শুলকুনি, মথুরাপুর পরপর দুদিন, তার পর দিনই একেবারে ভোর ভোর বেরিয়ে যাওয়া বাউনিয়া। মেডিকাল কলেজের কিছু বন্ধুবান্ধবীর সাথে হাতে হাত কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কানমারী বাজার পৌঁছালাম প্রায় বেলা দশ টা, লঞ্চ করে প্রায় ১ ঘন্টার পথ বাউনিয়া-১, লঞ্চ ছাড়তেই প্রবল বৃষ্টি আর বজ্রপাত শুরু, তার মধ্যে দিয়েই মাঝ নদী চিরে লঞ্চ চলেছে। ভয় যে লাগছিল না এমন নয়, তবুও পৌঁছলাম যখন তখন আমরা সবাই মোটামুটিভাবে ভিজে গেছি।
আমাদের জনা ছয়েক লোককে নামিয়ে বাকীদের নিয়ে লঞ্চ গেল বাউনিয়া-২ তে।
লঞ্চ ঘাট বলে কিছু নেই, পিচ্ছিল এঁটেল মাটি দিয়ে ধসে যাওয়া একটা পাড়, সদ্য সদ্য বৃষ্টির ফলে একেবারে নরম হয়ে রয়েছে। পা দিলেই পায়ের পাতাকে গ্রাস করছে কাদামাটি। বুড়ো আঙ্গুল সামনে দিয়ে পাটাকে গেঁথে আসতে আসতে চলতে হয় বলে শিখিয়ে দিল ওখানকার মানুষ। পাশে এসে হাত কাঁধ ইত্যাদি ধরে আমাদেরকে নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হল। আছাড় খাওয়া অবশ্যম্ভাবী ছিল। ব্যতিক্রম হল না। দু মিনিটের পথ যেতে সময় লাগল প্রায় পনেরো মিনিট।
ক্যাম্প শুরু হল। বৃষ্টি ততক্ষণে কমে গেছে। কিছু মানুষ এলেন কেক বিস্কুট ছাতু আর দুধ নিতে আর কিছু মানুষ এলেন স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে। প্রায় দেড়শো থেকে একশো ষাট পরিবার খাবার পেল আর আমি প্রায় প্রতি পরিবারেরই একজন দুজন করে পেশেন্ট দেখলাম।
অন্য গ্রামের কাজ মিটিয়ে বাকীরা ততক্ষণে আমাদের গ্রামে এসে গেছে, বাবল কাঁটার খোঁচায় দু এক জনের পা কেটে গল গল করে রক্ত বেরোচ্ছে, ওসবকে উপেক্ষা করেই গ্রামবাসীদের বানানো গরম ভাত ডাল আর আলু চিংড়ির তরকারীতে ভরল পেট। মেডিকাল কলেজের ছেলে মেয়েরা গ্রামের মানুষদের প্রয়োজন অনুযায়ী সোলার লাইট দিল।
আবারও উঠলাম লঞ্চ-এ। মানুষগুলো কেমন যেন আমাদের বিদায় জানাতে পাড়ে এসেছিল। কথা দিয়ে এলাম আমরা আবার যাব।
মাঝপথে আরেক নাম না জানা গ্রামে লঞ্চ ভিড়ল। লঞ্চ থেকেই তিরিশটা পরিবারকে খাবার আর স্যানিটাইজড জামাকাপড় দেওয়া হল।
আমাদের পক্ষ থেকে ছিলাম আমি, ঐন্দ্রিলা, রাজা মামা, রানা মামা, গোপাল দত্ত বনিক আর অঞ্জন দত্ত বনিক। মেডিকাল কলেজ থেকে ছিল সমরজিত, দীপায়ন, আলোলিকা, ঊর্ভি, বিশ্বদীপ, শুভার্থী, পৃথিবী, বাপন, দেবলীনা, বিক্রমদা, সুমনদা, আর আমাদের গাইড করছিলেন রবিদা।
বিদায় নেওয়ার পালা এবার। কানমারী পৌঁছলাম তখন সন্ধ্যা ৬ টা ২০ প্রায়। কানে ওদের কথাগুলো তখনও ভাসছে। যে কথায় নেই কোনো দুঃখ, নেই কোনো ক্ষোভ, যদি কিছু থেকে থাকে তা শুধুই অকৃত্রিম ভালোবাসা
“বাবু আবার আসবেন”…