ডা: বিধান চন্দ্র রায়ের জন্মদিনে আজ মেডিকেল কলেজের বিভিন্ন বহির্বিভাগে সব চিকিৎসকরা রোগীদের চিকিৎসা করেছেন। সিরিয়াস কিছু রোগীকে ভর্তি করতে না পারায় কিছু সমস্যাও হয়েছে।
মেডিকেল কলেজে দুটি ভবনের কোভিড ওয়ার্ডের ৫০০ শয্যা বাদ দিয়েও আরও বাকী পাঁচ ছটি বিল্ডিংয়ের ১২০০ বেড খালি পড়ে আছে। অধিকাংশ কর্মচারী কর্মহীন হয়ে বসে আছে। ননকোভিড রোগীদের জন্য লক্ষ লক্ষ টাকার রাশিরাশি ওষুধ ও যন্ত্রপাতি অব্যবহারের কারণে মেয়াদ-উত্তীর্ণ হয়ে নষ্ট হতে বসেছে। এত বেড খালি, অব্যবহারের কারণে ওষুধ পচে যাচ্ছে ,যন্ত্রপাতি নষ্ট হচ্ছে ,অধিকাংশ ডাক্তার ও অন্যান্য কর্মচারীরা কাজ পাচ্ছেন না বসে আছেন অথচ মুমূর্ষু রোগীর ভর্তির প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও কলেজ-হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগী ভর্তি করতে দিচ্ছেন না-যদিও কলেজ কাউন্সিলে সব বিভাগীয় প্রধানেরা অবিলম্বে নন-কোভিড রোগীদের হয়রানি ও অপমৃত্যু রুখতে খালি শয্যাবিশিষ্ট ডিপার্টমেন্টগুলিতে রোগী ভর্তির সুপারিশ করেছেন।রোগীরা হয় বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছেন কিম্বা দালালের পাল্লায় পড়ে নার্সিংহোম গিয়ে ধনে-প্রাণে শেষ হয়ে যাচ্ছেন।
অ-চিকিৎসক কিছু ব্যক্তির অজ্ঞাত স্বার্থে এখানে ভর্তি হতে আসা রোগীদের নিকটবর্তী বিশেষ কিছু নার্সিংহোম, প্রাইভেট হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
কি কারণে জনগণের প্রদেয় করের টাকায় তৈরী এহেন ঐতিহ্যমন্ডিত পরিকাঠামো কোভিডের পাশাপাশি নন-কোভিডের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে না তা দুর্বোধ্য।
আজ ১লা জুলাই, ২০২০ চিকিৎসক দিবসে মেডিকেল কলেজের জুনিয়ার ডাক্তাররা অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করেছেন। তাঁরা কি চান পড়ে নেওয়া যাক তাঁদেরই কলমেঃ–
“ডাক্তারি শিখতে গিয়ে বারবার আমাদের শেখানো হয় ফার্স্ট ডু নো হার্ম। মানে তোমাকে কিচ্ছু করতে হবে না দরকার হলে কিন্তু পেশেন্টের খারাপ কিছু যাতে না হয় এটাই প্রাথমিক কনসার্ন হওয়া উচিৎ সবসময়।
কোভিডের অতিমারিতে হঠাৎ করেই মেডিকেল কলেজকে কোভিড স্পেশাল যখন করে দেওয়া হয় তখন ভীষণ গর্ব হয়েছিল। এই ইনস্টিটিউশনের একজন ছাত্র এবং একজন ডাক্তার হিসেবে। তারপর থেকে পিপিইর অপ্রতুলতা থেকে শুরু করে ইনফ্রাস্ট্রাকচারগত হাজার সমস্যা ছাড়িয়েও আজ ৩ মাস ধরে নিরলস কাজ করে চলেছেন মেডিকেল কলেজের সমস্ত ইন্টার্ন,হাউসস্টাফ,পিজিটি,নার্স সহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীরা। এরকম ক্রিটিকাল সময়ে পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্যব্যবস্থায় অন্যতম ইম্পর্ট্যান্ট রোল প্লে করেছে মেডিকেল কলেজ, বাঙুর,বেলেঘাটা আইডির মত হাসপাতাল।
