এতদিন যে সন্তানের অপেক্ষায় প্রতিটা মুহূর্ত কেটেছে সে ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর থেকেই মায়ের মনে যেন অসুখীভাবের কালো ছায়া নেমে আসে। অকারণে কান্না পায়, সন্তানকে দেখতে আত্মীয়স্বজন এলেও বিরক্ত হয়, সব সময় অস্থিরভাব, সবার সঙ্গে খিটখিট করা। যদিও এমন সমস্যা যে কেবল আপনারই হয়েছে এমন ভাববেন না। যে কোনও নতুন মায়েরই এমন হয় বা হতে পারে। এর মধ্যে কোনও অস্বাভাবিকতা নেই। এই সমস্যাকে ডাক্তারি ভাষায় বলা হয় বেবি ব্লুস (baby blues)। বেবি ব্লুস বেশিদিন স্থায়ী হলে তাকে বলে পোস্ট পার্টাম ডিপ্রেশন (post partum depression)।
সন্তান প্রসবের পর ৭০-৮০% মহিলার বেবি ব্লুস বা মানসিক অবসাদের সমস্যা হয়। অসুখীভাব, উদ্বেগ ও খিটখিটে ভাব দেখা যায়। একজন মা প্রসবের ২-৩ দিন পর থেকে এই সমস্যার মুখোমুখি হন। আর ৭-৮ দিনের মধ্যে খুব বেশি হয়। আবার প্রসবের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে তা কমেও যায়। এই মায়েদের গল্প সুখি ও আনন্দোচ্ছল মায়ের থেকে একটু আলাদা।
সবারই কি এমন অভিজ্ঞতা হয়?
না, সব মায়ের এমন সমস্যা হয় না। তবে ৭০-৮০% এর এমন সমস্যা হয়। কোনো পরিবারে ডিপ্রেশনের ইতিহাস থাকলে বা পরিবারে অশান্তি থাকলে যেমন এই ঘটনা ঘটতে পারে তেমনি পারিবারিক সাহায্য পেলে এই সমস্যা তাড়াতাড়ি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।
কী কারণে এমন সমস্যা হয়?
নানা কারণে এমন সমস্যা হতে পারে। হরমোনের তারতম্য, শারীরিক পরিবর্তন ও আবেগগত কারণেও এমন হতে পারে। আসলে গর্ভাবস্থায় মেয়েদের শরীরে ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরনের মাত্রা সবচেয়ে বেশি হয়। আবার সন্তান প্রসবের পর এক ধাক্কায় এই হরমোন অনেকটা কমে যায়, তাই এই সমস্যা হয়। আবেগগত কারণ হল সন্তান ঠিকমতো বড় করতে পারবে কিনা বা সন্তানের দেখাশোনা করায় কোনো গাফিলতি থাকবে কিনা তা নিয়ে দুশ্চিন্তার কারণেও এমন হয়। এছাড়া প্রসবের সময় কোনও আঘাত লাগা, স্তন পান করানোয় অসুবিধা হওয়া, ঘুম না হওয়াও এর জন্য দায়ী।
উপসর্গ
অকারণে কান্না পাওয়া- এমন হলে স্বামীর সঙ্গে বা কোনো কাছের মানুষের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলা দরকার।
অধৈর্য, অস্থির ও খিটখিটেভাব, উদ্বেগ- এই উপসর্গগুলো একটা অন্যটাকে উসকে দেয়। যদি অকারণে বা আচমকা স্বামী বা পরিবারের অন্য কারোর ওপর রেগে যান, তাহলে বুঝতে হবে সমস্যা হচ্ছে। এর থেকে রেহাই পাওয়ার উপায় হল, মনের থেকে যাবতীয় দুশ্চিন্তা দূর করা, আর নিজের ও শিশুর সুস্থতার দিকে নজর দেওয়া।
ক্লান্তি, অনিদ্রা ও মনোযোগের অভাব-ঠিকমতো খাওয়াদাওয়া করা ও শিশু যখন ঘুমোবে তখন নিজেও খানিকক্ষণ ঘুমিয়ে নিতে হবে।
এই সমস্যা কতদিন স্থায়ী হয়?
