রাস্তায় আপনি কতটা নিরাপদ?
নতুন জরিমানা-আইন কি আদৌ দুর্ঘটনায় রাশ টানতে পারবে?
২০১৬-র জুলাই মাসে তৈরি হওয়া ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইভ’ স্লোগানটি পথ দুর্ঘটনা প্রতিরোধে মহৌষধির কাজ করছে– স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী নবান্নে বসে এহেন অনুভূতি ব্যক্ত করায়, তাঁর পারিষদবর্গ পরিসংখ্যান পকেটে করে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েছিলেন আর বলে চলেছিলেন: রাজ্যে দুর্ঘটনা কমছে, শহরে দু্র্ঘটনা কমছে। এই তো ক’বছর আগের কথা৷ পথ নিরাপত্তা সপ্তাহের তোড়জোড় চলছে তখন। আর, তার ঠিক পরে পরেই ঘটে গেল দৌলতাবাদ ও চিংড়িঘাটা।
আসলে পরিসংখ্যান ব্যাপারটা বড় গোলমেলে। অনেকটা রিসোল-করা টায়ারের মতো। যতক্ষণ পর্যন্ত দুর্ঘটনা না ঘটছে, ততক্ষণ পর্যন্ত ‘সেফ’। যেমন, বাম আমলের পরিসংখ্যান ছিল: দেশের বড়-বড় শহরগুলোর মধ্যে কলকাতায় দুর্ঘটনা সবচেয়ে কম। কিন্তু কী ভাবে? সন্তোষপুরে ব্রিজের উপর থেকে মিনিবাস উল্টে গিয়ে নীচে পড়ছে। ভিআইপি রোডের মুখে রেষারেষি করতে গিয়ে যাত্রী-সমেত বাস নয়ানজুলিতে উল্টে পড়ছে। বেপরোয়া বাসের সৌজন্যে যাত্রীর হাত কেটে গিয়ে এক বাস থেকে আরেক বাসে গিযে পড়েছে। তবু ‘দুর্ঘটনা সবচেয়ে কম’!
আসলে তখন কলকাতা বলতে আক্ষরিক অর্থেই টালা থেকে টালিগঞ্জ বোঝাত। যাদবপুর, বেহালা, কসবা, তিলজলা, রিজেন্ট পার্কস-অ-ব কলকাতা পুলিশ এলাকার বাইরে। অতএব…৷
পরিসংখ্যানের মজা এখানেই শেষ নয়। কলকাতা পুলিশের ‘অ্যানুয়াল রিভিয়ু বুলেটিন ২০০৫’ থেকে জানা যায়: সে বছরে দুর্ঘটনার সংখ্যা তার আগের বছরের তুলনায় কমে গিয়েছিল। কিন্তু এই পরিসংখ্যানের একটু ভেতরে ঢুকলে গল্পটা পুরো পাল্টে যায়: তার আগের বছর ২০০৪-এ যেখানে ১০৯৯টি দুর্ঘটনা ঘটেছে, সেখানে মৃতের সংখ্যা ছিল ৪২০। আর, ২০০৫-এ যেখানে দুর্ঘটনার সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ১০৩৯-তে, সেখানে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়ে গিয়েছে ৪৮৩। এখানেই পরিসংখ্যানের ফাঁক আর ফাঁকি। আধাআধি বললে ‘আচ্ছে দিন’ এসে যায়, পুরোপুরি বললে ‘মন্দা’র ছবি চোখে পড়ে স্পষ্ট।
এই যেমন, গত দু’বছর ধরে পরিসংখ্যান দিয়ে কলকাতা পুলিশ দাবি করে আসছে: দুর্ঘটনা কমছে৷ অথচ, নিত্যদিনের অভিজ্ঞতা, অনুভূতি, সম্পূর্ণ অন্য কথা বলছে৷ বিষয়টা যেন অনেকটা সেই কোভিড পরিসংখ্যানের মতো৷ কখন কোন ঢেউ কীভাবে আছড়ে পড়বে, তাতে করে নতুন করে সংক্রামিতের সংখ্যা কতটা ‘কমবে’ অথচ প্যারাডক্সিক্যালি মৃতের সংখ্যা কতটা ‘বাড়বে’…৷ পরিসংখ্যান ব্যাপারটাই এমন জটিল৷ ‘ঘোর বাস্তব’ এর সঙ্গে এর দূরত্ব বহু যোজন৷
