‘এপার’ বাংলার শাসকদল, এক বিচিত্র রাজনীতির খেলা শুরু করেছে: সারা রাজ্য জুড়ে ধর্ষণের পর ধর্ষণে একের পর এক শিশু-নাবালিকা-সাবালিকা-বৃদ্ধার তালিকা যতোই লম্বা হতে থাকুক, এমনকি সরকারি হাসপাতাল বা সরকারি কলেজ – যেখানে যতজনই ধর্ষিতা বা খুন হোক, কোনও ঘটনার বিরুদ্ধে কখনোই প্রতিবাদী আন্দোলন করা চলবে না। এ বড়ো ভয়ঙ্কর সময়! সব্বাই চুপ করে থাকো! কারণ নেত্রী কোনও ধর্ষণকে নিজেই বলে দিয়েছেন “সাজানো ঘটনা”; কখনও বলেছেন “ছোট্ট ঘটনা”। তাছাড়া, সামনেই বিধানসভা নির্বাচন। এখন এজাতীয় কোনও আন্দোলন হলেই “ফ্যাসিস্ট”-রা ক্ষমতায় চলে আসবে! এখন তবুও ‘গণতান্ত্রিক ধর্ষণ’ হচ্ছে, তখন কিন্তু ‘ফ্যাসিস্ট ধর্ষণ’ হবে!!
চুরি জালিয়াতি গুন্ডামী ধর্ষণ, বাংলার মাটিতে নতুন কোনোটাই না। সবকিছুই ঘটেছে কখনও না কখনও, কোথাও না কোথাও। কিন্তু পুকু্রের পর পুকু্র চুরি, একের পর এক চরম জালিয়াতি, যখনতখন গুণ্ডামি ও খুন, নিয়মিত ধর্ষণের ঘটনাবলী– এমন নারকীয় তাণ্ডব, বাংলাবাসীরা কল্পনাও করতে পারতেন না! তা-ও আবার নির্বাচিত সরকারের নেতৃত্বে! খুবই ব্যতিক্রমী নজির ছাড়া, বর্তমান প্রশাসন চুরি-জালিয়াতি-খুন-ধর্ষণ ইত্যাদি সবকিছু দুষ্কর্মের নির্লজ্জ সহযোগী; কখনও নিজেরাই দুষ্কর্মের উদ্যোগী / অংশীদার। পুলিশদপ্তর দর্শক মাত্র; অথবা অপরাধীদের সহযোগী। প্রশাসন ও পুলিশ, প্রতিবাদীদের পিটিয়ে ঠাণ্ডা করতে যতটাই তৎপর, মূল অপরাধীদের বিরুদ্ধে ততটাই নিষ্ক্রিয়।
ভোটে জিতলে যাখুশি তা-ই করা যায়, এমনটাই শাসকদলের হাবভাব। কখনও হয়তো ধর্ষণের পর পুলিশ একটুখানি নড়াচড়ার ভঙ্গি দেখালো (যেমন ‘সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজ’); আর যখন রাজনৈতিক-প্রশাসনিক স্বার্থেই ধর্ষণ বা খুনের ঘটনা ঘটে (উদাহরণ ‘আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ’), তখন সবরকম তথ্য-প্রমান লোপাট করতে পুলিশ-প্রশাসন নির্লজ্জভাবে তৎপর হয়ে ওঠে।
এইসব ঘটনা বাংলা ও সমগ্র বাঙালি সমাজের লজ্জা!
মিথ্যা-টাকা-বাহুবল নির্ভর ভোটে শাসদল যতোই আসন পাক, যতো বছরই তারা ক্ষমতায় থাকুক, বাংলার জনগণের পবিত্র ক্রোধ থেকে তারা কখনোই রেহাই পাবে না। সহ্যের সীমা অতিক্রম করলে জনগণের পুঞ্জীভূত ক্রোধ শাসকদলের মাথায় বর্ষিত হবেই। ভোটের মাধ্যমে অথবা কীভাবে সেই ক্রোধ ফেটে পড়ে, তারই অপেক্ষা এখন। গণবিক্ষোভ যেভাবে বারবার ফেটে পড়ছে সরকারের বিরুদ্ধে, ডাক্তার-শিক্ষক-ছাত্রছাত্রী সহ সমাজের আদরণীয় লক্ষলক্ষ হাজারহাজার মানুষ বারবার যেভাবে দুষ্কৃতিরাজের বিরুদ্ধে পথে নামছেন, তাতেই শাসকরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে।
অপর শক্তি সম্পর্কে মানুষের ভয় বা ঘৃণা, নিজেদের দুষ্কৃতিরাজের ছাড়পত্র হতে পারে না। কখনোই না। আজ হোক বা কাল অথবা পরশু, সব দুষ্কর্মের মূল্য কড়ায় গন্ডায় চোকাতেই হবে দুষ্কৃতিদের।
এটাই ইতিহাসের শিক্ষা।।