প্রাক্তন অধ্যাপক ও নামকরা বিশেষজ্ঞ ড: অমিতাভ নন্দী একটি ভিডিওতে কোভিভ নিয়ে নানান বক্তব্য রেখেছেন তার কিছু কিছু এতই অবৈজ্ঞানিক ও ক্ষতিকর সে জন্য পাল্টা কিছু বক্তব্য আমার ও আমার বন্ধুদের তরফ থেকে হাজির করা দরকার।
(১) ডাক্তার নন্দীর বক্তব্য: সত্যিকারের ভ্যাকসিন বলে আখ্যা দিতে পারি যখন (১) সেই ভ্যাকসিন সেই অসুখটার বিরুদ্ধে ১০০% প্রটেকশন দেবে, ১০০% না হলেও অন্ততঃ ৯৯% নাথিং বিলো দ্যাট ইজ এক্সেপ্টেবল। (২) আর কোনো সাইড এফেক্ট হবে না। মাইনর হতে পারে কিন্তু এটা যা দেখছি সেটা কিন্তু মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়।
আমাদের বক্তব্য: দেখা যাক বিজ্ঞান কি বলে – Vaccines have proved themselves to be the most effective weapon in the modern fight against infectious diseases. They avert millions of deaths and cases of disease every year. But there is no such thing as a ‘perfect’ vaccine that protects everyone who receives it and is entirely safe. পারফেক্ট ভ্যাকসিন বলে কিছু হয় না যা সবাইকে সুরক্ষা দেবে আর এক্কেবারে নিরাপদ [তথ্যসূত্রঃ সি জে ক্লিমেন্ত্স, জি লরেন্স: এনসাইক্লোপিডিয়া অফ ভাইরোলজি, তৃতীয় সং]
কোভিভ ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত বিভিন্ন অসুখের নাম ও তাদের ভ্যাকসিনের এফিক্যাসি/এফেক্টিভনেস দেওয়া হল বন্ধনীর মধ্যে:-
ডিপিটি – ডিপথেরিয়া (৯৯%),
টিটেনাস (১০০%-এর কাছাকাছি),
পারটুসিস বা হুপিং কাশি (৮৫%);
হিমফিলাস ইনফ্লুয়েঞ্জি (৯৫%),
হেপাটাইটিস বি (৯৫% বাচ্চাদের, ৭০% বড়দের),
পোলিও (ইনেক্টিভেটেড – ১০০% এর কাছাকাছি),
এমএমআর – হাম, মাম্পস, রুবেলা (৮৫-৯৫%),
নিউমোকক্কাল পলিস্যাকারাইড (৬০-৭০%),
চিকেন পক্স (৭০-৯০%) ইত্যাদি ইত্যাদি।
এতএব দেখা যাচ্ছে যে কোনো টিকাই ১০০% বা ৯৯% কার্যকর নয়। কিন্তু এগুলো সারা বিশ্বে দীর্ঘদিন ধরে বহুল প্রচলিত এবং এদের সাহায্যে লক্ষ কোটি মানুষের প্রাণ বাঁচানো গেছে। [তথ্যসূত্রঃ বি সি সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল]
(২) ডাক্তার নন্দীর বক্তব্য: ন্যাচারাল ইনফেকশন থেকে তৈরি হওয়া ইমুনিটির জুড়ি কিছু হতে পারে না সে আপনারা যতই ভ্যাকসিন ভ্যাকসিন করুন না কেন।
আমাদের বক্তব্য: পৃথিবীর অধিকাংশ ভিপিডি বা ভ্যাকসিন প্রিভেন্টেবল ডিজিযের মতো কোভিভ -১৯ এর ক্ষেত্রেও ন্যাচারাল ইনফেকশন ইমিউনিটি বনাম ভ্যাকসিন ইমুনিটির অবস্থান দেখে নেওয়া যাক তাহলেই বোঝা যাবে কেন বিজ্ঞানীরা ভ্যাকসিন নেয়ায় পক্ষে।
প্রথমে ন্যাচরাল ইনফেকশন ও পরে বন্ধনীতে ভ্যাকসিন ইমুনিটি: (১) বেশ কিছু ক্ষেত্রে রুগীরা গুরুতর অসুস্থ এমন কি মৃত্যু হচ্ছে [ভ্যাকসিন ইমুনিটিতে এ সম্ভাবনা নেই বা নেহাৎই তুচ্ছ], (২) সেরে উঠলেও লং টার্ম কম্পলিকেশন এর সম্ভাবনা থাকে [ভ্যাকসিনের এমন সম্ভাবনা নেই এখনো জানা মতো], (৩) আক্রান্ত থেকে অন্যের মধ্যে ছড়িয়ে পরার প্রচুর সম্ভাবনা [ভ্যাকসিন এর ক্ষেত্রে এ সম্ভাবনা নেই], (৪) ইমিউন রেসপন্স প্রচন্ড ভ্যারি করে – কার কেমন হবে কেউ জানে না [ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রিত ইমিউন রেসপন্স – নির্দিষ্ট ডোজে দেয়া হচ্ছে], (৫) যারা গুরুতর অসুস্থ তাদের দীর্ঘ মেয়াদী শক্তিশালী রেসপন্স [ভ্যাকসিন নিলে ন্যাচারাল ইনফেকশন এর ইমিউন রেসপন্স বুস্ট আপ হয়], (৬) ইমুনিটি কতদিন থাকবে কেউ জানে না – একেক জনের একেক রকম, সময়ের সাথে কমে আসছে [ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে কতদিন থাকবে মোটামুটি জানা যাচ্ছে], (৭) অন্য ভ্যারিয়েন্ট এর ক্ষেত্রে ক্রস প্রটেকশন এর সম্ভাবনা খুবই কম (ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে এই সম্ভাবনা অনেক বেশি]।
সুতরাং সব দিক বিচার করে ন্যাচারাল ইমুনিটি তৈরি হবে ন্যাচারাল ইনফেকশন থেকে এই ভরসায় বসে থাকলে ভয়ানক ক্ষতি হবে।
[তথ্যসূত্রঃ ইউকেসিআইসি স্টাডি: ব্রিটিশ সোসাইটি ফর ইমিউনোলজি]