মনে আছে, বছরের গোড়ায় তখন ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ’ নিয়ে মাতামাতি শুরু হযেছে৷ ‘পথ নিরাপত্তা সপ্তাহ’-এর পৌষকালীন পার্বণ শুরু হয়েছে৷ চারদিকে একেবারে রোড সেফটি লোকারণ্য মহাধূমধাম৷ তখন কলকাতার কলকাতার পুলিশ কমিশনার বলে বসলেন: কলকাতায় দুর্ঘটনা কমেছে ২৫ শতাংশ। রাজ্য পুলিসের কর্তারাও পরিসংখ্যানের ঝাঁপি উপুড় করে দিয়ে বললেন: রাজ্যজুড়ে দুর্ঘটনা ক্রমহাসমান, ক্রমক্ষীয়মান, ক্রমবিলীয়মান…। আর, তার ঠিক পরেই ঘটল দৌলতাবাদ ও চিংড়িঘাটা।
একই সঙ্গে বলে রাখা দরকার, এই দুই দুর্ঘটনা হিমশৈলের চূড়ামাত্র। রাজ্যজুড়ে প্রতিদিন একাধিক দুর্ঘটনা ঘটে চলছিল এবং এখনও ঘটে চলেছে। অন্নপ্রাশনের দিন মা-বাবার কোলে চেপে বেরিয়ে গাড়ির চাকায় থেঁতলে যাওয়া শিশু বা ঘিলু বেরিয়ে-যাওয়া পথচারী বা ধড়-মুণ্ডু বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওযা বৃদ্ধ বা অষ্টমঙ্গলার দিন শ্বশুরবাড়িতে যাওয়ার পথে মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় লাশকাটা ঘরে সদ্য বিবাহিতের দেহ– প্রতিদিনের ছবি হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজ্যে, শহরে, মফস্বলে, গ্রামে। অথচ, ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইভ’কে মহিমান্বিত করতে গিয়ে রাজ্যের আমলা, পুলিশ কর্তারা পরিসংখ্যান জুটিয়ে আত্মসন্তুষ্টিতে ভুগতে লাগলেন, আর দুর্ঘটনার জন্য পথচারীকে ‘সহজ নিশানা’ বানিয়ে ফেললেন।
কীরকম? যেখানে সেতু থেকে বাস উল্টে গিয়ে নদীতে পড়ছে সেখানেও পথচারীর দোষ! যেখানে সাইকেল আরোহীকে বেপরোয়া বাস চাপা দিয়ে মারছে, সেখানেও পথচারীর দোষ! সবকিছুতেই ‘কেষ্ট বেটাই চোর’ ৷
‘মিথ্যারও মহত্ত্ব আছে’৷
প্রশাসনের ভাষ্যকে কাকের নিয়ে যাওয়া কান মনে করে তার পিছন-পিছন ক্যামেরা নিযে ছুটল মিডিয়ার একাংশ। চ্যানেলে-চ্যানেলে চরণচিহ্ন দিয়ে শুরু হল পথচারীর বাপ-বাপান্ত৷ রাস্তায় ক্যামেরা নিয়ে বেরিয়ে পথচারীকে শিক্ষা দিতে নামল টিভি চ্যানেলগুলো৷ পথচারীদের ‘শিক্ষা’ দিতে কেউ-কেউ তো অতি উৎসাহী হয়ে তাদের ওই সেগমেন্টের নামই দিয়ে ফেলল: ‘পথের কাঁটা’৷
মনে আছে, এমনই এক দিন, এক্সাইডের মোডে, একেবারে ট্র্যাফিক গার্ডের অফিসের সামনেই যথারীতি জেব্রা ক্রসিং-এর ওপরেই দাঁড়িয়ে রয়েছে গাড়িগুলো৷ আর, ঝুঁকি নিয়ে ‘গাড়িঘোড়া’-র মাঝখান দিয়ে রাস্তা পার হতে হচ্ছে পথচারীদের৷ তা, অভ্যেস মতো, এক পুলিশকর্মীকে জিজ্ঞেস করলাম: সব জায়গায় তো পথচারীদের দায়ী করা হয়, কিন্তু আমরা কীভাবে নিরাপদে রাস্তা পার হবো বলুন তো? আমার অভিযোগকে একপ্রকার স্বীকৃতি দিয়েই উত্তর এল: এখানে কিচ্ছু হবে না৷ কিচ্ছু করা যাবে না৷ দেখুন,একটা ফুটব্রিজ করে দিলেই কিন্তু সমস্যার সমাধান হয়৷ কিন্তু কে ভাবতে যাবে এত?
