আমার এক গানের মাষ্টারমশাই বলতেন, “কথা দিলাম, মানে মাথা দিলাম”! কথায় বলে, কথায় কি না হয়। কারো কারো কথা তো একেবারে, কথামৃত! কিন্তু এই কথাই আবার কতো ভাবে বিক্রি হয় ; বিকৃত হলেই যতো বিপদ।
ডাক্তাররা রোগীর কথা শোনেন না , এই অভিযোগ খুব প্রচলিত। বড়, অর্থাৎ ব্যস্ত ডাক্তারবাবুর বেশি কথা শোনার, এবং কথা বলারও সময় থাকে না, এটা নতুন কিছু নয়। আমার মত ছোট ডাক্তার, যারা একটু রোগীর কথা শোনার চেষ্টা করি, তাদের এই “বিকৃত” কথা কেমন বিপদে ফেলে, একটা অভিজ্ঞতা বলি।
গতকালই সন্ধ্যায় একজনের চোখ দেখে বললাম, দু চোখেই এবার ছানি পড়ছে। সাথে সাথেই উনি বললেন, “সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজের ডাক্তারবাবু যে বললেন, ছানি পড়েনি!” আমার মত ছোট ডাক্তারের পিলে চমকে দেওয়ার মতই কথা।
ছত্রিশ বছর চোখের ডাক্তারী করার পর, চোখে ছানি পড়া বুঝতে পারলাম না! বলে কি? আমার পরম সৌভাগ্য যে, ঐ মেডিক্যাল কলেজের “পুরচা”, অর্থাৎ আউট ডোরের টিকিটটা রোগী সঙ্গে এনেছিলেন।
” তাহাদের কথা” কতোটা বিশ্বাসযোগ্য , এবার শুনুন। আউটডোর টিকিটে পরিষ্কার লেখা, দুই চোখেই ছানি পড়েছে। শুধু ছানি পড়েছে, কথাটা লিখেই ডাক্তারবাবু ক্ষান্ত হননি; ছানি কতটা ঘন, সেটাও লিখেছেন। আমাদের চোখের ডাক্তারের ভাষায় , NS Grade II. কয়েক টা সাধারণ পরীক্ষা করে, অপারেশন করার কথাও লেখা আছে দেখলাম।
এবার যখন চেপে ধরলাম, বললেন, “একা একাই গেছলাম তো, তাই অপারেশন করাতে রাজী হইনি।”
ভালো করে বোঝালাম, “যেখানেই যান, অপারেশনই বলবে, বাড়িতে আলোচনা করে , ওনাদের গিয়ে বলুন, অপারেশন করিয়ে নিন।”
এবার ঐ হাসপাতালের টিকিটের নিচে কোণের দিকে একটা লেখা দেখিয়ে বললেন, “ওনারা তো অপারেশন করবেন না!”
লেখাটা পড়ে দেখি লেখা আছে, ” Patient Refused Operation”। সোজা বাংলায়, রুগী অপারেশন করাতে রাজী নয়।
অর্থাৎ? “তাহাদের কথা” সব সময়ই সত্যি হবে এমন ভেবে নেওয়ার কোন কারন নেই। ঐ পূর্চাটি না আনলে, আমি বা অন্য যে কোন চোখের ডাক্তার, ঐ মেডিক্যাল কলেজের ডাক্তারবাবু সম্বন্ধে কী ভাবতাম? আবার আমার মত “ছোট” ডাক্তারটি “টুকে পাশ করা”, কিংবা “কোটি টাকা দিয়ে পড়া ডাক্তার”– এমন ভেবে নেওয়াটাই দস্তুর।
তাই, “কথা” সব সময়ই ” অমৃত সমান” হবে, ভেবে নিলে বিপদেও পড়তে হয়।