ডিহি শ্রীরামপুর রোডটা যে আমাদের কলেজের সামনে দিয়ে চলে গিয়েছে, সেটা জেনে অবাক হয়েছিলাম প্রথমে। আসলে ডিহি শব্দটা আষ্ঠেপৃষ্ঠে জুড়ে রয়েছে পুরনো কলকাতার সাথে। যেমন ডিহি কলকাতা বা ডিহি পঞ্চান্ন গ্রাম। সেই সময় ডিহি শব্দটা ব্যবহার করা হতো গ্রাম অথবা মৌজার সমষ্টি বোঝাতে।
এই ডিহি শ্রীরামপুরের অন্তর্ভুক্ত ছিল চৌবাগা,সাঁপগাছি,বন্ডেল অথবা যেখানে আমার বসতবাড়ি সেই বেদিয়াডাঙ্গাও। আর সেখান থেকে ডিহি শ্রীরামপুর রোড চলে যেত আজকের পার্ক সার্কাস, ইন্টালি,বেলেঘাটা হয়ে আরও উত্তরে। কলেজে পড়াকালীন যা ছিল আমার দৈনন্দিন যাতায়াতের রাস্তা।
পার্ক সার্কাস পেরিয়ে সেখানে এসে জুড়তো গোরাচাঁদ রোড। যে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছে আমাদের ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ আর হাসপাতাল।
১৭৫৮ সালে ইংরেজদের, মীরজাফরের কাছ থেকে কিনে নেওয়া সেই ডিহি পঞ্চান্ন গ্রামের ইতিহাসের সঙ্গে জুড়ে যেতে পেরে বেশ রোমাঞ্চ হলো মনে।
এসব কথা ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকে। শুধু জানতে পারা যায় পুরনো লেখা নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি শুরু করলে।
আসলে আচমকাই প্রয়োজন পড়লো এসবের।
কলেজে আমাদের ব্যাচের তত্ত্বাবধানে বার্ষিক রি ইউনিয়ন আসন্ন। আগামী ফেব্রুয়ারিতে, সেই উৎসবকে কেন্দ্র করে অত্যন্ত উত্তেজিত ক্লাসের আপামর জনতা।
তাই আমরা, আধবুড়ো ছেলেমেয়েরা, যৌবনের ক্লাসমেটদের সাথে আবার এসে বসে পড়েছি কলেজের লেকচার থিয়েটার গুলিতে। পুনর্মিলন উৎসবকে উদ্দেশ্য করে এখনই শুরু হয়ে গিয়েছে প্রস্তুতি।
সাধারণত বছরভর বিভিন্ন ধরনের সায়েন্টিফিক সেমিনার এবং মিটিং চলতে থাকে রিউনিয়নের ভূমিকা হিসাবে। বিতর্কসভা থেকে নাচ,গান,নাটক এবং অন্যান্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে, ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে তিন দিনের জন্য সংঘটিত হয় পুনর্মিলন উৎসব।
অনুষ্ঠান সমাপ্তির ঠিক পরের দিন রিলে রেসের ব্যাটন বদলে যায় । পরের ব্যাচের হাতে চলে যায় পরবর্তী রিইউনিয়নের ব্যবস্থাপনা। এই পরম্পরা আবহমান।
তাই শুরু হয়ে গিয়েছে সলতে পাকানো। প্রস্তুত হচ্ছে সম্ভাব্য খরচাপাতি র হিসাবকিতাব। সাজানো শুরু হয়েছে অনুষ্ঠান সূচী। সব মিলিয়ে দুর্গাপুজোর ঢাকে কাঠি পড়ার অবস্থা।
আবার ফিরে যাই পুরনো দিনের কথায়।
১৯২০ সালে মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে রাউলাট অ্যাক্ট এবং জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকান্ডের বিরুদ্ধে সারা ভারত জুড়ে শুরু হয়েছে অসহযোগ আন্দোলন। সরকার পরিচালিত আদালত, আইনসভা, স্কুল কলেজ থেকে শুরু করে ব্রিটিশ সামগ্রী পর্যন্ত বর্জন করা চলেছে সমানতালে। দেশে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে এই সর্বব্যাপী বয়কট।
শিক্ষাক্ষেত্রে স্বদেশী ভাবনার ফলশ্রুতিতে প্রচেষ্টা আরম্ভ হয় জাতীয় শিক্ষানীতি প্রস্তুত করার। বিভিন্ন স্বদেশী কলেজ স্থাপনা শুরু হয় দেশীয় মানুষের অর্থনৈতিক সহায়তায় তৈরি ‘তিলক স্বরাজ ফান্ড’ থেকে। কলকাতায় ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয় যাদবপুর টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের (পরবর্তীকালে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়)।
সেই সময় কলকাতায় সরকারি ডাক্তারি শিক্ষায়তন তিনটি। কলেজ স্ট্রিটের মেডিক্যাল, শিয়ালদহের ক্যাম্পবেল, আর খালপাড়ের কারমাইকেল মেডিক্যাল কলেজ।
১৯২১ সালের ১৪ ই এপ্রিল (১৩৯৮ বঙ্গাব্দের পয়লা বৈশাখ), ১১ নম্বর ওয়েলিংটন স্কোয়ারে যাত্রা শুরু করে জাতীয় আয়ুর্বিজ্ঞান বিদ্যালয় (ন্যাশনাল মেডিক্যাল ইনস্টিটিউট)। স্বদেশে’র ডাকে মেডিক্যাল কলেজগুলি থেকে পঠন পাঠন ছেড়ে বেরিয়ে আসা পড়ুয়াদের ডাক্তারি পড়াশোনার নিমিত্তে।
(ক্রমশ)