অথচ, মিডিয়া চাইলেই এই সমস্যাগুলো তুলে ধরতে পারে৷ আর তাহলে যথাযথ পদক্ষেপও নিতে পারে পুলিশ-প্রশাসন৷ কিন্তু…৷
ওই এক্সাইড মোডেই এরপর একটি সাইনবোর্ডজাতীয় কিছু ঝুলিয়ে দিল পুলিশ: জেব্রা ক্রসিংয়ের ওপর গাড়ি রাখবেন না, … পথচারীদের যাওয়ার জন্য৷ কিন্তু তাতে কী? পুলিশ পর্যন্ত এই সমস্যার কথা স্বীকার করে নিলেও, মিডিয়া কিন্তু তার অবস্থান থেকে কার্যত নড়লো না৷ ওই, ‘কেষ্ট বেটাই চোর’৷
অথচ, ওই দৌলতাবাদ আর চিংড়িঘাটার ঠিক আগেই আরও একটি ভয়াবহ পরিসংখ্যান আমাদের হাতে এসে গিয়েছিল। কিন্তু কেউ সতর্ক হয়নি। হলে হয়ত-বা আটকানো যেত…।
সেই বছরের গোড়ায় কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রকের পরিসংখ্যানটি জানিযে দিয়েছিল: এ-দেশে দু্র্ঘটনার প্রথম সারিতে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ।
দেখা যাক কী বলছে এই পরিসংখ্যান। গড়ে প্রতি ঘণ্টায় এ দেশে পথ দুর্ঘটনায় ১৭ জনের মৃত্যু হয়। ২০১৬-তে গোটা দেশে ৪ লক্ষ ৮০ হাজারের বেশি পথ দুর্ঘটনা ঘটেছে। অর্থাৎ ঘণ্টায় দুর্ঘটনার সংখ্যা ৫৫টি। ২০১৬ সালে দেশে দেড় লাখেরও বেশি মানুষ (১,৫০,৭৮৫ জন) দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন। আহত আরও কয়েক লাখ মানুষ। যাঁদের অনেককেই বাকি জীবনটা পঙ্গু অবস্থায নরক যাপন করতে হচ্ছে। আর, দেশে মোট দুর্ঘটনার ৮৬ শতাংশই ঘটছে ১৩টি রাজ্যে। এই ১৩-র মধ্যে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। চমকের এখনও অনেক কিছু বাকি আছে। দেশে যে সব শহরে জনসংখ্যা ১০ লাখের বেশি, সেই সব শহরের মধ্যে যে-পাঁচটি শহরে দুর্ঘটনা সবচেয়ে বেশি, তার মধ্যে রয়েছে কলকাতা!
ঠিক এমন সময়ে, রাজ্য প্রশাসনের ঝুলি খেকেও বেরিয়ে পড়ল এমনই এক বেড়াল, যা জাতীয় পরিসংখ্যানকেই সমর্থন করে: পথচারীর মৃত্যুতে দেশে এক নম্বরে রয়েছে কলকাতা।
অবশ্য এহেন বেড়াল বেরিয়ে যাওয়ার পেছনে রয়েছে অন্য এক গল্প। তার আগের বছর, নভেম্বর-ডিসেম্বর মাস নাগাদ একের-পর-এক দু্র্ঘটনা ঘটছিল কলকাতায়। গড়িয়াহাটে ফুটপাথের ওপর বাস উঠে পড়ে ধাক্কা মারল। মিলেনিয়াম পার্কে ফুটপাতে দাঁড়িয়ে-থাকা পথচারীকে ধাক্কা মেরে দুটো-পা পিষে দিল। আর তখনই, “বেপরোয়া পথচারী” কে শিক্ষা দেওয়ার কনটেক্সে জানা গেল, দেশের মধ্যে কলকাতায় পথচারীর মৃত্যু সবচেয়ে বেশি। আর সেই কারণেই নাকি, ড্রপ গেট বসানো হবে স্ট্র্যান্ড রোডে ও বিভিন্ন জায়গায় (যদিও বোঝা গেল না, ফুটপাথে দাঁড়িয়ে-থাকা নিয়মনিষ্ঠ পথচারীকেও যদি রেষারেষি-করা বাস পিষে দেয় আর সে জন্য দুটো পা বাদ যায় তাঁর, তাহলে পথচারীর দোষে কী ভাবে দুর্ঘটনা ঘটছে)।
পথচারীর রাস্তা পার হওয়ার গল্পে পরে আসব। জেব্রা ক্রসিং দিয়ে আদৌ নিরাপদে রাস্তা পার হওয়া যায় কিনা বা আদ্যোপান্ত মিসগাইডিং সিগনাল ব্যবস্থা কী ভাবে একই সঙ্গে পথচারীকে বলে রাস্তা পার হতে বলে আর গাড়িকেও বলে এগিয়ে যেতে, সে এক বিস্তারিত আলোচনা। আপাতত বক্তব্য একটাই, যে রাজ্যে প্রতিদিন, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটে চলেছে, সেখানে, আর যাই হোক, গত একবছরের পরিসংখ্যান দেখিয়ে অন্তত প্রমাণ করা যায় না ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ’ স্লোগান যথেষ্ট কাজে দিচ্ছে। সত্যি কথা বলতে কী, স্লোগান যত তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে, দুর্ঘটনাও তত বেড়ে চলেছে- প্যারাডক্স এখানেই।
“সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ” এই দু’বছরে কতটা সফল, সে প্রসঙ্গে আসতে গেলে একবার জেনে নেওয়া দরকার, কোন পরিস্থিতিতে তৈরি হল এই স্লোগান?
