আমরা রাত্রি জাগছি
হাতে হাত জোট বেঁধে থাকছি
বিভেদের জাল ছিন্ন ভিন্ন করে মুক্তি সূর্য আঁকছি
গৌতম সিনহার কথা ও সুরে ‘সিঙ্গুর প্রতিবাদী কণ্ঠ’র এই সমবেত গান দিয়ে গত ২৮ জুন সিঙ্গুরে বৃহত্তর সিঙ্গুর অভয়া মঞ্চের ডাকে শুরু হয় ‘জনতার বিচার সভা’ নামে প্রতিবাদ কর্মসূচি। অভয়া খুনের যথাযথ বিচারের দাবি, সেই সঙ্গে সাম্প্রতিক কালে ঘটে যাওয়া কালীগঞ্জের শিশু কন্যা তামান্নার খুন এবং কসবা আইন কলেজের ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় যুক্ত দোষীদের গ্রেফতার ও কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়ে শনিবার সিঙ্গুর এল আই সি অফিসের কাছে এক প্রতিবাদ সভা সংগঠিত হয়। অভয়া মঞ্চের ডাকা এই প্রতিবাদী সমাবেশে সিঙ্গুর নাগরিক সমাজের স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগিতায় প্রতিবাদের স্বর ছড়িয়ে পড়ে বিস্তীর্ণ এলাকায়। প্রবল বর্ষণ, স্থানের অপ্রতুলতা, শব্দ প্রক্ষেপনের অসুবিধা – এই সব কিছু অগ্রাহ্য করে সভা চলে সন্ধ্যা ৫টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত। অপ্রশস্ত জনবহুল এবং যানবহুল রাস্তা প্রতিবাদে শামিল জনগনের মনোবল এবং প্রত্যয় কে কমাতে পারেনি।
সভায় বক্তব্য রাখেন অভয়া মঞ্চের আহ্বায়ক ডাঃ তমোনাশ চৌধুরী, ডাঃ পুণ্যব্রত গুণ, মনীষা আদক , কামদুনির প্রতিবাদী শিক্ষক প্রদীপ মুখার্জী, ডাঃ উদয়ন দাস ,ডাঃ উৎপল ব্যানার্জী, ডাঃ আশফাকুল্লা নাইয়া ,বিশিষ্ট নাট্যকর্মী সীমা মুখার্জী , শিক্ষক শৈবাল ব্যানার্জী, আর জি কর হাসপাতালে ‘Cry of the Hour’ আবক্ষের স্রষ্টা শিল্পী অসিত সাই, নাট্যকর্মী এবং জনসংস্কৃতি নাট্য প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার সঞ্জয় গাঙ্গুলি এবং অনলাইনে মঞ্চে লাগানো স্ক্রিনে অভয়ার বাবা এবং মা। দক্ষিণ গড়িয়ার নাট্যদল ‘নাটককারী’ তাদের পরিচিত নাটক ‘পথেই হবে পথ চেনা’ মঞ্চস্থ করে। সমবেত শিল্পের মাধ্যমে ধর্ষণ এবং ত্রাসের সংস্কৃতির বিনাশ ঘোষণা করেন তরুণ শিল্পী রা। একটি প্রতিবাদী কবিতা পরিবেশন করেন আকাশবাণীর ঘোষক কৌশিক পাত্র। এই প্রতিবাদ সভা সঞ্চালনা করেন প্রিয়াঙ্কা ঘোষ ও জিষ্ণু মুখার্জী।
অভয়া মঞ্চের অন্যতম আহবায়ক মনীষা আদক সহ কলকাতা ও বিভিন্ন জায়গা থেকে মঞ্চের আরও বহু সদস্য উপস্থিত ছিলেন এই প্রতিবাদ সভায়।
অভয়া মঞ্চের আহ্বায়ক ডঃ তমোনাশ চৌধুরী, ডঃ পুণ্যব্রত গুণ এবং অভয়া মঞ্চ ও জয়েন্ট প্ল্যাটফরম অফ ডক্টরস এর অন্যতম সদস্য ডাঃ উৎপল ব্যানার্জী তাঁদের বলিষ্ঠ বক্তব্যে অভয়ার বিচার কে কেন্দ্র করে দুর্নীতির জাল বিস্তার এবং সারা রাজ্য জুড়ে প্রশাসনিক মদতে নারী নিগ্রহ ও ধর্ষণের ঘটনা গুলিকে তুলে ধরেন। ডঃ তমোনাশ চৌধুরীর গভীর যন্ত্রণা আর আবেগমথিত ভাষণ সমাবেশে উপস্থিত শ্রোতাদের মধ্যে প্রতিবাদের বহ্নি ছড়িয়ে দেয় । ডঃ পুণ্যব্রত গুণ আগামী ৯ জুলাই এবং ৯ অগাস্টের কর্মসূচি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করে প্রতিবাদের এই শিখা কে দাবানলে পরিণত করার আহবান জানান।
এই প্রতিবাদ কর্মসূচি শেষ হয় ডঃ তরুণকান্তি করের উদাত্ত পরিবেশনায় সৃজন ভট্টাচার্যের লেখা গান দিয়ে –
এসো হে বন্ধু গানে গানে বলা যাক্ না,
ছড়িয়ে দেবো সে শিকল ভাঙার মন্ত্র।
আমার চেতনা এখনও ভোলেনা বলতে,
রাষ্ট্র? সে তো এখনও শোষণযন্ত্র।