প্রসবের অব্যবহিত পর শুরু হতে পারে আর তা কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হয়। অনেক সময় আরো বেশিদিন স্থায়ী হতে পারে তখন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হতে পারে।
বেবি ব্লুস আর পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশনের তফাৎ
প্রেগন্যান্সি ও ডেলিভারির সময় বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক ওঠাপড়ার জন্য মায়েদের এই ব্লুস হওয়া খুব স্বাভাবিক। যদি তা কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হয় তাহলে তাকে বলা হয় পোস্ট পার্টাম ডিপ্রেশন। পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশনের উপসর্গ অনেকটা বেবি ব্লুস এর মতোই। তবে তা অনেক বেশি চিন্তার। কারণ তখন উদ্বেগের কারণে ঘুম না হওয়া,অপরাধবোধ ছাড়াও স্বামীর সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয় এমনকী সন্তানের সঙ্গেও ঠিকমতো বন্ডিং তৈরি হয় না। এর জন্য হরমোনের তারতম্য ছাড়াও শারীরিক পরিবর্তন, বিপাকীয় ক্রিয়ার বদল এবং মানসিকচাপ থেকে অবসাদ দায়ী।
চিকিৎসা কী?
নতুন মায়ের শুধু বাচ্চার নয়, নিজের দেখাশোনার বিষয়েও নজর দেওয়া দরকার। নিজের ঘুমের দিকে নজর দিতে হবে, দিনে ৬-৮ ঘণ্টা ঘুম খুব দরকার।
নিজের সমস্যার কথা স্বামী, পরিবারের অন্য সদস্যর সঙ্গে খোলাখুলি আলোচনা করা দরকার। একটু আধটু মন খারাপ লাগলে তার জন্য অপরাধবোধে ভুগবেন না। পরিবারের সবাই আপনার সমস্যার কথা জানলে সাহায্যের হাত নিশ্চয়ই বাড়িয়ে দেবেন। সম্ভব হলে অন্য নতুন মায়েদের সঙ্গে কথা বলুন। দেখবেন সমস্যাটা শুধু আপনার নয়- মন হালকা হবে।
সন্তানের জন্মের পর সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ে মায়ের খাওয়াদাওয়ায়। সন্তানের দেখাশোনা করতে গিয়ে নিজের নাওয়া, খাওয়ার সময় হয় না। আবার আগের চেহারায়ও ফিরে আসা দরকার। কাজেই খাওয়া সময়মতো ও স্বাস্থ্যকর হওয়ার দিকে নজর দিতে হবে। তবে ডায়েটের নামে শরীরের ওপর অত্যাচার শুরু করা যাবে না।
মাঝে মধ্যে বাইরে বেরন। খোলা হাওয়া শরীর ও মন সুস্থ করতে খুব বড় ভূমিকা নেয়।
নিজে একা সব সামলাতে যাবেন না। সাহায্যকারী হিসেবে কাউকে না রাখতে পারলে পরিবারের অন্যদের সাহায্য নিন। এতে লজ্জা বা দ্বিধা করবেন না।
কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে?
সন্তানের জন্ম দেওয়ার পর নতুন মায়ের কিছু মানসিক সমস্যা হতে পারে। তবে যদি তা কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হয় এবং মা নিজের, কখনও কখনও সন্তানের ক্ষতি করার চিন্তা মাথায় আসে তাহলে একটুও সময় নষ্ট না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
বিষয়টি জানা ছিল না ।
নতুন বাবা হয়েছি।
তথ্যগুলো অনেক সাহায্য
করবে আমাদের সুখী পরিবার
বানাতে।
অসংখ্য ধন্যবাদ ডক্টর ।??