হে সম্মানীয় অগ্রজঅনুজ মুখপুস্তিকাতালিকাভুক্তঅভুক্তবান্ধববর্গ, তিনচতুর্থাংশ পক্ককেশীয় এই ভ্রাতা তাহার অভিজ্ঞতালব্ধ বিভিন্ন ঘটনাসমূহ অবলোকনপূর্বক বার্দ্ধক্যকালঘটিত কতিপয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিয়াছে। ঐসকল সিদ্ধান্ত নিম্নে লিখিত হইল।
ভ্রাতা লক্ষ্য করিয়াছে, তাহাদের যৌবনকাল হইতেই দম্পতিদিগের সন্তানসংখ্যা হঠাৎই সংকুচিত হইয়া এক অথবা দুইতে ঠেকিয়াছে। তাহার কুফল হইল, সেই সন্তানটির জীবনে সফল হইবার প্রয়াস দুগ্ধজীবন অন্তেই শুরু হইয়া যায়।
সফল পরিবার পরিকল্পনার কারণে এক্ষণে সমাজে বৃদ্ধ বৃদ্ধার সংখ্যা ঊর্দ্ধমুখী। তুলনায় তরুণ তরুণীর সংখ্যা ক্রমহ্রাসমান। প্রতি দুইজন তরুণতরুণীর স্কন্ধে চারিজন বৃদ্ধ বৃদ্ধার দায় সমর্পিত। তদুপরি নিজ সন্তান এবং পেশাগত বা প্রতিষ্ঠাগত প্রতিযোগিতার চাপ বিদ্যমান। তাহারা কোনদিকে যাইবে? বর্তমান লেখক একদা তাহার পিতৃদেবের সহিত কথোপকথনকালে শুনাইয়াছিল, “তোমাদের কত সুবিধে। পাঁচ সাত দশটা ছেলেপুলে। ল’ অফ অ্যাভারেজ সূত্রে তাদের মধ্যে একজন তোমাদের বিনা চেষ্টায় বিনা ইনভেস্টমেন্টে ঠিক অতিসফল হবে। রিটায়ারের পরে সে তোমার আর্থিক ওয়ারেন্টি আর যে টোটাল অসফল, তার তরফ থেকে পরিষেবাটাও ফিক্সড রইল। কী মজা! আমাদের ঐ সবেধনকেই ডাক্তার/ইঞ্জিনিয়ার/সিএ/সফল ব্যবসায়ী/বড় অফিসার, কিছু না কিছু হতেই হবে। তারওপর তার জীবনে বাপমা কতটা এন্ট্রি পাবে সেটা একমাত্র ভবিষ্যৎই জানে।”
বৃদ্ধ পিতা অর্থপূর্ণভাবে হাস্য মারফত অধম পুত্রের বক্তব্যে নীরব সম্মতি প্রদান করিয়াছিল কিনা তাহা গবেষণার বিষয়।
সুতরাং বার্দ্ধক্য নিকটবর্তী হইলে পুনরায় স্বাবলম্বী হইতে শিখুন। একাকীত্ব কি দ্বিকাকীত্ব উপভোগ করিতে শিখুন। যে যতই বিদ্রূপ করিতে থাকুক না কেন, নিজ বৃদ্ধাকে সঙ্গে লইয়াই নিজঘরে নিজ বিছানায় রাত্রিযাপন করুন। বৃদ্ধদিগের ক্লাব, গ্রুপ তৈয়ার করিয়া জনসংযোগের মধ্যে থাকিতে শিখুন। বৃদ্ধ রাজনৈতিক নেতাদের ন্যায় ফোকাসে থাকুন, ফেসবুক টুইটারের জগতে আলোকিত আলোচিত থাকুন। প্রফেশনাল হইলে যতটা সম্ভব নিজ পেশার ব্যস্ততা দীর্ঘায়িত করুন। অতীতে একসময় হয়তো নিজ নিকটস্থ আত্মীয়জনকে তাহার কঠিন সময়ে সাহায্যের হস্ত প্রসারিত করিতে কার্পণ্য করিয়াছেন, অথচ তিনি আপনাকে দূরে রাখেন নাই, সেইরকম মানুষজনের সহিত পুনরায় ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধি করিতে থাকুন। আর্থিক সাচ্ছল্য থাকিলে ঘন ঘন ভ্রমণ করিতে থাকুন। অতিরিক্ত পুঁজিকে মুক্তি দিন।
খামোখা নিজের অতিপ্রতিষ্ঠিত সন্তানসন্ততিদের বিব্রত করা হইতে বিরত থাকিতে শিখুন। দূরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত হইলেও বুঝিবেন দীর্ঘদিন ধরিয়া পাশে উপস্থিত থাকিতে তাহারা সততই অপারগ বর্তমান দুনিয়ায়। এই ভ্রাতা এইরূপ একটি ঘটনার সাক্ষী। পিতা চতুর্থ ধাপের কর্কটরোগাক্রান্ত, অতিসংকটজনক পরিস্থিতিতে পুত্র বিদেশ হইতে বাড়ি আসিয়াছে। এখন তাহার নির্দ্দিষ্ট সময়কালের মধ্যে সেই পিতৃদেব শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করিতে অনিচ্ছুক। ঘোর সংকট। পুত্র, চিকিৎসকের দর্শনপ্রার্থী ও সাহায্যপ্রার্থী হইয়া জানিতে ব্যাকুল, “আর কত দিন!”
জানিবেন, একাধিক সন্তান থাকিলে তাহাদের মধ্যে ত্রিকোণ চতুষ্কোন ইত্যাদি প্রকার দূরত্ব বজায় রাখিবার প্রতিযোগিতা চলে। সন্তান গর্দভ প্রকৃতির হইলে হয়তো বা আপনার শেষ জীবনে সান্নিধ্যের সুরাহা পাইলেও পাইতে পারেন এই প্রতিযোগিতাসর্বস্ব দুনিয়ায়। সেক্ষেত্রে আপনার স্বার্থান্বেষী বৃদ্ধ তকমা জুটিবে।
অতএব, সিনিয়র সিটিজেন মহোদয়গণ, নতুন দিনে নতুন ভাবনা ভাবিতে শিখুন আর বলিতে থাকুন, বার্দ্ধক্যের বারাণসী নহে, বার্দ্ধক্যের ব্যাঙ্কক।
ভাবনায় এবং উপস্থাপনায় ত্রুটি হইলে নিজগুণে ক্ষমা করিবেন।
……….
Disclaimer: Exception proves the rule.