করোনার সময় লকডাউন চলাকালীন যখন এপ্রিল থেকে নৈহাটির গরুরফাঁড়ি, হাজিনগর এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের সমস্ত প্রাইভেট ক্লিনিক বন্ধ তখনও চলছে স্বাস্থ্য শিক্ষা নির্মাণের যুক্তিসম্মত চিকিৎসা ক্লিনিক। ডাক্তার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আমাদের প্রিয় ডা. পুণ্যব্রত গুণ, স্বাস্থ্য শিক্ষা নির্মাণের অভিজিৎ দা, আত্রেয়ী প্রমুখ এবং আমি। এর আগে নৈহাটির হাজিনগরে প্রত্যেক সোমবার করে এই ক্লিনিক হত। স্থানসঙ্কুলানের অভাবের কারণে সেইখান থেকে সরিয়ে ক্লিনিক নিয়ে আসা হয় গরুরফাঁড়ির গরিফা জুভেনাইল অ্যাসোসিয়েশন ক্লাবের পাঠাগারে। সাধারণভাবে ক্লিনিক বলতে যা বোঝায় এটা তা নয় অথবা বলা যেতে পারে ক্লিনিক বা চিকিৎসা ব্যাবস্থা পরিবর্তনের একটা দৃঢ় সংকল্প। রোগী দেখা হয় মাত্র ₹২০/- তে সাথে জেনেরিক নামে ওষুধ লেখা এবং দেওয়া হয়। অনিন্দিতা দির সাথে আগে হাজিনগরে দুবার গেছিলাম রোগী দেখা শিখতে। তখন করোনা অতিমারী ভারতে দেখা দেয় নি। রোগীদের মধ্যে বেশিরভাগ আসত শ্বাসকষ্ট, প্লান্টার ফ্যাসাইটিস এবং ব্যথার সমস্যা নিয়ে। আজকের অভিজ্ঞতা অন্যরকম।
সকাল ১০:০০ থেকে বেলা ১:০০ টার মধ্যে রোগী সংখ্যা ছিল ২৭। করোনা সংক্রান্ত ভয়ের কারণে অনেকেই ডাক্তার দেখাতে আসতে ভয় পাচ্ছে। বেশিরভাগ মানুষের কর্মসংস্থান হল বিভিন্ন কারখানা। নৈহাটি চত্বরে এবং তার আশপাশে কাঁকিনাড়া, হালিশহরের জুট মিল, পেপার মিলের শ্রমিক এরা। সাধারণত এদের পরিযায়ী হয়ে অন্য জায়গায় কাজের জন্য যেতে হয়না। তবে মিল সবসময় যে চলে তাও নয়। তখন তাদের রোজগারের উৎস জানার অবকাশ আমার ছিল না। এখানে আসা মানুষদের মধ্যে একজনের মাসিক আয় ছিল ₹১৫,০০০/- । বাকিদের মধ্যে দুজনের মাসিক আয় ১০-১২ হাজার হলেও বেশিরভাগ মানুষের রোজগার ২-৫ হাজার টাকা। কিছু দিন আগে আমাদের বন্ধু আপন লিখেছিল তার সুন্দবন সংলগ্ন এলাকার অভিজ্ঞতা – জুতো পড়তে বলব কিন্তু কেনার টাকা কই? আজকে আমারও তাই মনে হল।
আজকে নতুন রোগীর সংখ্যা ছিল ১১। বেশিরভাগ মানুষই উচ্চ রক্তচাপ, মধুমেহ, ব্যাথা, শ্বাস প্রশ্বাস জনিত সমস্যার কারণে এসেছেন। এইখানের অন্যতম বৈশিষ্ট হলো ডাক্তার আর রুগীর সম্পর্ক। যদি কেউ পরীক্ষা না করিয়ে চলে আসে তাহলে তাকে ডাক্তারবাবুর বকা খাবার হাত থেকে কেউ রক্ষা করতে পারবে না। ভিতরে বসে কারুর ফোনে কথা বলার অনুমতি নেই। আমার ওপর দাইত্ব ছিল রক্তচাপ মাপা। নিজের কাজে দুবার গাফিলতি করি। প্রথমবার স্যার ডেকে বলে দিলেন কি ভুল করেছি। পরের বার ভুল করতে স্যার আবার ডেকে পাঠাল। এইবার ভয় পেয়ে গেছি। মনে হয় বকা খাব। যদিও শুরুতেই একবার বকা খেতে খেতে বেঁচে গেছি। হতে দস্তানা পড়তে না চাওয়ার জন্য। কিন্তু স্যার বকলেন না। আমার আত্মবিশ্বাস তলানিতে। স্যার বললেন এইটা হওয়া উচিৎ নয়। নিজের আত্মবিশ্বাসের অভাব প্রকাশ পেলে তা রোগীর মধ্যে সঞ্চারিত হয়ে যায়।
এরপর আসি সেখানকার একটা ঘটনাতে। মডার্ন মেডিসিনের ফার্মেসি খুলে সেখানে হোমিওপ্যাথি প্র্যাক্টিস করে চলছে কোনো এক ভন্ড ব্যক্তি। রক্তচাপের ওষুধ হিসেবে লিখছে টেলমিসর্টান এবং আমলোদিপিনের ফিক্সড ডোজ কম্বিনেশন। নিচে অবশ্য নিজের নামটা লেখেনি। এইসব দুর্নীতির থেকে মানুষকে সচেতন করার জন্যও চলছে অক্লান্ত পরিশ্রম। এইবার বলব সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ কথা। রোগী দেখা শেষ হওয়ার পরে ছিল ডিমের অমলেটের তরকারি আর রুটি। যেটা খেয়ে আমাদের কাজ সমাপ্ত হল।
I salute the untiring effort of the health warriors. …