“যে সময়ে স্মাৰ্ত্ত ভট্টাচাৰ্য্য মহাশয় মনু, যাজ্ঞবল্ক্য, পরাশর প্রভৃতি মন্থন ও আলোড়ন করিয়া নবম বর্ষীয়া বিধবা নির্জ্জলা উপবাস না করিলে তাহার পিতৃ ও মাতৃকুলের উৰ্দ্ধতন ও অধস্তন কয় পুরুষ নিরয়গামী হইবেন, ইত্যাকার গবেষণায় নিযুক্ত ছিলেন, যে সময়ে রঘুনাথ, গদাধর ও জগদীশ প্রভৃতি মহামহোপাধ্যায়গণ বিবিধ জটিল টীকা টিপ্পনী রচনা করিয়া টোলের ছাত্রদিগের আতঙ্ক উৎপাদন করিতেছিলেন, যে সময়ে এখানকার জ্যোতির্ব্বিদবৃন্দ প্রাতে দুই দণ্ড দশ পল গতে নৈঋত কোণে বায়স কা কা রব করিলে সে দিন কি প্রকারে যাইবে ইত্যাদি বিষয় নির্ণয় পূৰ্ব্বক কাকচরিত্র রচনা করিতেছিলেন, যে সময়ে এ দেশের অধ্যাপকমণ্ডলী ‘তাল পড়িয়া ঢিপ করে, কি চিপ করিয়া তাল পড়ে’ ইত্যাকার তর্কের মীমাংসায় সভাস্থলে ভীতি উৎপাদন করিয়া সমবেত জনগণের অন্তরে শান্তিভঙ্গের আয়ােজন করিতেছিলেন, সেই সময়ে ইউরোপে গ্যালিলিও, কেপলার, নিউটন প্রভৃতি মনস্বিগণ উদীয়মান প্রকৃতির নূতন নূতন তত্ত্ব উদঘাটন পূর্বক জ্ঞানজগতে যুগান্তর উপস্থিত করিতেছিলেন ও মানবজীবনের সার্থকতা সম্পাদন করিতেছিলেন।”
(বাঙ্গালীর মস্তিষ্ক ও তাহার অপব্যবহার, ১৯০৯)
আজ এক বিশেষ দিনে এই লেখাটি লিখছি যেদিন পরাধীন ভারতবর্ষের শৃঙ্খলিত জাতির কুসংস্কার ও পশ্চাৎপদতার মর্মে আঘাত করার জন্য জন্ম হয়েছিল এক স্বপ্নদ্রষ্টার। আচার্য প্রফুল চন্দ্র রায় 1861 সালে 2 রা আগস্ট জন্মে ছিলেন । উনি লিখেছিলেন ” …With the decay of the ancient Hindu and Buddhistic culture, an intellectual torpor took possession of the Indian mind and the spirit of enquiry after truth rapidly declined. Authority of the Shastras took the place of reason and clouded human intellect. A state of mind was thus fostered which was inimical to the study of science, which accepts things not to trust, but by verification.” ( Dawn of science in modern India” sir P C Roy).
