টেনশন নেবেননা। লেখাটায় বেশি কচকচি নেই। ধৈর্য ধরে পড়লে আখেরে লাভ।
মে মাস জুড়ে করোনা আমাদের রাজ্যে কীভাবে প্রভাব বিস্তার করেছে, সেটা আজ অ্যানালিসিস করবো।
মে মাসের প্রথম তারিখে, নতুন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছিল 57.
মে মাসের শেষ তারিখে চব্বিশ ঘণ্টায় নতুন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা হল, 371.
এর মধ্যে, 27/5 পর্যন্ত, সংখ্যাটা 200র নীচে ছিল। 28/5 এর পর থেকে এটা গড়ে 300র বেশি চলছে।
প্রথম আর দ্বিতীয় গ্রাফটা দেখলেই বোঝা যাবে।
এদিকে, পয়লা মে, অ্যাক্টিভ কেস সংখ্যা ছিল 606, আর সুস্থ হয়ে বাড়ি গিয়েছিল 154জন।
সেটাই, মে মাসের শেষ দিনে দাঁড়ালো যথাক্রমে 3027 এবং 2157.
মে মাসের চার তারিখে, টোটাল করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছিল 1207, সেটা একমাস পরে 2/6 এ গিয়ে দাঁড়িয়েছে 6168. একমাসে পাঁচগুণ বৃদ্ধি।
আমাদের রাজ্যটায় হঠাৎ আধিক্যের কারণ হল পরিযায়ী শ্রমিকদের ফিরে আসা। যদিও সেটা অনস্বীকার্য। সবাই ফিরে আসার পরে দুসপ্তাহ কেটে গেলে হয়তো ঊর্দ্ধমুখী গ্রাফটা নামতে পারে। আর, যদি দফায় দফায় উপদ্রুত শহর থেকে ওরা আসতেই থাকে, তাহলে আরো কড়াকড়িভাবে কোয়ারেন্টাইন করতেই হবে।
সমগ্র ভারতের চিত্রটা একবার দেখা যাক।
মে মাসের শুরুতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছিল 40000 এর মতো। সেটা, আজ 3/6, 2 লাখ ছাড়িয়েছে। এই সময়ের মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছে এক লাখ+ মানুষ।
যেটা পরিষ্কার, তা হল, লকডাউন করেও আমরা ভাইরাসটাকে ভালোভাবে বেঁধে ফেলতে পারিনি। দেশের যিনি প্রধান, তিনি অবশ্য তৃপ্ত এই কারণে যে আমাদের মৃত্যুহার কম, অতএব, আমরা ভালো অবস্থায় আছি। মন কী বাত সেরকমই।
যেহেতু আমরা ভালো অবস্থায় আছি(!), অতএব, এটা পরিষ্কার যে, সরকার আর শুরুর দিকে যেসব স্টেপ নিয়েছিল, রোগটা বেঁধে রাখতে, সেই ফাঁসগুলো এখন আলগা করে দেবে বা দিচ্ছে।
আমরা, জনগণ তাহলে কী করবো? ভীড় বাস, ভীড় ট্রেনে উঠবো, যাবতীয় বিপদকে অগ্রাহ্য করে?
এটা, পরিষ্কার, বল এখন আমাদের কোর্টে। যেহেতু, পেটের ভাত জোটানো, টাকা পয়সা উপার্জন, সব চক্করই নিজের ঘাড়ে চাপতে চলেছে, অথচ, করোনা অসুর পাশে পাশেই থেকে যাবে, অতএব যে যার নিজে সাবধান হোন আরো বেশি। স্বাস্থ্যবিধিগুলো নিজেরাই বেশি বেশি মানুন, মানার চেষ্টা করুন। রাস্তায় মাস্কবিহীন দেখলে, পুলিশ আর কিছু নাও বলতে পারে।
অনেক কিছুই করা যায়। যা হবার, তা তো হবেই, তবুও যতটা সম্ভব।
শরীরে কুলোলে, যে পথ সাইকেলে অতিক্রম করা যায়, সেই পথে অটো টোটো নাইবা চাপলেন।
জানবেন, চিকিৎসা খরচ, ভীষণ বাড়ছে। কোলকাতাতেই একটা জায়গা থেকে আরেক জায়গায় রোগী ট্রান্সফার করতে আমার এক নিকটজন অ্যাম্বুলেন্সের ড্রাইভার ও একজন সহকারীকে পুরো পিপিই কিট কিনে দিতে বাধ্য হয়েছে।
পাঁচদিন সাধারণ জ্বর হয়ে অসুস্থ হওয়ার খেসারত গেছে দুলাখ টাকা, কোলকাতার এক নার্সিংহোমে।
মফস্বলের শহরগুলোতে স্বল্পবাজেটে যেসকল চিকিৎসাকেন্দ্রগুলো আছে, তাদের একটা সুবিধা দেওয়া এখুনি, আশু কর্তব্য।
আমি খোঁজ করেছিলাম, সাধারণ নার্সিংহোমে কোন অপারেশন করতে হলে, যদি দুদিন আগে রোগীর কোভিড টেস্টটা করানো যেতো!