‘জুতো আবিষ্কার’-এর সহজ বুদ্ধি বলে, রেষারেষি করা বাসকে বাইকে করে ধাওয়া করে ধরবে ট্র্যাফিক সার্জেন্ট। প্রয়োজনে ওয়াকিটকিতে সামনের সিগন্যালে বাস দুটোকে আটকাতে বলবে। আর, একমাত্র তা হলেই রেষারেষি কমবে। বাইকের সামনে নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িযে থেকে, এক পা এগিযে বা দু’পা পিছিয়ে দাঁড়ানোর জন্য বাসগুলোকে জরিমানা করে গেলে, রেষারেষি কোনও দিনই কমানো যাবে না। এমনকী, জরিমানার অঙ্ক একশো গুণ বাড়ালেও নয়। কিন্তু এই স্বাভাবিক কাজটি পুলিশ করে না। আর তার বড় প্রমাণ হল, ২০০৭-এ, ঢাকুরিয়ার মোড়ে রেষারেষি করা দুটো বাসকে ধাওয়া করে থামিয়েছিলেন এক ট্যাফিক সার্জেন্ট। আর তা পরের দিন খবরের কাগজে বড় করে খবর হয়েছিল, বিরল ব্যতিক্রমী ঘটনা হিসেবে। এর ১১ বছর পর, বিজন সেতুর কাছে শুভঙ্কর সরকার নামে জনৈক ট্র্যাফিক সার্জেন্ট একটি বেপরোয়া বাসকে ধাওয়া করে ধরেছিলেন৷ এর বাইরে পুলিশের ভূমিকা কী? দলে-দঙ্গলে দাঁড়িয়ে রয়েছে বিশাল পুলিশ বাহিনী৷ আর তার সামনে দিয়েই চলছে রেষারেষি৷ এবং একই সঙ্গে ঝুঁকির পারাপার৷
এবার আসি রাস্তা পার হওয়ার প্রসঙ্গে। প্রথমেই বলে নেওয়া ভাল, এখানে জেব্রা ক্রসিংয়ের চেয়ে বড় মিথ তথা মিথ্যে আর কিছুই হয় না। বিশ্বের যে কোনও জায়গায়, জেব্রা ক্রসিংয়ে পথচারী পা-ফেলা মাত্র, দূর থেকে আসা গাড়ি গতি কমিয়ে দিয়ে পথচারীকে পার হতে দেয়। এখানে সেই নিয়মটি মানা তো দূরের কথা, জানা পর্যন্ত আছে ক’জনের সন্দেহ। তাই দেখা যায়, জেব্রা ক্রসিংয়ের ওপরেই সার দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে গাড়ি, আর পথচারীকে গাড়িঘোড়ার মাঝখান দিয়েই প্রাণ হাত করে রাস্তা পার হতে হয়: এই বুঝি ছেড়ে দিল গাড়িগুলো। এই অবস্থায় দৌড়ে পার হলে তা নিয়ম-বিরুদ্ধ। আর দৌড়ে পার না-হলে তা জীবন-বিরুদ্ধ। অথচ ফি-বছর ‘পথ নিরাপত্তা সপ্তাহ’তে কতই-না স্লোগান তৈরি হয় এই জেব্রা ক্রসিংকে ঘিরে। জেব্রার উপর দিয়ে রাস্তা পার হওয়া বিটলসদের ছবি দেখিয়ে বলা হয়, ‘ইফ দে ক্যান, হোয়াই কান্ট উই’। অথবা: ‘রাস্তার অ্যালZEBRA’…। কত সব স্লোগান আর জ্ঞানগর্ভ বাণী। এমনকী, জেব্রা দিয়ে পার না-হলে হাজতবাসের হুমকি দিয়ে হোর্ডিং পর্যন্ত।
অথচ, রাস্তায় বিশাল পুলিশ বাহিনী গাড়িগুলোকে স্টপ লাইনের মধ্যে দাঁড় করানোর সামান্য কাজটুকুও করে উঠতে পারে না। মনে আছে, মৌলালির মোড়ে একবার এক ট্যাফিক সার্জেন্টকে অনুরোধের সুরে বলেছিলাম: জেব্রার উপরেই দাঁড়িয়ে আছে গাড়িগুলো, একটু সরিয়ে দিন, তা হলে পার হতে পারি। প্রত্যুত্তরে, ওই সার্জেন্ট কলকাতা পুলিসের একটা ছাপানো পোস্টকার্ড এগিয়ে দিয়ে বলেন: অভিযোগ লিখে পোস্ট করে দেবেন লালবাজারে…!