কিন্তু আজ ৩ মাস পর যখন লকডাউন উঠেই গেছে প্রায়, কোভিড মাথার বালিশ, পাশ বালিশ সব হয়ে গেছে, আমরা সবাই বুঝে গেছি যে কোভিড আমাদের সাথে থাকতে চলেছে, তখন একটা টার্শিয়ারি সেন্টার যেখানে প্রতিদিন হাজার হাজার পেশেন্ট আসেন, তাঁদের ওটি হয়,তাঁদের কেমো দেওয়া হয়, তাঁদের রক্ত চলে প্রতি সপ্তাহে, ডেলিভারি হয় হাজার হাজার মায়ের– সেই সব কিছু বন্ধ রেখে শুধুই কোভিডের চিকিৎসা করা কতটা আইডিয়াল বার বার সেই প্রশ্ন ওঠে।
ডাক্তার আর পেশেন্ট সম্পর্কের উন্নতির কথা আমরা বারবার বলি,একসাথেই এই স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নতির কথা আমাদের একসাথে বলতে হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
তাই যখন দেখি মেডিকেল কলেজের মাত্র ২ টো বিল্ডিং বাদ দিয়ে বাকি সমস্ত বিল্ডিং আজ খাঁ খাঁ করছে আর তার সাথে অসংখ্য ফলো আপ পেশেন্টের ফোন আসছে,তাঁরা তাঁদের সমস্যার কথা জানাচ্ছেন তখন উদাসীন থাকা যায় না।
এই কথা কলেজ কাউন্সিলে বলতে গেলে যখন শুনি আমাদের স্যার, ম্যাডাম-রাও একই কথা বিশ্বাস করেন, তাঁরাও মনে করেন যে মেডিকেল কলেজে কোভিড এবং নন কোভিডের চিকিৎসা একই সাথে শুরু করা উচিৎ তখন বুকে বল পাওয়া যায়, নতুন উদ্যম আসে।
কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায় যে, মেডিকেল কলেজের সমস্ত ডাক্তার,অথরিটি সবাই কোভিডের চিকিৎসার পাশাপাশি নন কোভিডের চিকিৎসা করতে চাইলেও সেটা ফলপ্রসূ হচ্ছে না কেন, আর তখনই শুনতে পাওয়া যায় ‘ওপরমহল’ এর কথা।
তাঁরা নাকি মনে করেন আমরা কোভিডের গুরুত্ব বুঝতে পারছি না। সত্যি কি তাই? মানে যে স্বাস্থ্যকর্মীরা পিপিই পরে ডিহাইড্রেটেড হয়েও কোভিডের চিকিৎসা করে যাচ্ছেন অনবরত, তাঁরা কোভিডের গুরুত্ব বুঝছেন না? নাকি ওপর মহল বাকি সব রোগের সম্পর্কে একটু বেশিই উদাসীন?
আমরা, মেডিকেল কলেজের সমস্ত ইন্টার্ন, পিজিটি,হাউসস্টাফরা মনে করি যে মেডিকেল কলেজের মত একটা টার্শিয়ারি সেন্টার কোভিডের পাশাপাশি নন কোভিডের চিকিৎসাও একই সাথে করতে সক্ষম। এবং শুধুমাত্র এর মাধ্যমেই ম্যান পাওয়ার এবং ইনফ্রাস্ট্রাকচারের সঠিক ইউটিলাইজেশন পসিবল।
আর এই মর্মে রোগীদের স্বার্থে, সমস্ত পরিষেবা ঠিক রেখে, ডাক্তারদের, কোন এক অদৃশ্য ওপর মহলের বিরুদ্ধে অবস্থান আজ শুরু হল।
ও আজ আবার নাকি ডক্টরস ডে,রোগীদের স্বার্থে ডাক্তারদের এই আন্দোলন,এই অবস্থান চলছে,চলবে ✊।”