“গা জনগণমন অধিনায়ক| গা বলছি| ঠিক দশ গুণব| তার মধ্যে না গাইলে স্কেল|” — কোনো এক ভোরে একটা স্কুলের পাশ দিয়ে যেতে গিয়ে এই পিকুইলিয়ার দৃশ্য দেখেছিলাম আমি| দিদিমণি মোটা একটা কাঠের স্কেল দিয়ে পিটিয়ে যাচ্ছেন বাচ্চাটাকে আর গা গা করে চিললে নিজেই লক্ষবার গেয়ে চলেছেন জনগণমন| খুব বিরক্ত মুখে এবং বাচ্চাটার দিকে কটমট করে তাকিয়ে| হাসি পাচ্ছিল| যে গান গাইতে দিদিমনির নিজেরই এত বিরক্তি, সে গান উনি ছাত্রকে দিয়ে গাওয়াবার আশা রাখেন কী করে? গানটা ওঁর কাছে সিলেবাস বা একটি আবশ্যিক নিত্যকাজ ছিল — বাচ্চার কাছেও তাই|
গায়নি সেদিনের রাগী বাচ্চা| স্কেলের মার খেয়েও না| ছ মাস বাদেও দেখেছি না গেয়ে মার খেয়ে যাচ্ছে একভাবে| জাতীয় সঙ্গীত একটি অনুভব| সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত কোনো বিষয় নয়| পাঠ্য পড়ানো যায়| ছাত্র তা পড়ে| পরীক্ষা দেয় এবং পাশ করে বেরিয়ে যায়| অনুভব কিন্তু জাগাতে হয়| আর তার জন্য শিক্ষককেও অনুভব করতে হয়| তাই সত্য অনুভব জেগে থাকে অনন্তকাল| তার তো আর পাশ ফেলের চাপ নেই|
গতকাল CBSE সিলেবাস থেকে বাদ যাওয়া বিষয়গুলোর মধ্যে আমার আজকের আলোচ্য “ধর্মনিরপেক্ষতা”| বাদ যেতে বেবাক হাসিই পেয়েছে আমার| এখনো পাচ্ছে| পেট গুলোচ্ছে একেবারে হাসিতে| আপনাদের সমস্ত দুশ্চিন্তাকে সম্মান করেই বলি –ধর্মনিরপেক্ষতা গোটা দেশের কটা নাগরিকের অনুভবের মধ্যে আছে আজ? ধর্মনিরপেক্ষতা একটি চরাচরব্যাপী অনুভব| সর্ব মানুষকে ভালোবাসলেই তা উপলব্ধ হয়| ক্লাসে চেয়ারে বসে পড়াতে হয় না| ডেস্কে বসে নোটও নিতে হয় না|
এবারে বলি —ধর্মনিরপেক্ষতা বলতে কী ছিল পাঠ্যে? পূর্বসূরিদের ভোট পাওয়ার সুবিধার্থে কিছু যুক্তি —! কী সে যুক্তি? না — সংখ্যাগুরু হতে চাওয়া সংখ্যালঘুদের তোষণ করে যাও| সুবিধে দিতে দিতে তাদের একটি ভারতবিচ্ছিন্ন Sectorএ পরিণত কর| তারা যদি নিজেদের ভারতের বলে মিলতেও চায় তো তাদের বোঝাও —“না ভাই তোমরা মুসলিম| হিন্দুরা তোমাদের ঘৃণা করে| আমাদের ভোট দাও| আমরা তোমাদের সুবিধে দেব, সমঝোতা দেব|”
অত্যাচারী ও অত্যাচারিত এই দুটি class পৃথিবীর সব দেশের সব সমাজে exist করে| এদের মিলেমিশ হওয়াটাও দুষ্কর| না হওয়াটাই স্বাভাবিক| কারণ প্রশাসকের যোগান ও নাগরিকের দাবির মধ্যে চিরকাল অসামঞ্জস্য থেকে যায়| কিন্তু ভারতীয় ধর্মনিরপেক্ষতার মারাত্বক প্রক্রিয়াটি হল— এই দুই already বিরোধীপক্ষকে তাদের ধর্মীয় পরিচয়ে পরস্পরের কাছে পরিচিত করানো হয় এবং মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়| দেখবেন— হিন্দু মুসলিম এই দুই পক্ষ নিয়েই প্রতিবার প্রতি সরকার ব্যস্ত থাকে| আগের সরকারগুলো ব্যস্ত ছিল তোষনে আর বর্তমান সরকার পেনসিল রবার দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতার কোর্স মুছতে| Is It Just A Course My Dear Gentlemen? Nothing Else?
