শিকারের জন্য মেরুদণ্ড টান করে, নিঃশব্দে ওৎ পেতে থাকা বাঘ দেখেছেন তো? করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ এখন সেইভাবেই অপেক্ষা করছে বেপরোয়া মানুষের ঘাড়ে লাফিয়ে পড়বে বলে।
সুতরাং, মাস্ক ব্যবহার করতে যদি অনীহা থাকে, সামাজিক পরিমণ্ডলে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে যদি নারাজ হয় মন, যদি প্রবল উৎসাহে ঝাঁপিয়ে পড়তে ইচ্ছে হয় চৈত্র সেলের বাজারে, তবে করোনা সঙ্কটের মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত থাকুন।
রাজনীতির হেভিওয়েটরা হয়ত মুখাবরণের ধার ধারছেন না, তাই বলে আপনিও যদি না ধারেন, তবে প্রস্তুত থাকুন মারীর সঙ্গে লড়তে।
যদি উটের বালিতে মুখ গোঁজার মতো অচেতনতায় ডুবে থেকে ভাবেন, ‘আমার তো একবার কোভিড হয়ে গিয়েছে — তবে আর ভয় কি?’, তাহলে প্রস্তুত থাকুন দ্বিতীয়বার মারণ ভাইরাসের সঙ্গে যুদ্ধের জন্য।
আর যদি আরো কিছুদিন ভালভাবে নির্ঝঞ্ঝাটে কাটাতে চান এই দুনিয়ায়, সাবধান হোন।
অপযুক্তি আর কুতর্কের বেনোজলে না ভেসে, যখনই সম্ভবপর হচ্ছে, ভ্যাকসিন নিন। ‘আমার অ্যালার্জি আছে, ভ্যাকসিন নিলে ক্ষতি হবে’ বা ‘বয়স্ক মানুষ ভ্যাক্সিনের অভিঘাত সহ্য না-ও করে উঠতে পারেন’ জাতীয় যুক্তিহীন অজুহাতের সময় এখন নয়। জেনে রাখুন, যে কোনো অপারেশন, সে অ্যাপেন্ডিসেকটমি হোক বা হার্ট ট্রান্সপ্লান্ট, একেবারে ঝুঁকিহীন নয়। তাই বলে প্রয়োজন পড়লে না করিয়ে বাড়িতে বসে থাকেন কি কেউ? পথে বেরোলে দুর্ঘটনার ভয় থাকে — সেই ভেবে কি মানুষ গৃহবন্দী থাকে?
আর হ্যাঁ, কোভিশিল্ড না কোভ্যাকসিন, এই গূঢ় বিচারে যাবার সময়ও এখন আর নেই। একটা কথা ভালভাবে বুঝে নিন, আমরা কেউই কিন্তু সম্পূর্ণভাবে জানি না কোন ভ্যাক্সিনের কতখানি কার্যকারিতা রয়েছে। যত দিন যাবে, antibody titre নির্ধারণের মাধ্যমে আমরা জানতে পারব, কার কার্যক্ষমতা কতটুকু। তার আগে, ‘জনগণকে গিনিপিগ বানানো হচ্ছে, এই তো ইউরোপের কিছু দেশ অ্যাস্ট্রোজেনেকার তৈরি ভ্যাকসিন পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ার ভয়ে বন্ধ করেছে, আমরা কেন নেবো’ — এইসব বলে চায়ের কাপে তুফান তুলবেন না। মনে রাখবেন, অতিমারী কোনো ‘চয়েস’ রাখেনি আমাদের জন্য। আপনার অসচেতনতার মাশুল যেন অন্য কাউকে দিতে না হয়।
আর সবশেষে এই ফেসবুকে আমার বহু বিদগ্ধ নেটিজেন বন্ধুবান্ধবদের মাধ্যমে সংবাদ মাধ্যম এবং রাজনৈতিক নেতা কর্মীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, আপনারা কিন্তু বহু মানুষের কাছে দৃষ্টান্তস্বরূপ। অতএব, আপনি আচরি ধর্ম, পরকে শিখাও মন্ত্র নিয়ে আপনারাও মাস্ক পরে সঞ্চালনা করুন, খবর পড়ুন, প্রচারে যান। অতিমারী গণতন্ত্র মানে না, নির্বাচনকে গ্রাহ্য করে না, চূড়ান্ত স্বৈরাচারীর মতো দখল করে সাধারণ মানুষের প্রাণ।
প্লিজ!
আরো একবার লকডাউন আর তালাবন্দি অর্থনীতি যদি না দেখতে চান, দলমতধর্ম নির্বিশেষে সাবধান হোন। কোভিড বিধি মানুন। এই বল্গাহীন আমোদ আহ্লাদের উদযাপনের ওপারেই সেই হিংস্র ভাইরাস কিন্তু অপেক্ষা করছে তার অনন্ত তৃষ্ণা নিয়ে।
আসুন, আরো একবার সবাই মিলে হারিয়ে দিই তাকে।
ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।