গুয়াহাটি মেডিকেল কলেজের নিওনেটাল ইন্টেন্সিভ কেয়ার ইউনিটে অসুস্থ সদ্যোজাত শিশুর সংখ্যা ছিল পঁয়ত্রিশ। কর্তব্যরত নার্সের সংখ্যা ছিল এক। আজ্ঞে, মাত্র একজন নার্স পঁয়ত্রিশটি শিশুর দেখাশোনা করছিলেন।
স্বাভাবিকভাবে ছোট্ট মানুষদের জন্য তৈরি NICU-র বিছানাগুলোও ছোট মাপের। ভিড়ের চাপ সামলাতে সেরকম একএকটি বিছানায় মাঝেমাঝে দুই বা তিনটি শিশুর জায়গা হয়, যা বেশ অবৈজ্ঞানিক কিন্তু আমাদের দেশের দৈনন্দিন বাস্তব। দুর্ভাগ্যক্রমে একটি শিশু বিছানা থেকে পড়ে যায় এবং তার মৃত্যু হয়। আরও দুটি শিশু আহত। ঘটনার পর গ্রেপ্তার করা হল কাকে? সেই একমাত্র কর্তব্যরত সেবিকা ভানুপ্রিয়া মিশং-কে।
পরিস্থিতিটা কল্পনা করুন। একাধিক শিশু যদি একসঙ্গে গুরুতর অসুস্থ হয় বা তাদের পড়ে যাবার উপক্রম হয়, তাহলে স্বয়ং দেবী দুর্গাও দশ হাত বাড়িয়ে সর্বাধিক দশটি শিশুকে বাঁচাতে পারবেন। পঁয়ত্রিশটা বাচ্চার দায়িত্ব একা নিতে বললে তিনি সুপারিন্টেন্ডেন্টকে দশমহাবিদ্যা দেখিয়ে অজ্ঞান করে দিতেন, কারণ ওরকম ডিউটি দেওয়াটাই অনৈতিক। তাহলে গ্রেপ্তার হওয়া উচিত ছিল কার বা কাদের? যারা পঁয়ত্রিশটি বাচ্চার জন্য একজন নার্সকে ডিউটি দেয় বা একজন নার্সের ভরসায় পঁয়ত্রিশটি শিশুকে ভর্তি করার আদেশ বা অনুমতি দেয়, তাদের। গ্রেপ্তার হবার কথা তাদের, যারা চিকিৎসক বা নার্সের বন্দোবস্ত না করেই কতগুলো বাড়ি বানিয়ে আর বেড গুঁজে দিয়ে জনগণকে ধোঁকা দিয়ে বলে, “এই করে দিনু হুরিত্তারা হাসপাতাল!” যারা জনগণের করের টাকা বেমালুম গায়েব করে স্বাস্থ্যের নামে হাতে ল্যাবেঞ্চুস ধরিয়ে দেয়, তাদের।
এই সত্যগুলোকে আড়াল করে বাটপারি চালিয়ে যাবার উদ্দেশ্যে নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী আর চিকিৎসকদের ভিলেনের ছদ্মবেশে তুলে ধরার খেলা কয়েক দশক ধরে চলছে। কিন্তু মানুষকে বোকা ভেবে চিরকাল সবার মাথায় টুপি আর চোখে ঠুলি পরিয়ে রাখা যায় না। অসমে ইতোমধ্যে প্রতিবাদ হচ্ছে। যেদিন বেশ কিছু মানুষের চোখের ওপর থেকে কালো-নীল-লাল-গেরুয়া-সবুজ কাপড় সরে যাবে, সেদিন মানুষের হাত রাজার মাথা থেকে মুকুট খুলে নেবে, সেই রাজার পোশাক আর নিশানের রঙ যাই হোক।
খুব ভালো লিখেছো, কৌশিক