সময়ের আগেও দেখা দিতে পারে মেনোপজ। চিকিৎসা পরিভাষায় যাকে বলা হয় প্রি ম্যাচিওর ওভারিয়ান ফেলিওর।
প্রশ্নঃ প্রিম্যাচিওর ওভারিয়ান ফেলিওর বলতে কী বোঝায়?
উত্তরঃ ওভারি বা ডিম্বাশয় যদি ৪০ বছরের আগে তার স্বাভাবিক কাজ বন্ধ করে দেয়, প্রয়োজনীয় ইস্ট্রোজেন হরমোন তৈরি করতে কিংবা ডিম্বাণু নিঃসরণে অক্ষম হয় তাহলে এই অবস্থাকে বলা হয় প্রিম্যাচিওর ওভারিয়ান ফেলিওর। এই অবস্থাকে প্রিম্যাচিওর মেনোপজ বা আর্লি মেনোপজও বলা হয়। যদিও দুটো সমস্যা পুরোপুরি এক নয়, কিছু তফাৎ আছে। প্রিম্যাচিওর ওভারিয়ান ফেলিওর হলে অনিয়মিতভাবে হলেও পুরোপুরি পিরিয়ড বন্ধ হয় না, চিকিৎসায় কেউ সন্তানধারণ করতে পারে। কিন্তু আর্লি মেনোপজ হলে অনেক সময়েই তা সম্ভব হয় না। কারও কারও ক্ষেত্রে অনেক কম বয়সে(৩০-৩৫) অসময়ে মেনোপজ দেখা দিতে পারে। একে বলে প্রিম্যাচিওর মেনোপজ বা আর্লি মেনোপজ।
প্রশ্নঃ কী কারণে প্রিম্যচিওর ওভারিয়ান ফেলিওর হয়?
উত্তরঃ নানা কারণেই এই সমস্যা হতে পারে। যেমন,
• কোনও অসুখের জন্য ওভারি বা ইউটেরাস পুরোপুরি বাদ দেওয়া
• ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য কেমোথেরাপি বা রেডিওথেরাপি করা
• টার্নার সিনড্রোম
• অটো ইমিউন ডিজ অর্ডার- যেমন, থাইরয়েডের অসুখ, টাইপ ১ ডায়াবেটিস, ক্রোনস ডিজিজ
• মাম্পস, টিউবারকুলোসিস।
প্রশ্নঃ কী কী উপসর্গ দেখা দিতে পারে?
উত্তরঃ উপসর্গ স্বাভাবিক মেনোপজের মতই। যেমন
• হট ফ্ল্যাশ হওয়া। হঠাৎ করে কোনো কায়িক শ্রম ছাড়াই প্রচণ্ড গরম লাগা। মুখ থেকে শুরু করে এই অনুভূতি শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। ঘাম হয়। রাতে আচমকা ঘুম ভেঙে যায়।
• প্রস্রাবের সমস্যা যেমন বারবার টয়লেটে যাওয়া, ইউরিন ধরে রাখার ক্ষমতা কমে যাওয়া। ভ্যাজাইনাল ড্রাইনেসের পাশাপাশি মাঝে মধ্যেই ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন হওয়া।
• ভ্যাজাইনাল ড্রাইনেস
• ক্যালসিয়ামের অভাব থেকে হতে পারে অস্টিওপোরোসিস
• ইস্ট্রোজেন হরমোন লো ডেনসিটি লিপোপ্রোটিন বা এল ডি এল বা খারাপ কোলেস্টেরল দমিয়ে রেখে হার্টকে সুরক্ষিত রাখে। কিন্তু প্রিম্যাচিওর মেনোপজের পর ইস্ট্রোজেন কমে যাওয়ায় হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা বাড়ে।
• ইস্ট্রোজেনের অভাবে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। কমনীয়তা যায় কমে। দেখা দেয় বলিরেখা। চুল, নখো স্বাভাবিক সৌন্দর্য হারিয়ে ফেলে।
• বন্ধ্যাত্ব দেখা দেয়
• সবচেয়ে বড় যে সমস্যা দেখা দেয়, তাহল মানসিক সমস্যা। প্রিম্যাচিওর মেনোপজের পর মেয়েরা ভাবে, তাঁর জীবনের আর কোনও দাম নেই, সে মা হতে পারবে না, স্বামী তাঁর থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে। আর এসবের জন্য মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়, ঘনঘন মুড পরিবর্তন, আংক্সাইটি, ডিপ্রেশন ইত্যাদি নানারকম মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
প্রশ্নঃ সমস্যা নির্ণয়ের উপায় কী?
