দীপঙ্কর
রোদলা সকালেও আমার মনটা মেঘলা হয়ে আছে। কিছুই ভালো লাগছে না আর।যেদিন রঞ্জনা আমার জীবন থেকে সরে’ গেছে, সেদিন থেকেই।কিছুদিন ‘রঞ্জনা আমি আর আসবো না’ গেয়ে আমার এবং প্রতিবেশীদের জীবন ওষ্ঠাগত করে’ দিলাম।তারপর থেকে আর ডিমের ঝোলও আমার মুখে রুচছে না।অর্থাৎ আমার জীবন এখন আমার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের মতো অর্থহীন। এমতাবস্থায় আমি ঠিক করলাম এ জীবন আমি আর রাখবো না।
তো কিভাবে মরবো, সেটা এখন একটা বড়ো প্রশ্ন হ’য়ে দাঁড়িয়েছে।দেখুন, সহজতম পন্থা হচ্ছে ঘুমের ওষুধ।কিন্তু বাজারচলতি ঘুমের ওষুধ সাধ্যমতো পেট পুরে’ খেলেও মরার সম্ভাবনা খুব কম।আমি জানি, এক ব্যর্থপ্রেমিকা নার্স পুজোর ছুটিতে গন্ডাগন্ডা ঘুম্বটিকা গান্ডেপিন্ডে গিলে’ নার্সে’স হস্টেল রুমের দরজা বন্ধ করে’ তিনদিন ভয়ানক ঘুমিয়েছিলো।তিনদিন পর ঘুম থেকে উঠে দাঁত মাজতে গিয়ে হঠাৎ আত্মহত্যার কথা মনে পড়েছে।তারপর তার কী কান্না!আমি তিনদিন, তিনরাত্রি পড়ে রইলাম, কেউ খোঁজও নিলো না!!সুতরাং এই পথ বাদ।
অ্যাসিড পান- এতে খাদ্যনালী পুড়ে’ মরতেও পারি, কিন্তু অ্যালোপ্যাথুড়েরা ঠিক বাঁচিয়ে দেবে।সে বড়ো যন্ত্রণার জীবন হবে।
তাহলে রইলো পড়ে কী?যাই করি না ক্যানো মরতেও পারি, বাঁচতেও পারি।অমিতাবচ্চন বলেছেন ‘য়্যে জীনা কোঈ জীনা হ্যায় লাল্লু?’ঠিকই বলেছেন রঞ্জনাকে ছাড়া বেঁচে কি লাভ আছে?সুতরাং যা করবো, সেটা এ্যাকেবারে কনফার্মড হতে হবে।
অবশেষে পথ পেলাম।হাইড্রো সায়ানোটিক সালফিউরেটেড ক্লোরিক অ্যাসিড।ভয়ঙ্করতম অ্যাসিড,এক ফোঁটাতেই যমের গদি নড়ে যাবে।গুপ্তদা(চিত্রগুপ্ত)পাঁইপাঁই করে’ ফুলের বুকে নিয়ে এসে’ বুকে জড়িয়ে ধরবে।এটাকে আমার গবেষণাগারে আরো হাজার গুণ শক্তিশালী করে’ একটা ফোঁটা পান করবো।তারপর অতৃপ্ত আত্মা হ’য়ে আমার রঞ্জুর চারপাশে ঘুরবো।ও পায়ের নখ কাটলে আমি ওর পায়ে পায়ে থাকবো।স্নান করে’ এলোচুলে বসলে আমি ফ্যোঁৎ করে’ দীর্ঘশ্বাস ফেলে’ ওর চুল শুকিয়ে দেবো।রঞ্জু ভাববে বুঝি বা পথভোলা দখিনা বাতাস এলো।ও প্রিয়তমের আলিঙ্গনে থাকলে আমি কঙ্কাল হ’য়ে ঝঙ্কৃত তালে তালে অস্থিখটখটি নৃত্য করবো।মোদ্দা কথা আমি শয়নে, স্বপনে, জাগরণে আমার রঞ্জাবতীর সঙ্গে থাকবো।
কাব্যকথা থাক।এবার রসায়নের জটিল আলোচনা।দশ লিটার পরিশ্রুত জলে এক মিলিলিটার হাইড্রো সায়ানোটিক সালফিউরেটেড ক্লোরিক অ্যাসিড দিলাম।তার থেকে এক মিলিলিটার মিশ্রণ নিয়ে আবার দশ লিটার পরিশ্রুত জলে মেশালাম,সেখান থেকে আবার এক মিলিলিটার মিশ্রণ নিয়ে আবার ফের দশ লিটার পরিশ্রুত জলে দিলাম।সেখান থেকে আবার এক মিলিলিটার মিশ্রণ নিয়ে আবার দশ লিটার পরিশ্রুত জলে মেশালাম।সেখান থেকে আবার এক মিলিলিটার মিশ্রণ নিয়ে ফের পরিশ্রুত দশ লিটার জলে মেশালাম।সেখান থেকে আবার এক মিলিলিটার মিশ্রণ নিয়ে আবার পরিশ্রুত দশ লিটার জলে মেশালাম।সেখান থেকে আবার ফের এক মিলিলিটার মিশ্রণ নিয়ে, একঘেয়ে লাগছে?তাহলে শুনুন আত্মহত্যা করতে ধৈর্য লাগে।এটা এক হাজার বার পুনঃপৌনিক রেকারিং ডেসিমেলের মতো করলাম।ফলতঃ যেটা তৈরি হলো, সেটা হাইড্রো সায়ানোটিক সালফিউরেটেড ক্লোরিক অ্যাসিডের থেকে হাজার গুণ শক্তিশালী।এটা পান করলে আমার প্রতিটি কোষে কোষে হাইড্রো সায়ানোটিক সালফিউরেটেড ক্লোরিক অ্যাসিড ছড়িয়ে পড়বে।আমি প্রেমের শুভ লগ্নে ঐ তীব্র ভয়ঙ্করতম অ্যাসিডের একটি ফোঁটা পান করলাম।কেউ কথা রাখে নি।ঐ বিষপান করার পর তেত্রিশ বছর পেরিয়ে গেছে।গুপ্তদা আজও আসে নি।ইতিমধ্যে আমার প্রায় সব চুল খসে’ পড়লো।বাকিগুলো পেকে’ গেলো।সব দাড়ি পেকে’ গেল।গালের চামড়া ঝুলে পড়লো।অস্থিচর্মসার চেহারা হলো।
তাহলে কি হলো?থিওরি কি ভুল হলো?এই আমার হোমিওপ্যাথেটিক আত্মহত্যার গল্প নয়কো, সত্যি কথা।
এটা জবরদস্ত !! হোমিওপ্যাথি থাকলে চাইলে ও মরা যায় না ?