এবার আসি সিগন্যাল প্রসঙ্গে। বেশিরভাগ সিগন্যালই পুরোপুরি ধন্দে ফেলে দেয় পথচারীদের। একইসঙ্গে পথচারীর জন্য সিগনাল সবুজ, অন্যদিকে বাঁদিক-ডানদিক দিযে যাওয়ার জন্য গাড়ির জন্য সিগনালও সবুজ। যে-কারণে দেখবেন, চিংড়িঘাটায় দুর্ঘটনার পর, সিগনাল ব্যবস্থা ঢেলে সাজার সময়ে, সবক’টা সিগন্যাল একসঙ্গে লাল করার ব্যবস্থা হয়েছিল। অর্থাৎ, পথচারী যখন সবুজ সিগন্যাল দেখবেন, তখন গাড়ির জন্য কোনও সিগন্যালই খোলা থাকবে না। এ ছাড়া সিগন্যাল নিয়ে আরও বড় সমস্যাটি হল, আমরা কয়েকজন নাগরিক বছর বারো আগে ভিডিও ক্যামেরা নিয়ে কলকাতার দশটা মোড়ে গিয়ে দেখেছিলাম, ধর্মতলার মতো বড় মোড় পার হওয়ার জন্য কোথাও সিগন্যাল খোলা রয়েছে ৪ থেকে ৭ সেকেন্ড মাত্র। দক্ষিণ কলকাতার এক মোড়ে দেখেছিলাম, রাস্তা পার হওয়ার জন্য পথচারীদের সিগন্যাল খোলা থাকছে ১ সেকেন্ড! আমরা হিসেব করে দেখেছিলাম, “সিগন্যাল মেনে” ধর্মতলার একপ্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে পৌঁছতে সময় লাগে ২৮ মিনিট, মানে প্রায় আধঘণ্টা! কারণ, এক-একটা মোড়ে পথচারীর জন্য সিগন্যাল লাল থাকছে মিনিট সাতেক (তারপর সবুজ হচ্ছে মাত্র চার থেকে সাত সেকেন্ড মতো)। সেই হিসেবে ৭ মিনিটকে ৪দিয়ে গুণ করলে দাঁড়ায় ২৮ মিনিট। আমাদের এই ভিডিও সমীক্ষাটিকে নিয়ে প্রথম সারির একটি ইংরেজি দৈনিক লিড স্টোরি করেছিল, অবশ্যই নিজেদের অভিজ্ঞতার সঙ্গে মিলিয়ে নিয়ে।
তাহলে কী দাঁড়াল? রেষারেষি-করা বাসকে পুলিস আটকাটাবার চেষ্টা করে না। পথচারী জেব্রা ক্রসিং দিয়ে নিরাপদে রাস্তা পার হতে পারেন না। সিগন্যাল ব্যবস্থা হয় অকার্যকর নয় তা আদ্যোপান্ত পথচারী-বিরোধী। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এই ট্র্যাডিশনের কোনও পরিবর্তন হল না। সব আগের মতোই রয়ে গেল। শুধু তৈরি হল স্লোগান: ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইভ’।
মনে আছে, রেষারেষি করতে গিয়ে, হাওড়ায় একটি সেতু থেকে যাত্রী বোঝাই বাস নিচে পড়ে গেলে বিরোধী নেত্রী থাকাকালীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘটনাস্থলে গিয়ে, রেষারেষি বন্ধে কমিশন প্রথা তুলে দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করেছিলেন। অথচ ক্ষমতায় এসে এই নিয়ে তা কার্যকর করলেন না। কমিশন-প্রথা উঠে যাচ্ছে– টিভি চ্যানেলে ফুল স্ক্রিন ব্রেকিংও চোখে পড়ল একাধিকবার৷ কিন্তু, ‘ফুল স্ক্রিন’ থেকে বেরিয়ে রাস্তা অবধি নামতে পারল না এই এমন কোনও নিয়ম– আজ অবধি৷
এই পরিস্থিতিতে রাজ্যে একের-পর-এক দুর্ঘনায় সেলিব্রিটিরা মারা যেতে থাকলেন।
২০১৫-র দুর্গাপুজোর সময়ে, সপ্তমীর দিন, অভিনেতা পীযূষ গঙ্গোপাধ্যায় গাড়ি করে কোনা এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে ফেরার পথে সাঁতরাগাছি ব্রিজে পথ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান (তখনও কালিকাপ্রসাদ মারা যাননি দুর্ঘটনায়)। এর অল্প কিছুদিন পর, মুখ্যমন্ত্রী বেলুড় যাওয়ার পথে আচমকাই তাঁর কনভয় থেকে নেমে পড়েন সাঁতরাগাছি ব্রিজের উপর এসে। ঠিক যেখানে দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছিলেন পীযূষ গঙ্গোপাধ্যায় সেখানেই। কী দেখেন তিনি?
