এটি একটি দীঘো প্রতিবেদন
কোষ্ঠ বড় কঠিন।|
ঘাম বিনবিন ঘাম বিনবিনবিন||
আয় রে পটি আয়||
লগন বয়ে যায়||
মনে মনে কবিতাটা ভেবে নিয়ে আমাদের বহুল বিখ্যাত হাতুড়ে মনোজের দোকানের ক্যামেলিয়া সিনেনসিস পান করছিলেন। এ্যামন সময়ে বাধলো গন্ডগোল। এক হিলহিলে যুবক প্যান্টের কোমরে একটা দিশী মদের প্ল্যাস্টিকের বোতল ঢুকিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলো। সবাই তাই যায়- হাতুড়েও। কিন্তু টাইট প্যান্টের চাপে বোতল গ্যাছে ফটাস করে ফেটে।
সেই হিলহিলে মহা চিৎকার জুড়ে দিলো “বোৎল ফাটা ছিলো। নতুন বোৎল চাই ….”
দোকানের সুব্রত আত্মপক্ষ সমর্থনে গলা বাজাতে শুরু করলো “টাইট পেন্টুলের চাপে বোতল ফেটে গ্যাছে”
এই সমস্যা মেটার আগে হাতুড়ের খ্যাতনাম্নী পিসিমা এসে চোটপাট শুরু করলো “ওদিকে সব বসে আছে আর আপনি এখানে মারামারি দেখছেন? স্যর, বলিহারি আক্কেল আপনার…”
হিলহিলে লোকটা ঝঙ্কারময়ীর ঝঙ্কারে ভয় পেয়ে ফাটা বোতলটাই গুটিয়ে গুটি গুটি চলে গ্যালো। হাতুড়ে নীরবে পিসিমার পদাঙ্ক অনুসরণ করলেন।
ঘরে ঢুকে দ্যাখেন সুনীলবাবু বেজায় ব্যাজার মুখে বসে আছেন। সম্ভবতঃ হাতুড়ের জন্মেরও আগে থেকেই উনি প্রতি মাসে হাতুড়েকে দ্যাখাতে আসেন। এখন ছিয়াশী। দাঁত ফকফক, কানের অবস্থাও তথা ইব চ (তথৈবচ)। “আমার পটি পরিষ্কার হচ্ছে না। আমার ছোড়দা বলেছিলো ব্রাউনিয়া খেতে কিন্তু ঐ তিন দিন চারদিন পর পর পাইখানা হচ্ছে….”
হাতুড়ে বললেন “তাতে কি বা এসে গ্যালো? আমি তো সপ্তাহে একদিন ঐ রোববার দিনটায় পটি করি”
সুনীলবাবু ভয়ানক অবাক হলেন “ধ্যাৎ, বাজে কথা ….কিন্তু ক্যানো?”
“দ্ধুর প্রতিদিন ঐ সব করতে গেলে ফাল্টু সময় নষ্ট হয়। তার্চেয়ে রবিবার বসলাম একবারেই সপ্তাহের সব ময়লা ক্লিয়ার…আর তাছাড়া ভয়ও লাগে…..”
সুনীলবাবুর কর্ণবিপর্যয়ের কারণে হাতুড়ের বক্তব্য খুপ্রির বাইরের সকলেই শুনতে পাচ্ছে। সবাই উৎকর্ণ।
সুনীলবাবুর দন্তহীন মূর্ধা ও চোয়াল বিষ্ময়বোধক ভাবে ঝুলে পড়ে “কিসের ভয়?”
“আসলে আমি কমোডে বসে চাপ দিলেই আশ্চর্যজনকভাবে পাশের বাড়ির প্রেসার কুকার তীব্র তীব্র সিটি দিয়ে বেজে ওঠে আর আমি ভয়ানক চমকে চমকে উঠি …” খুপ্রির বাইরে একটা সমবেত ফিকফিক শব্দ হয়।
“কিন্তু …. কিন্তু..” সুনীলবাবু কিন্তু কিন্তু করতে থাকেন “ অতোদিন ইয়ে না করে আপনার ইয়ে মানে অসুবিধে হয় না?”
হাতুড়ে দন্তবিকাশ করেন (যদিও মুখোশের বাইরে থেকে কাঁঠাল বিচির মতো দন্তশোভা দৃশ্যমান হয় না) “দেখুন সুনীলদা আমাদের পায়খানা হওয়া একটা কন্ডিশনড রিফ্লেক্স একটা ইয়ে বিশেষ ধরনের জটিল প্রতিবর্তী ক্রিয়া। প্রতিনিয়ত আপনার পায়খানার থলি মানে অ্যানাল ক্যানেলে পায়খানা জমা হচ্ছে। একটা বিশেষ সময়ে বা একটা বিশেষ পরিমাণে জমা হলে তখন পায়খানা পায়। অর্থাৎ ওখানকার ভাল্ভ (এটা সহজার্থে প্রযোজ্য) ঢিলে হয় – মাসলে চাপ পড়ে। কারো আবার একটা বিশেষ সময়ে সিগারেট খেলে বা চা খেলে পায়খানা পায়। ঐ যে পাভলব স্যরের ঘন্টা বাজানো মনে আছে? এমনিতে ঘন্টা বাজলে কোনও কুকুরের জিভে জল আসে না- ঘন্টা তো থোড়াই কোনো আর খাদ্যবস্তু নয়কো। কিন্তু পাভলব স্যর যখন ঘন্টা বাজাতেন তখনই কুকুরকে খেতে দিতেন।”
ইতঃমধ্যে সুনীলবাবুর মুখোশ আনমনা নারীর আঁচলের মতো নাক ছাড়িয়ে দন্তহীন মূর্ধা প্রকাশ করে দ্যায় “তারপর?”