পূর্ব মেদিনীপুরের যিনি চিফ স্বাস্থ্য আধিকারিক, তিনি বললেন, তুমি বেসরকারি ল্যাবের সাথে কথা বলে দেখো। সরকারিভাবে এই সুবিধা নিয়ে এখনো কোন গাইডলাইন আসেনি।
বেসরকারি ল্যাবের বক্তব্য হচ্ছে, রোগীকে আইসোলেশনে আগে ভর্তি রাখতে হবে। তারপর ওরা এসে টেস্ট স্যাম্পল নিয়ে যাবে। রিপোর্ট নেগেটিভ এলে, নো প্রবলেম। রোগীকে ঘরে রেখে অ্যাডভাইস করা যাবেনা প্রিঅপারেটিভ। ওরা করবেনা, খরচা দিলেও। গাইডলাইন নেই।
কিন্তু, এখন ভর্তি রেখে, তারপর পজিটিভ এলে, পুরো পাঁকে পড়ে যাবো। এমনিতেই, আইসোলেশন ওয়ার্ড চালাবার মতো পরিকাঠামো বা ম্যানপাওয়ার জোটানোই বিরাট সমস্যা। সেটা আবার যখন তখন সীলড হয়ে যেতে পারে।
এত খরচের দায় বহন করা দুঃসাধ্য।
এতদিন, আমাদের, লোকজন অনেকেই যা পারতো, দিয়ে চলে যেতো ছুটির সময়।
এখন, এই বিভীষণ চাপ!
যাই কোথায়?
আমি, আমার চেম্বারে আসতে ইচ্ছুক রোগীদের বলে দিয়েছি, মাস্ক পরে আসবে, স্যানিটাইজার নিয়ে আসবে, ভালো করে হাত ধুয়ে নেবে, পেতে শোওয়ার জন্য (যাদের দরকার) চাদর আনবে, দূরত্ব রেখে চলবে। আর, সারাদিন কাজকর্ম করে, বাড়ি ফিরে আসবার পরে ফ্রেশ হয়ে গেলে আর সার্ভিস দেওয়া প্রায় অসম্ভব।
তাই বলি, হে মানুষ, নিজেরাই সচেতন হয়ে এই রোগকে যদি বেঁধে রাখতে না পেরেছো, তাহলে অকালে সবকিছু পাল্টে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত থেকো।
একটা জিনিস লক্ষ্য করলাম। পিপিই পরা এবং খুলে রাখাকে ইংরেজিতে বলে Donning & Doffing. এই জিনিস প্রথম এসেছিলো ই বোলা আক্রমণের সময়। ইউ টিউবে যে টিউটোরিয়ালটা আছে, সেটা 2016 সালের। তার মানে, চীনে যখন করোনা ছড়াচ্ছে, তখনই আমরা, আমাদের দেশের সরকার, এই পিপিই প্রস্তুত করা (যেটা ক্ষুদ্রশিল্পের মাধ্যমে সহজেই করা যায়, মায় অন্য ইকুইপমেন্টগুলোও) বা স্বাস্থ্যকর্মীদের পর্যাপ্ত ট্রেনিং দিয়েই রাখতে পারতো। উহান থেকে যখন ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে আসা হচ্ছিল, তখনই দেখা গেছে পিপিই পরিহিত লোকজন তাদের থার্মাল টেস্ট করছে। তার মানে বিষয়টা তাদের অজানা ছিলনা।
পরিবর্তে, ক্রাইসিসের সময় একশ্রেণীর ব্যবসায়ী, এইসব জিনিস চীন থেকে এনে মুনাফা করে ফেললো।