সেই সময়ে, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে রাজ্য সরকার মাস ছয়েক আগে ‘রোড সেফটি কাউন্সিল’ গড়েছিল মুখ্যসচিবকে মাথায় রেখে। ওই কাউন্সিল দুর্ঘটনার নিরিখে রাজ্যের ২৫টি ব্যস্ত এলাকাকে ব্ল্যাকস্পট হিসেবে চিহ্নিত করেছিল। ওই ২৫-এর মধ্যে পীযূষ গঙ্গোপাধ্যায়ের দুর্ঘটনাস্থলটিও ছিল। কিন্তু এত কিছুর পরেও, ওই এলাকায় দুর্ঘটনা কমাতে পুলিশ প্রশাসন যে কার্যত কিছুই করেনি, তা দেখে বিস্মিত হয়ে যান মুখ্যমন্ত্রী নিজেই!
এরপর? কুখ্যাত বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়েতে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটলেও দেখা গেল, পুলিশের নথিতে তা ‘দুর্ঘটনাপ্রবণ’ বলে চিহ্নিতই নয়!
পথ দুর্ঘটনা প্রতিরোধে মহারাষ্ট্র সরকার এক সময়ে ‘অ্যাকসিডেন্ট প্রিভেনশন কমিটি’ গড়েছিল, আমলা ও পুলিশ কর্তাদের ভার্শনের ওপর নির্ভর না-করে। ওই কমিটি দুর্ঘটনার পিছনে বেশ কিছু কারণ খুঁজে বার করেছিল। এখানে এমন কোনও কমিটি বা কমিশনও তৈরি হল না।
আর এই যখন পরিস্থিতি, যখন কিছুই বদলানো গেল না, বলা ভাল, বদলানোর চেষ্টাই করা হল না কার্যত, তখন তৈরি হল বাণী তথা স্লোগান: ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইভ’। বাম আমলে যা ছিল ‘দেখেশুনে হলে পার, বহুদিন আয়ু তার’, তারই ‘পরিবর্তন’-পরবর্তী ভারশন আর কী।
কিছুদিন আগে, ফের চিংড়িঘাটা অঞ্চলে বেপরোয়া গাড়ির দৌরাত্ম্যে মারা পড়তে লাগলেন একের-পর-এক পথচারী৷ প্রশাসনিক বৈঠক থেকে খোদ মুখ্যমন্ত্রী পুলিশ কর্তাদের ধমক দিলেন৷ আর তার কয়েকঘণ্টার মধ্যেই পুলিশ গিয়ে হাজির হল চিংড়িঘাটায়৷ আর বিস্ময়জনকভাবে পথচারীদের ধমক দিতে শুরু করল!
পথচারী যে আজ এই শহরে, এই রাজ্যে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকে পরিণত হয়েছে, তা বোঝা যায় পুলিশের এই আচরণ দেখেই৷ শুধু বড় কর্তারাই নন৷ একেবারে নিচুতলার কনস্টেবল পর্যন্ত কী সুন্দরভাবে পথচারীর মুণ্ডুপাত করতে পারে, তা রাস্তায় নামলেই হাড়ে-হাড়ে টের পাওয়া যায়৷ কীরকম?
