যাঁরা “অরাজনৈতিক, অরাজনৈতিক” বলে একটি বায়বীয়, সুতরাং অবাস্তব ধারণা সৃষ্টি করতে চাইছেন, তাঁদের কাছে একটি বিনীত নিবেদন।
প্লিজ, রাজনীতি শব্দটাকে একটু বড় প্রেক্ষিতে দেখুন এবং ভাবুন। ‘রাজা’র বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে বা সমাজমাধ্যমে প্রতিবাদ করা, এমনকি সপ্তাহান্তে পাঁচজনের সাথে আসরে বসে ‘রাজা’র সমালোচনাটাও একটা রাজনীতি ই। সেক্ষেত্রে, কোনও ঝাণ্ডার তলায় না দাঁড়ালেও আপনি ‘রাজনীতি’ ই করলেন এবং তাতে আপনার পবিত্রতা কিছু খোয়া গেল না। কোটি কোটি বাঙালী যাঁকে প্রাতঃস্মরণীয় পুরুষ বলে শ্রদ্ধা করে – সেই সুভাষচন্দ্র বসুও একজন আপাদমস্তক রাজনীতিক ছিলেন, এমনকি অল্পবয়সে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল ও রাজনীতির প্রতি কোনওরকম ছুৎমার্গ দেখাননি।
আরজিকর এর যে ঘটনা এই নষ্টবাংলার গণ্ডি ছাড়িয়ে দেশ-বিদেশ জুড়ে ঢেউ তুলেছে, তাও একটি আদ্যন্ত ঘৃণ্য রাজনৈতিক নির্যাতন ও খুনের কাহিনী – কারণ রাজনীতিবিহীন দুর্নীতি বা দুর্নীতিবিহীন রাজনীতি এই রাজ্য কাঁঠালের আমসত্ব – ওসব হয়না। আর যদি তর্কের খাতিরে ধরেও নিই, এটি একটি ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’, তাহলে এটুকু অন্তত মানুন – এই ঘটনার প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ অপরাধীদের আড়াল করার জন্য, তার পশ্চাৎপটে নিকৃষ্টতম, এবং হয়তো আক্ষরিক অর্থেই অভূতপূর্ব দুর্নীতির সিস্টেমকে সজীব এবং ‘অর্থ’বহ রাখার জন্য যে বিরাট আয়োজন চলছে – তা পুরোপুরি একটি বিপুল এবং সুসংবদ্ধ রাজনৈতিক উদ্যোগ। এবং সে উদ্যোগের মধ্যে কোনও সদিচ্ছা নেই, আছে নির্লজ্জ রাজনৈতিক অভিসন্ধি।
এতবড় শক্তিশালী ধুরন্ধর রাজনীতির প্রতিবাদ-প্রতিরোধ রাজনীতি ছাড়া হয়না। অতএব, যদি সত্যিই এটুকু বুঝে থাকেন যে আরজিকর এর তরুণী চিকিৎসকের প্রতি যা হয়েছে, তা হিমশৈলরূপী দুর্নীতি আর অপশাসনের এর চূড়া মাত্র – তাহলে প্লিজ, প্লিজ ‘রাজনীতি’ বলে মুখ ঘোরাবেন না। আপনি নিজে না পারুন, যাঁরা রাজনৈতিক ভাবে প্রতিবাদ করছেন, তাঁরা ক ছটাক বামপন্থী, কত আনা সেকুলার এসব হিসাব করবেন না।
এ সময় রাজনীতির সময়। রাজনীতি হোক। যে মুখে কণ্টক বৈসে সেইমুখে খসে।
“শত্রুর শত্রু আমার মিত্র”।
ছবিটি ডাঃ শুভ্র ভট্টাচার্যের আঁকা।
সুন্দর লেখা 🌹ছবিটি আরও সংবেদী।