স্বাধীনতার আগে ব্রিটিশ নচ্ছাড়ামি বাদ দিলাম। কিন্তু স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত কোনো প্রশাসক সাহস করে বলেছেন কী —রাষ্ট্রব্যবস্থায় ধর্মের কোনো স্থানই আর থাকবে না| বলেছেন কী? Yes My Dear— সবরকম ধর্মীয় প্রভাব অস্বীকার করে প্রতিটি নাগরিককে সমান সম্মান, খাদ্য, চাকুরী দেয়াটাকে বলে ধর্মনিরপেক্ষতা| নাগরিক সম্মানিত বা অসম্মানিত হবেন তাঁর কাজে| কোন ধর্ম বহন করেন তার ওপর নির্ভর করে বেশি শাস্তি বা শাস্তি মুকুব –এটা হচ্ছে সেরফ ভারতীয় গুষ্টির পিন্ডি ধর্মনিরপেক্ষতা| আরো দেখবেন — তাতেও ওই ব্রিটিশিয় কায়দা| ব্রিটিশ যে দুটো ধর্মের মানুষ নিয়ে পুতুল খেলেছে, নবাব বা রাজার ইচ্ছেমত দুটো দেশ গড়েছে ঠিক সেই কায়দায় আপনারা দেশের মধ্যেই দেশ গড়ে যাচ্ছেন| আরো এক পরম আশ্চর্য –বৌদ্ধ,জৈন, খ্রিস্টান,শিখ এঁরা কিন্তু এই সুবিধে দেওয়া বা সুবিধে কেড়ে নেয়ার কোনো ব্যাপারেই খুব একটা এলেন না| হি হি —এঁদেরও ধর্ম আছে কিন্তু| কিন্তু সংখ্যায় কম হওয়ায় এঁদের নিয়ে ভট্টাভোটাং খেলার মজা কম| তাই না?
Now My Next Point —অন্যায্য তোষণ| কয়েনের উল্টোপিঠে এবার হিন্দু সন্ত্রাস| জাতিবৈরিতা থেকে প্রতি -জাতিবৈরিতা| Simple| বর্তমান সরকার আবার হাওয়ার সাথে কুস্তি লড়ে সিলেবাস থেকে ঘ্যাচাং করলেন| হ্যাঁ —ওটা তো কেবল সিলেবাসে প্যারাগ্রাফ হয়েই ছিল| তাই ওটুকুই। দিলেন শেষ করে| নাগরিকের অনুভবে কবে কোন সরকার তৈরী করেছিলেন সত্য ধর্মনিরপেক্ষতা? বরং তৈরীর possibility দেখা দিলে ভয়ে যদি তা দাবিয়েও দেন — আশ্চর্য হব না|
ভারতে ধর্মনিরপেক্ষতার নামে যা ছিল সেটা পূর্ববর্তীদের নিজের নিজের পছন্দমত ধর্মীয় তোষণ বা বিদ্বেষের Definition তৈরীর একটা Continuous Process| মানুষের অনুভবে থাকলে আর সে অনুভবকে নিজের ভাবলে কার সাধ্য তাকে মোছে?
ভালোবাসব না— কারণ ও ধর্মান্ধ হিন্দু| ভালোবাসব — কারণ ও শিক্ষিত মুসলিম| বলতে পারবেন—-শুধু ধর্মান্ধ বা শুধু শিক্ষিত কেন হতে পারবে না একটি মানুষের অলংকার? কেন শোধন করব না মানুষকে মানুষ ভেবেই| ভালোবেসে বুকে টানার বা ভালোবাসাহীন প্রস্তরখণ্ড হয়ে যাওয়ার যুক্তি হবে—“তারা মুসলিম অথবা তারা হিন্দু| “দুই” তারা”র দেশ বানিয়ে ছেড়ে এখন সিলেবাস নিয়ে মাথাব্যথা?
এবার একটা দু লাইনের গপ্প—ঠাকুরদা অশোক তেরো বছরের রাধারানীকে বিয়ে করে বাড়ি ঢুকছেন| গাঁয়ের প্রবীণ মুসলিমরা বাড়ির মধ্যে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে আশীর্বাদ করবেন বলে| তাঁদের একজনের সামনে অশোক চাপা গলায় রাধাকে বললেন— ” পায়ে মাথা ঠেকিয়ে প্রণাম কর| ইনি আমার বাবার চেয়েও বড়|”
বলেননি —“আমি কিছুদিন পরেই সরকারি চাকরি করতে যাব| মুসলিম বলে তুমি এঁকে বার চারেক প্রণাম করে ব্রিটিশের ঘরে চাকুরিটি আমার পাকা করে দাও|”
খুঁজব| পাগলের মত খুঁজে ফিরব এই ধর্মাশোকদের|
আর সবজিকাটার যন্তর দিয়ে কাটব কয়েনের দুটো পিঠ|
কয়েনশুদ্ধু জঞ্জালের ভ্যাটে| যেখানে কলার খোসা ফেলি — যাতে পা পিছলে না মরি|
সম্মান করার সাথে মনের যোগ, সম্মান দেখনোয় কিছু পদ্ধতি – জানান দেবার তরিকা মাত্র। জাতীয় পতাকা বা জাতীয় সঙ্গীত যে ভাবে ব্যবহার হয় তাতে মনের যোগ থাকার কোন কারণই নেই। ও একটা দেখানোর বিষয়। না হলে সিনেমা দেখার আগে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার মত হাস্যকর ব্যবস্থা চালু হত না। ঠিক বলেছো এই বোধ অনুভূতি নির্ভর।