২০২১ সালের দুর্গাপুজো৷ ‘বুর্জ খালিফা’র সৌজন্যে লেকটাউন মোড়ে ঢল নেমেছে মানুষের৷ পাল্লা দিয়ে বেড়েছে গাড়ির সংখ্যাও৷ এই পরিস্থিতিতে, বিগ-বেন মোড়ের আগে, রাস্তা পার হতে গিয়ে খুব ‘সুন্দর’ এক অভিজ্ঞতা হল৷ কাতারে-কাতারে পথচারী দাঁড়িয়ে রয়েছে৷ অন্যদিকে, তাদের সম্পূর্ণ উপেক্ষা করেই এক তরফা গাড়িগুলোকে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে৷ পাঁচ মিনিট, ছ’মিনিট, সাত মিনিট, দশ মিনিট…৷ পথচারী দাঁড়িয়েই রয়েছে৷ কেউ কেউ ঝুঁকি নিয়েই রাস্তা পার হচ্ছে৷ দুই কনস্টেবলকে অনুরোধ করলাম: এবার পথচারীদের পার করিয়ে দিন৷ আর কতক্ষণ দাঁড়াব? একেবারে তেড়ে এসে জবাব দিলেন তাঁরা: আপনার অফিসের তাড়া থাকলে নিজের রিস্কে পার হন৷ প্রতিবাদ করলাম৷ ও-প্রান্ত থেকে মেজাজ আরও চড়ল৷ অদ্ভুতভাবে, আমাকে অভিযুক্ত করে বলা হল: আমি আপনাকে কী এমন বলেছি যে, আপনি আমার বাবা তুলে কথা বলবেন? আমি তো বিস্মিত৷ যদিও বিস্ময় কাটাতে সময় বেশি সময় নিলাম না৷ বুঝলাম, ওটা একটা ‘ছক’৷ সজোরে করে উত্তর দিলাম: একদম মিথ্যে কথা বলবেন না৷ দাব্বি খেয়ে রণে ভঙ্গ দিলেন তাঁরা৷
এই একই বিধাননগর কমিশনারেটের অধীনেই পড়ে বিরাটির মোড়৷ অন্তত কর্তব্যরত পুলিশকর্মীরা তেমনটাই দাবি করেন৷ সেখানেও একই জিনিস দেখতাম৷ পাঁচ, দশ থেকে শুরু করে পনেরো মিনিট পর্যন্ত আটকে রাখা হত পথচারীদের৷ অন্যদিকে নাগাড়ে গাড়িগুলোকে ছাড়া হত৷ সেখানেও প্রতিবাদ করেছিলাম৷ আর যথারীতি…৷ আর, এয়ারপোর্টের কাছে, ভিআইপি রোড-যশোর রোড যেখানে এসে মিশেছে, সেখানে একদিকের গাড়ি বন্ধ হলেই অন্যদিকে গাড়ি ছেড়ে দেওয়া হয়৷ অর্থাৎ: পাঁচ, দশ, পনেরোরও কোনও গল্প নেই সেখানে৷ ঝুঁকি নিয়ে বাস-লরির মধ্যে দিয়েই পার হতে হয় পথচারীদের৷ বেশ মনে আছে, কয়েকবছর আগে, বড়বাজার অঞ্চলে কলকাতা পুলিশের এক সার্জেন্টকে বলতে শুনেছিলাম: আজকে আর পারছি না৷
মানে?
সারি দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন পথচারীরা৷ কিছুতেই পার হতে পারছেন না৷ এই পরিস্থিতিতে, কেউ হয়তো মৃদু অনুরোধ জানিয়েছেন: এবার একটু ছাড়ুন আমাদের৷ আর তার প্রত্যুত্তরেই ওই সার্জেন্ট বলেছিলেন: আজ আর পারছি না৷ অর্থাৎ, আজ গাড়ির চাপ খুব বেশি৷ পথচারীদের পার করার জন্য সময় দেওয়া সম্ভব নয়৷ ঝুঁকি নিয়েই পার হতে হবে৷ আর তার জন্য যদি চলন্ত গাড়ির সামনে চাপা পড়তে হয় তো সমস্যা কী? মিডিয়া তো আছেই৷ ঘটনার আগুপিছু না-দেখে, আগবাড়িয়ে বলে (এবং লিখে) দেবে: সিগনাল খোলা অবস্থায় নিয়ম ভেঙে পার হতে গিয়ে পথচারীর মৃত্যু৷ সেইসঙ্গে অবশ্যই থাকবে একটি অবধারিত প্রশ্ন: আর কবে হুঁশ ফিরবে পথচারীদের? বলাই বাহুল্য, এহেন সুবর্ণ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে, সাংবাদিকদের ‘ব্রিফ’ করবেন পুলিশ কর্তারা: হ্যাঁ, আমরা বিষয়টা নিয়ে ভাবছি৷ জে-ওয়াকারকে বাগে আনতে এবার জরিমানার পথে হাঁটবার কথা বিবেচনা করছি! কী কিউট, না?