উত্তরঃ সমস্যা নির্ণয়ে সাধারণত ফলিকল স্টিমুলেটিং হরমোন বা এফএসএইচ টেস্ট, থাইরয়েড স্টিমুলেটিং হরমোন বা টিএসএইচ, ইস্ট্রাডয়েল প্রোল্যাকটিন লেভেল টেস্ট, আল্ট্রাসাউন্ড, ক্রোমোজোম আনালিসিস করা হয়।
প্রশ্নঃ প্রিম্যাচিওর ওভারিয়ান ফেলিওরের পর কি সন্তানধারণ সম্ভব?
উত্তরঃ ওভারির কার্যক্ষমতা কমে যাওয়ার জন্য প্রিম্যাচিওর ওভারিয়ান ফেলিওর হলে চিন্তার কোনো কারণ নেই। অত্যাধুনিক রিপ্রোডাকটিভ মেডিসিনের সাহায্যে সন্তানধারণ সম্ভব। এক্ষেত্রে ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন বা আইভিএফ সহ অন্যান্য পদ্ধতি প্রয়োগ করে ভাল ফল পাওয়া যায়। এমনকী ক্যানসারের চিকিৎসায় যদি ওভারির ক্ষতির আশঙ্কা থাকে এবং ওই মহিলা পরবর্তীকালে মা হতে চান তাহলে কেমোথেরাপি বা রেডিয়েশনের আগে তাঁর ডিম্বাণু সংগ্রহ করে ফ্রিজিং করে রাখা যায়। ওই ডিম্বাণুর সাহায্যে বায়োলজিক্যাল মা হতে পারে সেই মহিলা। তবে ওভারি ইউটেরাস বাদ চলে গেলে আর সন্তানধারণ সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে এইচ আর টি করানোই একমাত্র পথ।
প্রশ্নঃ কেন হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি বা এইচআরটি করা হয়?
উত্তরঃ মেয়েদের শরীরে ইস্ট্রোজেন হরমোনের অবদান সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ। পিরিয়ড শুরু হওয়ার পর ইউটেরাইন লাইনিং নিয়ন্ত্রণ থেকে শুরু করে বয়ঃসন্ধিতে স্তনের আকৃতির পরিবর্তন, খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমানো, রক্ত, লিভার, মস্তিষ্ক, হার্ট সুস্থ রাখতে সাহায্য করে এই হরমোন। এছাড়া হাড়েরও ক্ষয় রোধ করে। মেনোপজের পর ইস্ট্রোজেন না বেরলে নানারকম সমস্যা শুরু হয়। সেসবের হাত থেকে মুক্তির উপায় হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি। কখনও কখনও ইস্ট্রোজেনের সঙ্গে প্রোজেস্টেরন হরমোনও দিতে হয়।
প্রশ্নঃ সব মেয়েরই কি এইচআরটির প্রয়োজন হয়?
উত্তরঃ না। যাঁদের সমস্যা হয় তাঁদেরই এই চিকিৎসা দরকার। কারণ ইস্ট্রোজেন হরমোন মূলত ওভারি থেকে নিঃসৃত হলেও মেয়েদের কিছু ফ্যাটি টিস্যু এবং অ্যাড্রিনাল গ্ল্যান্ডও ইস্ট্রোজেন তৈরি করে। কাজেই যেসব মহিলার ফ্যাটি টিস্যু এবং অ্যাড্রিনাল গ্ল্যান্ড প্রিম্যাচিওর মেনোপজের পরেও ভালোভাবে কাজ করে তাঁদের কোনও সমস্যা হয় না। এইচআরটিরও প্রয়োজন হয় না। তবে প্রিম্যাচিওর মেনোপজের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময়েই এইচআরটির দরকার হয়।