‘পরশু মেডিকেল কলেজের পুলিশ ফাঁড়ির সামনে দিয়ে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলেন এক রোগিনী। ফুসফুসের ক্যান্সার, লকডাউনের কয়েক মাস চিকিৎসা না পেয়ে বেড়ে গেছে। রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ৫ গ্রাম/ডেসিলিটার। তাকে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে রেফার করতে হলো। আমি নিজে উদ্যোগ নেওয়ায় অ্যাম্বুলেন্স পাওয়া সম্ভব হল।’–বলছিলেন মেডিকেল কলেজের এক চিকিৎসক অধ্যাপক।
‘আমরা ট্রাফিক পুলিশের কাজ করছি। মেডিকেল কলেজ এখন যেন ট্রাফিক পুলিশের এক কেন্দ্র যার কাজ রোগীদের বিভিন্ন দিকে পাঠিয়ে দেওয়া।’
‘এবছর নীট উত্তীর্ণ এম ডি/ এম এস এর স্নাতকোত্তর প্রার্থীরা অন্যান্য মেডিকেল কলেজে অপশন দিচ্ছে। আমাদের কম মেধাসম্পন্ন ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হবে।’–বলছিলেন তিনি।
কারণ?
‘এসবই মেডিকেল কলেজের কেবল কোভিড 19 হাসপাতাল হওয়ার দৌলতে। হয়তো এমবিবিএস ভর্তির সময়ে সিট খালি থাকবে অথবা ভর্তি হবেন কম মেধা সম্পন্ন ছাত্র-ছাত্রী।’
‘পড়ানো বন্ধ, হাতে কলমে কাজ শেখা বন্ধ, অপারেশন হচ্ছে না, চিকিৎসার অন্যান্য পদ্ধতিগুলো হচ্ছে না…’
‘আমাদের গর্ব ছিল আমাদের গবেষণা এবং গবেষণাপত্র প্রকাশ। তাও বন্ধ হয়ে গেছে।’
‘করোনা রোগীদের চিকিৎসা করে আমরা আমাদের দায়িত্ববোধের পরিচয় দিয়েছি। তার পুরস্কার কি এই?!’
কেমনটা হলে ভালো হয়–আলোচনা হচ্ছিল তার সঙ্গে। তিনি প্রস্তাব দিলেন করোনা চিকিৎসার বিকেন্দ্রীকরণের–এক সুচিন্তিত প্রস্তাব।
১। কলকাতা ও কলকাতার বাইরে পশ্চিমবঙ্গের সবকটি মেডিকেল কলেজে একটি করে আলাদা ব্লক নির্দিষ্ট করা হোক। সেই ব্লকে 200 টি বেড থাকবে প্রমাণিত কোভিড 19 রোগীদের জন্য আর 100 টি বেড থাকবে সন্দেহজনক জ্বরের রোগীদের জন্য। হাসপাতালের বাকি বেডগুলিতে স্বাভাবিক অন্যান্য পরিষেবা চালু থাকবে।
২। 88 কলেজ স্ট্রিটের মেডিকেল কলেজের কেবল কোভিড 19 তকমা ঘুচিয়ে তার ওপর বোঝা কমানো দরকার। অন্যান্য মেডিকেল কলেজের মতো তাতে সারি (সিভিয়ার একিউট রেসপিরেটরি ইলনেস) বেড থাকুক আর করোনা চিকিৎসা ছাড়া অন্যান্য চিকিৎসা পরিষেবা শুরু হোক। করোনা অতিমারীর মোকাবিলায় মেডিকেল কলেজের রেসিডেন্ট ডাক্তার এবং সর্বস্তরের চিকিৎসাকর্মীরা যে দায়িত্ববোধের পরিচয় দিয়েছেন তা সবার কাছে উদাহরণস্বরূপ।
কিন্তু কতদিন করোনা অতিমারী চলবে তা এখনও অনিশ্চিত। তাই
ক) করোনা ছাড়া অন্য রোগের রোগীদের চিকিৎসা বন্ধ করে রাখা যায় না।
খ) মেডিকেল, নার্সিং, প্যারামেডিকেল সমস্ত রকম পঠন-পাঠন এবং প্রশিক্ষণ বন্ধ হয়ে আছে তিন মাসেরও বেশি সময় হল। আর তা বন্ধ করে রাখা যায় না।
৩। ভারতের সর্বত্র সব চিকিৎসাকেন্দ্রে একটি আলাদা ব্লককে কোভিড 19 চিকিৎসার জন্য রাখা হয়েছে। পাশাপাশি অন্য রোগীদের চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার যাতে ক্ষুন্ন না হয় তাই অন্যান্য পরিষেবা ও চালু আছে। তেমনটাই হোক মেডিকেল কলেজেও।
৪। অন্যান্য মেডিকেল কলেজেও করোনা চিকিৎসার ব্যবস্থা হলে মেডিকেল কলেজ এর উপর চাপ কমবে। তাহলে অন্যান্য পরিষেবা দেওয়া সম্ভবপর হবে।
বন্ধু অধ্যাপক চিকিৎসক আরো বললেন–সরকারের কাজে এগিয়ে এসে যারা নিজেদের ক্যারিয়ারকে বিপন্ন করেছে তাদের সমস্যা যদি সরকার না দেখে তাহলে ছাত্রবিক্ষোভের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
হায়দ্রাবাদের একটি মেডিকেল কলেজকে কেবল কোভিড হাসপাতাল করা হয়েছিল, সেখানে ছাত্র বিক্ষোভ হয়। সম্প্রতি সাগর দত্ত মেডিকেল কলেজে করোনা চিকিৎসার কেন্দ্র শুরু করা নিয়ে ছাত্র-ছাত্রী এবং এলাকার মানুষ বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। সরকার বিবেচক হয়ে উপযুক্ত পদক্ষেপ নিলে এমন বিক্ষোভের সম্ভাবনা থাকবে না।
বাস্তবসম্মত চিন্তাধারা।
ফলপ্রসূ হলে চিকিৎসাব্যবস্হা ও সাধারণ মানুষ উভয়ের লাভ।
কিন্তু অন্য একটা বড় অংশের ক্ষতি। কাজেই, …….
An insightful article. A medical college has many responsibilities and it should not be used as a disease-specific centre for an indefinite period.