এই তো কিছুদিন আগেই আনন্দবাজারে পড়লাম: আরজিকর হাসাপাতাল, সামনে বাস চলছে, অথচ তারই ফাঁক দিয়ে এক পথচারী দিব্য রাস্তা পার হয়ে গেলেন৷ আর ওমনি ক্যাঁচ করে ব্রেক কষতে হলো বাস- ড্রাইভারকে৷
অথচ, আনন্দবাজারের ওই মেধাবী সাংবাদিকের চোখে পড়ল না যে: আরজিকর-এর সামনে দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে ওইভাবেই রাস্তা পার হতে হয় পথচারীদের৷ হাতে প্লাস্টার দেওয়া রোগী হোক কী অসুস্থ বাচ্চা কোলে মা: এক মিনিটের জন্যও কাউকে নিরাপদে রাস্তা পার করিয়ে দেয় না ট্যাফিক পুলিশ৷ এক তরফা গাড়িগুলোই যেতে থাকে৷ তাই, ‘নিয়ম মেনে’ সেখানে রাস্তা পার হতে গেলে তো সকাল থেকে শুরু করে মাঝরাত অবধি দাঁড়িয়ে থাকতে হবে পথাচারীকে৷
প্রায় একই ছবি নীলরতন সরকার হাসপাতালের সামনে৷ কিছুদিন আগে, সেখানে মেরামতির জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল ফুটব্রিজ৷ অথচ, পথচারীদের ‘ম্যানুয়ালি’ রাস্তা পার করে দেওয়ার কোনও উদ্যোগ চোখে পড়েনি পুলিশের তরফে৷ আর পুরো বিষয়টা নিয়ে একটা ব্যতিক্রমী ‘স্টোরি’ করেছিল একমাত্র টিভি-নাইন বাংলা৷
শুধু কি তাই? অবৈজ্ঞানিকভাবে রেলিং দিয়ে ঘেরার ফলে, স্বচ্ছন্দে ফুটপাথও ব্যবহার করতে পারে না পথচারীরা৷ অথচ, সেখানেও দোষ পড়ে পথচারীর ওপর৷ কিছুদিন আগে, জনৈক রেড ভলান্টিয়ারকে যেভাবে চাপা দিয়ে মেরেছিল একটি বাস, তার দুঃস্মৃতি আজও টাটকা৷ জানা যায়, ওই বাসটির বিরুদ্ধে নাকি দুশো’টারও বেশি ‘কেস’ ঝুলছিল৷ প্রশ্ন হল: তাহলে ‘কেস’ দিয়ে বা জরিমানা করে লাভ কী তাহলে? কারণ, রিওয়ার্ড অ্যান্ড পানিশমেন্ট নীতি অনুযায়ী, একজন অন্যায় করলে শাস্তি পাবে, আর তা না-হলে…৷ কিন্তু, বাসচালক ও কন্ডাকটররা বেশ বুঝে গিয়েছেন: সার্জেন্টরা কোটা-পুরণের জন্য জরিমানা করেন, দুর্ঘটনা আটকানোর জন্য নয়৷ আর তাই দেখা যায়, ট্যাফিক জ্যামের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা বাসে যখন কোনও যাত্রী ওঠেন, তখনও, স্টপেজের বাইরে থেকে ‘প্যাসেঞ্জার তোলা’র জন্য ‘ফাইন’ করেন সার্জেন্টরা৷ তাই,এই জরিমানার বিষয়টা এমনই রুটিন-মাফিক যে, একদিন এক ট্র্যাফিক সার্জেন্টের উদ্দেশে এক বাস-কন্ডাকটরকে বলতে শুনেছিলাম: স্যার, আজকে আর নয়, কালকে (‘কেস’) দেবেন৷
এরপর?
দুর্ঘটনায় রাশ টানতে শেষ অবধি জরিমানার অঙ্ক বাড়ানো হল৷ আর, তাতে দেখছি অনেকেই উল্লসিত৷ কেউ প্রশ্ন করছে না: ঘুরেফিরে সেই রাস্তার ধারে বাইক দাঁড়িয়ে ‘হেলমেট’, ‘সিটবেল্ট’, এক-পা এগিয়ে কি দু’পা পিছিয়ে দাঁড়ানোর পাবলিক-বাসকে রুটিন মাফিক জরিমানা– এর বাইরে কি বেরনো যাবে? রেষারেষি করা বাসকে বাগে আনা যাবে? বেপরোয়া মদ্যপ দুর্বিনীত বিলাসবহুল অডি বা পোর্সের চালককে কি শায়েস্তা করা যাবে?
দুর্জনে অবশ্য অন্য কথা বলে৷ জরিমানা যত বাড়বে, তত বাড়বে ‘তোলাবাজি’৷ শুধু, যে-তোলাবাজির হাত থেকে বাঁচতেই সজোরে গাড়ি চালিয়ে দুর্ঘটনার ঘটনায় বাস-লড়ি, পিকআপ ভ্যান৷ এই আইনে দেখলাম এমনটাই রয়েছে: পুলিশের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করলে দু’হাজার টাকা জরিমানা৷ বলাই বাহুল্য, এরপর ‘প্রতিবাদ’ করতে গেলেও…৷
পুনশ্চ: চিকিৎসক ও নৃতাত্ত্বিক পল ফার্মার বলেছিলেন– ‘মানুষ ঝুঁকি নেওয়ার অভ্যেস শখ করে রপ্ত করে না৷ সে ঝুঁকি নিতে বাধ্য হয়৷’
ঠিকই তো৷ ডেঙ্গুর মরশুমে, ফুটবাসীকেও দেখা যায় সপরিবারে মশারির ভেতর শুতে৷ তাকে ‘সচেতন’ করতে হয় না৷
সবুজ মুখোপাধ্যায়
‘রাস্তায় আপনি কতটা নিরাপদ’ গ্রপের পক্ষ থেকে