“এরপর দ্যাখা গেলো ঘন্টা বাজালেই কুকুরের হজমের লালারস ঝরতে থাকে। ঠিক ত্যামনই আমাদের পায়খানার ব্যাপারটা। সব সময়েই জমে থাকে। কিন্তু বিশেষ সময়েই কেবল আমাদের ইয়ে পায়। সুতরাং ওখানে কিঞ্চিৎ কিঞ্চিৎ কথঞ্চিত পায়খানা জমে থাকলেও ক্ষেতি নেই।”
সুনীলবাবুর তবু কিন্তু কিন্তু ভাবটা যায় না “কিন্তু কিন্তু আমার তো আগে…. আগে….”
হাতুড়ে ঘাড় নেড়ে নেড়ে বলেন “হ্যাঁ, আগে ঠিকঠাক হতো, ক্যানো না আগে আপনার নাড়িভুঁড়ি ইত্যাদি যন্ত্রের যে পরিমাণ নড়াচড়া ছিলো এখন সেই নড়াচড়ার ক্ষমতা কমে গেছে। তাই নাড়িভুঁড়ির অতি ধীর গতিতে নড়াচড়ার কারণে পায়খানা আস্তে আস্তে তৈরি হয়। আর নাড়িভুঁড়ির শেষ অংশের কাজ হোলো পায়খানা থেকে জল শোষণ করা। তাই শোষিত জলহীন পায়খানা বয়স্কদের ক্ষেত্রে অত্যন্ত কঠিন হয়। সেক্ষেত্রে সুনীলদা আপনি ইসপগুল জাতীয় কিছু একদম নিয়মিত খাবেন” এখানে একটুখানি হাতুড়ের হাসি, “যতটা খেলে ঠিকমতো পায়খানা হয় ততটাই খাবেন …. আর ইয়ে সস্তা দেখে কিনবেন”
অখুশি সুনীলদা ধীর গতিতে বিদায় প্রস্তুতি নিতে থাকেন। পিপিইর ভেতরে হাঁফসিয়ে ওঠা হাতুড়ে তৃষিত চক্ষে বোতলের দিকে চেয়ে থাকেন। এইসব ধড়াচূড়া পরে পান করাও নাস্তি। সুতরাং প্রতীক্ষায় থাকেন।
ওনার পরবর্তী কাস্টমার এক দম্পতি। মুখোশধারী সুন্দরী বলেন “ঈসসস গোপা বলেছিলো কি মিষ্টি হাসি আপনার – সত্যিই তাই…”
হাতুড়ে মহিলার রঞ্জনরশ্মির মতো চক্ষুর ক্ষমতা দেখে বিষ্মিত হতেও ভুলে যান। “মুখোশের তলায় হাসি” জটায়ুর কোনও গল্প ছিলো কিনা উনি ভাবতে থাকেন।
ভদ্রলোক হতশ্বাসে বলেন “হাতুড়েবাবু, আমার পায়খানা হয় না”
হাতুড়ে বাস্তবে ফেরেন “কবে থেকে?”
ভদ্রলোক মাথা নিচু করে বললেন “এক বছর”, বলে বিষণ্ণতর থেকে বিষণ্ণতম হয়ে পড়েন।
হাতুড়ে চক্ষু চড়কগাছ করে বলেন “এ্যাক বছরে এক বারও…… ????” ওনার আর বাক্যস্ফূর্তি হয় না। সব স্ফূর্তিই কমে আসে।
ভদ্রলোক আশ্বস্ত করেন “না হয়েছে”
“কবে?” হাতুড়ে একটু য্যানো আশার আলো দেখতে পান।
“রোজই হয়….কিন্তু পোস্কার হয় না …. সব কিছু ব্যবহার করে দেখেছি কিন্তু পোস্কারই হয় না”
হাতুড়ে ফিসফিস করেন “সার্ফ নিরমা জেন্টিল এসব ব্যবহার করে দেখেছেন?”
ভদ্রলোক অবাক হ’ন “এসব কী বলছেন মশাই হাতুড়েবাবু?”
হাতুড়ে লজ্জা লজ্জা ভাবে বলেন “ঘটনাটা আদ্যপ্রান্ত পুঙ্খানুপুঙ্খ বলুন দেখি …”
“বলার আর কী আছে? কেবল ইয়ে পায় আর করার পরেও মনে হয় ঠিক মতো হোলো না। কোনও স্যাটিশফ্যাক্সন নেই মশাই….”
