বারাসাত সিটিজেনস ফোরামের ভবনে প্রতি বৃহস্পতিবার শ্রমজীবী স্বাস্থ্য উদ্যোগের মাধ্যমে চলমান স্বাস্থ্য শিবিরে আগত রোগীদের সঙ্গে স্বাস্থ্য সচেতনতা ও মেলবন্ধন গড়ে তুলতে একটি প্রশ্নমালাভিত্তিক সংলাপ চালানো হয়।
এই সংলাপ শুরু হয় ০৫/০১/২০১৯ থেকে। এপর্যন্ত মোট ৫৮ জন রোগীর সঙ্গে একজন একজন করে বিস্তারিতভাবে কথা বলা হয়। এই উদ্যোগের আরো একটি উদ্দেশ্য ছিল রোগীদের কাছে আমাদের সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গী তুলে ধরা এবং এই স্বাস্থ্য শিবির কোনো ধর্মীয় সংস্থা বা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলোর মতো নয় – এই বিষয়টিকেও সংলাপের মাধ্যমে স্পষ্ট করা।
এই সংলাপ থেকে রোগীদের যে সকল মন্তব্য ও মতামত ওঠে এসেছে সেগুলির একটি সংক্ষিপ্তরূপ এখানে দেওয়া হলঃ –
১. কম খরচে চিকিৎসা পাওয়া যায়।
২. ভীড় কম। বিশৃঙ্খলা নেই।
৩. সকলের ব্যবহার খুব ভাল।
৪. রোগের বিষয়ে বিস্তারিতভাবে জানতে চাওয়া হয়।
৫. ডাক্তারবাবুও ভাল। খুঁটিয়ে জিজ্ঞেস করেন। ভালভাবে দেখেন। আন্তরিক। কাউকে ধমক দিলেও সেটা ভালোর জন্যই করেন। উনার চিকিৎসায় উপকার পাচ্ছি।
৬. কম ওষুধেই কাজ হয়।
৭. প্যাথোলজিকাল পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকলে ভাল হয়।
৮. শিশুদের জন্য একজন ডাক্তার থাকলে ভাল হয়।
৯. এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের আরো উন্নতি হওয়া দরকার। এরজন্য সকলের কাছ থেকে একটু একটু করে চাঁদা তোলা দরকার।
১০. রোগীদের কাছে আমাদের সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গী তুলে ধরার পর এই উদ্যোগে তাঁরা স্বেচ্ছায় কিভাবে সহযোগিতা করতে পারেন একথা জানতে চাইলে অনেকেই বলেন (২০ জন) তাঁরা সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করতে ইচ্ছুক যেমন – শ্রমদান করে, নিজ এলাকায় এলাকায় এইরকম চিকিৎসাকেন্দ্র খোলার জন্য উদ্যোগ নেওয়ার ক্ষেত্রে, স্বাস্থ্য সচেতনতার শিবির ও আলোচনাচক্রে যোগদান ও সহযোগিতার ক্ষেত্রে ইত্যাদি।
১১. সরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থা সম্পর্কে প্রায় ৯৯% রোগীই অনাস্থা প্রকাশ করেছেন। তাঁদের মূল অভিযোগ – অব্যবস্থা। অনেক ভীড়, কোলাহল, অনেক সময় ব্যয় হওয়া, বেশীরভাগ চিকিৎসাকর্মীর অসহযোগিতা ও কর্কশ ব্যবহার, রোগীদের খুব কম সময়ের মধ্যেই দেখে ফেলা, রোগীর অসুস্থতা সংকটজনক হলে অনত্র নিয়ে যেতে বলা ইত্যাদি।
১২. যে সকল প্রশ্নের উত্তর কেউই দিতে পারেননিঃ –
১। যখন এত বছর ধরেও গরীবদের জন্য ঠিকমত চিকিৎসা ব্যবস্থা এতগুলো সরকার করল না তখন কবে কিভাবে এখনকার সরকারগুলো করতে পারবে?
২। সরকার যখন গরীবদের চিকিৎসা ঠিক মত করছেনা তাহলে এর সমাধান কিভাবে করা যায়?
আপাতত উপসংহার
এই সংলাপ প্রক্রিয়া রোগী এবং স্বাস্থ্য কেন্দ্রের পারস্পারিক সম্পর্ককে নিবিড় করার সুযোগ করে দিল। রোগীদের মধ্যে “স্বাস্থ্য আমার অধিকার” এই মৌলিক সচেতনতা গড়ে তোলার মতো এবং গণস্বাস্থ্য সম্পর্কে সামাজিক রাজনৈতিক অর্থনৈতিক চর্চার সুযোগকে আরো সহজভাবে সামনে এনে দিল। ৫৮ জনের মধ্যে ১৯ জন (১১.৬%) সক্রিয় সহযোগিতার জন্য এগিয়ে আসতে সম্মতি জানিয়েছেন। প্রাথমিক প্রচেষ্টা হিসেবে এই সংখ্যাটি (২০ জন) নেহাৎ কম নয় (১১.৬%) কারণ, এই উৎসাহী ১৯ জনের উপর ভিত্তি করে কমপক্ষে আরো দুইটি শিবির খোলার কাজ আমরা পার্শ্ববর্তী এলাকায় শুরু করে দিতেই পারি। আজ এ সুযোগ আমাদের কাছে উপস্থিত অর্থাৎ এলাকাগত একটা সমর্থনের ভিত্তি রচনা হয়েছে। এখন অন্যান্য পরিকাঠামোগত আয়োজন কেবল উদ্যোক্তাদের উপর নির্ভরশীল, করে নিতে পারলে নতুন শিবিরগুলো খুলে দেওয়া যায়।
শিবির খোলা ছাড়াও আমরা এই সংলাপের মাধ্যমে আগ্রহী রোগীদের এলাকায় মাসে মাসে স্বাস্থ্য-চর্চার সুযোগও আমরা পেলাম।
এইভাবে আমাদের স্বাস্থ্য উদ্যোগের পরিধি- বাড়িয়ে নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছি যার বাস্তবায়ন (execution) নির্ভর করছে উদ্যোক্তাদের উপর।
এই সংলাপ প্রক্রিয়াকে অব্যাহত রাখা দরকার। এর গুরুত্ব আছে।
এই সংলাপ প্রধানত চালিয়েছিলেন নীলকন্ঠ আচার্য, রিপোর্টটিও তাঁরই লেখা।