গেলে তো ডাক্তারের… যাক সেসব কথা।
ওষুধ না লেখাটাও যে একটা চিকিৎসা সেটা বোঝার মতো মানসিক গঠন এখনো এদেশের সাধারণ মানুষের তৈরি হয়নি। বাইরের দেশে রিপোর্ট নর্মাল এলে লোকে ভাবেন, “যাক! বাঁচা গেল।” এদেশে হ’লে? “সব রিপোর্ট নর্মাল। পুরো আড়াই হাজার টাকা গচ্চা গেল ভাই।”
আরও অসংখ্য দিক দিয়ে আলোচনা বাড়ানো যায়। আসলে সমস্যা এত বহুমুখী যে একদিনে চটজলদি সমাধান মুশকিল।