1887 সালে এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডি এসসি ডিগ্রী প্রাপক ও বার্ষিক একশ পাউন্ড ‘হোপ প্রাইজ’ পাওয়া এক বিজ্ঞানী এই পিছিয়ে পড়া দেশে ফিরে স্বাধীন দেশীয় ওষুধশিল্পের প্রতিষ্ঠা করার স্বপ্ন দেখছেন এ হয়ত আজকের career সর্বস্ব এক শ্রেণীর উচাকাঙ্খী মানুষ পাগলামি বলে বসবেন। উপরের বিষয়ের সাথে তাই ওনার নিবিড় যোগাযোগ। প্রাচীন ভারতে গুপ্ত যুগ থেকে যে চিকিৎসা, শল্য চিকিৎসা ও ভেষজবিদ্যা উন্নতির সোপানে পৌঁছে ছিল 320 থেকে 550 CE তে তা পরবর্তী কালে হারিয়ে যেতে বসেছিল। তাই এই পর্ব তাঁকে উৎসর্গ করে।
এবার নজর দি বর্তমান বিশ্ব ও তার প্রেক্ষিতে আমাদের ভারতবর্ষের দিকে। চূড়ান্ত অর্থনৈতিক বৈষম্য, উপেক্ষিত জনস্বাস্থ্য ও নিম্ন স্বাস্থ্য সচেতনতা আমাদের দেশের সকল মহামারীর জনক। আজকের সময় তা প্রকট হয়েছে মাত্র। শুধুমাত্র উপযুক্ত টয়লেট, (শৌচাগার বা পায়খানা) পরিষ্কার পানীয় জল, সুষম খাদ্যের অভাবে আমাদের বিপুল জনসমষ্টি ইনফেকশন জনিত কারণে হসপিটালে ভর্তি হয় ও এক অংশ মারা যায় যা স্বাধীন দেশের সরকার সহজেই নিশ্চিত করতে পারত। স্বাস্থ্য এখানে কিনতে হয় কারণ তা অধিকার বলে আমরা মনে করি না। আমাদের দেশে বাজেটে 2018-19 সালে স্বাস্থ্যের জন্য বরাদ্দ মাত্র 2.1%। অথচ দেশের বিশেষজ্ঞরা বলছেন দেশের অসংক্রামক রোগ যেমন ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, হৃদযন্ত্রের রোগে দেশের জনগণের এক বিশাল সংসারের বরাদ্দ খরচ বেরিয়ে যাচ্ছে। যে 55 মিলিয়ন জনতা স্বাস্থ্যের খরচ বহন করতে গিয়ে দারিদ্রসীমার নীচে নেমে যাচ্ছেন তার 38 মিলিয়ন শুধু ওষুধের দাম মিটিয়ে সর্বস্বান্ত। শেষ NSSO survey অনুযায়ী দেশের 82% শহরের ও 86% গ্রামের মানুষের নেই কোন সরকার বা মালিক প্রদত্ত ইন্স্যুরেন্স coverage। প্রতি হাজার শিশুর মধ্যে 50 জন পাঁচ বছর বয়সে পৌঁছনোর আগে মারা যায়। প্রতি দশ হাজারের মধ্যে 190 জন মা মারা যায় জন্ম দিতে গিয়ে যা বিশ্বে সর্বোচ্চ। মাত্র 50% শিশু 5 বছরের মধ্যে সঠিক টিকা পান। বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার পোলিও কর্মসূচিও ভ্যাকসিনের অভাবে বন্ধ করতে তৎপর। বহু বেসরকারি ক্ষেত্রে কর্মরত শ্রমিক কর্মচারীদের না আছে ESI বা মেডিক্যাল এর সুবিধা, না আছে দুর্ঘটনাজনিত compensation বা মাতৃত্বকালীন ছুটি। তারা পরিবারে রোগের কথা বলতে ভয় পায়। করোনা তাদের কাছে মরার ওপর খাঁড়ার ঘা। চিকিৎসার নামে বিবর্ণ কলুষ চিত্র রোজ আমাদের যন্ত্রনা দেয়। সামান্য অক্সিজেন এর অভাবে বা ভর্তি হতে না পেরে মারা যাচ্ছেন কত মানুষ তা কি আমাদের ধাক্কা দিচ্ছে? একটি ভারতীয় সমীক্ষা বলছে হসপিটালে খরচ 1995 সালে ছিল US$177 আর 2014 তে তা পৌঁছয় US$316 । এখুন তা কত হতে পারে কল্পনা করে নিন। অথচ এমন হওয়ার ছিল না।
1. শ্যামল চক্রবর্তী
2. FMRAI report 2019
3. দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়
4. শিবাসীস বসু
4. বিবিধ
(চলবে)