আমার এক কন্যা বাড়িতে পা দিয়েই বলল, ” বাঃ, মেঝেটাতো স্পটলেশলি ক্লিন! তুমি যে বললে তোমার কাজের দিদি ছুটিতে?”
আমার কাজের দিদি সত্যিই ছুটিতে, আর ঘরটা আমিই মুছেছি।
এই বিদ্যাটা শিখিয়েছিলেন বিখ্যাত শিশু চিকিৎসক ড: অরুণ সিং। তিনি তখন পিজির নিওন্যাটাওলজি বিভাগের হেড। আমি সদ্য দায়িত্ব নিয়েছি ন্যাশনাল রুরাল হেলথ মিশনের মিশন ডিরেক্টর এবং কমিশনার ফ্যামিলির ওয়েলফেয়ার পদ দুটির। মিশনের ম্যান্ডেট অনুযায়ী নানা জেলা হাসপাতালে বিশেষ নিওন্যাট্যাল কেয়ার ইউনিট গড়ে তুলতে হবে। টেকনিক্যাল গাইডেন্স দেবেন ড: সিং, আমার কাজ সেই গাইডেন্স অনুযায়ী রূপায়ন আর তদারকির। ডঃ সিং কে বললাম, আমিই যেহেতু মিশনের হেড আমার অন্তত বিষয়টির এ বি সি ডি জানা উচিত, যদিও আমি চিকিৎসক নই। উনি বললেন, “অবশ্যই, আমি আপনাকে ক্র্যাশ কোর্স করাব পিজিতে, আমার ইউনিটে। আপনাকে কাল থেকে তিনদিন এই সময়ে আসতে হবে। প্রথম প্র্যাকটিক্যাল রাউণ্ডগুলো হয়ে গেলে আমি আপনার বাড়ি বা অফিসে এসে বাকি টা শেখাব।
সেভাবেই হয়েছিল। আমি তিনদিন ক্লাশ করেছিলাম পিজিতে। পরে বেশ অনেকদিন তিনি কখনো আমার বাড়ি কখনো অফিসে এসে বুঝিয়েছিলেন।
প্রথম প্র্যাকটিক্যাল ক্লাশটা শুরু হতেই ঘাবড়ে গেছিলাম। বিষয় ছিল ন্যাতা। শিশুবিভাগের ন্যাতাগুলো কী ভাবে ব্যবহার করা উচিত, সেগুলো ধোয়া এবং আলাদা কালার কোডেড বালতিতে কি ভাবে আলাদা করে রাখতে হবে, এবং ন্যাতা মেন্টেনেন্সের প্রটোকল কি হওয় দরকার, সেটাই ছিল প্রথম ক্লাশ। কারণ, হাসপাতালের, বিশেষত শিশু বিভাগে ইনফেকসন ছড়ানোর প্রধান দায় হচ্ছে প্রটোকল ঠিকমতো না ফলো করে রাখা ন্যাতা। টপিকটা শেষ হয়ে পরে, ভাল শিক্ষকের মতো ডাঃ সিং আমাকে দিয়ে ফিজিকালি কাজটা করিয়েছিলেন।
সেই সময়ে পিজির ঐ বিভাগে প্রায় বেদবাক্যের মতো সবাই এই প্রটোকল মানতেন। ডা: সিং এর ছাত্র ছিলেন এক সুদর্শন তরুন, ডাঃ অংশুমান পারিয়ার। তখন এম ডি শেষ করে ডি এম হওয়ার পাঠ নিচ্ছিলেন। একদিন ঘুরতে ঘুরতে পিজির ওই বিভাগে ঢুকে দেখি অংশুমান ন্যাতা হাতে ওয়ার্ড পরিস্কার করছেন। কী ব্যাপার জানতে চাইলে বললেন, যে ঐ ওয়ার্ডে ভার প্রাপ্ত গ্রুপ ডি সেদিন আসতে দেরী করছেন, কিন্ত ঘরটা না মুছে ফেলে রাখা রিস্কি। অতএব তিনি নিজেই নেমে পড়েছেন।
অতএব, বুঝতেই পারছেন, ঘর মোছার বিষয়ে আই অ্যাম ট্রেইন্ড বাই দ্য বেস্ট ইন দ্য কান্ট্রি।
স্যরি, লেডিজ অ্যাণ্ড জেন্টেলম্যান, অ্যাট সেভেন্টিথ্রি, আই অ্যাম নট অ্যাভেলেবল ফর হায়ার।