আজ সুবিখ্যাত বোকা দিবসে আসুন কয়েকজন বোকা মানুষের গল্প শোনাই আপনাদের।
প্রথম জন ডা: দেবব্রত সেন। প্রবাদ প্রতিম চিকিৎসক অধ্যাপক SSKM হাসপাতালে ছিলেন। ওই পদগুলি যখন নন প্র্যাকটিসিং হয়ে গেল, স্যার একবাক্যে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করা ছেড়ে দিলেন। বাম আমলের মন্ত্রীকেও ওই SSKM-এ এসে টিকিট করে স্যার কে দেখাতে হত। ওই সময়ের অনেকেই লুকিয়ে চুরিয়ে (বুক ফুলেই) নিষিদ্ধ প্রাইভেট প্র্যাকটিস করে গেছেন। স্যার করেন নি। কোটি টাকার রোজগার খুইয়েছেন। বোকা লোক।
দ্বিতীয় জন সেই সময়ের জলপাইগুড়ির CMOH ভূষণ চক্রবর্তী Bhushan Chakrabarti। হেলথ মিশনের বিভিন্ন চুক্তি ভিত্তিক পদে তখন রিক্রুটমেন্ট চলছে। চাকরি পিছু কমবেশি লাখ টাকার অফার। স্যার হেলায় ফিরিয়ে দিয়েছেন। আমরা যারা পরীক্ষা ইন্টারভিউ ইত্যাদির দায়িত্বে থাকতাম তাদের ওপর স্যারের নির্দেশ ছিল উপযুক্ত প্রার্থীকে যাতে সিলেক্ট করা হয়। কোনো সুপারিশ, কোনো উৎকোচ এন্টারটেইন করা যাবে না। স্যার চাইলে কয়েক লাখ টাকা রোজগার করতে পারতেন, করেন নি। কোনো প্রভাবশালীর হুমকিতে মাথা নত করেন নি। আরেক জন বোকা লোক।
তৃতীয় জন আমার আরেক CMOH, নন্দীগ্রামের তুষার আচার্য্য স্যার Tushar Acharyya । সেই সময় নন্দীগ্রামে CMOH-এর কোনো কোয়ার্টার ছিল না। স্বাস্থ্য ভবন থেকে বদলি হয়ে এসে স্যার উঠলেন একটি BPHC-র একটি MO কোয়ার্টারে। এসেই বললেন, সমুদ্র আমার হাউস রেন্ট যেন কাটা হয়। প্রায় দশ হাজার টাকার মতো হবে amount টা। আমি বলার চেষ্টা করেছিলাম যে অনেকেই তো থাকে কিন্তু HRA কাটায় না। স্যারের এক কথা। কী পরিমাণ বোকা লোক একবার ভেবে দেখুন।
চতুর্থ জন আমার অনুজ, নন্দীগ্রামের সেই সময়ের ডেপুটি CMOH সুপ্রিয় মিত্র Supriyo Mitra । এখন কালিম্পং-এর CMOH পদে। একবার একটি নার্সিং হোম স্বাস্থ্য সাথীর অডিট কেসে গাফিলতি করে ফেঁসে গেছে প্রায় ১৫ লাখ টাকার ক্ষতি। অর্ধেকটা অবধি খরচ করতে রাজি ছিল, সুপ্রিয়কে তাই অফার দিয়েছিল। সুপ্রিয় রাজি হয় নি। হদ্দ বোকা লোক।
পঞ্চম জন আমার অনুজ এই পঞ্চপাণ্ডবের মধ্যে সবচেয়ে জুনিয়ার। এখন যে জেলায় আছি তার ডেপুটি CMOH, প্রণব মজুমদার Pranab Kumar Majumdar । ড্রাগ প্রকিওরমেন্ট আর কনস্ট্রাকশন মিলিয়ে বছরে প্রায় পঞ্চাশ কোটি টাকা বরাদ্দ আমার জেলায়। ওর সই না হলে একটি বিলও পাশ হবে না। ওয়াকিবহালরা জানেন যে টেবিলের তলা দিয়ে ওই টাকার এক পার্সেন্ট উপরি রোজগার করা কোনো ব্যাপারই না। প্রণব অটল আছে। কোনো প্রলোভনের শিকার হয় নি। কী পরিমাণ বোকা একটি বার ভেবে দেখুন।
পঞ্চ পাণ্ডবদের বাইরেও অনেকেই আছেন। সবার কথা লিখতে গেলে সত্যিই মহাভারত হয়ে যাবে। তবে একজনের কথা না বললেই নয়। ছোট্ট একটি বাচ্চা ছেলে যাকে আমরা অনেকেই চিনে ফেলেছি মিডিয়ার দৌলতে। রিক বাগদি। যে নাকি বড় হলে বোকা হতে চায়। হয়ে যা রিক। আমার এবং এই পঞ্চপাণ্ডবের আশীর্বাদ রইল। তুই না খেয়ে মরবি কিনা জানি না। কিন্তু যতদিন বাঁচিস বোকা হয়েই বাঁচিস। মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকিস। সেই বেঁচে থাকার একটা আলাদা আনন্দ আছে যেটা কোটি টাকা দিয়েও কেনা যায় না। বিশ্ব জোড়া এমন সব বোকাদের শ্রদ্ধা প্রণাম ভালোবাসা ও আদর। এপ্রিল ফুলের দিনে ফুল ফুটুক। বোকা শব্দটার নতুন সংজ্ঞা লিখবো আমরা।
দারুণ 🙏💕।
আজই পড়লাম দারুণ 🙏💕।