১ লা জুলাই, ২০২৫
ডাক্তারি আর যাই হোক আর খুব সম্মান জনক পেশা নয়। কোনোদিনই ছিল না। ট্রেনে, বাসে, চায়ের দোকানের আলোচনায় যে পেশার সবচেয়ে বেশি সমালোচনা শোনা যায় সেটা নিঃসন্দেহে ডাক্তারি। ৯০% মানুষই বিশ্বাস করেন চিকিৎসকেরা কাটমানির লোভে অপ্রয়োজনীয় ওষুধপত্র লেখেন। রক্ত ও অন্যান্য পরীক্ষা নিরীক্ষা লেখেন।
দিন দিন চিকিৎসা ব্যবস্থা যে অবস্থায় পৌঁছচ্ছে তাতে সাধারণ মানুষের এই ভাবনাকে খুব একটা দোষ দেওয়া যায় না। স্বাস্থ্য মানুষের মৌলিক অধিকার। অথচ এত করুণ ভাবে মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন খুব ক্ষেত্রেই দেখা যায়। এ দেশে শুধু টাকার জোরে ৯০ বছরের মৃতপ্রায় রোগীকেও দিনের পর দিন অত্যাধুনিক আইসিইউ’তে রেখে মেডিকেল বোর্ড গঠন করে চিকিৎসা করা হয়। আবার দরিদ্র পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি জটিল রোগে মেডিকেল কলেজের মেঝেয় পড়ে থাকেন জুনিয়র চিকিৎসকদের ভরসায়। তাঁর আইসিইউ বেডের দরকার হলেও সুপারের সবুজ কালির জোরে সেই বেড পেয়ে যান নেতা মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ কেউ।
এই অবস্থার জন্য আমরা চিকিৎসকেরাই দায়ী। চিকিৎসকেরা ছাত্র হিসাবে প্রায় সকলেই ভালো ছিলেন। এই যে আর জিকরের কুখ্যাত প্রিন্সিপ্যাল সন্দীপ ঘোষ, তিনিও ছাত্র হিসাবে ভয়ানক ভালো ছিলেন। কিন্তু ভালো ছাত্র মানেই যে ভালো মানুষ নয়, এটা এতদিনে প্রমাণিত সত্য। মুশকিল হলো সন্দীপ ঘোষ, বিরূপাক্ষ বিশ্বাস, অভিক দের মতো চিকিৎসকেরাই এখন স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মুখ হয়ে উঠেছেন। এনারাই কীসব সরকারি পুরষ্কার টুরস্কার পাচ্ছেন।
অতএব চিকিৎসক হিসাবে আমাদের গর্ব করার মতো কিছুই নেই। আমাদের বোন অভয়াকে মরতে হয়েছে কিছু চিকিৎসকদের জন্যই। কিছু চিকিৎসক জোট বেঁধেছিলেন। পেশার সম্মান ফিরিয়ে আনার জন্য ও আমাদের বোনের বিচারের জন্য লড়েছিলেন। স্বাস্থ্য-ক্ষেত্রে দুর্নীতির দূর করার জন্য লড়েছিলেন। জনসমর্থনও পেয়েছিলেন প্রচুর। কিন্তু শেষপর্যন্ত কিছুই করে উঠতে পারেন নি।
পারা সম্ভবও ছিল না। কারণ অধিকাংশ চিকিৎসকই মধ্যবিত্ত শ্রেণীর। মোটামুটি একটা নিরাপদ বর্মের মধ্যে থাকতে পছন্দ করেন। ফলে শাসক দলের ঘনিষ্ঠ কিছু চিকিৎসক তাঁদের উপর নির্ভয়ে ছড়ি ঘোরান। আর জি কর কাণ্ডের পর জানা গেছে, এই সব চিকিৎসকদের পার্টিতে প্রথম দ্বিতীয় বর্ষের ডাক্তারি ছাত্রীদের মদ পরিবেশন করতে হতো। চটুল হিন্দি গানের সাথে নাচতে হতো। এরপরও কী করে আমরা চিকিৎসকেরা নিজেদের পেশাকে মহৎ পেশা বলব?
যেটুকু বাদ ছিল, সেটুকুর ষোলোকলা পূর্ণ করার জন্য ব্যবসায়ীরা উঠে পড়ে লেগেছেন। ব্যাঙের ছাতার মতো বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হচ্ছে। কোটি খানেক টাকার বিনিময়ে সেখান থেকে ডাক্তারি পাশ করা যাচ্ছে। নিটেও পরীক্ষা নিয়ে দুর্নীতি চলছে। ফলে মেধাবী ও আদর্শবান ছেলেরা আর চিকিৎসক হতে পারছে না।
এই অবস্থায় দিনগত পাপক্ষয় করে চলেছি। চিকিৎসক জীবনের শুরুতে যে সব স্বপ্ন দেখতাম তাঁর আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। একটাই চাওয়া অভয়া, আমাদের চিকিৎসক বোনটা যেন ন্যায় বিচার পায়। চিকিৎসক দিবসে কেউ শুভেচ্ছা জানালে কেমন অস্বস্তি লাগে।
তবু মাঝে মাঝে চোখ ভিজে যায়। জটিল রোগে ভোগা এক বোন শুধু প্রণাম করার জন্য দেখা করতে আসে। ক্যানসারে আক্রান্ত এক কাকু বলেন পরের বছর বাঁচব কিনা ঠিক নেই – এ বছরের চিকিৎসক দিবসের শুভেচ্ছা। যে ভাইটি সারা বছর ধরে অনাত্মীয় অসুস্থ বৃদ্ধ বৃদ্ধাদের দেখাতে নিয়ে আসে, তাঁদের সারা বছর ওষুধের যোগান দেয়- সেও আজ এসে ঘুরে যায়।
আস্তে আস্তে সবকিছুতেই অনুভূতি কমে আসছে। চিকিৎসক দিবস নিয়েও। এখন শুধু একটাই চাওয়া আমাদের বোন অভয়া বিচার পাক।
ডক্টর মৌ এর এই বাংলায় ধর্ষকদের ঠাঁই নেই
ঠাঁই নেই