হাতুড়ে দীর্ঘশ্বাস ফ্যালেন “সত্যিই জীবনে কোন জিনিসটায়ই বা স্যাটিশফ্যাক্সন আছে বলুন তো?” তারপর জিগ্গেস করেন “কিসের মতো পায়খানা হয়? মানে ক্যাঁচকলার মতো গোটা গোটা, না ছাগলের নাদির মতো, না খিচুড়ির মতো নাকি দৈয়ের মতো?”
ভদ্রমহিলা খিলখিলখিলিয়ে হাসেন “ম্যাগ্গোঃ ম্মা…”
ভদ্রলোক মুখ ভ্যাটকান “দৈয়ের মতো…”
হাতুড়ে সঙ্গে সঙ্গে পরবর্তী প্রশ্ন করে ফ্যালেন “পেটে মোচড় দিয়ে পায়খানা পায়?”
ভদ্রলোক গভীর বেদনায় জানান “হ্যাঁ সব সময় উফফফ এ ব্যথা কী যে ব্যথা….”
“রাতে কবার পায়খানা হয়?”
“রাতে? রাতে বিশেষ হয় না”
হাতুড়ে বাবু ওনাকে শুইয়ে দেখে ওষুধ দ্যান। “তিন দিন ওষুধ খান ….মাস চার পাঁচ ভালো থাকবেন তারপর আবার হতে পারে তখন আমাকে ফোন করে আবার খেতে পারেন। আর যদি এ্যাক সপ্তায় না সারে তাহলে কোলোনোস্কোপি করে দেখতে হবে”
ভদ্রলোক চিন্তিত হন “কেলো করেছে”
ভদ্রমহিলা শেষ প্রশ্ন করেন “হ্যাঁ গো হাতুড়েদা, এটা ক্যানসার নয় তো?”
“দেখুন এ্যাক বছরের অসুখ কিন্তু সে তুলনায় হিমোগ্লোবিন কিছুই কমে নি – বরং খুব ভালো আছে। লিভারে বা অন্য কোথাও কোনও শক্ত লাম্প পাইনি তবু এক সপ্তায় একটুও না কমলে কোলোনোস্কোপি আর দু একটা পরীক্ষা করবো – সবই লিখিত পড়িত – লেখা আছে”
আরও একজন কাস্টমার এসেছে। সে আবার যন্ত্রণাকাতর। জানা গ্যালো তিনদিন পায়খানা হচ্ছে না তাই গ্যাস থেকে তিনদিন ধরেই পেটে ভয়ঙ্কর ব্যথা এবং বমি হচ্ছে।
হাতুড়ে বড়ো অদ্ভুত সব প্রশ্ন করেন (প্রাচীন অরণ্যের প্রবাদ) তাই অনেকে ওনাকে ছিটেল (ছিটিয়াল) বলে থাকে। আজও অদ্ভুত প্রশ্নটা করলেন “আপনার বমিতে পায়খানা বেরোচ্ছে?”
রোগীর সঙ্গী বৌ এবং মা (কার মা কে জানে?) দুজনেরই বাক্য হরে যায়। রোগী বলে “শেষবার য্যানো মনে হলো…” এটুকু বলতেই সে ভারী কাহিল হয়ে পড়ে।
আশ্চর্যজনক ভাবে হাতুড়ে বুকে না বসিয়ে স্টেথোটা রোগীর পেটের ওপর বসিয়ে খুব মন দিয়ে কী য্যানো শুনতে থাকেন (সাধে কি লোকে হাতুড়ে বলে নাকি?) যাই হোক রোগী দেখে লিখতে লিখতে বলেন “একে এক্ষুণি সার্জেনের কাছে নিয়ে যান। এর নাড়িভুঁড়ির শেষ প্রান্তে অবস্ট্রাকশন হয়েছে …. আমার ভালো লাগছে না …. তিরিশ বছর বয়স তো তাই …”
বিহ্বল মা আর বৌ রোগী নিয়ে বিদায় হয়। হাতুড়ে স্বগোতোক্তি করেন “খেল খৎম পৈসা হজম” তারপর খালপাড়ে নিজের বাড়িতে ঢুকে চিৎপাৎ হয়ে পড়েন।
দূরে কোথাও পাড়াকু মহিলারা চিৎকার করছেন। কোন্ য্যানো বৌটি আঙ্গিনার কলে বাসন মাজছে। হয়তো ডান কাঁধ দিয়ে কপালের ঘাম মুছছে। দূরে কোন বারান্দায় নাইটি পরা একটি মেয়ে আনমনে নাক খুঁটতেই থাকে। ওনার সুন্দরী কৌকৌ এসে সবৎসা গাভী যেমন বাছুরের গা চেটে দ্যায় তেমনি করে ওনার টাক চাটতে থাকে। ওটাও তো মেয়ে। কুকুর বলে কি নারী নয়?
অসাধারণ
ধন্যবাদ